এম,এ,ইউসুফ শামীম : গত ২৫শে আগস্ট ২০২৩ শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম যার হেডলাইন ছিল ” সিডনিতে একজন বাংলাদেশির মৃত্যু” যা খুব কম সময়ে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশী কমিউনিটিতে চাউর হয়ে যায়। শুধু অস্ট্রেলিয়া বললে ভুল হবে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্ধু -আত্মীয় স্বজনদের মাঝে খুব কম সময়ে পৌঁছে যায় এবং অনেকেই বিভিন্ন রকম
এম,এ,ইউসুফ শামীম : গত ২৫শে আগস্ট ২০২৩ শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম যার হেডলাইন ছিল ” সিডনিতে একজন বাংলাদেশির মৃত্যু” যা খুব কম সময়ে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশী কমিউনিটিতে চাউর হয়ে যায়। শুধু অস্ট্রেলিয়া বললে ভুল হবে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্ধু -আত্মীয় স্বজনদের মাঝে খুব কম সময়ে পৌঁছে যায় এবং অনেকেই বিভিন্ন রকম মন্তব্য করেছেন, দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
দাউদ ফেরদৌস হায়দার (৭১) যার প্রকৃত নাম ছিল কাজী মাসুদুর হোসাইন যিনি ১৯৭১ সালে ময়মনসিংহ থেকে চার্লস স্টাড ইউনিভার্সিটিতে আসেন পিএইচডি করার জন্যে। তিন ভাইয়ের ভিতর এক ভাই ফ্লোরিডা থাকেন, ২০০৬ সালে তিনি তার ভাই কাজী মোস্তাফিজকে দেখার জন্যে এমেরিকা ভ্রমন করেন। আবার বাংলাদেশেও ভ্রমন করেন, দেশ থেকে ফেরত আসার পর যে কোন পারিবারিক কারনে সিডনি এসেই নাম পরিবর্তন করেন। বিগত প্রায় ১৪ বছর পরিবার -পরিজন থেকে দূরে সরে যান। অভিমান করে সমাজ জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যান লোক চক্ষুর অন্তরালে। একসময়ে আবিষ্কার হলেন বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে সিডনির অদূরে নেপিয়েন হসপিটালে। সিডনিতে উনার আপনজন বা নেক্সট অফ কিন্ কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলোনা তাই হাসপাতালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা অমুসলিম উপায়ে সৎকার করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সিনিয়র সিটিজেন আকবর খান খবর পেয়ে যোগাযোগ করেন কমিউনিটির সমাজসেবক ও মুসলিম ফিউনারেল এক্সপার্ট কাজী আলী ভাইয়ের সাথে। তিনি সুপ্রভাত সিডনিকে অবহিত করার সাথে সাথে বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা হয়। এব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কোন এক কর্মকর্তা সহযোগিতা করেছেন বলে জানা যায়।
গত সোমবার ২৮ আগস্ট ২০২৩ রুটিহিলস মসজিদে দুপুর ১২৪৫ এ জানাজা শেষে কেমস ক্রিক সিমিট্রিতে দাফন করা হয়। মরহুমের আপন ভাই ফ্লোরিডা থেকে সিডনি এসে নিজ হাতে গোছল করিয়ে কবরে শুইয়ে দিয়ে শেষ দায়িত্ত্ব পালন করেন হতভাগা ভাই।
আমরা মানি বা নামেনি -“মানুষ সামাজিক জীব” -মানুষকে সামাজিক জীব এই কারণে বলা হয়, মানুষ একাকী তার মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পারে না তাই মানুষকে সামাজিক জীব বলা হয় ।
যেমন অসুস্থ ব্যক্তি সে নিজে নিজের চিকিৎসা করতে পারে না, অথবা কোন ব্যক্তির যদি কোন জায়গায় যাওয়া প্রয়োজন হয় তাহলে সে অন্যের সাহায্য ব্যতীত তার কাঙ্খিত জায়গায় পৌছাতে পারেনা । মানুষের প্রয়োজনীয় বস্ত্র নিজে নিজে তৈরি করতে পারে না অন্যের প্রয়োজন পড়ে।
আদিম যুগে মানুষ একা কিভাবে বসবাস করত যার ফলে মানুষ হাজারো রকমের বিপদে-আপদে নিমজ্জিত হতো। অবশেষে যখন একে অপরের সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজ গড়ে তুলে, এবং একে অপরকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে থাকে, তখন একই স্থানে একাধিক মানুষের বসবাস গড়ে ওঠে। তারপর থেকেই একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। অতএব আমরা সামাজিক জীব। আমাদেরকে সমাজের অন্তর্ভুক্ত হয়েই বসবাস করা যেমন জরুরি তেমনি নিরাপদ , বিশেষ করে প্রবাসে। প্রবাসে প্রায়ই আমরা শুনতে পাই , অমুক মারা গেছেন -কেউ তার আত্মীয় স্বজন খুঁজে পাচ্ছেনা ,বা কেউ তাকে চিনে না , একা থাকতেন ,কমিউনিটির কারো সাথে মিশেন না। একা থাকার সুফল থেকে কুফলই বেশি।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ জীবনযাপন ছাড়া একাকী জীবন যাপন করা মানুষের পক্ষে সহজ নয়, তেমনটি কেউ কামনাও করে না। আবার পরিচিত সমাজের বাইরেও মানুষের পক্ষে চলা খুবই কঠিন। পৃথিবীর সমাজবদ্ধ কোনো মানুষই সামাজিক বিপর্যয় কামনা করতে পারেন না। মানুষ সব সময় সুখ ও শান্তি চায়। শান্তি মানুষের একটি আরাধ্য বিষয়। কিন্তু এই প্রত্যাশিত সুখ-শান্তি নির্ভর করে সমাজবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর। উঁচু-নিচু, ধনী-দরিদ্র এসব পার্থক্যই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। মানুষের পারস্পরিক পরিচয়ের জন্যই এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ সূরা হুজরাতে এরশাদ করেছেন, হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। (সূরা হুজুরাত: ১৩)
তাই, আমাদের উচিত সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করা, অভিমান করে কমিউনিটি থেকে দূরে সরে যেয়ে কোনো সমস্যার সমাধান কখনো হয়নি, হবেওনা। কমিউনিটিতে আমাদের সচেতন নাগরিকদেরকে এগিয়ে আসতে হবে এবং এসব বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এখন সমাজের দাবি।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *