অস্ট্রেলিয়ার পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা (প্রথম পর্ব) সামসুল ইসলাম টুকু : আন্তঃ মহাদেশীয় দেশ অস্ট্রেলিয়া একটি মজবুত অর্থনীতির ধনী , বৃহত্তম ও সার্বোভৌম দেশ । অস্ট্রেলিয়ার পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যান্ত সুন্দর ও সুদৃঢ়। সড়ক পথ ,রেল পথ , সমুদ্র পথ ও আকাশ পথের জাল বিস্তৃত রয়েছে সমগ্র অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ জুড়ে ।অস্ট্রেলিয়ার মধ্য অংশ থেকে
অস্ট্রেলিয়ার পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা (প্রথম পর্ব)
সামসুল ইসলাম টুকু : আন্তঃ মহাদেশীয় দেশ অস্ট্রেলিয়া একটি মজবুত অর্থনীতির ধনী , বৃহত্তম ও সার্বোভৌম দেশ । অস্ট্রেলিয়ার পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যান্ত সুন্দর ও সুদৃঢ়। সড়ক পথ ,রেল পথ , সমুদ্র পথ ও আকাশ পথের জাল বিস্তৃত রয়েছে সমগ্র অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ জুড়ে ।অস্ট্রেলিয়ার মধ্য অংশ থেকে পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে রয়েছে বিশাল মরুভূমি । ফলে এই এলাকার যোগযোগ কিছুটা সীমিত । তবে ক্রমশ উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে ।অস্ট্রেলিয়ার পুর্বাঞ্চল যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বেশ উন্নত। কারন অস্ট্রেলিয়ার রাজ্যগুলির রাজধানী ও প্রধান শহরগুলির অবস্থান পুর্বাঞ্চলেই তথা সমুদ্রের তীর ঘেঁষে । গবেষকরা বলেন ৬০ হাজার বছর পুর্বে থেকেই পৃথিবীর দক্ষিন গোলার্ধের এই দেশটিতে মানুষের বসবাস ছিল । সমুদ্র বেষ্টিত এই মহাদেশটির প্রাচীন মানুষ তথা আদিবাসীদের যোগাযোগ ব্যবস্থা কি ছিল তার কোনো বর্ননা পাওয়া যায়না । তবে অনুমান করা যায় সবচেয়ে প্রাচীন যান নৌকাই ছিল তাদের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম । দেশের অভ্যান্তরে রয়েছে ছোট বড় শাখা প্রশাখা সহ ৪ শতাধিক অপ্রসস্থ নদী । এর মধ্যে প্রধান ৭ টি নদী হচ্ছে ম্যুরে ১৪৭৬ মেইল দীর্ঘ , মুররাম বিদগী ৯২৫ মাইল দীর্ঘ , ডার্লিং ৯১৫ মাইল দীর্ঘ , ল্যাচলান ৯০০মাইল দীর্ঘ ,ওররেগো ৮৫৭মাইল দীর্ঘ , কূপার ক্রিপ ৮০৮মাইল দীর্ঘ এবং পাররু ৭৫৩ মাইল দীর্ঘ । সুতরাং নিশ্চিতভাবে বলা যায় দেশের অভ্যান্তরে যোগাযোগের জন্য নদী পথ ব্যবহৃত হতো । সে সময় নদীতে ব্যাবহৃত কাঠের ভেলা অথবা কাঠের গুঁড়ির মধ্যভাগ কুরে তৈরী করা নৌকা । অন্যদিকে ছিল হাঁটা পথ অথবা ঘোঁড়ায় এবং মরুভূমিতে উঁট ব্যবহৃত হতো । শোনা যায় যোগযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে উঁটের প্রয়োজনিয়তা কমে যায় । তখন উঁট বেশী পানি পান করে এবং মানুষের পেয় পানির সঙ্কট দেখা যায় এমন অজুহাতে বেশ কিছু উঁটকে গুলি করে হত্যা করা হয় । তবে আজও ঘোঁড়া ও উঁটের ব্যবহার শেষ হয়ে যায়নি ।বিশেষত যেখানে সড়ক ও রেলপথ দূরে সেখানে ঘোড়া ও উঁটের ব্যবহার হয় পরিবহনের জন্য।পৃথিবী ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভুত উন্নতি সাধিত হয়েছে। অষ্ট্রেলিয়ার মত একটি বিশাল দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কথা বলে শেষ করা যাবেনা । তবে সম্প্রতি সেখানে ৭৫ দিন থাকা ও ভ্রমনের সুবাদে যতটুকু জানতে পেরেছি এবং গুগল থেকে যা পেয়েছি তার খুব সামান্যই তুলে ধরার চেষ্টা করবো । আদি যোগাযোগ ব্যবস্থা দিয়েই শুর করি । অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশ যেহেতু চারিদিক থেকেই সমুদ্র বেষ্টিত তাই এ মহাদেশকে দ্বীপ মহাদেশ বলা হয় । এ দ্বীপ থেকে বাইরে কোথাও গেলে বিশেষত সমুদ্রপথে তাহলেই প্রয়োজন হবে নৌযানের ।একসময় যা ছিল পালতোলা নৌকা এবং তা আবহাওয়া ও প্রকৃতির উপর নির্ভর করে চলতো । সেটাই বিকশিত হয়ে যান্ত্রিক নৌযান বা পানির জাহাজে রুপ লাভ করে । এ যানটি বাস ,ট্রেন বা উড়োজাহাজের মত দ্রুতগামী না হলেও এর পরিবহন ক্ষমতা বেশী ও ব্যয় কম হওয়ায় পৃথিবীর সিংহ ভাগ মালামাল পানির জাহাজেই তথা সমুদ্রপথে পরিবাহিত হয় । অর্থাৎ দেশে দেশে আমদানী রপ্তানীর জন্য মুল ব্যবস্থা হিসেবে সমুদ্রপথ আজও টিকে আছে । তাই দেশে দেশে গড়ে উঠেছে সব আধুনিক সমুদ্র বন্দর । অষ্ট্রেলিয়ায় আছে ৮টি বৃহৎ সমুদ্র বন্দর । অষ্ট্রেলিয়া মুলত জাপান, চীন , দক্ষিন কোরিয়া , নিউজিল্যান্ড এর সাথে নিয়মিত এবং বড় অংকের ব্যবসা করে । অষ্ট্রেলিয়া এ দেশগুলোতে প্রধানত লোহা ,আঁকরিক কৃষি পন্য, দুগ্ধ জাত পন্য , উল , সোনা , কয়লা , এল এন জি , এমোনিয়াম , জ্বালানী তেল , ফল , লিথিয়াম , সিমেন্ট ,তামা , ক্রোমাইট ,পশু সম্পদ ও উল্লেখযোগ্য হারে মদ রপ্তানী করে । অন্যদিকে আমদানী করে অপরিশোধিত তেল জিপসাম , রাসায়নিক দ্রব্য , কাঠ , নির্মান সামগ্রী প্রভৃতি । এ ছাড়া বিশ্ব শিপিং এ অষ্ট্রেলিয়ার একটি গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রয়েছে । সেখানে রয়েছে একাধিক সমুদ্র বন্দর ও পোতাশ্রয়। যেকারনে অষ্ট্রেলিয়াআন্তর্জাতিক রুটে বানিজ্য পরিচালনা করতে পারে।
৮টি সমুদ্র বন্দরের মধ্যে রয়েছে ১। হেডল্যান্ড বন্দর ২।ফ্রেম্যাল্টন বন্দর ৩। এডিলেড বন্দর ৪। ব্রীসবেন বন্দর ৫।মেলবোর্ন বন্দর ৬। ডারউইন বন্দর ৭। সিডনী বন্দর এবং৮। নিউক্যাসেল বন্দর। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের সাথে উল্লেখিত এই সমুদ্র বন্দরগুলির ব্যবসায়িক যোগাযোগ রয়েছে। হেডল্যান্ড বন্দর—এ বন্দরটি দক্ষিন পশ্চিম এশিয়া , মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকান দেশগুলির সবচেয়ে নিকটবর্তী সমুদ্র বন্দর । ওয়েষ্টার্ন অষ্ট্রেলিয়া রাজ্যের উত্তর পশ্চিম তীরে অবস্থিত ।যা ওই রাজ্যের রাজধানী পার্থ থেকে প্রায় ১৮০০ কিঃ মিঃ দূরে পিলবার অঞ্চলে । এটি অষ্ট্রেলিয়ার একটি বিশাল সমুদ্র বন্দর । এটি ম্যানগ্রোভ বন্দর নামে পরিচিত । ১৯০৯ সালে এই বন্দরের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয় । ফ্রেম্যাল্টন বন্দর –এ বন্দরটি অষ্ট্রেলিয়ার দক্ষিন পশ্চিম উপকুলে ওয়েষ্টার্ন অষ্ট্রেলিয়া রাজ্যের সোয়ান নদীর মোহনায় অবস্থিত । ওই রাজ্যের রাজধানী পার্থ থেকে মাত্র ১৯ কিঃমিঃ দূরে ।এটি শুধুমাত্র একটি ব্যাস্ত বানিজ্যিক বন্দরই নয় । এখানে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ,একটি ছোট বাজার ও একটি যাদুঘর আছে । এডিলেড বন্দর –হেডল্যান্ড বন্দরের ঠিক বিপরীতে দক্ষিনপুর্ব অষ্ট্রেলিয়ার রাজধানী এডিলেডের ভিসেন্ট উপসাগর থেকে কয়েকমাইল অভ্যান্তরে অবস্থিত । সড়ক ও রেলপথে হেডল্যান্ড বন্দর থেকে ৩ হাজার ৬০০ কিঃমিঃ দূরে । এ দুটি সমুদ্র বন্দরের সাথে আকাশপথ , রেলপথ এবং সড়কপথে যোগাযোগ করা যায়। তবে সবচেয়ে কম সময়ে ও কমখরচে আকাশপথে যোগাযোগ সম্ভব । এতে সময় লাগে মাত্র ৪ ঘন্টা এবং দূরত্ব ২ হাজার ৫৫৪ কিঃমিঃ । যাতায়াত ব্যয় মাত্র ৫০০ ডলার ।অন্যদিকে রেল ও সড়ক পথে ব্যয় হয় নিদেন পক্ষে ১০ গুন এবং সময় লাগে ২দিন ১৭ ঘন্টা । যেতে হয় পার্থ হয়ে । আবার মরুভূমির শহর এলিশ স্প্রিং হয়ে কারে যাওয়া যায়। ফলে সড়ক ও রেলপথে যেতে কেউ আগ্রহী হয়না । এ রুটটি শুধু মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার হয়। আন্তর্দেশীয় যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুগম করার জন্য রেল ও সড়ক পথে এই উন্নয়ন করা হয়েছে। ব্রীসবেন বন্দর –এটি অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশের পুর্বে কুইন্সল্যান্ডের রাজধানী । ব্রীসবেন অষ্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী এবং তৃতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর । এটি ব্রীসবেন নদীর মোহনায় অবস্থিত । এখানে গরম যেমন খুব বেশী তেমনি প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় । একারনে এ রাজ্যটি কৃষিজাত পন্য এবং গাভী পালনের উর্বর ক্ষেত্র । এ বন্দর থেকে মুলত কৃষিজাত পন্য ,দুগ্ধ জাতীয় পন্য ,উল ,টিনজাত খাবার ,প্রক্রিয়াজাত মাংশ ও চিনি রপ্তানী করা হয় ।
মেলবোর্ন বন্দর – এটি অষ্ট্রেলিয়ার ব্যাস্ততম সমুদ্র বন্দরের মধ্যে অন্যতম । মেলবোর্ন অষ্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের রাজধানী । বন্দরটি ফিলিপ উপসাগরের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত । এই বন্দর নগরী একটি আর্থিক ব্যাবসা ও উৎপাদন কেন্দ্র । এটি একটি পর্যটন নগরীও বাটে । বন্দরটি তাসমানিয়া , ভিক্টোরিয়া ও নিউসাউথ ওয়েলসকে যুক্ত করে । এটি দেশের পুর্বাঞ্চলের সাথে দক্ষিন অষ্ট্রেলিয়াকে যুক্ত করে রেল ও সড়ক পথের মাধ্যমে ।
ডারউইন বন্দর –প্রকৃতিবিদ চার্লস ডারউইন এর নামে নামকরন করা হয় এই বন্দরটির । এটি নর্দারন টেরিটরি রাজ্যের রাজধানী ।এ বন্দরটি উত্তর অষ্ট্রেলিয়ার পরিষেবা প্রদানকারী প্রাথমিক বন্দর ।অষ্ট্রেলিয়ার উত্তরে তিমুর সাগরের বিগল উপসাগরের খাড়ীতে অবস্থিত । স্থানীয় অর্থনীতির জন্য বন্দরটি অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন ।এখান থেকে টাইলস , ইঁট , ইউরেনিয়াম , ফল ,মুক্তা , দস্তা ,শীসা , কন্টেইনার পন্য রপ্তানী করে ।
সিডনী বন্দর –অষ্ট্রেলিয়ার পুর্ব উপকুলে অবস্থিত এ বন্দরটিতে প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় আছে ।যা বানিজ্যিক শিপিং এর পাশাপাশি বিনোদন মুলক পরিষেবা প্রদান করে । এটি অষ্ট্রেলিয়ার প্রধান ও ব্যাস্ততম শহর এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজধানী । এখানকার রেল ও সড়ক যোগাযোগ অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে । এ বন্দরটি আমি দুবার দেখেছি । নিউ ক্যাসেল বন্দর – এ বন্দরটি হান্টার নদীর মোহনায় অবস্থিত ।এখান থেকে প্রচুর পরিমানে কয়লা রপ্তানী করা হয় । সিডনী থেকে প্রায় ১৭০ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত এ বন্দরটি ১৮০০ সালের শেষের দিকে শহরে পরিনত হয়। কৃষিজাত পন্যের আউটলেট হিসেবে চিহ্নিত এই বন্দরটিতে একটি কালচারাল সেন্টার ও মিউজিয়াম আছে । এখানে বড় বড় ৬ টী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে । এটি একটি বন্যা প্রবন এলাকা ।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *