আয়শা সাথী: ১ জুন, ২০২৩ জাতীয় সংসদে নতুন বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পরিকল্পনা করা হয়েছে। এবারের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৫% এবং মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছে ৬.৫% যার মধ্যে ভর্তুকি বা বৈদেশিক সুদ পরিশোধ বাবদ এক লাখ
আয়শা সাথী: ১ জুন, ২০২৩ জাতীয় সংসদে নতুন বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পরিকল্পনা করা হয়েছে। এবারের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৫% এবং মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছে ৬.৫% যার মধ্যে ভর্তুকি বা বৈদেশিক সুদ পরিশোধ বাবদ এক লাখ কোটি টাকার বেশি রাখা হয়েছে। ২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২,৬৩,০০০ কোটি টাকা যার মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি উৎস থেকে পাওয়া যাবে ৯৪,০০০ কোটি টাকা। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মিলিয়ে নতুন এডিপির আকার হবে ২,৭৪,৬৭৪ কোটি টাকা।
পরিচালনখাতে বাকি ৫ লাখ কোটি টাকা ব্যয় হবে যার পরিমাণ চলতিবছরের বাজেটে ছিল ৪.৩১ লাখ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় ৭৭,০০০ কোটি টাকা, ঋণের সুদ পরিশোধে ১.১০ লাখ কোটি টাকা, পণ্য ও সেবা ক্রয়ে ৪০,০০০ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ১.১৮ লাখ কোটি টাকা এবং ভর্তুকি ও প্রণোদনায় ১.০৫ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে অর্থবিভাগে।
আগামী অর্থবছরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দেশের মেগা প্রজেক্টগুলোকে যেখানে মোট এডিপির ২৩% অর্থ বড় ১০টি প্রজেক্টে বরাদ্দ রাখা হয়েছে যার পরিমান ৬০,০৫১ কোটি টাকা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে ( ৯ হাজার ৭০৬ কোটি), দ্বিতীয় মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র (৯ হাজার ৮১ কোটি) এবং এরপর রয়েছে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি পিইডিপি-৪( ৮ হাজার ৫৮৬ কোটি)। পরবর্তী শীর্ষ ১০ প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ; পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট, এমআরটি-১, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ এবং এমআরটি-৬। মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিবেচনায় স্থানীয় সরকার বিভাগ সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে (৪০,৫০২ কোটি) যা আগের বছরের তুলনায় ১৫% বেশি। দ্বিতীয় স্থানে আছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ (৩৪,০৬২ কোটি) এবং তৃতীয় অবস্থানে বিদ্যুৎ বিভাগ (৩৩,৭৭৫ কোটি), শিক্ষা খাত (২৯,৮৮০ কোটি), গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাদি খাত (২৭,০৪৫ কোটি) এবং স্বাস্থ্য খাত (১৮,৮৮০ কোটি) টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। এডিপিতে সরকারি বেসরকারি অংশীদারত্ব ৭৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বরাদ্দহীন যা বছরজুড়ে পাস করা হবে এমন অন্তর্ভুক্ত নতুন প্রকল্প রয়েছে ৮২৫ টি যার মধ্যে ৩১৪ টি প্রকল্প জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পসহ ১৩০৯ টি প্রকল্পে প্রায় দুই লাখ পঁচাত্তর হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া আইএমএফ এর অনুমোদিত ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের বিপরীতে যেসব শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেগুলো যতটা সম্ভব পূরণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে আগামী বাজেটে।
১০’মে (বুধবার) রাতে গণবভনে অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেট বিষয়ক আলোচনা হয়। অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে জানান,সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, ও বিধবা কারো কারো ভাতা বাড়ানো হচ্ছে এবং টিসিবির মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির ব্যবস্থা চলমান রাখা হচ্ছে। বৈঠকে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বিষয়ক কোনো আলোচনা হয়নি।প্রধানমন্ত্রী অহেতুক ব্যয় বন্ধ, আমলাদের বিদেশ ভ্রমণের ফাইল যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো, এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়াতে তদারকি জোরদার করণ, ভর্তুকি কমানো, বিদেশ হতে প্রতিশ্রুত অর্থের প্রাপ্তি ও তার ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে দেওয়া বরাদ্দ যথাযথভাবে ব্যয় করার জন্য ফিসক্যাল পলিসি গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাকে আগামী অর্থবছরের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে কেন্দ্র করে গত ১১ মে (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর একটি হোটেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে প্রধান অতিথি করে এনবিআর ও এফবিসিসিআই যৌথভাবে একটি সভার আয়োজন করে। ব্যক্তি করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা তিন লক্ষ থেকে বাড়িয়ে চার লক্ষ টাকা করা, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার করের শর্ত শিথিল, ফ্ল্যাট-প্লট কিনে বিনা প্রশ্নে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ, নিত্য ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে উৎস কর প্রত্যাহারের সুপারিশসহ ১১৯টি বাজেট প্রস্তাব দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *