728 x 90

ছোট শিরক ও গোপন শিরকের ভয়াবহতা (শিরক পর্ব-৫)

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী:  মহান আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছুর ইবাদত করা অথবা আল্লাহ তায়ালার যে কোন হক্বে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করাকেই শিরক বলা হয়। শিরক এরুপ মারাত্মক গোনাহ যা মহান আল্লাহ তায়ালা কখনই ক্ষমা করবেন না বলে পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করছেন। আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করছে শিরক ও কুফরির বীজ।

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী:  মহান আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছুর ইবাদত করা অথবা আল্লাহ তায়ালার যে কোন হক্বে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করাকেই শিরক বলা হয়। শিরক এরুপ মারাত্মক গোনাহ যা মহান আল্লাহ তায়ালা কখনই ক্ষমা করবেন না বলে পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করছেন। আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করছে শিরক ও কুফরির বীজ। শিরকের বিষাক্ত ধোঁয়া গ্রাস করছে তাওহীদের ঘর, মুসলমানের অন্তরকে। শিরকের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে শিরককে মোটা দাগে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। শিরকে আকবার বা বড় শিরক এবং শিরকে আসগর বা ছোট শিরক । ছোট শিরক আবার গোপন শিরক নামেও পরিচিত।

ছোট শিরক প্রধানত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। প্রথম প্রকার: এ প্রকারের শিরক কথা ও কাজের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। যেমন; মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর নামে কসম ও শপথ করা। এক হাদিসে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেন “যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহ বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কসম করল, সে কুফুরী কিংবা শিরক করল’ (তিরমিযী, মুসতাদরাক হাকিম)। অনুরূপভাবে এমন কথা বলা যে, আল্লাহ এবং তুমি যেমন চেয়েছো। কোন এক ব্যক্তি মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লামকে “আল্লাহ এবং আপনি যেমন চেয়েছেন” কথাটি বললে তিনি বললেন, ”তুমি কি আমাকে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ স্থির করলে? বরং বল, আল্লাহ এককভাবে যা চেয়েছেন ” (নাসায়ী)।  আর কাজের ক্ষেত্রে ছোট শিরকের উদাহরণ হলো, এরুপ বিশ্বাস করা যে সূতা, দাগা বাঁধা, তাবীজ-কবজ ইত্যাদি রোগ সারাতে পারে ও বিপদাপদ দূর করতে পারে। এসব ব্যাপারে যদি এ বিশ্বাস থাকে যে, এগুলো বলা-মসীবত দূর করার মাধ্যম ও উপকরণ, তাহলে তা হবে শিরকে আসগর। কেননা মহান আল্লাহপাক এগুলোকে সে উপকরণ হিসাবে সৃষ্টি করেননি। তবে কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে ঝাঁড়-ফুঁক করা জায়েজ আছে, যা একটি স্বতন্ত্র বিষয়।  দ্বিতীয় প্রকার: গোপন শিরক হলো শিরকে আসগর বা ছোট শিরকের আর একটি ধরন। এ প্রকার শিরকের স্থান হলো ইচ্ছা, সংকল্প ও নিয়তের মধ্যে। যেমন লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ও প্রসিদ্ধি অর্জনের জন্য কোন আমল করা। এক হাদিসে এসেছে, যে ব্যাক্তি লোক দেখানো নামায পড়ল সে শিরক করল, সে লোক দেখানো দান করল সে শিরক করল, যে লোক দেখানো রোযা রাখল সে শিরক করল।  অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করা যায় এমন কোন কাজ করে তা দ্বারা মানুষের প্রশংসা লাভের ইচ্ছা করা। যেমন সুন্দর ভাবে নামায আদায় করা, কিংবা সদকা করা এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ তার প্রশংসা করবে, অথবা সশব্দে যিকির-আযকার পড়া ও সুললিত কণ্ঠে তেলাওয়াত করা যাতে তা শুনে লোকজন তার গুণগান করে। যদি কোন আমলে রিয়া তথা লোক দেখানোর উদ্দেশ্য সংমিশ্রিত থাকে, তাহলে আল্লাপাক তা বাতিল করে দেন।  রাসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এরশাদ করেন: “তোমাদের উপর আমি যে জিনিসের ভয় সবচেয়ে বেশি করছি তা হল শিরকে আসগর। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রসুলাল্লাহ! শিরকে আসগর কি? তিনি বললেন: রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করা” (আহমদ,ইবনে মাজাহ)। পার্থিব লোভে  পড়ে কোন আমল করাও এ প্রকার শিরকের অন্তর্গত। যেমন কোন ব্যক্তি শুধূ মাল-সম্পদ অর্জনের জন্যেই হজ্জ করে, কিংবা শরয়ী জ্ঞান অর্জন করে বা জিহাদ করে ইত্যাদি।

পরিশেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে, শিরকে আসগর বান্দাকে যদিও ইসলামের গন্ডি থেকে বের করে দেয় না, তবে তার ঈমান ও আক্বীদায় ত্রুটি ও কমতির সৃষ্টি করে। শিরকে আসগর বা ছোট শিরক ধীরে ধীরে বান্দাকে শিরকে আকবারে লিপ্ত করে সর্বনাশ ঘটাতে পারে। যেমন ছোট আগুন থেকে বড় আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সব ধরনের শিরক থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।

(লেখক: মৎস্য-বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, পোস্ট-ডক্টরাল ভিজিটিং ফেলো, সিডনী)

 

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising