২০২৫ সালের প্রথম মাস শেষে দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে। একই সাথে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস সময়কাল পূর্ণ হতে যাচ্ছে এ মাসের আট তারিখে। একটি দেশের সরকারের কর্মতৎপরতা এবং সফলতা ও ব্যর্থতা বিচারের জন্য ছয় মাস যথেষ্ট সময়। বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের ছয় মাস সময়কালের কাজকর্ম দেখলে কেবলমাত্র হতাশই হতে
২০২৫ সালের প্রথম মাস শেষে দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে। একই সাথে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস সময়কাল পূর্ণ হতে যাচ্ছে এ মাসের আট তারিখে। একটি দেশের সরকারের কর্মতৎপরতা এবং সফলতা ও ব্যর্থতা বিচারের জন্য ছয় মাস যথেষ্ট সময়। বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের ছয় মাস সময়কালের কাজকর্ম দেখলে কেবলমাত্র হতাশই হতে হয়। সার্বিক বিচারে এ ছয় মাস সময়কালকে একটি ব্যর্থ এবং অযোগ্য সরকারের সময়কাল হিসেবে বিবেচনা করা যায়। সম্পাদক নুরুল কবিরের সাথে সাক্ষাৎকারে ড. ইউনুস এ ব্যর্থতাকে স্বীকারও করে নিয়েছেন।
আগস্টের পাঁচ তারিখ শেখ হাসিনার পলায়নের পর থেকে বাংলাদেশে উত্তম কিছু হলে তা হয়েছে কেবলমাত্র ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার দুর্বৃত্ত অনুসারীদের ক্ষমতাবলয়ে অনুপস্থিতির ফলে গুম খুন গ্রেফতার নির্যাতন এসব মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ হওয়া। কিন্তু এছাড়া অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পশ্চাতযাত্রা থেমে নেই। হাজারো মানুষের বিপুল ত্যাগের বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলো মানুষ, সেই স্বপ্ন অঙ্কুরেই রুগ্ণ এবং মুমূর্ষু হয়ে গেছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো জুলাই বিপ্লবে নিহত মানুষদের পরিবারের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো এবং আহতদের জন্য যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চুড়ান্তভাবে এবং নির্লজ্জভাবে ব্যর্থ হওয়া। এই অক্ষমতা এবং ব্যর্থতার কোন ক্ষমা নেই। আওয়ামী পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা যেসব গণকবরে অনেক মানুষকে পরিচয়হীনভাবে পুঁতে ফেলেছে, সেসব মৃতদেহের ডিএনএ প্রোফাইলিং এর মাধ্যমে পরিচয় চিহ্নিতকরণের কোন চেষ্টাই এ সরকার করেনি। পাশাপাশি হাজার হাজার আহত মানুষ বিনা চিকিৎসায় ধুঁকছে, কয়েক মাস পরে এসেও তারা যথাযথ চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারাচ্ছে। একদিকে নানা ফাউন্ডেশন ও প্রজেক্টের নামে যথেচ্ছা লুটপাট ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, অন্যদিকে চোখ হারানো কিংবা হাত অথবা পা হারানো অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হচ্ছেনা, এই লজ্জা আজ পুরো বাংলাদেশের।
দেশ গঠনে আন্তরিকতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিবর্তে এবং রাষ্ট্র সংস্কারে পূর্ণ শক্তি নিয়ে প্রচেষ্টা করার বদলে বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারা ব্যস্ত রয়েছেন বই লিখতে, সেই বইকে চিহ্নিত গণশত্রুদের প্রকাশনা থেকে প্রকাশ করতে, কনসার্ট ও সিনেমার প্রদর্শনী ইত্যাদি করতে। শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া ফোকলা অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রচলনের পরিবর্তে এ সরকার আইএমএফ এর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ট্যাক্স ভ্যাট বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। জুলাই-আগষ্টের গণহত্যার অপরাধীদেরকে চিহ্নিত করা এবং যথাযথ শাস্তির জন্য আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে এ সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকের রং পরিবর্তনের মতো হাস্যকর এবং অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এসব কাজের মাধ্যমে দুর্নীতি করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের যে অভিযোগ উঠেছে, সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষদের নানা কাজকর্মের ট্র্যাক রেকর্ডের কারণেই সেসব অভিযোগ ও ধারণাকে এখন আর উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এইসব ধারাবাহিক ব্যর্থতা এবং অযোগ্যতার ফলে আজ বাংলাদেশে সেই পুরোনো অত্যাচারী ফ্যাসিবাদীরা আবার ফিরে আসার সাহস দেখাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে এই ধারণা করলে অত্যুক্তি হবে না যে সম্ভবত বিচারের পরিবর্তে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা আবারো পুরো দেশে রাজত্ব করে বেড়াবে। এই শঙ্কা যদি বাস্তব হয়ে দাঁড়ায়, এ দুঃখজনক পরিণতির জন্য নাগরিক সরকারের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোরও যথেষ্ট দায় থাকবে। দীর্ঘদিনের নিপীড়নের অভিজ্ঞতার পর, সর্বব্যাপী চৌর্যবৃত্তি এবং দুর্নীতির ফলে দেশের মানুষের অপরিসীম ভোগান্তির পর কোন শিক্ষা না নিয়ে আবারও বাংলাদেশ যে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে হাঁটছে, এই নির্বোধ যাত্রা দেখাটাও একটি দুঃখজনক বিষয়।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *