কেন ফোন নির্মাতা গাড়ী বানাচ্ছে

তাজুল ইমলাম ( প্রকৌশলী): ইদানিং বিশ্ববিখ্যাত এপল কোম্পানী থেকে শুরু করে চীনের শিয়াওমি অব্দি স্মাটফোন কোম্পানিগুলো গাড়ী নির্মাণের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এর কারণ বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ধারনা পোষণ করছেন। বলাবাহুল্য, এই ২০২৫ সালে স্মার্টফোন এবং গাড়ীর সংহতিকরণ বেশ দৃঢ় হয়েছে যেমন এপল কার প্লে বা এন্ড্রয়িড অটো আজকাল নতুন মডেলের গাড়ীতে বেশ ভালভাবেই সন্নিবেশিত করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ স্মাট ফোন  ক্রমান্বয়ে গাড়ীতে অনুপ্রবেশ করে ফেলেছে। যানবাহন শিল্পে স্মার্টফোনের সন্নিবেশের কথা কিছু দিন পূর্বে চালু হলেও ফোন নির্মাতারা একে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছেন। এর সুফল ইতিমধ্যে নির্মাতারা পেতে শুরু  করেছেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, সফটওয়ার সন্নিবেশনকে দ্রুততার সাথে গাড়ীতে স্থানান্তরিত করতে পারলে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন অর্জনে ভূমিকা রাখবে। সুতরাং তারা গতানুগতিক গাড়ী নির্মাতাদের উপর নির্ভর না করে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে এপথে হাঁটা আরম্ভ করেছেন। আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত গাড়ীর ব্যবহারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমানে একজন  চালক প্রথমেই গাড়ীর সিটে বসেই সফটওয়্যারের মুখোমুখি হন অর্থ্যাৎ কর্মকাণ্ড শুরুই হয় সফটওয়্যার দ্বারা। অস্বীকার করার জো নাই; বিদ্যুৎ চালিত গাড়ীগুলো অত্যন্ত সফটওয়ার নির্ভর। বিশেষ করে কন্ট্রোল সিস্টেম। প্রত্যেক গাড়ী নির্মাতার নিজস্ব কন্ট্রোল সিস্টেম প্রত্যেক  আছে, ফলে এগুলোকে একই সমতায় নিয়ে এসে একটি স্টান্ডার্ড মঞ্চ তৈরি করার জন্য তারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে গাড়ী নির্মাণের পথে নেমেছে। এপল কার প্লে এবং এন্ড্রয়িড অটো প্রতিবছর নতুন সংস্করণ বের হলেও গাড়ীর কোর ফাংশনে ঢুকতে পারেনি বরং বিনোদন ও নেভিগেশন পর্যায়ে রয়ে গেছে। এছাড়াও স্মার্টফোনে স্পর্শ প্রযুক্তি যেভাবে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তাকে ক্রমান্বয়ে গাড়ীতে অন্তর্ভুক্ত করা তাদের চিন্তা চেতনায় চলে এসেছে। যেখানে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়ারের অপূর্ব মিলন ঘটবে। এর কতিপয় বাস্তবায়ন এসটন-মার্টিনে এপল কার আল্ট্রার মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে। আগামী সংস্করণে এটিকে আরো উন্নত মাত্রায় নিয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। কার প্রে আল্ট্রার মাধ্যমে বিনোদন ছাড়াও স্পীডো মিটার, রেডিও এবং ক্লাইমেট কন্ট্রোল সবই নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে।

এদিকে, গাড়ী নির্মাতার ডিজাইন-ভাষা অনুযায়ী যেমনঃ হিউন্দাই, কিয়া এবং জেনিসিসের ভবিষ্যত মডেল অনুযারী পরবর্তী সংস্করণ তৈরি করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা শিয়াওমির এসইউ ৭ এর প্রসঙ্গক্রমে তাদের HUMANxCARxHOME এর কৌশলের দিকে নির্দেশ করে বলেন যে, এ কোম্পানী চতুর্দিকে তাদের বিচিত্র পণ্য নির্মাণ করে বাজারে ছাড়ছে। ফলে তাদের যানবাহন বাজারের অস্থিতিশীলতা অন্যদিকের মাধ্যমে পূষিয়ে নিতে পারবে। ইভি তথা বিদ্যুৎ চালিত গাড়ীতে তারা এখনই লাভের আশা দেখছে না তাতে করে তারা এর উৎপাদন বন্ধ করবে না। জীবন যাত্রার প্রতিটি স্তরে তাদের পণ্যের সমাহার দেখা যায়- যেমন রাইস কুকার, পাওয়ার স্ট্রিপ, স্মার্ট ফোন ইত্যাদি। শিয়াওমি তাদের সাপ্লাই চেইনকে বিগত ১৫ বছর ধরে বিকশিত করে চলেছে ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদনে বুৎপত্তি অর্জন করেছে। পণ্যের বিচিত্রতা প্রযুক্তি কোম্পানী সমূহকে অটোমোটিভ তথা যানবাহন শিল্পে আগানোর সাহস প্রদান করেছে। যেমন ধরা যায়, সনি, স্যামসাং এবং হুয়ায়েই এর কথা। এদের সাপ্লাই চেইন অত্যন্ত উন্নত পর্য্যায়ে পৌছে গেছে

গাড়ী নির্মানের চ্যালেঞ্জ সমূহ

স্মার্ট ফোন নির্মাতারা সবচেয়ে বেশী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে। গাড়ী চালনা হতে হবে সর্বাধিক নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত যা ফোনের ক্ষেত্রে তেমন প্রযোজ্য নয়। ইতিমধ্যে শিয়াওমির এস ইউ ৭ আল্ট্রা হাইওয়ে প্রতিবন্ধকের সঙ্গে  সংঘর্ষ বাধিয়ে তিনজনকে মৃত্যু্র দিকে ঠেলে দিয়েছে; ফলে, এটি তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিনোদন নয় বরং গাড়ী চালনার নিরাপত্তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং মারাত্মক। কোম্পানী সমূহকে এটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নির্মাণ করতে হবে।  এছাড়াও রয়েছে ইলেক্ট্রনিক ডোর সিস্টেম।  প্রশ্ন থেকে যায়, অনভিজ্ঞ একজন ড্রাইভারে হাতে শক্তিশালী বিদ্য়ুত চালিত গাড়ী কতটুক নিরাপদ হবে। উদাহরণস্বরূপ, সিয়াওমি এস ইউ ৭ (SU7) এ ১১৩৮/১৭৭০ এন এস বিদ্যুৎ ইঞ্জিন রয়েছে যা ১.৮ সেকেন্ডে ০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতি অর্জন করতে পারে,  যা ল্যাম্বরগিনি টেমেরারিও বা ফেরারী এফ৮০ থেকেও গতিশীল।

এদিকে এপল ক্রমান্বয়ে গাড়ী নির্মাণে অগ্রসর হলেও বর্তমানে এ প্রকল্প সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। তারা বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। তারা এতো শক্তিশালী কোম্পানী যে, ইচ্ছে করলে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে দ্রুত গাড়ী বাজারে অবমুক্ত করতে পারে অনায়াসে। দেখা যাক, পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাড়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *