অভিবাসী ও প্রবাসী দুই শব্দের ভিন্নতা, এক বাস্তবতার পরিচয়

মঈন উদ্দিন সরকার সুমনa বাংলাদেশে অনেকেই মনে করেন বিদেশে বসবাসকারী সব বাংলাদেশিই “প্রবাসী” বা “অভিবাসী”। কিন্তু ভাষা ও বাস্তবতার দিক থেকে এ দুই শব্দের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য আছে। এই পার্থক্য জানা শুধু ভাষাগত শুদ্ধতার জন্যই নয়, বরং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সঠিক তথ্য উপস্থাপনের জন্যও জরুরি।

অভিবাসী (Immigrant / Migrant):

“অভিবাসী” বলতে বোঝায় এমন ব্যক্তিকে, যিনি স্থায়ীভাবে অন্য দেশে বসবাস করার উদ্দেশ্যে নিজ দেশ ছেড়ে চলে যান। সাধারণত এদের লক্ষ্য হয় নতুন দেশের নাগরিকত্ব বা দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের অনুমতি পাওয়া। যেমন কেউ বাংলাদেশ থেকে কানাডায় গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলে তিনি অভিবাসী হবেন। মূল বৈশিষ্ট্য হলো স্থায়ী বসতি গড়ার উদ্দেশ্য নতুন দেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার পরিকল্পনা নিজ দেশ থেকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তর হন বা ঐ দেশে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ থাকে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ থাকে ।

প্রবাসী (Expatriate / Expat):

“প্রবাসী” হলো সেই ব্যক্তি, যিনি কাজ, পড়াশোনা বা অন্য কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বিদেশে থাকেন। এ ক্ষেত্রে মূল দেশের নাগরিকত্ব বজায় থাকে এবং নির্দিষ্ট সময় পরে দেশে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা বা বাধ্যবাধকতা থাকে। উদাহরণ: কুয়েত, সৌদি আরব, ওমান বা মালয়েশিয়ায় চুক্তিভিত্তিক কয়েক বছরের জন্য কাজ করতে যাওয়া সবাই প্রবাসী। মূল বৈশিষ্ট্য: সাময়িক বা চুক্তিভিত্তিক থাকা। নাগরিকত্ব পরিবর্তনের সুযোগ নেই বা খুব সীমিত। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে দেশে ফিরে যেতে হয়।  মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশেই বিদেশি নাগরিকদের স্থায়ী বসবাস বা নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ নেই। কুয়েতের উদাহরণই ধরা যাক এখানে কুয়েতি নাগরিক ছাড়া বিশ্বের সব দেশের মানুষকেই “প্রবাসী” হিসেবে গণ্য করা হয়, সে তারা বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন, আমেরিকা কিংবা ইউরোপ বা অন্য যেকোনো দেশের হোক না কেন। কুয়েতে অন্য কোন দেশের নাগরিককে অভিবাসী বোর সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশে যখন “প্রবাসী” শব্দ ব্যবহার করা হয়, অনেকেই তা শুধু বাংলাদেশের বিদেশে থাকা নাগরিকদের বোঝায় ভেবে নেন। বাস্তবে কুয়েত   প্রবাসী মানে সেই দেশের নাগরিক ছাড়া বাকি সব বিদেশিকে বুঝানো হয়। সেটা হোক বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন, আমেরিকা কিংবা ইউরোপের যে কোন দেশের নাগরি সবাই প্রবাসী। সংক্ষেপে মনে রাখার কৌশল: অভিবাসী → স্থায়ী বসতি (Permanent), প্রবাসী → সাময়িক প্রবাস (Temporary)। ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি বাস্তবতা ও পরিচয়ের প্রতিফলনও বটে। “অভিবাসী” ও “প্রবাসী” শব্দের সঠিক ব্যবহার আমাদের সংবাদ, প্রতিবেদন ও আলোচনাকে আরও নির্ভুল এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে। তাই আমরা যখন সংবাদ প্রকাশ বা মন্তব্য করি, সঠিক শব্দের ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত যাতে পাঠকের কাছে বাস্তব পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে পৌঁছায়।

লেখক : সাংবাদিক  মঈন উদ্দিন সরকার সুমন, সভাপতি বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *