728 x 90

চেনা অধর: নবী হোসেন নবীন

  বাস এসে আমার গন্তব্যে থামতেই আমি তাড়াহুড়ো নামতে গেলাম। কিন্তু আমার নামার প্রয়োজনীয়তাকে কোনো গুরুত্ব না দিয়েই মেয়েটি আমাকে ঠেলে বাসে উঠতে গেলে তার মুখটি আমার বুকে সঙ্গে ধাক্কা খেল। সে আমার চোখে চোখ রেখে সরি বলে ভেতরে চলে গেল; আমি নিচে নেমে এলাম। তার বাদামি চোখ যেন চোখ নয় খোলা জানালা। যা থেকে

 

বাস এসে আমার গন্তব্যে থামতেই আমি তাড়াহুড়ো নামতে গেলাম। কিন্তু আমার নামার প্রয়োজনীয়তাকে কোনো গুরুত্ব না দিয়েই মেয়েটি আমাকে ঠেলে বাসে উঠতে গেলে তার মুখটি আমার বুকে সঙ্গে ধাক্কা খেল। সে আমার চোখে চোখ রেখে সরি বলে ভেতরে চলে গেল; আমি নিচে নেমে এলাম। তার বাদামি চোখ যেন চোখ নয় খোলা জানালা। যা থেকে এক ঝলক আলো এসে আমার মনান্তরে প্রতিফলিত হলো। সে আলোর উত্তাপ আমার দেহ মনকে রোমাঞ্চিত করে দিলো। আমি হাঁটছি আর ভাবছি এমন কী চোখ হয়? চুম্বকের আকর্ষণের মত চোখের টান আমাকে বারবার পিছন ফিরে তাকাতে বাধ্য করছে। বাস ততক্ষণে আমার দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেছে। বাস চলে গেলে কী হবে, চোখ দুটি তো রয়ে গেছে আমার চোখের তারায়। সে বাদামি চোখের আলোয় আমি মেয়েটিকে সামনে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।

আমি মোহাচ্ছন্ন মনে যখন সামনে হাঁটছি তখন লক্ষ্য করলাম,  আমাকে দেখছে সেই আমার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। কেউ আবার জোরে ঝাকুনি দিয়ে হ্যাণ্ডসেক করেছে। যতই পরিচিত লোকের সামনে আসছি ততই মুচকি হাসি কানাঘুষায় রূপ নিলো। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কেনো তারা এমন করছে। এমতাবস্থায় একটি পরিচিত চা-স্টলে এসে বসলাম চা পানের উদ্দেশ্যে। তখন আমার একেবারে ঘনিষ্ঠ একজন বলেই ফেললেন- ভাই আপনার সাথে কী আর কোনো শার্ট আছে? থাকলে শার্টটি বদলে ফেলুন। আপনার শার্টে কিসের যেন দাগ লেগে গেছে। তখন আমার মাথা নিচু হয়ে দৃষ্টি এসে পড়ল বুকের উপর। দেখলাম সাদা শার্টের উপর মেয়েটির দুটি ঠোঁট গোলাপের পাপড়ির মত ফুটে রয়েছে। লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে নাকের ডগায় ঘামের বিন্দু সঞ্চিত হলো। ততক্ষণে আমি তার সরি বলার কারণটি বুঝতে পারলাম। তাড়াতাড়ি ব্যাগ হতে তোয়ালে বের করে কাঁধের উপর ঝুলিয়ে দিলাম যাতে লাল টকটকে লিপস্টিকের ঠোঁট দুটি কারো নজরে না পড়ে। অচেনা অধরে লজ্জা এখন বাদামি চোখের আকর্ষণকে ম্লান করে দিলো। মানুষ আমাকে নিয়ে এতক্ষণ কী ভাবছে এ চিন্তায় আমি চা পানের আগ্রহটাও হারিয়ে ফেললাম। তবু ভদ্রতা রক্ষার্থে চায়ের কাপে কয়েক চুমুক দিয়ে বাড়ি চলে গেলাম।

রাতে বিছানায় যখন অধরের বিকর্ষণ আর চোখের আকর্ষণ আমার উপর এক সাথে ক্রিয়া করতে লালল তখন আমি লজ্জার সাগরে ডুবছিলাম আর রোমাঞ্চের সাগরে ভাসছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম মেয়েটিকে এখন আমি কোথায় পাব? কিভাবে এ লজ্জা আমি তাকে ফিরিয়ে দেবো? এমন সময় আমার ম্যাসেঞ্জারে একটি কল আসে। প্রোফাইল নেইম অচেনা অধর। প্রফাইল পিকচারে সেই লাল টকটকে দুটি ঠোঁট যা এখনও আমার শার্টে ফুটে আছে। কল রিসিভ করতেই ও প্রান্ত থেকে ভেসে এলো I am really sorry. আসলে আমার কলেজে যাওয়ার তাড়া ছিল। তাই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আমার লিপস্টিকের দাগ আপনার জামায় লেগে গিয়েছিল। পরে যখন ভেবেছি তখন মনে হয়েছে এর জন্য হয়ত আপনাকে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। দেখা হলে মাপ চেয়ে নেবো। আর শার্টটা রেখে দিবেন আমি ধুয়ে দেবো। বলেই সে ফোন কেটে দিলো আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না। আমার বিরক্তি ও আকর্ষণ দুটোই আরও বেড়ে গেল। পরেরদিন একই সময়ে আমার ফোন আবার বেজে উঠল। রিসিভ করতেই- কবি আমি তোমার কবিতার একজন নিয়মিত পাঠক। তোমার প্রেমের কবিতাগুলো আমার খুব ভালো লাগে। আমাকে নিয়ে একটি কবিতা লিখবে? আমি অপেক্ষায়  রইলাম। আমি কিছু বলার আগেই আজও ফোন কেটে গেল।

বেশ কয়েক দিন কেটে গেল আর ফোন আসে না। আমি তুমি শিরোনামে একটি কবিতা লিখে ফেইসবুকে পোস্ট করেছি। কমেন্টে সে লিখেছে এই তুমি কি আমি? উত্তর দিলাম চাইলে হতে পার। সে বলল যদি না চাই? এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে শুধু  love react করলাম। অনেক দিন হয়ে গেল তার সঙ্গে আর কোনো কথা নেই। একদিন আমি ম্যাসেঞ্জারে কল দিয়েছিলাম। মেয়েটির মা ফোন ধরে জিজ্ঞেস করল- কে? আমি বললাম- আপনি কে? ও প্রান্ত থেকে উত্তর এলো আমি অহনার আম্মু। আমি বানিয়ে বললাম অহনা আমার একটা নোট নিয়েছিল। সামনে আমার পরীক্ষা তাই নোটটা আমার প্রয়োজন। সে বলল- ঠিক আছে ও বাড়ি এলে বলব পাঠিয়ে দিতে।  বাড়ি এসে সে তার মাকে কিভাবে ম্যানেজ করেছিল জানি না।  এরপর থেকে ফোন যোগাযোগ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল। আমার কাছে অচেনা সে অধর অচেনাই রয়ে গেল।

 

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising