এম রহমান (ইতালি) : পাকিস্তানের শোষণ উৎপীড়নের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসা বাংলাদেশ এখন ভারতের কব্জায় বন্দি।পাকিস্তান থেকে আলাদা ভুখন্ডের মালিকানার কর্তৃত্ব এখন ভারতের প্রেসক্রিপশনে।
ভারতের প্রেসক্রিপশনে গত পনেরো বছর হাসিনা শেখ এর শাসনামলে নানা রাজনীতিবিদ এর উত্থান হলেও আজ যে রাজনীতিবিদ নিয়ে কথা বলব তা একে বারেই মঙ্গল গ্রহ থেকে নিয়ে আসা এক কাল্পনিক গল্পের মত মনে হবে।
কিন্তু যে রাজনীতিবিদ কে নিয়ে আজকের লেখা তা কাল্পনিক মনে হলেও বাস্তবে একেবারেই জ্যান্ত ক্যাংগারু ——— ।
বলছিলাম ” শপথ বদ্ধ রাজনীতিবিদ” এর কথা। বর্তমান রাজনীতিতে নানা শ্রেনীর রাজনীতিবিদ এর আগমন ঘটলেও যে আবার শপথ বদ্ধ রাজনৈতিক আছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল হলেও বাংলাদেশে এই হাসিনা শেখ এর আমলে একেবারেই প্রতিদিনের নাটকের চরিত্রের মহা নায়ক।
ভদ্রলোক হলেন শপথবদ্ধ রাজনৈতিক !
মুজিব সেনা বিচারপতি আবু জমাদ্দার।মাথায় টুপি গায়ে মুজিব আদর্শের কালো কোট, মুজিব সেনা হতে হলে এ কোট না পরিধান করলে আসল সেনা হওয়া যায় না। তাই কথিত বিচারপতি এখন শপথবদ্ধ আওয়ামিলীগ এর নেতা। তিনি হয়ত জানেন না এই কোটের ভিতর লুকিয়ে আছে আসল রাজাজারের প্রেতাত্মা।
এই কোট একদিন নেহেরু কোট হিসাবেই সকলের পরিচিত ছিল। সম্ভবত ১৯৪৯/৫৩ এই সময়ে মুজিবকে এই কোট উপহার দেন , সাধারনত এই কোটে পাচ বুতাম থাকে। এই কোটগুলো ভারত পাকিস্থানে বহুল প্রচালিত। পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি ইমরান খান বা প্রায় সকল নেতারাই ওই ধরনের ভেস্ট পরিধান করেন। সাব কন্টিনেন্টে এই কোট এর আভিজাত্যই আলাদা। এই কোট পাচ বোতামের হলেও মুজিব এটাকে ছয় বোতাম দিয়ে বানিয়ে পরতেন। স্বাধীনতার প্রাককালে শেখ মুজিব এর জীবনের পাকিস্তান বিরোধী শেষ আন্দোলন ছিল ছয় দফা, আর এই ছয় দফার সাথে মিলিয়ে এই কোটে ছয় বোতাম দিয়ে পরতেন। মুজিব গায়ে দেবার পর থেকে মুজিব ভক্তরা এটাকে টেগ লাগিয়ে দিলো ” মুজিব কোট ” ।
তা হলে এবার জেনে আসি ছয় দফায় কি ছিল? ৬/দফাসমূহ :
প্রস্তাব – এক : শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে।
প্রস্তাব – দুই : কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা। কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু’টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা- দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট বিষয়গুলো অঙ্গ রাজ্যগুলিতে ন্যস্ত করা উচিত।
প্রস্তাব – তিন : মুদ্রা ও অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা।
মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত ২ টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা চলতে পারে।
(ক) সমগ্র দেশের জন্যে দু’টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। অথবা
(খ) বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে।
তবে সেক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভ ও পৃথক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি গ্রহণ করা উচিত।
প্রস্তাব – চার : রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা। ফেডারেশনের অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।
প্রস্তাব – পাঁচ : বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা।
* ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।
* বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারাধীন থাকবে।
* কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোই মিটাবে।
* অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোন রকম বাধা-নিষেধ থাকবে না।
* শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।
প্রস্তাব – ছয় : আঞ্চলিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা। আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীন আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।
পাঠক, তা হলে শেখ মুজিব যেখানে জীবনে পাকিস্তান বিরোধী শেষ আন্দলোন করলেন ছয় দফা নিয়ে তার কোথাও স্বাধীনতার কথা খুজে পেলেন? রাজাকার কাহাকে বলে? রাজাকার হলেন তারা যারা বাংলাদেশ স্বাধীনতা চান নাই , বাংলাদেশ স্বাধীন হোক তা কখনোই চাইতেন না।
তা হলে মুজিব শেখ কি স্বাধীনতা চেয়েছিলেন? না তিনি তা চান নাই।
যদি না চেয়ে থাকেন তা হলে ছয় দফার আদলে ছয় বোতাম দিয়ে যে কোট পরতেন সেটাকি রাজাকারি কোট বললে ভুল হবে?
এবার আসি সেই ফুট ফুটে জমাদ্দার এর প্রসংগে তিনি যে রাজাকারি কোট পরে সম্প্রতি আল্লাহমা দেলোয়ার হোসেন সাঈদিকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এর দায়িত্বে থেকে বিরাগের বসবর্তি হয়ে এ বক্তব্য দিতে পারেন না।
শেখ মুজিবের বাংলায় রাজাকারের স্থান নেই, তিনি কথিত মুক্তিযোদ্ধা বা রাজাকারের বসবাসের জন্য এ দেশ স্বাধীন করেন নাই। আরো অনেক কথা বলেছেন যা তিনি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ বলেই বলতে পারেন, কিন্তু বাংলাদেশের জনগন জানতে চায়-যে ট্রাইবুনালে সাঈদির রায় হয়েছে সে সাহাবাগি ট্রাইবুনাল যেমন কথিত, তেমন সাক্ষি। তাও আবার জোর পূর্বক উঠিয়ে নিয়ে রায় দিয়ে ছিলেন । চলবে———–