সে বেশ কয়েক বছর আগের কথা। ইংরেজি গ্রামার বইয়ে গনি মিয়া নামের এক কৃষক ছিল । গল্পটি প্রায়ই পরীক্ষায় আসত বাংলা থেকে ইংরেজি করার জন্য। গল্পটি ছিল এরকম “গনি মিয়া একজন কৃষক। তার নিজের জমি নাই। অন্যের জমি বর্গা চাষ করে। কিন্তু সে তার ছেলের বিবাহে অনেক ধুম ধাম করিল। বিয়েতে গ্রামের লোকেরা অনেক ফুর্তি করিল। ইহাতে
সে বেশ কয়েক বছর আগের কথা। ইংরেজি গ্রামার বইয়ে গনি মিয়া নামের এক কৃষক ছিল । গল্পটি প্রায়ই পরীক্ষায় আসত বাংলা থেকে ইংরেজি করার জন্য। গল্পটি ছিল এরকম “গনি মিয়া একজন কৃষক। তার নিজের জমি নাই। অন্যের জমি বর্গা চাষ করে। কিন্তু সে তার ছেলের বিবাহে অনেক ধুম ধাম করিল। বিয়েতে গ্রামের লোকেরা অনেক ফুর্তি করিল। ইহাতে সে অনেক ধার করিল। সেই ধার আর সে শোধ করিতে পারিল না।” শুধু বাংলা থেকে ইংরেজি করার জন্যই এই গল্প পরীক্ষায় আসলেও এই গল্পের একটি অন্তর্নিহিত শিক্ষামূলক বার্তা ছিল। বার্তাটি হলো এই যে ধার দেনা করে বিলাসিতা করলে কষ্টে পড়তে হয়। ধার দেনা করে ঘি খাওয়া ভালো নয়। গল্পের এই গনি মিয়া বাস্তবে ছিল কিনা আমার জানা নেই। গনি মিয়ার গল্প বর্তমান যুবক সমাজের জানা না থাকলেও যারা এখন বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকের দায়িত্বে আছে তারা অনেকেই এই গল্পটি জানে। গনি মিয়ার জীবনে ধার কর্জ নেয়ার কুফল থেকে শিক্ষা না নিলেও ধার করে বিলাসী জীবন যাপনের শিক্ষা নিয়েছে এই সব উচ্চবিলাসী গনি মিয়ারা। এখন দেশে অনেক উচ্চবিলাসী আধুনিক গনি মিয়া তৈরী হয়েছে।
আধুনিক গনি মিয়ারা এখন দেশের উচ্চ পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন পদে আসীন। গনি মিয়ারা চায় দেশকে উন্নত দেশের মতো চকচকে করতে। জনগণের পেটে ক্ষুধা থাকলে থাকুক, জনগণ অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেও যাক, বাজেটের জন্য পর্যাপ্ত খরচ না থাকুক গনি মিয়ারা দেশকে কসমেটিক উন্নয়ন দিয়ে মেকআপ লাগিয়ে সিংগাপুর, ক্যানাডা, আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড বানাতে উনারা উৎসাহী। তাই দেশের বাজেটের প্রায় ৪০ ভাগ পূরণ করা হয় ঋণ নিয়ে। গত অর্থবছর ২০২২-২৩ সালে বাজেট ছিলো প্রায় ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এই বাজেটের সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ৩৬ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণ করা হয় কোথায় থেকে? দেশী ও বিদেশী ঋণ থেকে। এর মধ্যে বিদেশী ঋণ প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা এবং দেশীও ঋণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এই খবরটির বিস্তারিত পাবেন ৮ জুলাই ২০২২ সালের প্রথম আলোতে “এবারের বাজেট ও আমাদের সক্ষমতার মূল্যায়ন” এই শিরোনামে। অর্থাৎ গনি মিয়ারা যে পরিকল্পনা করুক, যাই নির্মান করুক তার প্রায় ৪০% ধার -কর্জ করা। তবুও গনি মিয়ারা কথায় কথায় বলে দেশের সব উন্নয়ন আমরাই করেছি, আমাদের টাকায় করেছি। উনাদের এই ধরনের আস্ফালনে একজন পাগলও হাসবে! ধরুন এক ব্যক্তি বন্ধুর কাছে ৪০ হাজার টাকা ধার করে মোট ১ লাখ টাকা দিয়ে শাড়ি কিনে বউকে দিয়ে বলে “আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, তোমার জন্য আমি আমার নিজের পকেটের ১ লক্ষ টাকা দিয়ে শাড়ি এনেছি।” ব্যাপারটি কেমন হলো?
যাহোক, এখন আধুনিক গনি মিয়ারা আরো একধাপ এগিয়েছে। উনারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছে। গনি মিয়ারা ক্রমশঃ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হয়ে যাচ্ছে। একের পর দেশী বিদেশী ঋণ নিয়ে মেঘা প্রকল্প গড়ার পাশাপাশি নিজেদের কমিশন ও দুর্নীতি করে বিশাল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে অট্টালিকা বানাচ্ছে। ইতিমধ্যেই উনারা ২.৭৩ বিলিয়ন ডলার বা টাকার অংকে প্রায় ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা খরচ করে পাঠিয়েছে বংগবন্ধু স্যাটেলাইট ১, যা থেকে তিনবছরে এই স্যাটেলাইট থেকে কোন আয় আসেনি (বিবিসি ১৪ই মে ২০২২; বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: তিন বছর আয় করতে পারেনি, খরচ উঠবে কবে)। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচের প্রায় অর্ধেক বা প্রায় ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নিয়েছে গনি মিয়ারা বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি থেকে (চ্যানেল আই অনলাইন, ৮ মে ২০১৮; বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আদ্যোপান্ত)। অর্ধেক টাকা কর্জ করে গনি মিয়াদের পাঠানো স্যটেলাইট কক্ষপথে ছুটছে কোন প্রকার লাভ ছাড়াই! শুধু এখানেই নয় আরো কর্জ করে গনি মিয়ারা এবছর ২০২৩ সালে ৪.৩৫ বিলিয়ন ডলার চুক্তিতে রাশিয়ার সহযোগিতায় পাঠাবে বংগবন্ধু স্যাটেলাইট ২। বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কাল হচ্ছে ১৫ বছর, কোন প্রকার লাভ ছাড়াই চলে গেছে প্রায় তিন বছর এ অবস্থায় দ্বিতীয় আরেকটি স্যাটেলাইটের দিকে যাওয়া ”চূড়ান্ত বোকামি”। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট কোম্পানি কোন আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে না (বিবিসি বাংলা, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২; বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: প্রথমটি অলাভজনক রেখে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের প্রয়োজন কী?) । অলাভজনক এই স্যাটেলাইট প্রকল্প থেকে দেশবাসীর কোন লাভ না হলেও গণি মিয়াদের পকেটে কমিশন হয়তো ঠিকই যায়। না হলে গনি মিয়াদের আকাশে উড়ার এই স্বপ্ন কেন?
এভাবেই একের পর এক মেঘা প্রকল্প যেমন মেট্রোরেল, কর্নফুলী টানেল, পদ্মা সেতু, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি হাতে নিয়ে গনি মিয়ারা বিদেশ থেকে নেয়া ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশের ২০টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-১, মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রজেক্ট, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-৫, লাইন-৬, পদ্মা ব্রিজ রেল সংযোগ, ফোর্থ প্রাইমারি অ্যাডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, এক্সপানশন হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া অ্যালিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ডিপিডিসির পাওয়ার সিস্টেম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে ব্রিজ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প, সেফ ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প ও কভিড ইমারজেন্সি রেসপন্স ও প্যান্ডামিক প্রিপারেডেন্স প্রকল্প ইত্যাদি। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ৭১ বিলিয়ন ডলারের ৬১% ভাগ বিদেশী ঋণের (বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, ২১ জুলাই ২০২২ঃ ২০ মেগা প্রকল্পের ঋণ শোধের বড় ধাক্কা আসছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য )। এসবের পরেও কি গনি মিয়ারা বলতে পারেন যে তারা দেশকে উন্নত করছে! যদিও উনারা বলেন পদ্মা সেতু নিজের টাকায় কিন্তু একটু ভেবে দেখেন যে বাজেটের ৪০% ভাগই হচ্ছে ধার করা সেই বাজেটের উন্নয়ন খাত থেকে কিছু তৈরী করা কি নিজের টাকা হয়! তবুও গনি মিয়াদের বাগাড়ম্বি আস্ফালন। বিদেশী ঋণ নেয়ার উৎসব। বনিক বার্তায় ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর তারিখে “২০২৩ সালে বিদেশী ঋণ দাঁড়াবে ১১৫ বিলিয়ন ডলারে” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ঐ তথ্য মতে এ বছরের শেষে বাংলাদেশের বিদেশী ঋণের পরিমাণ ১১৫ বিলিয়ন ডলারের উপর এবং ২০২৪ সালর শেষে বিদেশী ঋণের পরিমাণ হবে ১৩০ বিলিয়ন ডলার। বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদনে অনুসারে দেখা যায়যে, এখন বিদেশী ঋণ পরিশোধের জন্য গনি মিয়াদের প্রায় বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয় (বনিক বার্তা, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২ঃ বিদেশী ঋণ ও সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা)। ডলারের দাম যত বাড়বে বাংলাদেশী টাকায় এই অংক আরো বাড়বে।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫% পোশাক খাতের। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি, পোশাক রপ্তানি এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অবদান ৯০% ভাগ। ২০ টি মেঘা প্রকল্পের ব্যয় ৭১ বিলিয়ন ডলার। মেঘা প্রকল্পের ৬১% বিদেশী ঋণের। বাংলাদেশের মোট বাজেটের ৪০% ঋণ করা হয়। বিদেশী ঋণের পরিমাণ ১১৫ বিলিয়ন ডলার। প্রতি বছর বিদেশী ঋণের কিস্তি প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার।বর্তমানে ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট ঘাটতি ২০ বিলিয়ন ডলার। |
তবুও গনি মিয়ারা থেমে নেই। গনি মিয়ারা গ্রামের মহাজন থেকে নয়, বিদেশী মহাজনদের কাছে থেকে ধার কর্জ করে দেশবাসীর উপর চাপিয়ে দিচ্ছে বিশাল ঋণের পাহাড়। বাংলাদেশের শুরু থেকে ৩৯ বছরে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ নেয়া হয়েছে তার প্রায় ২.৫ গুন বিদেশী ঋণ নিয়েছে গনি মিয়ারা গত ১০ বছরেই (মানবজমিন, ৩ জানুয়ারি ২০২২ঃ ভারী হচ্ছে ঋণের বোঝা; যায়যায়দিন, ২৩ অক্টোবর ২০২২ঃ ভারী হচ্ছে বিদেশি ঋণের বোঝা; দ্য বিজনেজ স্টান্ডার্ড, ৮ ডিসেম্বর ২০২২ঃ ১০ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি)। গনি মিয়ারা শুধু ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে ৩০৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এসব ঋণ যে দিয়ে শুধু যে মেঘা প্রকল্প করা হয়েছে তা নয়, বাজেট ঘাটতি মেটাতেও নেয়া হয়েছে ঋণ। সম্প্রতি জাপান থেকে বাজেট সহায়তার জন্য ঋণ নেয়ার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকেও বাজেট সহায়তা হিসেবে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে সরকার। এছাড়াও বিশ্বব্যাংক থেকেও বাজেট সহায়তার ঋণ চাচ্ছে গনি মিয়া। গনি মিয়ারা টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ও বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দফায় দফায় বড় অঙ্কের ঋণ নিচ্ছে। মানবজমিনের উপরোক্ত প্রতিবেদনে জানা যায়যে, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে বাজেট সাপোর্ট হিসেবে ১০০.০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা প্রদান করবে। এ ছাড়া ‘ইরিগেশন ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-এডিশনাল ফাইন্যান্সিং’ শীর্ষক ঋণ চুক্তির আওতায় ১৩.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ ছাড়াও, রাশিয়া, চীন ও ভারত সহ বিভিন্ন দেশের বড় ঋণ প্রস্তাব রয়েছে এবং এগুলো গৃহীত হলে সামনের দিনগুলোয় গনি মিয়াদের বৈদেশিক ঋণ আরও বাড়বে।
যাহোক, গনি মিয়াদের ধার-কর্জ করতেই হবে। ধার দেনা করে হলেও উনারা বিলাসিতা করবে, উচ্চ বিলাসী প্রকল্প হাতে নিবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উন্নতি করতে হলে বিদেশী ঋণ নিতেই হয়। তাই গনি মিয়ারাও নেয়। কিন্তু সেই ঋণেরও একটি সীমাবদ্ধতা থাকা উচিৎ। কারণ বিদেশী ঋণের এই বোঝা সাধারণ মানুষের উপর এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর পড়বে। তাছাড়া গনি মিয়াদের গৃহীত প্রকল্প বেশীরভাগ গুলো মেয়াদে শেষ হয়না। বারবার মেয়াদ বাড়তে থাকে । আরো খরচ বাড়ে। প্রকল্পের যে খরচ ধরা হয় তার চেয়ে ৩ থেকে ৫ গুন খরচ বাড়িয়ে শেষ করা হয়। আর অতিরিক্ত খরচ মেটাতে বিদেশী ঋণ নেয়া হয়। এভাবে বিদেশী ঋণ বাড়ার সাথে সাথে এর সুদ ও আসলের কিস্তি পরিশোধের পরিমাণও বাড়ছে। সে অনুযায়ী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৪ বিলিয়ন ডলার, আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত (যায়যায়দিন, ২৩ অক্টোবর ২০২২ঃ ভারী হচ্ছে বিদেশি ঋণের বোঝা)। এই বিশাল ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার লাগবে যা আসে রপ্তানি ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশই পোশাক খাতের। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের বিশাল অবদান আছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির মোট ৯০% দাঁড়িয়ে আছে কৃষি, পোশাক রপ্তানি এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উপর। অর্থাৎ সন্মানিত কৃষক-শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো আয়ের উপর। দেশের প্রয়োজনে করা হয় আমদানি। সেই সাথে গনি মিয়াদের জন্য ব্যবহৃত দামী গাড়ী থেকে শুরু করে উনাদের পোষা বিড়াল-কুকুরের জন্য খাবারের বিস্কুট কিনতেও করা হয় আমদানি। সেই আমদানি বিল পরিশোধ করতে বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার লাগে, যা আসে সেই সাধারণ মানুষের পরিশ্রমে আয় করা রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে। মোট আমদানি ব্যয়, বিদেশী ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে যে ডলার অবিশিষ্ট থাকে তাকে বলা হয় ব্যালান্স অফ পেমেন্ট। বিদেশ থেকে পণ্য কেনা এবং বিদেশী ঋণের ধার-দেনার হালখাতা করার পর দেশে যে ডলার ফিরে আসে সেটাই হচ্ছে ব্যালান্স অফ পেমেন্ট । অর্থাৎ এটা যদি পজিটিভ হয় সেই ডলার বাংলাদেশের রিজার্ভ হিসেবে জমা থাকবে। কিন্তু যদি এই ব্যালান্স অফ পেমেন্ট নেগেটিভ বা ঘাটতি হয় তবে পুর্বের জমানো রিজার্ভ থেকে খরচ করা হয় অথবা বিদেশী ঋণে চাওয়া হয়। বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে সার্বিকভাবে গনি মিয়াদের এই ঘাটতি বেড়েই চলেছে। এ অর্থবছর (২০২২-২০২৩) শুরু হয়েছে ১৮.৭ বিলিয়ন ডলার পেমেন্ট অব ব্যালেন্সের বিশাল ঘাটতি নিয়ে (নয়া দিগন্ত, ১৩ নভেম্বর ২০২২ঃ বাংলাদেশের ২৬ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ অর্থনীতির জন্য কী বার্তা দিচ্ছে? ) । পুর্বের অর্থবছর ২০২০-২১ এর শেষে এই ঘাটতি ছিল প্রায় ৪ বিলিলয়ন ডলার । ইতিপুর্বে কখনো ব্যালেন্স অব পেমেন্ট এর ঘাটতি হয়নি। বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ৯.২৯ বিলিয়ন ডলার বাড়তি ছিল। তার আগের বছরে ২০১৮-১৯ এ ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট এর বাড়তি ছিল প্রায় ৩.১৭ বিলিয়ন ডলার। যাহোক অর্থনীতিবিদদের মতে এ অর্থ বছর ২০২২-২৩ শেষে ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট এর ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার (নিউজ বাংলা২৪.কম, ৪ জুলাই ২০২২ঃ লেনদেন ভারসাম্যে রেকর্ড ঘাটতির মুখে দেশ )। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়েই নতুন অর্থবছর ২০২৩-২৪ এ প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের বিদেশী ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন জ্বালানী তেল, সয়াবিন, গম, চাল ইত্যাদি আমদানিতে ডলার লাগবেই। অর্থাৎ দেনা পাওনার হালখাতা করতে গনি মিয়াদের ডলার থাকবেনা। এত ভয়ংকর বার্তার মধ্যে গনি মিয়াদের কোন চিন্তা বা ধারনা আছে বলে মনে হয়না। যদিও দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত ডলার সংকোট; রিজার্ভ সংকটে আমদানিতে এল সি বন্ধ; আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় কয়লা আসা বন্ধ; জ্বালানী আমদানিতে সংকোট ইত্যাদি সমস্যা। এতকিছুর পরেও গনি মিয়ারা কিন্তু উল্লসিত। তাদের মতে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠছে (বাংলা ট্রিবিউন, ০৩ জানুয়ারি ২০২৩ঃ চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতি)। যদিও ধার-কর্জ করেই চাঙ্গা রাখা হচ্ছে অর্থনীতি (ডেইলি স্টার ১৪, ২০২১ঃ ঋণ নিয়ে চাঙ্গা রাখা হচ্ছে অর্থনীতি)। যদিও অর্থনীতিবিদদের মতে এত এত ঋণের বোঝা বড় করলে বাংলাদেশ সংকটে পড়বে তবুও গনি মিয়াদের ভাবনা নেই। দেশবাসী অর্থনৈতিক সংকটে পড়লে গনি মিয়াদের সমস্যা নেই। কারণ গনি মিয়ারা এখন আর জমি বর্গা চাষ করে না। কমিশন, দুর্নীতি করে আয় করা অর্থ ডলারে পরিবর্তন করে পাঠায় সুইস ব্যাংকে, ক্যানাডার বেগমপাড়ায়, দুবাই বা মালয়শিয়ার সেকেন্ড হোমে। স্মার্ট এই গনি মিয়ারা হয়তো একদিন বিশাল ঋণের বোঝা দেশবাসীর চাপিয়ে দিয়ে এসব স্থানে বিলাস বহুল জীবন যাপন করবে। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে পড়ে থাকা আন-স্মার্ট গনি মিয়াদের ভবিষ্যৎ কি!
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *