728 x 90

ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী কি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

ড. ফারুক আমিন : ইংল্যান্ডের পাবলিক মিডিয়া বিবিসি জানুয়ারী মাসের শেষদিকে দুই পর্বের একটি প্রামাণ্যচিত্র সম্প্রচার করে। ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’ শিরোনামে এই প্রামাণ্যচিত্রে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দমোদরদাস মোদীর ব্যক্তিগত অতীত, রাজনীতিতে উত্থান ও বর্তমান অবস্থার বিশদ বর্ণনা রয়েছে। আজ থেকে বিশ বছর আগে ২০২২ সালে ভারতের গুজরাতের আহমেদাবাদে এক হাজারের বেশি মুসলমান মানুষকে

ড. ফারুক আমিন : ইংল্যান্ডের পাবলিক মিডিয়া বিবিসি জানুয়ারী মাসের শেষদিকে দুই পর্বের একটি প্রামাণ্যচিত্র সম্প্রচার করে। ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’ শিরোনামে এই প্রামাণ্যচিত্রে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দমোদরদাস মোদীর ব্যক্তিগত অতীত, রাজনীতিতে উত্থান ও বর্তমান অবস্থার বিশদ বর্ণনা রয়েছে।

আজ থেকে বিশ বছর আগে ২০২২ সালে ভারতের গুজরাতের আহমেদাবাদে এক হাজারের বেশি মুসলমান মানুষকে হত্যা ও অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ‘গুজরাতের কসাই’ উপাধি পাওয়া মোদীর অনুসারীরা বিবিসির এই ডকুমেন্টারিকে চাপা দেয়ার জন্য সমস্ত শক্তি নিয়োগ করেছে।

অভিযোগ করে করে ইউটিউব এবং টুইটার থেকে এ ডকুমেন্টারি প্রসঙ্গে অসংখ্য পোস্ট সরানো হয়েছে। খোদ বিবিসির ওয়েবসাইটে অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য জিওলোকেশন-রেস্ট্রিকশন আরোপ করা হয়েছে যার ফলে ব্রিটেনের বাইরে অন্য কোথাও থেকে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ইউটিউব থেকেও দুই পর্বের অনুষ্ঠানটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

শেষপর্যন্ত ভারতীয় সরকার দেশটিতে বিবিসির আঞ্চলিক অফিসে ট্যাক্স কর্মকর্তাদেরকে লেলিয়ে দিয়েছে। বিবিসির ভারত অফিসে তিনদিনব্যাপী অভিযানের পর ভারতের অর্থমন্ত্রী বিবিসিকে ট্যাক্স ফাঁকির দায়ে অভিযুক্ত করে বিবৃতি দিয়েছেন। বাংলাদেশে যেভাবে আওয়ামী লীগ সরকার একসময় তাদের গোলামী না করা পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে দমন অভিযান পরিচালনা করতো, ঠিক একই রাস্তায় হাঁটছে ভারতের বিজেপি সরকার।

গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো মোটাদাগে প্রভু ভারতের ক্রীতদাস প্রচারকের ভূমিকা পালন করে আসছে। ভারত থেকে বন্যহাতি জঙ্গলপথে বাংলাদেশে এসে আটকে গেলে বাংলাদেশী পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোর ঘুম হারাম হয়ে যায়। সেই হাতির দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুতে পত্রিকাগুলো দিনের পর দিন পৃষ্ঠা ভর্তি করে খবর প্রকাশ করে, চ্যানেলগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা ‘এক্সক্লুসিভ নিউজ’ প্রচার করে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোন রাজনীতিবিদের মেয়ের বিয়ে হলে বাংলাদেশী পত্রিকাগুলো উৎসবমূখর হয়ে উঠে। ভারতের কোন নায়িকার পেটে খাবার হজমে সমস্যা হলে বাংলাদেশী সাংবাদিকরা সংঘবদ্ধভাবে উদ্বেগাকূল হয়ে উঠেন।

ভারত নিয়ে দিবারাত্রি প্রচন্ড মুখর সেই বাংলাদেশী গণমাধ্যমগুলোই আবার বিবিসি মোদী ডকুমেন্টারি প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। বাংলাদেশের গণশত্রু সাংবাদিকদের এ আচরণই প্রমাণ করে যে এই প্রামাণ্যচিত্রটি কোন না কোনভাবে বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক।

বাংলাদেশীদের জন্য এই ডকুমেন্টারিটি যে কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তা হলো নরেন্দ মোদী হলো সেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বর্ষপূর্তিতে যার আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের উপর সারাদেশে পুলিশ লেলিয়ে দেয়া হয়েছিলো এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগ-পুলিশ যৌথ আক্রমণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ সহ সারা দেশে অন্তত সতেরোজন মানুষকে হত্যা পর্যন্ত করেছিলো।

এদেশের নিদেনপক্ষে সতেরোটি কিংবা তারও বেশি আদম সন্তানের জীবনকে অবলীলায় ও বিচারবিহীনভাবে বিসর্জন দেয়া হয়েছে যে বিদেশী প্রভু অথবা বন্ধুকে অভ্যর্থনার জন্য, তার ইতিহাস ও বাস্তবতা প্রচারের গুরুত্ব রয়েছে বৈ কি।

ভারতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে আর এক বছর বাকি। পরপর দুইবার জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের পর আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারলে তা মোদীকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উচ্চতর মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করবে। পাশাপাশি বিজেপির আদর্শ উগ্র হিন্দুত্ববাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য এই বিজয় দরকারী। ভারতে ইতিমধ্যেই সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানোর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়ে গেছে।

এমন সময়ে অন্যতম প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির ডকুমেন্টারি প্রকাশ করে মোদির গ্রহণযোগ্যতা কমানোর যে প্রচেষ্টা, এর পাশাপাাশি তার তহবিল বা পকেটেও হাত দিয়েছে পশ্চিমা শক্তি। নিঃসন্দেহে সাম্প্রতিক এই ঘটনাবলীর ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে।

যে কোন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ক্ষমতা সংহতির ঘটনায় জড়িত মুনাফা অর্জন করা ব্যবসায়ীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পলাশীর যুদ্ধের সময় জগৎশেঠের ভূমিকা থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ে ইরাক-আফগানিস্তানের যুদ্ধে মুনাফা করা কর্পোরেশন, সমস্ত ক্ষেত্রেই এটি একটি বাস্তবতা। আধুনিক সভ্যতায় এসব ব্যবসায়ী, অলিগার্ক অথবা কর্পোরেশনগুলো সাধারণত জনসাধারণের জানার বাইরে থেকে যায়।

তবে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে এই সুবিধাভোগীদেরা নানা কারণেই প্রকাশ্য হয়ে পড়েন। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার তহবিল যোগানদার সালমান এফ রহমান কিংবা এস আলম গ্রুপ, এবং ভারতে মোদির তহবিল যোগানদার বা ফাইনান্সিয়ার গৌতম আদানির ক্ষেত্রে যেমনটা দেখা যায়।

সম্প্রতি সেই আদানি গ্রুপের ব্যবসায়িক অসততা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর পুঁজিবাজারে আদানির সম্পদে ধ্বস নেমেছে। মোদিকে নিয়ে ডকুমেন্টারি এবং তার পরপরই আদানির গোমর ফাঁস হওয়ার এই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন পশ্চিমা বিশ্ব হয়তো বেয়ারা ভারতের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছে। নাইন-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে আমেরিকা নিজেদের ইচ্ছামতো মোড়লিপনা করার লাইসেন্স দিয়েছিলো, সম্ভবত পরাশক্তি আমেরিকা বুঝতে পারছে যে ভারতের সেই ‘স্বাধীনতা’র ফলে তাদের নিজেদেরই কতৃত্ব অনেকটুকু খর্ব হয়ে গেছে।

ডকুমেন্টারিটির দ্বিতীয় পর্বে যখন ভারতের নাগরিকত্ব আইন এবং ন্যাশনাল সিটিজেনশিপ রেজিস্ট্রার প্রসঙ্গে নানা ঘটনা দেখানো হচ্ছিলো তখন বাংলাদেশের কথা বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে। বিজেপির নেতারা তাদের সাক্ষাতকারে যেভাবে অবলীলায় বাংলাদেশী রিফিউজি ঠেকানোর কথা বলেছেন তাতে মনে হবে এটি যেন একটি বিশাল ঘটনা। যেন বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত রিফিউজিরা দলে দলে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। ফ্যাসিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শত্রু খুঁজে নিয়ে নিজ পক্ষের জনগণের মাঝে ভীতি তৈরি করা। বিজেপি এক্ষেত্রে নিজ দেশের মুসলিমদেরকে শত্রু এবং অপরাধী বানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশকেও ব্যবহার করছে।

বিজেপির প্রাক্তণ ছাত্রনেতা ও বর্তমান দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্বদেশ সিং তার সাক্ষাতকারে পরিস্কারভাবেই বলেছেন, বাংলাদেশী হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে এবং বাংলাদেশী মুসলমানরা উন্নত জীবন ও জীবিকার আশায় ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। সুতরাং তারা নির্যাতিত বাংলাদেশী হিন্দুদেরকে আশ্রয় দেবেন এবং অন্যদেরকে ভারত থেকে বের করে দেবেন। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতির চেয়ে তথাকথিত ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষা ও উজ্জ্বল করার কথা দিবারাত্র জপ করে, সেখানে তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বিদেশী বন্ধু, যে সম্পর্ককে তাদের অনেকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মতো ঘনিষ্ঠ বলে ব্যক্ত করে, সেই বন্ধুরা এভাবেই বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চিত্রায়িত করছে।

মোদী ডকুমেন্টারিটি দেখার সময় একজন বাংলাদেশী দর্শক অনেকগুলো বিষয়কে পরিচিত হিসেবে অনুভব করতে পারেন। গুজরাত দাঙ্গা বা আহমেদাবাদ হত্যাকান্ডের সূত্রপাত যে ঘটনা থেকে, সেই গোধরায় ট্রেনে আগুন দেয়ার রহস্যজনক ঘটনার কোন সুষ্ঠ তদন্ত ও সুরাহা আজও হয়নি। মোদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া মন্ত্রী হরেন পান্ডিয়ার মৃতদেহ পাওয়া যায় একটি গাড়িতে, তারও কোন সুরাহা হয়নি। মোদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া পুলিশ অফিসার সঞ্জীব ভট্টকে ত্রিশ বছরের পুরনো মামলায় যাবজ্জীবন দন্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং অন্য পুলিশ অফিসার শ্রীকুমারকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতের আদালতের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বিশাল তদন্তের পর মোদীকে নির্দোষ ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রীত্বের পথ পরিস্কার করে দিয়েছে। আলীমুদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যা করা বিজেপি নেতা মাহাতোকে মোদীর মন্ত্রী নিজে হস্তক্ষেপ করে জামিনে মুক্ত করেছে এবং বছরের পর বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও সে মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নাগরিকত্ব আইনের বিষয়ে দিল্লীতে বিক্ষোভের সময় দিল্লী পুলিশ সরাসরি বিজেপি নেতাকর্মীদের সাথে যোগ দিয়ে বিক্ষোভকারীদেরকে শায়েস্তা করতে নেমে পড়ে। তারা সে সময় রাস্তার উপর পিটিয়ে ফাইজান নামের একজন মুসলমানকে হত্যা করে।

রহস্যজনক বিভিন্ন হত্যাকান্ড যার কোন যথাযথ বিচার কখনোই হয়না, বিরোধীপক্ষকে বিভিন্ন অজুহাতে শায়েস্তা করা এবং বিচারবিভাগ ও আদালতকে ক্ষমতা সংহত করার কাজে ব্যবহার করা, সরকারী দলের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে পুলিশের নগ্নভাবে নেমে পড়া এবং হত্যাকান্ড সংঘটিত করার মতো কাজগুলোর সাথে বাংলাদেশের মানুষ এখন খুব ভালোভাবেই পরিচিত। এই ধরণের ঘটনাগুলোর বহুল সংঘটন থেকে ধারণা করার সুযোগ রয়েছে যে ভারতের বিজেপি এবং বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ একই মোডাস অপারেন্ডি বা কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে।

মোদী ডকুমেন্টারিটির বিভিন্ন ঘটনার মাঝে আরেকটি বিশেষ ঘটনা বাংলাদেশী দর্শকরদেরকে ভারত ও বাংলাদেশের সাযুজ্যের কথা মনে করিয়ে দেবে। মোদীর গোলাপী বিপ্লবের ঘোষণার পর দেশজুড়ে গরুর গোশত রাখার অপরাধে যেভাবে অনেক মানুষকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, এর সাথে আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা দিয়ে রাস্তায় মানুষ পিটিয়ে মারার ঘটনাগুলোর হুবহু সাদৃশ্য রয়েছে।

মোদীর বিরুদ্ধে গুজরাত হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণের সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণকে ধামাচাপা দেয়ার একটাই উদ্দেশ্য ছিলো, মোদী পুলিশকে তিনদিনের জন্য নিস্ক্রিয় থাকার আদেশ দিয়েছিলো তা যেন কোনভাবেই প্রমাণিত না হয়। এ আদেশ প্রমাণিত হলেই মোদী ক্রিমিনাল কনস্পিরেসির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে যাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের লগি-বৈঠা হত্যাকান্ডে এ ধরণের কোন কনস্পিরেসি বা ষড়যন্ত্র ছিলো না, বরং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী পুরো দেশের সামনে এ হত্যাকান্ডের নির্দেশ দিয়েছিলো।

ভারত-বাংলাদেশের সাদৃশ্য বাংলাদেশী দর্শকরা আরেকবার হয়তো অনুভব করবেন ডকুমেন্টারিটিতে বিজেপি নেতা ও প্রতিনিধিদের দৃঢ়তার সাথে মিথ্যা বলার শক্তি দেখে। মোদী ও বিজেপির সমস্ত অপকর্মকে এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদের জাতিবিদ্বেষী আদর্শকে তারা অবলীলায় বিভিন্ন যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করে গেছে। বিভিন্ন প্রসঙ্গে বিজেপি নেতাকর্মীদের একই সুরে কথা বলা থেকে পরিস্কার বুঝা যায় তারা দলীয় রেটোরিককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং সেই বয়ানকে যে কোন মূল্যে প্রচার করে যায়। এই বৈশিষ্ট্যের সাথে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বক্তব্যরীতিরও হুবহু মিল রয়েছে।

অনেক পর্যবেক্ষকের মতে ভারতে গণতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো উচ্চমান ও ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ ধরে রেখেছে। কিন্তু বিবিসির এই ডকুমেন্টারিটি দেখলে একজন দর্শক এই চিন্তাকে প্রশ্ন করতে সুযোগ পাবেন। নিঃসন্দেহে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি তাদের নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রশাসন, পুলিশ ও আদালত; সমস্ত কিছুকে যথাসম্ভব ব্যবহার করেছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের সাদৃশ্যের পাশাপাশি যদি পার্থক্য খুঁজতেই হয় তাহলে এতটুকু বলা যায় যে ভারতে এখনো বাংলাদেশের ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন দু’টির মতো দখলদারী নির্বাচন জাতীয়ভাবে সম্পন্ন হয়নি। বরং মোটামুটিভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই মোদী এ পর্যন্ত ক্ষমতায় এসেছে। গণতান্ত্রিক পক্রিয়ার হৃদপিন্ড হলো নির্বাচন। রাষ্ট্র পরিচালনার সকল যন্ত্রকে সে দেশে যখন কুক্ষিগত করা সম্পন্ন হয়েছে, ভবিষ্যতে কোন পরিস্থিতিতে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠলে বাংলাদেশ স্টাইলে যে ভারতেও নির্বাচন হবে না, এই কথা মনে করার কোন কারণ এখন অবশিষ্ট নেই।

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising