ড. ফারুক আমিন : বিগত ২৫ মার্চ ২০২৩ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেট নিউ সাউথ ওয়েলস বা এনএসডব্লিউ’র নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ নির্বাচনে ১২ বছর পর অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি স্টেটটির ক্ষমতায় এসেছে। লেবার পার্টির নেতা হিসেবে এনএসডব্লিউর স্টেট প্রিমিয়ার হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন ক্রিস মিনস। একই সাথে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে প্রিমিয়ার পদ থেকে সরে গিয়েছেন
ড. ফারুক আমিন : বিগত ২৫ মার্চ ২০২৩ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেট নিউ সাউথ ওয়েলস বা এনএসডব্লিউ’র নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ নির্বাচনে ১২ বছর পর অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি স্টেটটির ক্ষমতায় এসেছে। লেবার পার্টির নেতা হিসেবে এনএসডব্লিউর স্টেট প্রিমিয়ার হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন ক্রিস মিনস। একই সাথে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে প্রিমিয়ার পদ থেকে সরে গিয়েছেন লিবারেল পার্টির নেতা ডমিনিক পেরোটেট।
অস্ট্রেলিয়া যেহেতু ফেডারেল সরকার এবং স্টেট সরকারের যৌথ অংশীদারিত্বে পরিচালিত হয়, সে কারণে স্টেট সরকারের নির্বাচনগুলোর গুরুত্ব এ দেশে অনেক। বর্তমান পৃথিবীতে স্থানীয় সরকারের গুরুত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি দেশে সুশাসন ও গণতান্ত্রিক চর্চার বিষয়টি প্রমাণিত। তার বিপরীতে বাংলাদেশে ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ এবং স্থানীয় সরকারগুলোকে নখদন্তহীন কিন্তু লুটপাটের আখড়া বানিয়ে তোলার প্রেক্ষাপটে এনএসডব্লিউ’র এই সাম্প্রতিক নির্বাচন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য অনেকগুলো শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর যে কোন সভ্য ও স্বাভাবিক দেশের নির্বাচনের তুলনায় বাংলাদেশের নির্বাচন সংস্কৃতির তুলনা অবশ্য অনেকটা অপ্রয়োজনীয়। বাংলাদেশে এখন নির্বাচন হয় সাজানো এবং দখল করা। বাংলাদেশের নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার কিং জং উনের নির্বাচনের সাথে তুলনা করে থাকে। চরম দখলদারির নির্বাচন হওয়ার পরও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা প্রতিটি সাজানো নির্বাচন উপলক্ষে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাট চালায়। তার বিপরীতে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া এই স্টেট নির্বাচনটি বাংলাদেশীদের জন্য হয়তো স্বপ্নের মতোই মনে হবে। যেখানে প্রত্যেক প্রার্থী তাদের সাধ্যমতো জনগণের কাছে নিজেদের প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরে এবং সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও স্বাধীন নির্বাচন শেষে জনগণের রায় সবাই মেনে নেয়।
বাংলাদেশে চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে আবারও একটি জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। সম্ভব হলে নির্বাচন ছাড়াই আজীবন ক্ষমতায় থেকে যেতে চায় বাংলাদেশী রাজনীতিবিদরা, যেহেতু তারা নিজেদেরকে জনগণের মালিক হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু অন্তত মুখ রক্ষার স্বার্থে হলেও যেহেতু নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, সেই নির্বাচনকে নিজেদের ক্ষমতা প্রলম্বিত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য সম্ভবপর সকল উপায় ও নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে তারা। বাংলাদেশী রাজনীতিবিদদের এইসব কাজকর্ম দেখে নিঃসন্দেহে বলে দেয়া যায় এই দেশের হতভাগা জনগণের কপালে নেই নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছা ও রায় বাস্তবায়ন করা।
নিউ সাউথ ওয়েলসের এই নির্বাচনী ফলাফলের মাধ্যমে বর্তমানে তাসমানিয়া ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার সবগুলো স্টেটে লেবার পার্টির সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। এই দেশে সবসময়েই দেখা যায় কিছু বছরের জন্য লেবারকে জনগণ ক্ষমতায় আনে, আবার পরবর্তী কিছু বছরের জন্য লিবারেল ক্ষমতায় আসে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর পাশাপাশি গ্রিনস পার্টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও সামনে আসার ঘটনা ঘটছে। এই চেক এন্ড ব্যালেন্স পদ্ধতির কারণে প্রতিটি দলই জনগণের সেবায় ও দেশের সেবার সম্ভবপর সকল কাজ করার চেষ্টা করে যেন তারা জনগণের ভোট অর্জন করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ান রাজনৈতিক সংস্কৃতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যক্তির জন্য নেতৃত্ব ও ক্ষমতার সাময়িক স্থায়িত্ব। এই নির্বাচনে লিবারেল হেরে যাওয়ার পর প্রিমিয়ার ডমিনিক একজন সাধারণ এমপিতে পরিণত হয়েছেন। মার্ক স্পিকম্যান নামের আরেকজন নেতা হয়েছেন এনএসডব্লিউ লিবারেল প্রধান, তিনি যদি পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত দলীয় প্রধানের দায়িত্বে থাকেন এবং নির্বাচনে দলকে বিজয় এনে দিতে পারেন তাহলে তিনি হবেন পরবর্তী প্রিমিয়ার, আর তা না হলে হবে অন্য কেউ। এই পদ্ধতি স্থানীয় থেকে শুরু করে ফেডারেল পর্যন্ত সকল পর্যায়ে চর্চা হয়। অথচ বাংলাদেশে রাজনীতিবিদরা নেতা হয় এবং ক্ষমতায় আসে আজীবনের জন্য। তাদের পর তাদের ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীরা নেতৃত্ব গ্রহণ করে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে নেতৃত্বের যোগ্যতা বংশপরম্পরায় প্রবাহিত একটি বিষয়। এ ধরণের দাসত্বমূলক সংস্কৃতি যে সমাজে আছে সেখানে এনএসডব্লিউ এই স্টেট নির্বাচন কিংবা সাম্প্রতিক ফেডারেল নির্বাচনের মতো সুষ্ঠ নির্বাচন প্রত্যাশা করা বোকামী। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির দায় যদিও দেশটির রাজনীতিবিদদের, কিন্তু জনগণের দায়ও একেবারে উপেক্ষা করার মতো নয়।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *