কুয়েতে কর্মী নিয়োগ: ভিসা ফ্রি হলেও ৫-১০ লাখ টাকার অসম বাণিজ্য চলছেই

মঈন সুমন (কুয়েত} : কুয়েত সরকার ঘোষিত ‘ভিসা ফ্রি’ নীতিমালার পরও বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠাতে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। এই অনৈতিক অর্থ লেনদেন চালাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগী চক্র। বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছেন বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েতের সভাপতি মঈন উদ্দিন সরকার সুমন।
তিনি জানান, ‘তিন দিনারের ভিসা’ নামে পরিচিত এসব ভিসার প্রকৃত খরচ দুই লাখ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। তবুও কুয়েতগামী শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে— যার নেই কোনো বৈধ রসিদ বা আইনি ভিত্তি। এই শ্রমিকদের অধিকাংশই নিম্ন বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির। অনেকেই জমি বিক্রি, উচ্চ সুদে ঋণ গ্রহণ বা সর্বস্বান্ত হয়ে এই টাকা জোগাড় করছেন।
এটা শুধু বাণিজ্য নয়, এটা এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন।
মঈন সুমন বলেন, “বিদেশগামী শ্রমিক যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেন, তখন বিষয়টি শুধুমাত্র আর্থিক লেনদেন নয়; এটি মানবিক অধিকার ও রাষ্ট্রের মর্যাদার বিষয়ও বটে। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ সরকারের উদাসীনতা ও কূটনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে দালালচক্র শ্রমিকদের পণ্যে পরিণত করছে।
শ্রমিক সুরক্ষায় তিন দফা দাবি
শ্রমিকদের সুরক্ষায় সরকারের প্রতি তিনটি আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান মঈন সুমন:
* চাকরির স্থায়িত্ব: ন্যূনতম ৩ বছর মেয়াদি বাধ্যতামূলক চুক্তি, যেন কর্মীরা নিরাপদে ও স্থায়ীভাবে কাজ করতে পারেন।
* সুনির্দিষ্ট বেতন ও সুযোগ-সুবিধা: বাসস্থান ও পরিবহনসহ মাসিক বেতন কোম্পানির পক্ষ থেকে নির্ধারিত ভাবে প্রদানের নিশ্চয়তা।
* ক্ষতিপূরণ নীতিমালা: দুই বছরের মধ্যে চাকরি হারালে বা দেশে ফেরত পাঠানো হলে নিয়োগদাতা বা এজেন্সি কর্তৃক ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান।
রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান
, প্রবাসীরা শুধু রেমিট্যান্স পাঠানো যন্ত্র নয়, তারা জাতীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাদের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় যেন নিয়মিতভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া তদারকি করে, দালাল ও প্রতারক এজেন্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে, এবং প্রবাসীদের জন্য দূতাবাস পর্যায়ে তাৎক্ষণিক অভিযোগ গ্রহণ ও সমাধানের ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কুয়েতের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারে এই ধরনের কালোবাজারি চালু থাকলে প্রবাসীদের জীবনে ঝুঁকি বাড়বে এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও চরম হুমকির মুখে পড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *