পৃথিবীতে মানুষের জীবনধারণের জন্য যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তার মধ্যে অন্যতম হলো পানি। তাই পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া কোন প্রাণীকুলের বেঁচে থাক সম্ভব নয়। পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকা, সভ্যতার উন্নতি সবকিছুর জন্যই পানির একান্ত প্রয়োজন আছে। প্রাণী তথা উদ্ভিদজগতের অস্তিত্ব রক্ষার মূল ভৌত উপাদানই হলো পানি। তাছাড়া মানবজাতির খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান- এর কোনটির অস্তিত্বই পানি ছাড়া সম্ভব নয়। সমগ্র পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ অংশই পানি দ্বারা আবৃত। পৃথিবীতে সমগ্র জীবজগতের শরীরের গঠনগত প্রধান উপাদানই হলো পানি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির শরীরের ৬০ শতাংশই হলো পানি দ্বারা তৈরি। ব্যবহারযোগ্য পানি বলতে মূলত বোঝানো হয় সুস্বাদু বা মিষ্টি পানিকে। কোনো রকমের ময়লা আবর্জনা, জীবাণুমুক্ত পানিকেই বিশুদ্ধ পানি বলা হয়ে থাকে।
পৃথিবীতে পানি দূষণের অন্যতম প্রধান কয়েকটি কারণ হলো, কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, তাপ শক্তিকেন্দ্রগুলি থেকে নির্গত বর্জ্য পানি, কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত কীটনাশক এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার পানির সাথে মিশে পানি দূষিত হয়ে মানবজাতিকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে কঠিন পানিবাহিত রোগে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে প্রত্যেক বছর পৃথিবীতে প্রায় দশ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পানিবাহিত রোগ। পানি দূষণ রোগের মধ্যে রয়েছে- আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, প্যারা টাইফয়েড ইত্যাদি।
সুস্থ জীবন যাপনের জন্য অপরিহার্য বিশুদ্ধ পানি। পানি বিশুদ্ধ করার উপায়গুলো হচ্ছে- পানি ৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফুটালে জীবাণু ধ্বংস হয়। তারপর পানি পান করার জন্য ছেঁকে পরিষ্কার করে নিতে হবে। সিরামিক বা অসমোসিস ফিল্টার মেশিনে সহজে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। পানি বিশুদ্ধকরণ ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং ব্যবহার করে পরিশোধন করা যায়। পানিতে পটাশ বা ফিটকিরি মিশিয়ে শোধন করা যায়। সৌর পদ্ধতীতে পানি বিশুদ্ধ করা যায় । দূষিত পানি পানে নানা অসুখের ব্যাপারে জনগনকে সতর্ক করতে হবে। রোগ প্রতিরোধের উপায় ও করণীয় সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে হবে। সরকারিভাবে প্রচারনামূলক কর্মসুচি গ্রহণ করতে হবে। পানি এবং জীবন এই দুটিকে সমার্থক রূপে বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবহারে সতর্ক হলে সুন্দর বিশ্ব গড়ে উঠবে।