টিউলিপ সিদ্দিকের চিঠি প্রসঙ্গে কিছু পর্যবেক্ষণ

 

সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট : টিউলিপ সিদ্দি একজন ব্রিটিশ এমপি হিসেবে, তাঁর সাম্প্রতিক চিঠিতে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে যে ভাষা ও রূপক ব্যবহার করেছেন, তা অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ ঠেকেছে। তাঁর চিঠি থেকে মনে হয়েছে, তিনি ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে স্বীকৃতি দেন না। যদি দিতেন তাহলে নামের সাথে যথাযথ পদবী, সম্মানসূচক উপাধি, রাষ্ট্রের নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করতেন—যেটা রাষ্ট্রীয় এবং কূটনৈতিক চিঠি আদান-প্রদানের একটি প্রচলিত প্রথা।

তাঁর এই চিঠির ভাষা এবং গঠন দেখে মনে হয়েছে, ড. ইউনূসকে তিনি হয়তো একজন সাধারণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করেছেন, যা বিস্ময়ের উদ্রেক করে। একজন নোবেল বিজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের প্রতি এমন অনানুষ্ঠানিক ও ত্রুটিপূর্ণ চিঠি যথেষ্ট অপেশাদার বলেই মনে হচ্ছে। বিশেষ করে ‘Every move in this fantasy investigation is briefed to the media’ বা ‘correspondence to a random address in Dhaka’—এই ধরনের শব্দচয়ন ভদ্রতা ও শালীনতার সীমা ছাড়িয়েছে বলেই অনেকের মত।

এই ধরনের বক্তব্য একজন বন্ধুর প্রতি হয়তো ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু কোন রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা বা আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তির প্রতি নয়। এমনকি যদি চিঠির অভিপ্রায় ছিল আলোচনার বা সাক্ষাতের আমন্ত্রণ, তবুও চিঠির ভাষা ও কাঠামো বিষয়বস্তুকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, টিউলিপ সিদ্দিকের বক্তব্য ও প্রকাশভঙ্গি থেকে বোঝা যায়, তার মধ্যে একটি ঔদ্ধত্যপূর্ণ মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। এই ধরনের আচরণ তার পারিবারিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকেই সম্ভবত অনুপ্রাণিত। অতীতে তার খালা জাতীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে অমার্জিত ও অসম্মানজনক মন্তব্য করেছেন—যেমন “আয়েশ করে পায়েস খাচ্ছে” ইত্যাদি। একইভাবে, বিশ্ববরেণ্য ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, “টুপ করে পদ্মায় ফেলে দেবো”—যা একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের প্রতি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং অশোভন।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস একজন শ্রদ্ধেয়, বিচক্ষণ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনৈতিক সচেতন নাগরিক। তিনি কার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা প্রয়োজন এবং কার সঙ্গে নয়—তা খুব ভালো করেই জানেন। তাই টিউলিপের পক্ষ থেকে বারংবার যোগাযোগ বা সাক্ষাতের চেষ্টা সত্ত্বেও তিনি সাড়া দেননি, কারণ তিনি অপ্রয়োজনীয় আলোচনায় সময় নষ্ট করতে চাননি।

অপরদিকে, তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমানের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন, যা অনুষ্ঠিত হয়  অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর অবস্থানরত হোটেল কক্ষে। এই বৈঠকটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথে একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করেছে। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে এই আলোচনা রাজনৈতিক পরিবেশকে স্থিতিশীল এবং ফলপ্রসূ করতে সহায়ক হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *