প্রফেসর ড. এস কে আকরাম আলী: বুলডোজার গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসের জন্য ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি আমরা ৩২ নম্বরে এর ব্যবহার প্রকাশ্যে দেখেছি। হাজার হাজার মানুষ সেখানে গিয়েছিল এবং ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ধ্বংসের ঐতিহাসিক ঘটনায় অংশ নিয়েছিল। অনেক মানুষ এই ধ্বংস দেখে আনন্দ পেয়েছে এবং উল্লাস করেছে। এটি আমাদের বেগম খালেদা জিয়ার জোরপূর্বক উচ্ছেদ এবং তার বাড়ি ধ্বংসের ঘটনাও মনে করিয়ে দেয়।
কয়েক দশক আগে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, এই বাড়ির সব বাসিন্দাকে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। কেউ রাস্তায় নেমে এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস দেখায়নি। অনেকেই এই হত্যাকাণ্ডকে আগস্ট বিপ্লবের অংশ হিসেবে দেখেছে। এটি ইতিহাস, যা সময়ের সাথে সাথে নিজেই এর প্রকৃত অবস্থান নির্ধারণ করবে।
কিন্তু প্রতিটি কর্মের একটি প্রতিক্রিয়া থাকে, এবং এটি কেবল সময়ের ব্যাপার—আজ হোক বা আগামীকাল। ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখায় যে, জনগণ এই বাড়িটিকে বুলডোজ করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বাড়িটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শেখ মুজিবের ম্যুরাল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে। জনগণ ভবনের বেসমেন্টে মেয়েদের ইউনিফর্ম আবিষ্কার করেছে এবং অনুমান করা হচ্ছে যে, সম্ভবত ধর্ষণের পর তাদের হত্যা করা হয়েছে। অনেকেই ৩২ নম্বর বাড়িটিকে ষড়যন্ত্রের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করে আসছে।
৩২ নম্বর বাড়ির ঘটনা নিয়ে ভারতের দেয়া বিবৃতিকে বাংলাদেশের সরকার গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং ভারতকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বর্তমানে বেশ শীতল মনে হচ্ছে।
প্রত্যেক ঘটনার একটি সীমা থাকে, কিন্তু শেখ হাসিনা সেই সীমা অনেক দূর অতিক্রম করেছেন। যখন জনগণের ক্ষোভ তার বিরুদ্ধে চরমে পৌঁছেছে, তখন তিনি তার দলের ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের ক্যাডারদের আহ্বান জানান, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে।
বর্তমানে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে এবং এটি কোথায় গিয়ে শেষ হবে, তা আমাদের জানা নেই। তবে এটা নিশ্চিত যে শেখ হাসিনা ভবিষ্যতের পরিণতি বিবেচনা না করেই আগুনে ঘি ঢেলেছেন।
শেখ হাসিনার যেকোনো ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ, যদি তা ভারতের আশীর্বাদপুষ্ট হয়, তাহলে তার অনুসারীদের জীবন ও সম্পদ চরম অনিরাপদ হয়ে পড়বে। বিপ্লবের সময় এবং বিজয়ের পরও বিপ্লববিরোধীদের তেমন হত্যা করা হয়নি। অথচ ওবায়দুল কাদের নিজেই স্বীকার করেছেন যে, সরকার পরিবর্তনের পর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ নিহত হতে পারে।
শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো পরিকল্পিতভাবে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে, এবং পরিস্থিতি যে কোনো সময় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। জনগণ এবং ছাত্ররা যেকোনো সময় রাস্তায় নেমে আসতে পারে এবং বিপ্লববিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে এবং জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায়।
জনগণ এখনো ভুলে যায়নি কিভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে জোরপূর্বক তার বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল এবং কিভাবে তার বাড়িটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই জায়গায় সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য উঁচু ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
এখন জনগণ ৩২ নম্বরে উঁচু ভবন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছে, যা ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা হবে। যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এবং নির্মাণকাজ পরিচালনা করেছে, তারা তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এটি ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমাদের জানা দরকার, যারা জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে কেবল ব্যক্তিগত লাভের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিল। তারা মুনাফেক এবং তাদের আর বিশ্বাস করা যায় না। এদের মধ্যে কিছু লোক খুব গোপনে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য কাজ করে। এক জন নির্দিষ্ট জেনারেল, যিনি ফ্যাসিবাদী সরকারের কাছ থেকে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পরিচালনার অনুমতি পেয়েছিলেন, তার ব্যাপারটি সবারই জানা। জনগণ কখনোই ভুলবে না এবং ক্ষমা করবে না সেইসব জেনারেলদের, যারা অতীতে ভারতের স্বার্থে কাজ করেছিল এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের জঘন্য পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করেছিল।
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব এখনো শেষ হয়নি এবং এটি কয়েক বছর ধরে চলতে পারে, যতক্ষণ না এটি একটি স্থায়ী রূপ লাভ করে। এখন যে কোনো পদক্ষেপকেই বিপ্লবের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে যতক্ষণ না বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জিত হয় এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও সংস্কার আনা সম্ভব হয়।
**জয় হোক ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের!**