আতিক শাহরিয়ার রাফি: আমাদের সমাজে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, “অন্যায়কারী ভয়ে হেরে যায়।” এই বাক্যটি সাধারণ মনে হলেও এর পেছনে লুকিয়ে আছে গভীর মনস্তাত্ত্বিক ও নৈতিক সত্য। আর এই সত্য ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এই কথার যথার্থতা তুলে ধরে। প্রথমত, অন্যায়কারীকে সবসময় তার অপরাধবোধ এবং বিবেক তাড়িত করে। যখন কেউ
আতিক শাহরিয়ার রাফি: আমাদের সমাজে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, “অন্যায়কারী ভয়ে হেরে যায়।” এই বাক্যটি সাধারণ মনে হলেও এর পেছনে লুকিয়ে আছে গভীর মনস্তাত্ত্বিক ও নৈতিক সত্য। আর এই সত্য ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এই কথার যথার্থতা তুলে ধরে।
প্রথমত, অন্যায়কারীকে সবসময় তার অপরাধবোধ এবং বিবেক তাড়িত করে। যখন কেউ অন্যায় করে, তখন তার অন্তরে অপরাধবোধ জন্ম নেয়। এই অপরাধবোধ তাকে সারাক্ষণ ভীত করে রাখে, যা তার মনোবলকে দুর্বল করে দেয়। এমনকি যখন তারা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী, তখনও তাদের মনের গভীরে একটি অস্বস্তি কাজ করে।
দ্বিতীয়ত, অন্যায়কারীর সবসময় একটি আশঙ্কা থাকে যে তার কাজগুলো প্রকাশ পেলে সমাজে সে অপমানিত হবে। ক্ষমতায় থেকেও এই ভয় তাকে তাড়িত করে—মানুষ তার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে, তার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে। এই আশঙ্কায় তারা মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়েন।
তৃতীয়ত, মিথ্যা এবং প্রতারণা ধরে রাখা সবসময়ই কঠিন। একটি মিথ্যা ধরে রাখতে গিয়ে আরও অনেক মিথ্যা বলতে হয়, যা একসময় ধসে পড়ে। ক্ষমতায় থাকা অন্যায়কারীরাও এই বিপদ বুঝতে পারেন, তাই তাদের ভেতরে ক্রমাগত একটি ভয় কাজ করে।
চতুর্থত, অন্যায়কারীর সবসময় এই আশঙ্কা থাকে যে তার কাজের ফলাফল একদিন না একদিন আসবেই। এটি হতে পারে আইনগত শাস্তি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, বা ব্যক্তিগত জীবনে ক্ষতি। এই ভয়ই তাকে ক্রমাগত অস্থির রাখে এবং তার চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলে।
পঞ্চমত, অন্যায়ের কারণে যারা ন্যায়বিচারের পথে থাকে, তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ঘটে। তারা এক সময় তাদের সমর্থকদের আস্থা হারায় এবং নিজেরাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই বিচ্ছিন্নতা অন্যায়কারীর মানসিক দৃঢ়তাকে দুর্বল করে দেয়।
শেষত, অন্যায়কারীর মনের ভিতরে একটি অবচেতন দুর্বলতা থাকে। এই দুর্বলতা তাদের নৈতিক অবস্থানকে ক্ষুণ্ণ করে এবং তাদের চিন্তাভাবনায় ভয় ঢুকিয়ে দেয়। তারা জানে যে অন্যায়ের ফল একদিন ভোগ করতেই হবে।
এই বাস্তবতা আমাদের সাম্প্রতিক ইতিহাসে প্রমাণিত হয়েছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন, তারা কি আসলেই শান্তিতে আছেন? না কি তারা নিজেদের অন্যায়ের ভয়ে ক্রমাগত বিচলিত হয়ে পড়েছেন? হয়তো তারা জানেন যে তাদের ক্ষমতা অস্থায়ী এবং অন্যায়ের শাসন একদিন শেষ হবেই।
এই প্রক্রিয়া অবশ্যম্ভাবী, কারণ অন্যায়কারী চিরকাল ভয়ে থাকেন এবং শেষ পর্যন্ত সেই ভয়েই হেরে যান। ক্ষমতায় থাকলেও, অপরাধবোধ, বিচ্ছিন্নতা, এবং মিথ্যার চাপ শেষ পর্যন্ত তাদের পরাজয়ের দিকে নিয়ে যায়। এটি একটি অনিবার্য পরিণতি, যা অন্যায়কারীর জন্যই নির্ধারিত।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *