কায়সার আহমেদ: বিজয়ের বায়ান্নতে পদার্পণ করলো বাংলাদেশ। ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। যেমন আনন্দের তেমন বেদনারও বটে। লক্ষ লক্ষ বীর শহীদের আত্মত্যাগ ও মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে, ২৫শে মার্চ ১৯৭১ থেকে দীর্ঘ নয়টি মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ১৬ই ডিসেম্বর আমরা আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছি। এ বিজয়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, একটি সংবিধান, মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা।
কায়সার আহমেদ: বিজয়ের বায়ান্নতে পদার্পণ করলো বাংলাদেশ। ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। যেমন আনন্দের তেমন বেদনারও বটে। লক্ষ লক্ষ বীর শহীদের আত্মত্যাগ ও মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে, ২৫শে মার্চ ১৯৭১ থেকে দীর্ঘ নয়টি মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ১৬ই ডিসেম্বর আমরা আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছি। এ বিজয়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, একটি সংবিধান, মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন এই স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা পাবার পেছনে রয়েছে করুণ ইতিহাস, দীর্ঘ সময়ের শোষণ-বঞ্চনা, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নযাত্রা শুরু, ১৯৬৬ সনের ৬ দফা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ৭৯ এর গণঅভ্যুথ্বান, ৭০ সালের নির্বাচন পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে মহান সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ করে কোনো একটি ঘোষণার ফসল নয়। রাজনৈতিকভাবে এর প্রস্তুতি ছিলো সারা জীবনের। আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে ভীত সন্ত্রস্ত থেকেছে। আজ মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানিত হচ্ছে।১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শক্তি আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন দেয়নি, বরং পাকিস্তান সরকারকে অস্ত্র সরবরাহ করে সেনাবাহিনীকে গণহত্যার মদদ দিয়েছে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী গঠিত মিত্রবাহিনী যখন প্রায় ঢাকার দোরগোড়ায়, আর পাকিস্তানী নরপশু সেনা শাসকরা যখন বুঝতে পারলো হার তাদের নিশ্চিত তাই তাদের শেষ চেষ্টা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিজয় ঠেকিয়ে দেয়ার জন্যে জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রস্তাবিত যুদ্ধ বিরতি, আর সেটাকে বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলো তাদের তখনকার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র আর তাদের পররাষ্ট্র সচিব সেই কুখ্যাত হেনরী কিসিন্জার। আমাদের বিজয়ের সন্ধিক্ষণে জাতিসংঘে আনিত সেই ‘যুদ্ধ বিরতির’ প্রস্তাব অনুমোদিত হলে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জন সম্ভব হতো না। সেটা কোনো যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব ছিলো না, ছিলো আমাদের বিজয়কে ঠেকানোর গভীর ষড়যন্ত্র। ঐ যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব ঠেকানোর জন্যে বন্ধু প্রতিম দেশ রাশিয়া তিন তিনবার ভেটো প্রদান করে। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে আমাদের বিজয় লগ্নে পাকিস্তানের স্বার্থে হুমকি স্বরূপ আমেরিকা তাদের সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিলো বঙ্গোপসাগর অভিমুখে। আমেরিকার এহেন উদ্দেশ্য প্রতিহত করার জন্যে তখন রাশিয়া তাদের অষ্টম নৌবহর পাঠিয়ে দিয়ে বিষয়টিতে সমতা এনেছিলো। আমেরিকার বিরোধিতা স্বত্বেও বাংলাদেশের দামাল মুক্তিযোদ্ধারা তাদের স্বাধীনতা জয় করেছে, তা আমেরিকা কখনোই মেনে নিতে পারেনি। বিভিন্ন উপায়ে সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া দেশটিকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। তৎসময়ে ১৯৭৪ সালে বড় যে আঘাতটি করেছিলো তা হলো বাংলাদেশের খাদ্যের জাহাজ ফিরিয়ে দিয়ে দেশব্যাপী ভয়ংকর কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক।*১৯৭৪ এর কথা। আগস্ট সেপ্টেম্বরে ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে দেশের কিছু এলাকা। মুুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেলো। বিদেশী শক্তির ষড়যন্ত্রে খাদ্য ঘাটতি অনিবার্য। দেশব্যাপী মানুষ মারা যাচ্ছিলো। স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রীর হিসাব অনুযায়ীই অনাহারে ও রোগে সাড়ে সাতাশ হাজার মানুষ মারা গেছে। বেসরকারি হিসেবে এই মৃত্যুর সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কবি রফিক আজাদ লিখলেন , ভাত দে হারামজাদা, তা-না-হলে মানচিত্র খাবো। হুমায়ুন আজাদ কথিত ‘অপভাষায় প্রকাশিত ক্রোধে’র কবিতার জন্যে রফিক আজাদের নামে হুলিয়া জারি হলো। এক অনুজ কবি রফিক আজাদকে বললেন আপনি কি লিখলেন ‘ভাত দে হারামজাদা’; বঙ্গবন্ধু তখন দেশের প্রেসিডেন্ট। অনেকেই ভেবেছিলো কবিকে জেলে যেতে হবে। রফিক আজাদ ভয় পেয়েছিলেন। বীর উত্তম কাদের সিদ্দিকীর মা এই ঘটনা জানতে পেরে তাঁকে কাদের সিদ্দিকীর সাথে বঙ্গবন্ধুর নিকট পাঠিয়েছিলেন। গণভবনে গিয়ে রফিক আজাদ বঙ্গবন্ধুর দুই পা জড়িয়ে ধরলে বঙ্গবন্ধু বলে উঠলেন, এই হারামজাদা, তুই কি লিখেছিস?তখন রফিক আজাদ বলে উঠলেন, ক্যান?এই যে আপনি আমারে হারামজাদা বললেন, আমি এই কথাই তো লিখেছি। আপনি কি আমারে গালি দিলেন?নাকি আদর করে বললেন? আমি তো ওই কথাই বলছি। পেটে আগুন জ্বললে সবাই যা বলে আমি তাই বলেছি। এখন আমি জেলে থাকলে কবিতা লিখব কি করে?এরপর বঙ্গবন্ধু ব্যাখ্যা চাইলেন। আর রফিক আজাদ ব্যাখ্যা দিলেন এইভাবে। সারা পৃথিবীর মানুষের প্রধান চাওয়া হলো ভাত। আমি সারা পৃথিবীর লোকের কথা বলেছি। আমাদের দেশে, নিরন্ন মানুষ এই ভাষাতেই কথা বলে। এটা বলার পর বঙ্গবন্ধু বললেন, তা বটে। তারপর তিনি রফিক আজাদের কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘ভালো লিখেছিস, যাহ তুই মনসুর আলীর (তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) কাছে যা’। তিনি তখন কবির সামনেই ফোন করে বললেন ‘রফিকরে পাঠাইলাম তোমার কাছে, ভালো লিখে, ওর কথা শুইন্যা ওরে ছাইড়া দিও’। তারপর বঙ্গবন্ধু রফিক আজাদের পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন, ‘তুই আরও লিখবি, এমনি করেই লিখবি। মাঝে মাঝে কাদেরের সাথে আসবি। তুইতো আমার মুক্তিযুদ্ধের কবি’। দেশের কবি।এমনই ছিলেন বঙ্গবন্ধু। *বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরো একটি কথা। বাকশাল গঠিত হয়েছে। সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সে সময়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশীয় লেখক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার বক্তব্যে তার এই নতুন ব্যবস্থাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “ভাগ্যের কি পরিহাস, যে আমি সমগ্র জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি এবং জেল খেটেছি অনেকগুলো বছর, সেই আমাকেই কিনা এক দল বানাতে হলো। বাকশাল আগস্ট থেকে পুরোদমে কাজ করবে। আমি এটা করতে বাধ্য হয়েছি। পাকিস্তানপন্থী দলগুলো, জাসদের অস্ত্রধারী লোকেরা, সর্বহারা পার্টি এবং অন্য অনেকে আমাদের দেশের স্বাভাবিক রাজনীতি ও প্রশাসন ধ্বংস করতে উঠে-পড়ে লেগেছে… আর কোনো উপায় ছিলো না বলে স্বাধীনতার পক্ষের সমমনা লোকদের নিয়ে একটা প্লাটফর্ম হিসেবে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছি। এই একদলীয় ব্যবস্থা নিতান্তই সাময়িক। দেশকে প্রতিবিপ্লবের হাত থেকে রক্ষা করা মাত্রই আমি বহুদলীয় গণতন্ত্র আবার বহাল করবো।”আগামী ৭ই জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে দেশটি দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এই নির্বাচন প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন। চলছে নিয়মিত ধর্মঘট, অবরোধ, অগ্নিসন্ত্রাস। চলছে ধড়পাকড় গ্রেফতার। আজ অনেক মুক্তিযোদ্ধাই তাদের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে যুক্ত হয়েছে রাজাকারদের দলে, আবার অনেক রাজাকার তাদের আদর্শ দিয়ে কলুষিত করার ব্রত নিয়ে যুক্ত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের দলে।জানুয়ারীর নির্বাচনকে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রহসনের ও ক্ষমতা ভাগাভাগির নির্বাচন বলে উল্লেখ করেছেন। অবিলম্বে তফশিল বাতিল ও জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে, প্রধানমন্ত্রী সহ সকল মন্ত্রীদের পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করার দাবি জানিয়েছেন। একতরফা নির্বাচনের লক্ষে অন্যতম প্রধান বিরোধী দলের প্রতি দমননীতি অব্যাহত রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সরকারের বৈধতার প্রশ্ন থেকে যাবে। এতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শক্তি, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ বিপর্যস্ত আবশ্যম্ভাবি। বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন, ৭ই জানুয়ারি দেশের প্রধান বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে, নাম সর্বস্ব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি এক তরফা হাস্যকর নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সরকার ও নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। নির্বাচনের আগে নির্বিচার মামলা, গ্রেফতার, বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় সাজা প্রদান ও নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নির্বাচন, এমনকি রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে জানুয়ারীর গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্রের কুটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশে নির্বাচনে একদিকে ভারত, চীন, রাশিয়া এবং অন্যদিকে য্ক্তুরাষ্ট্র – সবার ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ। হোয়াইট হাউজ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের সমন্বায়ক জন কিরবিকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র কোন পক্ষাবলম্বন করে না। এদিকে ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করা হয়েছে যে ভারত ও চীন যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে এক সাথে রয়েছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রকে খালেদা জিয়ার পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। গত ৬ই ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবিকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে সমর্থন করতে ভারত, চীন ও রাশিয়া যেহেতু একই কাতারে দাড়িয়েছে, তাই বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কি জানতে চাওয়া হলে উত্তরে যুক্তরাষ্ট্র মুখপাত্র জন কিরবি বলেন যে, “আমরা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন বিশ্বাস করি এবং আমরা তা অব্যাহত রাখবো। আমরা বিদেশী নির্বাচনে কোনো পক্ষ নেই না এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তা বদলাবে না। বাংলাদেশের মানুষের সেই মৌলিক আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করার জন্য আমরা যা যা করতে পারি, তা অব্যাহত রাখবো”। সম্প্রতি *ইন্ডিয়া টুডে’র এক প্রতিবেদনে স্পষ্টত:ই তুলে ধরা হয়েছে যে, জানুয়ারীর নির্বাচনকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় চ্যালেন্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনের ফলাফল ভারতের জন্য ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই স্থিতিশীল বাংলাদেশকে সমর্থন করার কথা বললেও বিশ্বের বৃহত্তম দুই গণতান্ত্রিক দেশ বিপরীত শিবিরে অবস্থান করছে বলেই দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগকে নয়াদিল্লি সমর্থন করছে আর অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন সরকারি নেতা, কর্মকর্তাকে ভিসা নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন বেড়েই চলেছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়ে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঢাকার ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে, তখন ভারত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও জামায়াত সরকারের প্রত্যাবর্তনের বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন। সবাই তাকিয়ে আছে ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে। দেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে বেশ তোড়জোড় চলছে। কোন কোন দেশের রাষ্ট্রদুতগনতো তাদের প্রাপ্ত কুটনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছে। এদের মধ্যে বৃহৎ শক্তিধর আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এগিয়ে। গত ১৫ই ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকাকে জানানো হয়েছে যে বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সঙ্গে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এর উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের সম্পর্ক রয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা আরো জানিয়েছেন যে গত ১২ ও ১৩ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে সরকারবিরোধীরা রাস্তাঘাট অবরোধ করে, যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। রুশ মুখপাত্র আরো জানান যে আগামী নির্বাচনের ফলাফল যদি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সন্তোষজনক মনে না হলে ‘আরব বসন্তের” মতো করে বাংলাদেশকে আরো অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হতে পারে। আরো আশঙ্কা রয়েছে যে আগামীতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকমের অবরোধ আরোপ করা হতে পারে। তিনি আরো বলেন যে বাংলাদেশের শিল্প খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর ওপর আঘাত আসতে পারে; সেই সঙ্গে কিছু সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক রায় প্রদানে বাধাদানের তথ্যপ্রমাণহীন অভিযোগ তুলে পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। রুশ মুখপাত্র আরো বলেন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত হবে, এমন সম্ভাবনা কম। রুশ মুখপাত্র বলেন রাশিয়ান সরকার মনে করে যে, বাহিরের শক্তিগুলোর সব ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার বিষয়টির সমাধান হবে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম জনগণের দ্বারাই, অন্য কোনো শক্তির দ্বারা নয়। সম্প্রতি রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রলয়ের বিবৃতি সম্পর্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন ‘রাশিয়া কি বলেছে, এটা আমাদের বিষয় নয়। তবে আমরা নজর রাখছি ও সতর্ক আছি। আমরা সার্বভৌম, আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ – এটার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করি। তিনি বলেন আমার মনে হয় না এ ধরনের ‘আরব বসন্তের’ মত ঘটনা ঘটানোর কোনো সুযোগ এখানে আছে। আমরা ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করবো। ঢাকায় সহিংসতায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এর সম্পৃক্ততা নিয়ে রাশিয়ার বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন ‘আমরা আগেও এ ধরনের বাড়তি হামলা, মামলা, অগ্নিসন্ত্রাস প্রতিহত করেছি। কিছু অগণতান্ত্রিক গণতন্ত্রের ধোয়া তুলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াক বানচাল করার চেষ্টা যারা চালাচ্ছে, আসলে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। আমাদের দেশের জনগণ এটি প্রতিহত করবে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যাচ্ছি। আমাদের ভারসাম্য কূটনীতি নিয়ে আমরা চলতে চাই। তিনি বলেন সরকার কোনো সুপারপাওয়ারের চাপে নেই।নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর স্পষ্টত:ই বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে বহির্বিশ্বে কোনো ধরনের চাপ নেই। তারা শুধু জানতে চায়, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে কি কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন নির্বাচনে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। আর পুলিশ, প্রশাসন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিজাইডিং অফিসাররা যখন যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে যাবেন। তিনি আশাবাদী যে নাশকতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে। তাদের গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। এখন প্রযুক্তির যুগ। কেউ কোনো ধরনের নাশকতা করে পার পাবে না। অত্যন্ত শান্তি ও সুশৃংখলভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।২০শে ডিসেম্বর ২০২৩ সূত্র: *কবি আবুল হাসানের আত্মজীবনী ঝিনুক নীরবে সহো, ইন্ডিয়া টুডে
1 Comment
রফিক ইসলাম
January 5, 2024, 7:05 pmখুবই সুন্দর লিখেছেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
REPLY