ইসকনের সন্ত্রাসী অপতৎপরতা শেষ কোথায় ?

সুপ্রভাত সিডনি প্রতিবেদন : ইসকন (International Society for Krishna Consciousness – ISKCON) আজ অনেকের চোখে এক ধরনের উগ্র ও সহিংস সংগঠন হিসেবে পরিচিত। বহু হিন্দু নেতারাও প্রকাশ্যে দাবি করেছেন যে ইসকন একটি সন্ত্রাসী দল, এ বিষয়ে তাদের সন্দেহ নেই। তবে এটিও সত্য যে সাধারণ হিন্দু ও ইসকনের অনুসারীদের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। শান্তিপ্রিয় সাধারণ হিন্দুরা মুসলমানদের সঙ্গে মিলেমিশে চলেন, একসাথে উৎসব পালন করেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির সম্পর্ক বজায় রাখেন। কিন্তু ইসকনের সদস্যরা  মুসলমানদের ‘চিরশত্রু’ মনে করে, কেন তারা এমনটা ভাবে, তা কেবল তারাই জানে।

বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে হাজারও মন্দির আছে, যেখানে কখনো মুসলমানরা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করেনি। কারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমান জানে, অন্যের উপাসনালয় ধ্বংস করা বা কারো ক্ষতি করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ছোটবেলা থেকেই আমরা হিন্দু-মুসলমান মিলে সহাবস্থান শিখেছি। কেউ কাউকে শত্রু মনে করেনি; বরং ভ্রাতৃত্ব ও মানবিক সম্পর্কই ছিল আমাদের শক্তি। হিন্দুদের কখনো ‘আলাদা জাতি’ হিসেবে দেখা হয়নি, বরং আমরা তাদের আপনজন হিসেবেই গ্রহণ করেছি। “হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই”—এই মূল্যবোধেই বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে।

কিন্তু ভারতে ঘটছে তার সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। সেখানে ইসকন নামে সংগঠিত সন্ত্রাসী দল মুসলমানদের বাড়িঘর, দোকানপাট ও মসজিদে আগুন দিচ্ছে, আনন্দ উল্লাস করছে। মুসলিম নারীদের উপর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ চালিয়ে সেই ভয়াবহ ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। বহু হিজাবি নারীর সম্ভ্রমহানি করা হয়েছে অমানবিকভাবে।

তবুও বাংলাদেশে মুসলমানরা প্রতিশোধ নেয়নি, কোনো পাল্টা সহিংসতা দেখায়নি। কারণ একজন প্রকৃত মুসলমান আল্লাহকে ভয় করেন , পরকালের জবাবদিহিতা মনে রাখে। এই মানবিক ও ঈমানী চেতনার কারণেই বাংলাদেশে ধর্মীয় সহাবস্থান এখনও টিকে আছে, শান্তি ও সহনশীলতার উদাহরণ হয়ে।

বাংলাদেশে বিগত ১৬ বছরে একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ ও সহিংস কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, তৎকালীন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এরা দেশের ভেতরে নানা ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপতৎপরতায় যুক্ত ছিল।

বিভিন্ন জায়গায় পরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষের ক্ষতি, সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি, নিরীহ মুসলিম পরিবার ও নারীদের প্রতি নিপীড়নের মতো অমানবিক ঘটনার অভিযোগ সামনে এসেছে। নাবালিকা সহ নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার মতো ঘৃণ্য অভিযোগও সমাজকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে।

এই ঘটনাগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ বলে বিবেচিত হতে পারে। কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন আইন ও নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘন করলে রাষ্ট্র ও সমাজের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করে দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে হবে।

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ইসকনের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও সম্পত্তি ভাঙচুরের খবর সকলের জানা , বিশেষ করে যুদ্ধের সময় বা রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ার সঙ্গে সংযুক্ত এ দলটি।একাধিক মন্দির ও ধর্মীয় স্থানের উপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। যেমন, চট্টগ্রামে ইসকন-কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের উপরে রিপোর্ট রয়েছে। হিন্দুদের বাড়ি, মন্দির, ব্যবসা জায়গায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ আছে ইসকনের বিরুদ্ধে।

ইসকনের পুরনো সদস্যকে ২৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে ‘দেশবিরোধিতা’ অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে; অভিযোগ করা হয়েছে জাতীয় পতাকার অবমাননার কারণে।

তাঁর গ্রেফতারের পর ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামে বড় ধরনের প্রতিবাদ ও সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী বিভাজন করতে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। ওই সময়সাথে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বাড়ি, ব্যবসা, মন্দির ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে  বিশেষ করে Bangladesh Hindu Buddhist Christian Unity Council বলেছে, কয়েকশটি বাড়ি ও দোকান ও কয়েকটি মন্দির হামলার শিকার হয়েছে। সম্প্রতি একাধিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনকে “নিষিদ্ধ করার” দাবি তুলেছে।

আইনি ও রাষ্ট্রীয় দাবি

বাংলাদেশে এক আইনজীবী শ্লোগানসহ লিখিতভাবে ISKCON-কে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন, এবং অভিযোগ করেছেন যে ISKCON “র‍্যাডিকাল সংগঠন” হয়ে উঠেছে যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

আচরণ ও অভিযোগ

Chinmoy Krishna Das যুবকের (ISKCON বাংলাদেশের এক নেতা) বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের (sedition) অভিযোগ আনা হয়েছে , পতাকার অপমানের অভিযোগ ও মুসলিম-হিন্দুদের মধ্যে উত্তেজনার প্রসঙ্গে।  ইসলামী সংগঠন Hefazat‑e‑Islam Bangladesh ISKCON-কে “হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিরূপ কার্যক্রম চালানো মিলিট্যান্ট সংগঠন” বলেছে।  বিশেষ করে চট্টগ্রামে একটি ঘটনা: একজন ব্যবসায়ীকে হুমকি দেওয়া ও দোকান ধ্বংসের অভিযোগ ওঠেছে ISKCON-সমর্থক দাবি করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।

বিশ্লেষণ ও প্রেক্ষাপট

এক বিবেচনায় বলা হয়েছে: ISKCON-এর বিরুদ্ধে উঠেছে শুধুই সন্ত্রাসগত অভিযোগ নয়, বরং রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে সংঘর্ষ ও অভিযোগের মিশ্রতা রয়েছে।

এছাড়া, ISKCON নিজস্বভাবেই বলেছে তারা গুরু–শিষ্য সম্পর্ক, অভভূতি আইন ইত্যাদি নিয়ে সতর্কতা বৃদ্ধি করেছে, কারণ তারা নিজে “কাল্টিক” আচরণের সম্ভাবনা স্বীকার করেছে।

সারাংশ :

ধর্মের নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে তারা আসলে কোন বার্তা দিতে চায়? এই প্রশ্ন আজ দেশের মানুষের মনে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো অতীতে নাশকতা প্রতিরোধে(?) সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তাই জনগণের প্রত্যাশা, বর্তমান পরিস্থিতিতেও তারা একই দৃঢ়তা দেখাবে এবং যেকোনো অবৈধ ও সহিংস কর্মকাণ্ডের দায়ীদের আইনের আওতায় আনবে।

নিরাপদ সমাজ গঠনে সরকার ও জনগণের যৌথ প্রচেষ্টা অপরিহার্য। নাগরিকদের সচেতন থাকতে হবে, নতুন বা অপরিচিত কাউকে দেখলে সন্দেহ সৃষ্টি হলে তাকে বা তাদেরকে আটকিয়ে স্বীকারোক্তি বা জবানবন্ধি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিন তারপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করা উচিত। তথ্যপ্রমাণসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোই নাগরিক দায়িত্ব।

 

বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, কারণ এসব অঞ্চলই কখনো কখনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অপতৎপরতার ঝুঁকি বহন করে।

আমরা সকলেই চাই ধর্মীয় সম্প্রীতি, মানবিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। সমাজের প্রতিটি মানুষ সজাগ ও দায়িত্বশীল হলে সন্ত্রাস কখনোই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। সন্ত্রাসীদের পরিচয় তাদের নাম, ধর্ম, বর্ণ বা সংগঠনে  নয় : “তারা সন্ত্রাসী”  সেটাই তাদের মূল পরিচয়। সন্ত্রাসকে সমর্থন করা মানেই দায়সারথী হওয়া। এই রোগ রোধ করতে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে; শুধু মুসলমান  নয়, শান্তিপ্রিয় হিন্দুরাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ালে বাংলাদেশে এ ধরনের নরপিচাশদের কোনো ঠাঁই হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *