গ্রাম বাংলার সবচেয়ে বিখ্যাত জিনিসগুলোর মধ্যে খেজুরের রস অন্যতম। এক সময় প্রচুর পরিমাণে খেজুর রস পাওয়া যেত গ্রাম বাংলার মাটিতে। হয়তো তখন মাটিতে লবনের পরিমাণ বেশি ছিলো বিধায় খেজুর গাছ বেশি হতো। এখন দিনে দিনে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে আসছে। আমাদের বাড়ির সামনেও প্রায় ত্রিশের মতো খেজুর গাছ ছিল। যা হতে আমাদের প্রতি মৌসুমে অনেক
গ্রাম বাংলার সবচেয়ে বিখ্যাত জিনিসগুলোর মধ্যে খেজুরের রস অন্যতম। এক সময় প্রচুর পরিমাণে খেজুর রস পাওয়া যেত গ্রাম বাংলার মাটিতে। হয়তো তখন মাটিতে লবনের পরিমাণ বেশি ছিলো বিধায় খেজুর গাছ বেশি হতো। এখন দিনে দিনে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে আসছে। আমাদের বাড়ির সামনেও প্রায় ত্রিশের মতো খেজুর গাছ ছিল। যা হতে আমাদের প্রতি মৌসুমে অনেক অনেক খেজুর রস পাওয়া যেত। খেজুর রস থেকে বানানো হতো প্রচুর পরিমাণে রাব। যেই রাব দিয়ে বিভিন্নরকম পিঠা বানানো হতো। আমাদের একটা বড় চার কৌনাকৃতির তাওয়া ছিল যেটাতে রস গরম করতে করতে ঘন হয়ে রাবে রুপান্তরিত করা হতো। দেখতে লাল আর ঘন আঠারো সেই রাব সারাবছরের জন্য সংরক্ষণ করা হত। চিতই পিঠা দিয়ে রাব নারকেলের মজাটা খুবই সুস্বাদু। ভাপা পিঠার সাথে ও অনেক মজা। এই প্রসঙ্গে একটা ছোট গল্প না চললেই নয়; আমার ভাইয়ের প্রধান খাবারগুলোর তালিকায় ছিলো রাব অন্যতম। তো একদিন আমাদের এক চাষির ছেলের বিয়েতে আমার আব্বার সাথে আমার ভাইটা দাওয়াতে গেল। দাওয়াত থেকে এসে ভাই আমাদেরকে বলতে লাগলো, আরে আজকের দাওয়াত সেই রকম হইছে। আমরা বললাম কেন? কি এমন খাবার হলো? তখন সে বলতে লাগলো, আরে তোদেরকে বলে বুঝাতে পারবো না আমি খুব মজা করে খেয়েছি…। প্রথম মাংস দিয়ে ভাতগুলো কোনরকম খেয়ে পরে দই আর রাব দিয়ে অনেক মজা করে ভাত খাইলাম। আরো বলতে লাগলো, কাতিমদারি খুব ভালো পড়ছে কারণ উনাকে মানা করার পরও বারবার আমার হাতের উপর রাব ঢেলে দিয়েছে আর আমিও মজা করে খেয়ে শান্তি পাইলাম।
যেকোনো অনুষ্ঠানে যারা খাবার পরিবেশনের কাজ করতেন তাদেরকে আমাদের এলাকায় কাতিমদার বলা হতো যেটা আমাদের এলাকার আঞ্চলিক ভাষা। ভাইয়ের বয়স ছিলো তখন সাত কিংবা আটের মতো হবে। যাইহোক বেচারা ভাই তার আট বছর জীবনের সেরা দাওয়াত ওটাকেই মনে করেছে শুধুমাত্র অতিরিক্ত রাব ঢেলে দেয়ার কারণে।
এবার খেজুর রসের কথায় আসা যাক, সেই মজার শিন্নির স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে মনে হয় অনেক বছর পরও! অনেক বছরেও এখন আর সেটা খাওয়ার সুযোগ হয়নি। খেজুর রস, পোলাওর চাল, নারকেল দিয়ে মজাদার শিন্নি রান্না করা হতো। খেজুর রসের সেই সুমধুর ঘ্রাণ অনেক দূর হতেও নাকে আসতো। আর খেজুর রস চুরি করার জন্য অনেক ছাত্রদের দেখা যেত রাতের বেলা দল বেঁধে আনাগোনা করতে। স্কুল কলেজ পড়ুয়া ভাইরা সবাই মিলে রস চুরি করে কৌশলে শিন্নি রান্না করে খেতেন। একবার আমাদের বাড়িতে সেইরকম একদল ধরা খেয়েছিলেন, যাদের মধ্যে অনেকজন আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ আত্মীয়! যার কারণে উনাদেরকে ধরার পর আমরা উল্টো লজ্জিত হয়েছিলাম। যাইহোক, রসের এইরকম অভিজ্ঞতা সবার আছে। কারো বেশি আর কারো হয়তো কম। সেই খেজুর রস আর রাব এখন গ্রাম বাংলার মাটিতে নেই বললেই চলে!! মিস করি খেজুর রস…। তবে নতুন চর উঠলে সাধারণত লবনাক্ত মাটিতে খেজুর গাছ বেশি হয়। মাটি পুরাতন হলে তখন খেজুর গাছ আর হয় না। খেজুর রস গ্রাম বাংলার এক অসাধারণ মজাদার ঐতিহ্য।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *