বিশ্বখ্যাত ARM কোম্পানি  এবার নিজেই চিপ তৈরি করবে

তাজুল ইসলাম,প্রকৌশলী : বিশ্বখ্যাত  আর্ম হোল্ডিং কোম্পানি নিজেই প্রসেসর  নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে  ইতোমধ্যে তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে। এমনকি এ বছরের শেষের দিকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার ঘোষণা দিয়েছে। এরিমধ্যে তারা গ্রাহক পেয়ে গেছে বেশ কটি। তার’মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফেসবুকের প্যারেণ্ট কোম্পানি মেটা। ফিনান্সিয়াল টাইমস সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

আমরা জানি, কম্পিউটার চিপ নির্মাতা ইন্টেল ও এএমডি ইতোমধ্যে স্মাট ফোনের বাজার দখল করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিল  কিন্তু সফল হয়নি। তার কারণ হচ্ছে আর্ম (ARM ) এর চিপ ডিজাইনের কাছে তারা  নতি স্বীকার করে বাজার থেকে বিদায় নিয়েছে। আর্মের চিপ ডিজাইন এত ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে যে আপনার হাতের স্মাটফোন, ট্যাবলেট এমনকি কতিপয় ল্যাপটপেও তাদের ডিজাইনকৃত চিপের মাধ্যমে এগুলো পরিচালিত হচ্ছে। আমরা আর্ম  চিপ নির্মাতা হিসেবে কোয়ালকম, এনভিড়িয়া, হুয়ায়েই, স্যামসং, টেক্সাস ইনস্টুমেন্টসহ বিভিন্ন  প্রতিষ্ঠানের নাম জানি। এমনকি খোদ এপল ও  প্রথম দিকে আর্মের ডিজাইন ব্যবহার করেছিল। বর্তমানে নিজস্ব ভাবে এপল সিলিকনের ডিজাইন ও চিপ নির্মাণ করছে (যেমন- M১ থেকে সাম্প্রতিক M৪) / এপল ইন্টেল কে  কয়েক বছর পূর্বেই বাদ দিয়ে দিয়েছে। এপলের A সিরিজের প্রথম কয়েকটি প্রসেসর আর্মের ডিজাইন দিয়ে তৈরি হয়েছিল বলে জানা যায়। যদিও এপল তাদের নিজস্ব প্রযুক্তি তাতে অন্তর্ভূক্ত করেছিল।

আর্মের হার্ডওয়্যারে পদচারনা

বহু বছর ধরে আর্ম শুধুমাত্র চিপ ডিজাইন ও সফটওয়ার নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ছিল এবং তারা তাদের চিপের ডিজাইনকে ক্রমাগত উৎকর্ষ সাধন করে যাচ্ছিল। বর্তমানে তারা বেশ শক্তিশালী চিপ ডিজাইন করছে ফলে এটি পিসি, ল্যাপটপ ছাড়িয়ে সার্ভার অঙ্গনে ঢুকে পড়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা জানি, ক্লাউড সার্ভিসের জন্য ড্যাটা সেন্টার অত্যাবশ্যক। আর ড্যাটা সেন্টারগুলো কয়েকশত বা কয়েক হাজার সার্ভার দিয়ে গড়ে ওঠে। এমনকি লক্ষ পর্যন্ত হতে পারে। মূলত: ড্যাটা সেন্টারকে টার্গেট করেই এসব  প্রসেসর তথা সিপিইউ সমূহ নির্মিত হবে। প্রথমত: এটি একটি মূল ভিত্তির (Base Model) উপর তৈরি হবে যাতে করে ক্রেতা কোম্পানি সমূহ বিশেষায়িত ভাবে এ চিপের সমন্বয় করতে পারে অর্থ্যাৎ তৈরি করে নিতে পারে। যেমন: মেটা তাদের প্রকৃত চিপে কতগুলো কোর, মেমোরি চ্যানেল, পিসিআই-ই লেন বা আই/ও কে সন্নিবেশ ঘটাবে তা জানা যায়নি। তথ্যাপি আমরা ধারণা করতে পারি যে,  আর্মের  সাম্প্রতিক ডিজাইনকৃত নিউভার্স ভি-৩ (NeoVerse V৩ ) অথবা নিউভার্স   এন-৩ (NeoVerse N ৩ ) সাধারণ ব্যবহার্য কোর দিয়ে নির্মিত হবে। এগুলো আর্মের ৯.২ স্থাপত্য এ ব্যবহৃত হয়েছে।  ধারণা করা হচ্ছে নিউভার্স কম্পিউটার সাব-সিস্টেম (CSS) কে উন্নত করা হবে যাতে ড্যাটা সেন্টারের উপযোগী হয়।

ফলে, প্রতি ডাটা বা ছকে ৬৪টি  ভি-৩ কোর  সংযোজন করা সম্ভব হবে; অন্যদিকে এন-৩ কম্পিউটার সাবসিস্টেমে ৮টি এন-৩ কোর সংযোজন করা সম্ভব হবে। একটি প্রসেসরে বহুধা সিপিউ  চিপলেট ব্যবহার করা যেতে পারে। ফলে, প্রকৃত কোরের সংখ্যা কত হবে তা  এখনই জানার উপায় নেই। এটা পরিষ্কার নয় যে, আর্মের চিপকে কতটুকু বিশেষায়িত করা যাবে, তবে অনুমতি হয় যে – এটিকে যথেষ্ট পরিমাণ রাখা হবে। আর্মের তৈরি চিপ ইন্টেল বা এএমডি’র ‘অফ দ্যা শেল্ফ’ এর চাইতে পৃথক হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।উল্লেখ্য যে, ইন্টেল ও এএমডি ও রিস্ক (RISC) ভিত্তিক সিপিইউ তৈরি করে  থাকে যদিও তাদের মূল পন্য  হচ্ছে

সিস্ক (CISC ) । একটি কথা সত্য, চিপ নির্মাণের মধ্য দিয়ে আর্ম তার গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায়  লিপ্ত হতে যাচ্ছে।  তবে, এ প্রতিযোগিতা নাটকীয় মোড় নেবে বলে মনে হচ্ছে না কারণ আমাজান, গুগল বা মাইক্রোসফট তাদের ডাটা সেন্টারে  যে আর্ম ডিজাইনকৃত চিপ  ব্যবহার  করে তা একান্তই  তাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য।  এ ব্যাপারে এনভিডিয়ার কথা বলা যেতে পারে। তবে, এম্পিয়ার  বা হুয়ায়েই  কোম্পানিকে বেশ প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এম্পিয়ার এর জন্য ভাল খবর হলো, এটি সফটব্যাংক নামক  একটি প্রতিষ্ঠান  খুব শীঘ্রই অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে এদিকে  হুয়ায়েই তার নিজস্ব ব্যবহার এবং তার ঘনিষ্ট সহযোগীদের জন্য চিপ নির্মাণেই ব্যস্ত রয়েছে। নিজস্ব চাহিদা পূরণ করাই তার মূল লক্ষ্য। তথাপি, এটি দেখার বিষয় যে, কতগুলো কোম্পানি আর্মের থেকে ডিজাইন ক্রয় করে ড্যটা- সেন্টার গ্রেডের প্রসেসর নির্মাণ করবে। আর্ম নিজস্ব হার্ডওয়ার তথা চিপ তৈরি করার ফলে এ কোম্পানি গুলো কিছুটা হোচট খেতে পারে।

আরেকটি ব্যাপার গ্রাহকদের চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে তা হলো তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিভাগুলোকে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া।  আর এ কাজটি আর্ম শুরু  করেছে  কয়েকবছর পূর্ব থেকে। ২০২৩ সাল থেকে তার লাইসেন্সধারীদের থেকে নির্বাহী ভাড়া করা শুরু করেছে বলে রয়টার্স জানায়।

আর্মের প্রধান নির্বাহী রেনে হাস গত ডিসেম্বরে কোয়ালকমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলেছিল যে, তারা সিপিইউ তথা চিপ নির্মাণ করছে না।

মূলত: রাজস্ব আয় বহুগুণ বৃদ্ধির জন্য আর্ম এ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে; বিশেষ করে মেটার মতো গ্রাহক পাবার কারণে তারা বেশ চাঙ্গা হয়েছে এবং ইন্টেল ও এমডি’র সঙ্গে সরাসরি  পাল্লা দিতে অগ্রসর হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বর্তমান বিশ্বে ইন্টেলের প্রসেসর তথা চিপ সর্বচেয়ে  বেশী ব্যবহৃত হচ্ছে। এরপর হচ্ছে  এএমডি। ভাগ্যিস, এপল এখনও এদিকে নজর দেয়নি। তাহলে কি অবস্থা হতো  বলা মুসকিল। ক্লাউড সার্ভিসে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে আমাজান ওয়েব সার্ভিস, এরপর গুগল ও  মাইক্রোসফট। তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *