সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট: বাংলাদেশে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদী দল এবং গণহত্যা ও সন্ত্রাসের দায়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখন দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৩ জুন ২০২৫ সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় আটটার দিকে অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের নামে সিডনির বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা লাকেম্বায় একদল আওয়ামী নেতাকর্মী ঝটিকা মিছিলের নামে চিৎকারের সাথে স্লোগান দিয়ে ঘোরাঘুরি করা এবং সেই তথাকথিত মিছিল থেকে একজন বাংলাদেশী ছাত্রকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে।
শারীরিকভাবে আক্রমণের শিকার একুশ বছর বয়সী বাংলাদেশী তরুণ ছাত্রটির সাথে কথা বলে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময় লাকেম্বার ফুটপাত দখল করে আওয়ামী দুর্বৃত্তদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলের নামে চিৎকার করা দেখে সে তাৎক্ষণিকভাবে ভুয়া বলে প্রতিবাদ করে। গত বছর জুলাই-আগষ্টে ঢাকার রাস্তায় জীবনবাজি রেখে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া ছেলেটি আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্র হিসেবে পড়ালেখার জন্য চব্বিশের সেপ্টেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে। চোখের সামনে আওয়ামী নির্মমতা ও গণহত্যা দেখা এই ছেলেটি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত না হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের জয় বাংলা চিৎকার শুনে নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি।
এইসব দেশে সাধারণত প্রবাসীরা ঝামেলা এড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত গুন্ডা প্রকৃতির লোকজনকে এড়িয়ে চলে। কিন্তু অসীম সাহসের পরিচয় দিয়ে ছেলেটি একাই নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্য মিছিলের প্রতিবাদ করে বসে।
সাথে সাথে চার-পাঁচজন আওয়ামী সন্ত্রাসী দল বেঁধে অল্পবয়সী ছাত্রটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাকে লাথি ও ঘুসি মারতে থাকে। একজন পথচারী ঘটনাটি ভিডিও করা শুরু করলে সেই ভিডিওতে দেখা যায় আওয়ামী মিছিল থেকে একজন নারী এই ছাত্রটিকে গলাধাক্কা দিচ্ছে। ঘটনার শেষদিকে তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার ভিডিওতে দুইজন মধ্যবয়সী নারীকে পরিষ্কার উম্মাদের মতো আচরণ করতে দেখা যায়। এদের মাঝে একজন নিজেকে অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দাবি করে, আরেকজন যুব মহিলা লীগ নেত্রী গত বছর আগস্টের পর বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসেছে বলে জানা গিয়েছে। যুব মহিলা লীগ নেত্রীটিকে ভিডিওতে পরিষ্কার দেখা যায় ছেলেটিকে থাপ্পড় মারছে। তবে ছাত্রটি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে কোন ধরনের পাল্টা আঘাত না করে বরং সাথে সাথে স্থানীয় পুলিশকে ফোন করে।
রাজনৈতিক দুবৃত্তপনা এবং অসভ্য আচরণ বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আমদানি করা আওয়ামী লীগাররা এদেশে বছরের পর বছর থাকার পরও ন্যূনতম সভ্যতা ও মানবিক আচরণ শিখতে ব্যর্থ হওয়ার চাক্ষুষ প্রমাণ এ ভিডিওটি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
অস্ট্রেলিয়াতে যে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচির সামনে মৌখিক প্রতিবাদ করার সংস্কৃতি একটি স্বাভাবিক বিষয়। এমনকি দেশটির প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরাও স্বয়ং বক্তব্য দেয়ার সময় সাধারণ জনগণের চিৎকার ও প্রতিবাদকে সহ্য করে নেন। এই দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী মৌখিকভাবে যে কোন প্রতিবাদ করার বিষয়টি একটি স্বীকৃত রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু কেউ যদি অন্য কারো গায়ে আঘাত করে বা হাত তুলে, তাহলে বিষয়টিকে অ্যাসল্ট বা শারীরিক আক্রমণের আইনী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে প্রকাশ্য শারীরিক আক্রমণের শিকার ছেলেটি পুলিশে ফোন করলে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ক্যাম্পসি পুলিশ স্টেশন থেকে অফিসাররা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পথচারীদের রেকর্ড করা বেশ কয়েকটি ভিডিওতে উপস্থিত আওয়ামী নেতাকর্মীদের পরিস্কারভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং বিষয়টি পুলিশের তদন্তাধীন রয়েছে।
স্থানীয় এমপি এবং সিনেটরদের সাথে এই ঘটনা সম্পর্কে মতামত জানতে যোগাযোগ করা হলে তারা ভিডিওটি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। গত বছর আগস্ট মাসে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পর অস্ট্রেলিয়াতে এই নিষিদ্ধ দলটির প্রচুর নেতাকর্মী রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী প্রকৃতি এবং সত্যিকার পরিচয় ধীরে ধীরে এদেশের সরকারি বিভাগগুলোর কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠছে। এসব কারণে আওয়ামী লীগের হয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করা লোকজনের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে উঠছে।
সিডনির এক কম্যুনিটি নেতা বলেন:“রাজনৈতিক মতভেদ থাকতেই পারে, কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
সুপ্রভাত সিডনি -অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিতা সাধারণ সম্পাদক -বর্তমান সভাপতি ড. সিরাজুল হকের সাথে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন- এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কমুনিটিতে আমরা সকলে মিলে মিশে চলতে চাই।