728 x 90

  ট্রেন্স থেকে ফিরে এসে: রউফ আরিফ

  পূর্ব প্রকাশের পর- আরমান দারোয়ানের পেছন পেছন যেখানে আসে সেটা একটা ওয়েল ডেকরেটেড ড্রয়িং রুম। ঠিক ড্রয়িং রুম বলা যাবে না। বরং ড্রয়িং কাম অফিস রুম বলা উচিত। দারোয়ান তাকে দরোজার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে ভেতরে গেলো। ফিরে এসে বলল, যান। সাহেব ভেতরে আছেন। আরমান ভেতরে ঢুকে দেখলো একজন মুখের ওপরে খবরের কাগজ আড়াল

 

পূর্ব প্রকাশের পর-

আরমান দারোয়ানের পেছন পেছন যেখানে আসে সেটা একটা ওয়েল ডেকরেটেড ড্রয়িং রুম। ঠিক ড্রয়িং রুম বলা যাবে না। বরং ড্রয়িং কাম অফিস রুম বলা উচিত।

দারোয়ান তাকে দরোজার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে ভেতরে গেলো। ফিরে এসে বলল, যান। সাহেব ভেতরে আছেন।

আরমান ভেতরে ঢুকে দেখলো একজন মুখের ওপরে খবরের কাগজ আড়াল করে বসে আছে। কাগজ থেকে মুখ না সরিয়েই তিনি বলল, বসুন।

আরমান সামনের চেয়ারে বসে পড়লো। খেয়াল করলো, সে যার কাছে এসেছে তার বয়স ষাটের ওপরে। উজ্জল ফর্সা গায়ের রং। দাড়ি নেই। তবে ঠোটের ওপরে কাঁচা পাকা পুরু গোফের রেখা। মাথার চুলও তেমনি কাঁচা-পাকা। চোখে পুরু পাওয়ার লেন্স-এর চশমা। কিছুক্ষণ পরে তিনি মুখের ওপর থেকে কাগজ সরিয়ে বললেন, আপনাকে আগে কখনো দেখেছি বলে তো মনে হয় না।

-আপনার অনুমান সত্য। এটাই আমাদের প্রথম সাক্ষাত।

-বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি?

-গোলাম মাওলা আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছে।

-কোন গোলাম মাওলা?

-আপনার ভাগিনা। জে এন্ড জে- কথা শেষ করতে পারে না আরমান। ভদ্রলোক হো হো করে হেসে উঠে বলে, তাই বলুন! কেমন আছে সে?

-ভালো আছে। আরমান গোলাম মাওলার চিঠিটা এগিয়ে দিতে দিতে বলে, মাওলা এটা আপনাকে দিয়েছে।

চিঠিটা নিয়ে তিনি মনোযোগ দিয়ে পড়েন। চিঠি পড়া শেষ করে তিনি সোজা সাফটা প্রশ্ন করেন, মাওলার সাথে আপনার কতদিনের পরিচয়?

-ভার্সিটিতে একসাথে পড়তাম। তারপর যুদ্ধের সময়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে যাই। ফিরে এসে দেখি বাবা মা নেই। তারা পাকসেনাদের হাতে শহীদ হয়েছে। তারপর ঢাকায় মোটামুটি কোনো রকমে দিনাতিপাত করছিলাম। কিন্তু এমন একটা মিথ্যা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছি যে, ঢাকায় থাকা নিরাপদ মনে করছি না, তাই আপনার কাছে কিছুদিনের জন্য-

আরমান থামে। ভদ্রলোক আরমানের মুখের দিকে চেয়ে বলে, ঢাকায় আপনার সমস্যাটা কি?

আরমান একটু ভাবে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, যদি মাওলার মামার সাহায্য নিতেই হয় তাহলে তাকে পুরো বিষয়টা খুলে বলাই উচিত। সব জেনে বুঝে যদি তিনি সাহায্যের হাত বাড়ায় ভালো, না হলে অন্যপথ দেখতে হবে।

আরমানকে দোমনা দেখে তিনি বলেন, যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে দরকার নেই।

-না না। অসুবিধা কি। যেহেতু আমি আপনার কাছে আশ্রয়ের জন্য এসেছি; সেহেতু আমার ভালোমন্দ সবকিছুই আপনার জানা দরকার।

এরপরে আরমান আর কোনো কিছুই গোপন করে না। এ টু জেড খুলে বলে। সব শুনে মামা বলেন, মিনিস্টার সাহেব কেসটা ট্যাকেল করতে পারলো না?

-জানি না। আমি একা হলে তিনি কী করতেন তিনিই জানেন। কিন্তু যারা আমাকে এই ব্যাপারে জড়িয়েছে, তারা ঠিক আমার বন্ধুও নয়। চৌধুরি সাহেবই তাদেরকে আমার দলে ভিড়িয়ে দিয়েছিলেন। নানা রকম কাজে তাদের বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করতেও তিনি কসুর করতেন না। এখন তার সুর সম্পূর্ণ ভিন্ন।

-কি ধরনের কাজ করাতো চৌধুরি?

-চামচারা যে ধরনের কাজ করে থাকে।

-আপনাকে ওই ধরনের কাজ করতে হোতো না?

-না।

-কেন?

-তা জানি না।

মামা কি বুঝলো তিনিই জানেন। সোবান সোবান বলে চিৎকার করলেন। সাথে সাথে মাঝ বয়সি একটা চাকর এসে দাঁড়ালো। তাকে বললেন, এনাকে তিন তলার গেস্টরুমে থাকার ব্যবস্থা করে দাও। উনি তোমাদের মাওলা ভাইয়ের বন্ধু।

সোবান ঘাড় কাত করলো। জে আচ্ছা।

আরমানকে বলল, উপরে গিয়ে বিশ্রাম করেন। দেখি আপনার জন্য কি করতে পারি।

আরমান আর কথা না বাড়িয়ে সোবানের সাথে উপরে উঠে যায়। ওরা উপরে উঠে গেলে মামা টেলিফোনের ডায়াল ঘোরায়। ওপাশের কণ্ঠস্বর ভেসে এলে বলে, কে ছক্কু মিয়া?

-হঅ। কেমন আছিস শালা?

-ভালো আর রাখছিস কই। সবখানেই তোদের লম্বা থাবা। আমাদের তো কাজ কারবার করবারই উপায় নাই।

-আতলামি করিস না দোস্ত। সাতসকালে কি মনে করে ফোন দিছোস, তাই বল।

-আলি আরমান বলে যে ছেলেটা তোর চামচা ছিল, ছেলেটা কেমন?

-সে কি এখন তোর কাছে?

-সেটা শুনে তোর লাভ নেই। যা জানতে চাইছি তার জবাব দে।

-ও যদি তোর কাছে যায়। পারলে ওকে একটু সেলটার দে। খুব ভালো ছেলে। কয় বদমাশ ওকে ফাঁসায় দিছে। পরিস্থিতি একটু নর্মাল হলে ওকে আমি লইয়া আমু। বুঝছোস?

-দেশের বারোটা তো বাজয়ছোস। অহন নিরপরাধ পোলাপান গুলার ভবিষ্যতের বারোটা বাজাস না। বুঝছোস?

-বুঝি তো সব্বই। মগর, ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে, আপাতত সোজাপথে চলনের কোনো উপায় নাই। দিনকাল বেজায় খারাপ।

-হেইডা তো দেখতেই পাচ্ছি।

 

১৫.

আরমান বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর রোজি খুবই ভেঙ্গে পড়ে। চারিদিক থেকে নানা রকম গুঞ্জন আসছে। সেসব কথা মোটেও শ্রুতিমধুর নয়। সম্মানজনকও নয়। সবচেয়ে বড় কথা আরমান তার সাথে কোনো যোগাযোগ করছে না।

সে বাসায় এসেছিল, ভাত খেয়েছে। বিশ্রাম নিয়েছে। বৌদির সাথে কথা বলেছে। তাহলে কোনোকিছু না বলে, কোনো যোগাযোগ না করে হঠাৎ আবার নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো কেন? এটাকে রোজি কোনোভাবেই মেলাতে পারছে না।

একদিন। দুদিন। তিনদিন পার হয়ে গেছে। আরমানের কোনো খোঁজ নেই। আগে তবু জবা আপা বলত, আরমান তাদের পাড়াতেই আছে। তিনিও বর্তমানে কোনো খোঁজ দিতে পারছেন না।

তৃতীয় দিন রাতে হঠাৎ কড়া নড়লো। রোজি ভেতর থেকে জিজ্ঞাসা করল, কে?

-দরোজা খুলুন। আমি থানা থেকে আসছি।

থানার কথা শুনে রোজির বুকের রক্ত হিম হয়ে যায়। সে ভাবতে থাকে, পুলিশ যখন এসেছে তখন তার আর নিস্তার নেই। তার মাথার ওপরে বিশাল বিপদ বাঘের থাবার মতো ঝাপিয়ে পড়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। রোজি দরোজা খুলতে ইতস্তত করে। অফিসারের কণ্ঠ শোনা যায়, ভয় নেই; আপনি খুলুন।

রোজি দরোজা খুলে দেয়। আগের দিনের সেই অফিসার। রোজি দরোজা আগলে দাঁড়িয়ে থাকে। অফিসার জিজ্ঞাসা করে, আরমান সাহেব কি বাসায় এসেছে?

-জ্বি না।

-আপনাকে আমার কিছু জিজ্ঞাসা করার আছে। যদি কিছু মনে না করেন-

-আসুন।

দুরুদুরু বুকে রোজি দরোজা ছেড়ে দাঁড়ায়। অফিসার ভেতরে প্রবেশ করে। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নিয়ে সোফায় বসে। রোজি বসে না। অদূরে দাঁড়িয়ে থাকে। অফিসার গল্প করার মতো করে প্রশ্ন শুরু করে। এটা নিশ্চয়ই আপনাদের নিজস্ব বাসা?

-জ্বি না। আমরা ভাড়া থাকি।

-আপনার স্বামী ব্যক্তিগত জীবনে কি করেন?

-উনি আপাতত বেকার। চাকরির চেষ্টায় আছেন।

-আচ্ছা। তাহলে আপনাদের সংসার চলে কিভাবে?

-আমি স্কুল টিচার। দুটিমাত্র মানুষ। এতেই চলে যায়।

-আপনার বাবা মা এমন বেকার ছেলের সাথে আপনার বিয়ে দিলেন কেন?

-প্রশ্নটা খুবই ব্যাক্তিগত হয়ে যাচ্ছে না।

-হাঁ। তবে বিরক্ত হবেন না। মিঃ আরমান সম্পর্কে এসব আমার জানা প্রয়োজন। এসবের ওপরই নির্ভর করছে সে দোষি, না নির্দোষ। আমাকে চার্জসিট দিতে হবে। আপনি হয়তো জানেন, আরমান সাহেব যে কেসে অভিযুক্ত সেই ব্যাংক ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ত দু’জনকে আমরা ধরেছি।

-না। ওসবের আমি কিছুই জানি না। খবরের কাগজে যেসব রির্পোটিং হয়েছে, তার কিছু কিছু আমি পড়েছি। সেখানে আরমান সম্পর্কে কিছু লেখা হয়নি।

-আচ্ছা। আপনি কাজল নামে তার কোনো বন্ধুকে চিনতেন?

-না। ওই নামের কাউকে তিনি কোনোদিন বাসায় নিয়ে আসেননি।

-কেন?

-তা বলতে পারবো না। বোধহয় তেমন কেউ ছিল না বলে আনেনি।

-আচ্ছা। আপনার বাবার নাম কি?

-ডাঃ খলিলুর রহমান। এফ সি পি এস। কনসালটেন্ট সার্জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

অফিসারের চোখ ছোট হয়ে আসে। তিনি যেন কথাটা বিশ্বাস করতে পারছেন না এমনভাবে বাঁকা চোখে চেয়ে জিজ্ঞাসা করে, নজরুল আপনার-

চলবে….

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising