আতিকুর রহমান (প্রকৌশলী): সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তাআলার, যিনি মাখলুক সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের প্রত্যেকের জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা, তাঁকে হিসাব ছাড়াই রিজিক দান করেন। কেউ চাইবার আগেই আল্লাহ তাঁকে দেন, আবার অনেক সময় যা আশা করে তার চেয়েও বেশি দান করেন। জীবনের পথে বারবার আমি নিজেই এর বাস্তব প্রমাণ দেখেছি। নিচে কোরআনুল কারীমে এ বিষয়ে বর্ণিত কয়েকটি আয়াত তুলে ধরছি—
১. সূরা আল-বাকারা (২:২১২)
বাংলা অনুবাদ:
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, তাঁকে অগণিত রিজিক দান করেন, কোনো হিসাব ছাড়াই।
২. সূরা আলে ইমরান (৩:২৭)
বাংলা অনুবাদ:
আপনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন, কোনো হিসাব ছাড়াই।
৩. সূরা আন-নূর (২৪:৩৮)
বাংলা অনুবাদ:
আর তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন, কোনো হিসাব ছাড়াই।
৪. সূরা আজ-যুমার (৩৯:৫২)
বাংলা অনুবাদ:
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রিজিক বিস্তৃত করেন, আর যাকে ইচ্ছা সংকুচিত করেন। নিশ্চয়ই এতে বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।
৫. সূরা আল-আনকাবুত (২৯:৬২)
বাংলা অনুবাদ:
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা রিজিক প্রসারিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সংকুচিত করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন।
ঘটনা – এক
অফিসের কাজে একবার আমাকে DHL-এর একটি ওয়্যারহাউজে যেতে হয়েছিল আমাদের কিছু ক্ষতিগ্রস্ত পণ্য পরিদর্শনের জন্য। যোগাযোগ করে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলে এক স্টাফ জানালেন, একটু অপেক্ষা করতে হবে—কেউ আসছেন। কিছুক্ষণ পর সাধারণ পোশাকে এক ব্যক্তি এলেন। ভাবলাম হয়তো কোনো স্টাফ হবেন। তিনি নিজেই আমাকে পণ্যের কাছে নিয়ে গেলেন এবং পরিদর্শনে সাহায্য করলেন। প্যাকেট খুলা থেকে শুরু করে সবই নিজেই করলেন।
তবে লক্ষ্য করলাম—ওয়্যারহাউজের সবাই তাঁকে বিশেষ সম্মান করছে। কথায় কথায় জানতে পারলাম, এই সাধারণ পোশাকের মানুষটিই আসলে পুরো ওয়্যারহাউজের মালিক—DHL-এর কন্ট্রাক্টেড কোম্পানির CEO। জানতে চাইলাম, কীভাবে তিনি এই অবস্থানে এলেন। তাঁর উত্তর আমার হৃদয়ে দাগ কেটেছিল—
“আমার বাবা ছিলেন ট্রাক ড্রাইভার। একবার DHL-এর একটি কন্টেইনার ডেলিভারি দিতে গিয়ে গ্রহীতা প্রস্তুত না থাকায় DHL আমার বাবাকে বলল—মালগুলো কয়েকদিনের জন্য কোথাও রাখতে পারো? উপায় না পেয়ে বাবা নিজের বাসার সামনেই রাখলেন। পরে DHL থেকে আবার বলল—তুমি তো আমাদের মাল রাখার দায়িত্ব নিতে পারো!
সেই থেকেই শুরু। ছোট জায়গা থেকে ধীরে ধীরে বড় জায়গা—আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আজ আমি বাবার সেই ব্যবসা চালাচ্ছি। এখন এই ওয়্যারহাউজের ভাড়াই বছরে মিলিয়ন ডলার।”
ওয়্যারহাউজটি ঘুরে দেখার সময় আমি গভীরভাবে ভাবছিলাম—আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, তাঁকে হিসাব ছাড়াই রিজিক দেন।
এই মানুষটি রিজিক চায়নি, কিন্তু আল্লাহ তাঁকে এমনভাবে দিয়েছেন যা তাঁর কল্পনাতেও ছিল না।
ঘটনা – দুই
এই ঘটনাটি শুনেছি আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে, যিনি অস্ট্রেলিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
একদিন রাতে তাঁর ক্লাস শেষে ট্রেনে করে বাসায় ফেরার পরিকল্পনা ছিল। এক ছাত্র তাঁর তাড়াহুড়া দেখে বলল,
“স্যার, চিন্তা করবেন না, আমি গাড়িতে করে আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেব।”
বন্ধুটি অবাক হলেন—ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হয়ে সে ব্যস্ত শহরে গাড়ি চালাচ্ছে, যেখানে পার্কিং খরচ অনেক বেশি। একারণে কেউ গাড়ী নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেনা। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে। ক্লাস শেষে ছাত্রের প্রস্তাব অনুযায়ী তাঁর গাড়িতে উঠলেন। পথে কথায় কথায় জানা গেল, ছেলেটি এখন একজন মিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী।
তার গল্প শুনে আমার বন্ধুটি হতবাক। তার নিজের ভাষায়ই বর্ণনা দিচ্ছি:
“আমি নেপাল থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় সিডনিতে এসেছিলাম। প্রথমে টিউশন ফি জোগাতে পার্ট-টাইম ক্লিনারের চাকরি নেই। একদিন আমার চাকুরীদাতা ক্লিনিং কোম্পানির মালিকের সঙ্গে এক অফিস ম্যানেজারের ঝামেলা হয়। ওই ম্যানেজার আমাকে চিনতেন, বললেন—‘তুই চাইলে আমি এই অফিসের পুরো ক্লিনিং কন্ট্রাক্ট তোকে দেব।’
আমার তো কোনো কোম্পানি নেই, কোনো পুঁজি নেই। এদিকে আমার কোম্পানির মালিক ভুল বুঝতে পারে, এজন্য প্রথমে রাজি হলাম না। পরে অফিস ম্যানেজার বললেন, তুই রাজি না হলে, আমি অন্যকে এ কাজ দিয়ে দেব। অবশেষে অনেক ভেবে কিনতে রাজি হলাম। এটাই শুরু।
আজ আমার নিজের ক্লিনিং কোম্পানি হয়েছে। বহু অফিস আমার ক্লায়েন্ট। লক্ষ লক্ষ ডলারের ব্যবসা চলছে।”
বন্ধুর এই গল্প শোনার পর মনে হলো—এই তরুণ যে সামান্য ক্লিনারের চাকরিই তার জন্য অনেক মনে করেছিল, আল্লাহ তাকে সেই চাকরির মাধ্যমেই অসীম রিজিক দান করেছেন।
সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি যাকে ইচ্ছা, রিজিক দান করেন—কোনো হিসাব ছাড়াই। তাঁর রহমত ও প্রজ্ঞা আমাদের কল্পনারও অতীত।