সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট: গত ২১ জানুয়ারি ২০২৪ রবিবার অনুষ্ঠিত হল ট্যামওয়ার্থের একমাত্র মসজিদের সফল ফান্ড রাইজিং ডিনার । অবার্নের ওমর মসজিদ হলরুমে প্রায় তিনশত ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উপস্থিতিতে এ অসাধারণ ফান্ড রাইজিং ডিনার সম্পন্ন হয় । ট্যামওয়ার্থ অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি শহর এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র। ট্যামওয়ার্থ আঞ্চলিক কাউন্সিলের স্থানীয় সরকার এলাকার
সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট: গত ২১ জানুয়ারি ২০২৪ রবিবার অনুষ্ঠিত হল ট্যামওয়ার্থের একমাত্র মসজিদের সফল ফান্ড রাইজিং ডিনার । অবার্নের ওমর মসজিদ হলরুমে প্রায় তিনশত ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উপস্থিতিতে এ অসাধারণ ফান্ড রাইজিং ডিনার সম্পন্ন হয় ।
ট্যামওয়ার্থ অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি শহর এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র। ট্যামওয়ার্থ আঞ্চলিক কাউন্সিলের স্থানীয় সরকার এলাকার মধ্যে পিল নদীর উপর অবস্থিত, এটি এই অঞ্চলের বৃহত্তম এবং জনবহুল শহর, যেখানে ২০২১ সালে ৬৩,৯২০ জনসংখ্যা ছিল, এটি নিউ সাউথ ওয়েলসের দ্বিতীয় বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ শহর হিসাবে পরিণত হয়েছে। ট্যামওয়ার্থ কুইন্সল্যান্ড সীমান্ত থেকে ৩১৮ কিলোমিটার (১৯৮ মাইল) দূরে এবং ব্রিসবেন এবং সিডনির মধ্যে প্রায় মাঝপথে অবস্থিত। ওই অঞ্চলে এটিই প্রথম যথাযথ একমাত্র সঠিক মসজিদ।
১৮৮৮ সালে বৈদ্যুতিক স্ট্রিট লাইট ব্যবহারের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রথম স্থান হওয়ায় শহরটি “প্রথম আলোর শহর” নামে পরিচিত। ট্যামওয়ার্থ “অস্ট্রেলিয়ার কান্ট্রি মিউজিক ক্যাপিটাল” এবং “অস্ট্রেলিয়ার উত্তর ন্যাশভিল” হিসাবেও বিখ্যাত। শহরটিকে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইকুইন ক্যাপিটাল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় কারণ এই শহরে প্রচুর সংখ্যক অশ্বচালিত ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয় এবং বিশ্বমানের অস্ট্রেলিয়ান ইকুইন অ্যান্ড লাইভস্টক ইভেন্টস সেন্টার নির্মাণ করা হয়, যা দক্ষিণ গোলার্ধে তার ধরনের সবচেয়ে বড়।
ট্যামওয়ার্থের গরম গ্রীষ্ম এবং তুলনামূলকভাবে শীতল শীতের সাথে একটি উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু রয়েছে। এটি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড এবং উত্তর পশ্চিম ঢালের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে [২৩] অথবা ব্যুরো অফ মেটিওরোলজি পূর্বাভাসের উত্তর পশ্চিম ঢাল এবং সমভূমি বিভাগের। কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস প্রকল্পের অধীনে, ট্যামওয়ার্থ একটি আর্দ্র উপক্রান্তীয় জলবায়ু (Cfa) রয়েছে।
কামিলারি জনগণ, যাদের ভাষা থেকে “বুজরিগার” শব্দটি এসেছে, ইউরোপীয় যোগাযোগের আগে এই অঞ্চলে বসবাস করত। ১৮১৮ সালে, জন অক্সলি পিল উপত্যকার মধ্য দিয়ে যান এবং মন্তব্য করেন, “এর জলের চেয়ে সূক্ষ্ম বা আরও বিলাসবহুল দেশ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। এই বিস্তৃত উপত্যকার চেয়ে পরিশ্রমী বসতি স্থাপনকারীর জন্য এই বিশ্বের কোন জায়গায় বেশি সুবিধা দিতে পারে না” ।
১৮৩১ সালে, প্রথম ভেড়া স্টেশন এবং গবাদি পশু স্টেশন গঠিত হয়, এবং একই বছরে, অস্ট্রেলিয়ার কৃষি কোম্পানিকে ১২৭,০০০ হেক্টর (৩১০,000 একর) জমির ইজারা দেওয়া হয়েছিল, গুনু গুনুতে, ট্যামওয়ার্থের বর্তমান অবস্থানের দক্ষিণে, বর্তমান কালের কালালা।
আব্দুল্লাহ মামুন (প্রকৌশলী,বুয়েট) প্রথম উদ্যোগ নেন ওই অঞ্চলে সঠিকভাবে ইসলামের দ্বীনের আলো প্রোজ্জ্বলনের জন্যে। পাহাড়সম বাধা, মাত্র ৬০০ মুসলমান পরিবারের সীমাবদ্ধতা ছাড়াও ব্যাপক সমস্যার ভিতর তাঁর প্রচণ্ড ইচ্ছে শক্তি, দৃঢ়তা আল্লাহ্পাক কবুল করেছেন। একটি ৫ একরের বাড়ী ভাড়া নিয়ে প্রথমে নামাজ, মক্তব শুরু করেন। স্থানীয় পাকিস্তানী, ভারতীয় ও হাতে গুনা কিছু আরব এগিয়ে আসেন তাঁর এ মহতী কাজে। অতঃপর, সিডনি থেকে ২/৪ জনের একটি টীম যেয়ে স্থানীয় সকলকে একত্র করে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার জন্য উৎসাহিত করেন। একজন চোখের ডাক্তার, একজন নিউরো ডাক্তার, কয়েকজন ব্যবসায়ী ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমে পড়েন ইতিহাস সৃষ্টি করার জন্যে।
অবশেষে হঠাৎ একটি চার্চ বাজারে আসে, এটাও আল্লাহ্পাকের ইচ্ছা। প্রথম সুযুগেই স্থানীয়রা সেই চার্চ ডিপোজিট দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ক্রয় করে নেন। ট্যামওয়ারথ থেকে প্রতি শুক্রবার আব্দুল্লাহ সহ ২/৩জন সিডনিতে এসে মসজিদগুলোতে অর্থসাহায্য সংগ্রহ করতে থাকেন।
অবশেষে ২১শে জানুয়ারি ২০২৪ রবিবার একটি সফল ফান্ড রাইজিং ডিনার সম্পন্ন হয়। প্রথমেই বক্তব্য রাখেন ট্যামওয়ার্থ মসজিদের ইমাম আব্দুল্লাহ মামুন (প্রকৌশলী,বুয়েট) । এরপর অত্যন্ত চমৎকারভাবে বক্তব্য রাখেন সিডনির অতি পরিচিত, সকলের কাছে সম্মানিত সাউথ আফ্রিকান আলেম শাইখ রিদওয়ান। মাগরিব নামাজের পর শুরু হয় আরেকজন জননন্দিত আলেম ওমর আল বান্নার কথা। তারপর অকশন এবং এর পর সুস্বাদু রাতের খাবার। রাতের খাবারের পর আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠান শেষ করেন এমসি হাফি (ডাক্তার) । মহিলাদের জন্য ছিল সম্পূর্ণ পৃথক বসার ব্যবস্থা।
কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা ছাড়াই নির্দিষ্ট কোনো স্থানকে অধিক পবিত্র জ্ঞান করার বৈধতা ইসলামে নেই। যেকোনো মসজিদেই আপনি দান করতে পারেন। আপনার গ্রামের মসজিদে দান করলেও আপনি সওয়াব লাভ করবেন। নিজের বাড়ির পাশের মসজিদে দান-সদকা না করে মনগড়া ধারণার বশবর্তী হয়ে পাগলা মাজারে দান করলে সওয়াবের বদলে গুনাহও হতে পারে। ভণ্ড পীরের ভুয়া পীরকে দান -খয়রাত করলে গুনাহ হবার সম্ভাবনা বেশি।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা হলো বাজার।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪১৪)
মসজিদ হলো মুসলিম সমাজের মূলকেন্দ্র। এ কারণে রাসুল (সা.) হিজরতের প্রথম দিনই মসজিদ নির্মাণের কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। মদিনায় হিজরতের সময় যাত্রাবিরতিকালে তিনি কুবা নামক স্থানে ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। পরে মদিনায় পৌঁছে তিনি মসজিদ-ই-নববী স্থাপন করেন। এবং সেখান থেকেই ইসলামের জ্যোতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেন।
মসজিদ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারীদের মহান আল্লাহ ভীষণ পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না।
অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১৮)
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৫০)
তা ছাড়া মসজিদ নির্মাণ এমন একটি পুণ্যময় কাজ, যার সওয়াব মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে, সাদাকায়ে জারিয়া। যত দিন সেই মসজিদে আল্লাহর ইবাদত হবে, তত দিন নির্মাণকারী এর সওয়াব পেতে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সাত ধরনের আমলের প্রতিদান মৃত্যুর পর কবরেও জারি থাকে। সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব কবরেও পাওয়া যায়। সদকায়ে জারিয়ার মধ্যে একটি হচ্ছে মসজিদ নির্মাণ করা।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘ঈমানদারের যেসব আমলের সুফল মৃত্যুর পরও চলমান থাকে তার অন্যতম হলো—১. ওই ইলম, যা সে শিখিয়ে গেছে। ২. রেখে যাওয়া নেক সন্তান। ৩. রেখে যাওয়া কোরআনের কপি। ৪. নির্মাণকৃত মসজিদ। ৫. নির্মাণ করে যাওয়া মুসাফিরখানা। ৬. স্থাপন করা নলকূপ।
আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা কোনো মানুষকে দেখবে সে মসজিদের সাথে সম্পর্ক গড়ছে, তখন তোমরা তার ইমানের স্বীকৃতি দাও।’ এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন : ‘নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ইমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি এবং যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত আদায় করে।’ [সুরা তাওবা, ৯ : ১৮]
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে পাখির বাসা পরিমাণ কিংবা তারচেয়েও ছোট মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।’
মসজিদের অত্যধিক ফজিলতের কারণেই আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে ২৮ জায়গায় এর আলোচনা করেছেন।
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় মসজিদ নির্মাণ করা। কারো সেই সামর্থ্য না থাকলে কমপক্ষে সহযোগিতা করবে। মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণে আত্মনিয়োগ করবে। মসজিদকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় করে রাখবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৫৫)
সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো, মুসল্লিদের মসজিদে এসে নামাজ পড়ার দাওয়াত দেওয়ার মাধ্যমে নামাজ কায়েম করা। আল্লাহকে ভুলে যাওয়া মানুষদের আল্লাহর পথে নিয়ে আসা। মসজিদের সঙ্গে তাদের মন সম্পৃক্ত করে দেওয়া। কিয়ামতের দিন সেসব মানুষকে আরশের ছায়ায় স্থান দেওয়া হবে, যাদের অন্তর মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই সৌভাগ্যবান লোকদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।
আল্লাহ্পাকের এ পবিত্র ঘরের জন্য যারা বিভিন্নভাবে এগিয়ে এসেছেন, যারা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন -আল্লাহ্পাক সকলের অনুদান কবুল করে তার সওয়াব অনেকগুন বাড়িয়ে দিন (আমীন) ।
অনেকের কাছেই অর্থ -ধন -সম্পদ আছে, তবে মসজিদ তৈরির মতো এ ধরনের পবিত্র কাজে আল্লাহ পাক সকলের অর্থ গ্রহণ করেন না। যার অনুদান গ্রহণ করলেন , বরং তিনি সৌভাগ্যবান। আল্লাহ্পাকের কাছে আপনার স্ট্যাটাস জানতে চাইলে আপনি দেখুন-আল্লাহ্পাকের দ্বীনের কাজে আপনাকে কতটুকু ব্যবহার করছেন। অর্থাৎ আল্লাহ্পাক যাঁকে ভালোবাসেন, শুধু তাকেই দ্বীনের কাজ করার সুযোগ দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন বেহায়াপনা,গান-বাজনা এ ধরনের ফেৎনায় যারা জড়িত, নিঃসন্দেহে শয়তান তাদেরকে খুব পছন্দ করে এবং শয়তান তাদেরকে তার কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে-এতে গর্বিত হওয়ার কিছু নেই । আফসোস -কুলাঙ্গাররা বুঝেই না, কখন খুশি হতে হবে আর কখন দুঃখিত হতে হবে। আল্লাহ পাক সকলকে দ্বীনের সহি বুঝ দান করুন (আমীন) ।
পুরো হলরুমের দায়িত্বে ছিলেন শায়াজ (ফিজি) ও এম,এ ইউসুফ শামীম। ট্যামওয়ার্থ থেকে আলী ওসমান, আশীক,জিসান,জুবায়ের,হাবিব, রিজওয়ান প্রমুখ এ ফান্ড রাইজিং ডিনারের সফলতার কারণ।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *