তাজুল ইসলাম, প্রকৌশলী: বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসের নাম অনেকেরই জানা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘আমাজন’ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বে খুবই সুপরিচিত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘রিটেইল’ বা খুচরা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘আমাজন’। বিশ্বে সর্ববৃহৎ ক্লাউড সার্ভিসও তারা প্রদান করে। কিন্তু ইদানিং জেফ বেজোস বর্তমান বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনী ইলন মাস্কের সঙ্গে প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। ইলন মাস্কের রয়েছে মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ ‘স্পেস এক্স’। এর পাশাপাশি জেফ বেজোসেরও একই ক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার নাম ‘ ব্ললু অরিজিন’ Blue Origin ।
২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে পত্রিকার শিরোনামে এসেছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, মহাকাশে সাফল্যজনক ভাবে নিউ গ্লেন (New Glenn- NG১) নামক রকেট উৎক্ষেপণ করা। এ রকেটের উদ্বোধনী মিশন বহুবার বিলম্বিত হয়েছে বেশ কবছর ধরে। অবশেষে, গত জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি যুক্তরাস্ট্রের ফ্লোরিও অঙ্গ রাজ্যের কেপ -কেনভেরাল স্পেস ঘাটি থেকে এটি ছোড়া হয়েছে। এদিকে অবশ্য ইলন মাস্ক বেশ এগিয়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে, তারা সফলভাবে কয়েকটি রকেট উৎক্ষেন সম্পন্ন করেছে যদিও এর মধ্যে কিছু ব্যর্থতা অবশ্য রয়েছে।
মূলত, মহাকাশে বানিজ্যিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য উভয়ের মধ্যে প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। ইলন মাস্কের ফ্যালকন -৯ রকেট ইতিমধ্যে পেন্টাগণ, নাসাসহ বাণিজ্যিক সেক্টরে বেশ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। জেফ বেজোসের মিশনটি আমেরিকার নভোচারী জন গ্লেনের নামে উৎসর্গিত যেটি ৯৮ মিটার লম্বা। স্পেস এক্সও ইতিমধ্যে নব প্রজন্মের রকেট স্টারশীপ দিয়ে কক্ষপথের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
blue Origin এর অবতরণ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এটি আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত একটি ড্রোন জাহাজের সাহায্য নিবে। স্পেস এক্স ইতোমধ্যে তাদের এ কার্য্যক্রমটি কয়েকবার সমাপ্ত করেছে এবং এটি বর্তমানে রুটিনে পরিণত হয়েছে। নিউ গ্লেন রকেটটির উপরিভাগের ইঞ্জিন পৃথিবী পৃষ্টের দিকে ধাক্কা দিবে যা রকেটকে ভূপৃেিষ্টর ১৯ হাজার কিলোমিটারের উচ্চতায় নিয়ে আসবে। ইতোপূর্বে, Blue অরিজিন এর নিউ শেফার্ড অর্থ্যাৎ Blue Ring রকেটের মাধ্যমে জাহাজের পরিবর্তে টেরা ফার্মাতে অবতরণে সক্ষম হয়ে ছিল; তবে এটি নিউগ্লেনের তুলনায় ৫ গুণ ছোট। বর্তমানের নিউ গ্লেন রকেটটি স্পেস এক্সের ফ্যালকন-৯ এর তুলনায় বড়। তবে ফ্যালকন হেভী নামে ইলন মাস্ক একটি রকেট চালু করতে যাচ্ছে যা হবে বিশাল এবং এটি ২০টি ট্রাক সমতুল্য পরিবহনে সক্ষম হবে। ইতোমধ্যে Blue Origin নাসার সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করেছে যার ফলে নিউ গ্লেনে ২টি ‘প্রোব ’ (পরীক্ষাযন্ত্র) সাথে করে নিয়েছে মঙ্গল গ্রহের পরীক্ষার জন্য। এ রকেট উপগ্রহ ইন্টারনেটের জন্যও কাজ করবে যা সরাসরি ইলন মাস্কের স্টার লিংকের সঙ্গে পাল্লা দিবে। এটা অবশ্য নির্দ্ধিধায় বলা যায় যে, স্পেস এক্স এক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিযোগীর তুলনায় বেশ এগিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে কতিপয় প্রতিষ্ঠান যেমন ইউনাইটেড লঞ্চ এলায়েন্স, এরিয়ানস্পেস এবং রকেট ল্যাব রয়েছে।
একথা সত্যি যে, ইলন মাস্ক এবং জেফ বেজোসের ধমনীতে মহাকাশের প্রতি তীব্র বাসনা রয়েছে। তবে, দুজনের চিন্তা ভাবনার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ইলন মাস্ক মঙ্গলগ্রহকে উপনিবেশ বানাতে চায় । অন্যদিকে, জেফ বেজোস পৃথিবীকে বাচানোর জন্য ভারী শিল্পকে বিশ্ব থেকে সরিয়ে মহাকাশের ভাসমান মঞ্চে (Platform) স্থাপন করতে চায় ।
যদি নিউ গ্লেন সফল হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য মূল্যবান ব্যাক আপ পদ্ধতির সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে একটি ব্যর্থ হলে অন্যটির উপর ভরসা করা যাবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। যাহোক, ভবিষ্যতই বলে দিবে কার অবস্থান কোথায় !!