এস.এম. কামাল হোসেন : বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মসজিদ, মাদ্রাসা, হাট ও বাজারে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। উদ্দেশ্য, দ্বীনের প্রচার, প্রসার ও বাস্তবায়ন। নিঃসন্দেহে অতি মহতি উদ্যোগ। দেখা যায়, সেসব মাহফিলের প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি এবং প্রধান বক্তা থেকে শুরু করে সভাপতি পর্যন্ত সকলেই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা এবং পাতি নেতা, যাদের অনেকে নামাজ ও
এস.এম. কামাল হোসেন : বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মসজিদ, মাদ্রাসা, হাট ও বাজারে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। উদ্দেশ্য, দ্বীনের প্রচার, প্রসার ও বাস্তবায়ন। নিঃসন্দেহে অতি মহতি উদ্যোগ। দেখা যায়, সেসব মাহফিলের প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি এবং প্রধান বক্তা থেকে শুরু করে সভাপতি পর্যন্ত সকলেই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা এবং পাতি নেতা, যাদের অনেকে নামাজ ও রোজার ধার ধারে না, কোরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান রাখে না, দুর্নীতি ও অপকর্ম যাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, নেশা, নারী ও জুয়া যাদের আষ্টেপৃষ্টে। এসব তথাকথিত এমামদের নীচে দু’একজন আলেম-ওলামার নামও দেখা যায়, যারা ঐসব রথী-মহারথীদের পাশে বসিয়ে মাহফিলে দ্বীনের আলোচনা করেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন, সেই আলোচনার ফজিলত। কেউ কেউ বলেন, যদি এসব বিতর্কিত স্থানীয় নেতাদের নাম পোস্টারে ও প্রচারে না রাখা হলে, সেই মাহফিলকে মৌলবাদী ও জামাতি আখ্যা দেওয়া হয়, এবং প্রশাসন থেকে অনুমতি মেলে না। যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের সকলের জামাতে যোগ দেওয়া উচিত এবং শুধু ভালো আলেমদের দাওয়াত করে এনে হেদায়েতের জন্য দোয়া করা উচিত। মিথ্যা, ভণ্ডামি ও মুনাফেকি থেকে মুসলমানদের বাঁচার এটাই একমাত্র উপায়।
আপনার সন্তানের ট্যাক্সটবুক থেকে শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ তুলে দেওয়া হয়েছে। শরীফ থেকে শরীফা, ইসলাম শিক্ষার বইয়ে দুর্গা, যত্রতত্র কপিকাট, শিক্ষার মানের অধঃপতন, এরকম বহু ঘটনা ঘটলেও আপনি কাকতালীয় ভেবে চুপ করে আছেন। নইলে নিরাপদ দূরত্বে বসে ভাবছেন, অন্য কেউ
প্রতিবাদ করুক। আঠারো কোটি মানুষের দেশে অন্তত চার কোটি সন্তান শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত। তাদের সকল অভিভাবক যদি শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ করত, তাহলে আমরা ভিন্ন এক দেশ পেতাম। সুতরাং আমাদের সন্তান মানুষ না হওয়ার জন্য কাকে দায়ী করবেন?
দেশ ছেয়ে গেছে ভারতীয় পণ্যে। আমরা ভারত থেকে আমদানি করি ১৬ বিলিয়ন ডলারের জিনিস, আর তারা নেয় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতি বছরে ১৪.৫ বিলিয়ন। এভাবেই চলছে গত পঞ্চাশ বছর। ফারাক্কা, তিস্তা, বর্ডার হত্যা, ট্রান্স শিপমেন্ট, লাখ লাখ ভারতীয়দের এদেশে অবৈধ চাকুরি, গণতন্ত্র হত্যা, তাঁবেদার সরকার ইত্যাদি ইস্যু নাই উঠালাম। এই স্পর্শকাতর এজেন্ডাগুলো কোন রাজনৈতিক দলের নয়, বরং আঠারো কোটি বাংলাদেশের বাঁচা মরার বিষয়। অথচ, সমগ্র জাতি নির্বিকার। ১৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বাংলাদেশে কারা কনজুম করে? কই, ১৩০ কোটি ভারতীয় তো আমাদের থেকে দেড় বিলিয়নের বেশি পণ্য নেয় না। তাহলে আমরা কেন সচেতন হই না? আমরা স্বদেশী পণ্য কিনলে বছরে সহজেই ১৬ বিলিয়ন ডলার সেইভ করতে পারতাম। আমাদের অর্থনীতিও চাঙ্গা হতো। মনে রাখবেন, নিজে কিছু না করে, শুধু অন্যকে গালি দিয়ে কোনদিন ভাগ্য পরিবর্তন হয় না।
আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ কি হবে, কতগুলো সরকারি চাকুরি সৃষ্টি হচ্ছে, কারা সেগুলো কিভাবে পাচ্ছে, প্রাইভেট সেক্টরে কর্মসংস্থান কেন বাড়ছে না, সেখানে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নেই কেনো, এগুলো তো আমাদেরই আলোচনা এবং সমাধান করার কথা ছিলো। আমাদের কেনো নাগরিক অধিকার ও গণতন্ত্র নেই, মানুষ হিসাবে কেনো নেই বেঁচে থাকার ন্যূনতম গ্যারান্টি। কারা এরজন্য দায়ী, কিভাবে তাদের পরিবর্তন করা যায়, কি কি রক্ষাকবচ সংবিধান, আইন, প্রশাসন ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় আনা উচিত, সেসব তো এদেশের বুদ্ধিজীবীদের আলোচনার মূল বিষয় হওয়ার কথা। কিন্তু তারা ব্যস্ত আলেম, ওলামা, ইসলাম, পর্দা, রোজা, নামাজ, ইফতার ও আযান ঠেকাতে। যদি কিছু সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী ক্ষমতা এবং বিদেশী প্রভুদের পদলেহন করেও থাকে, অন্যরা নিশ্চুপ কেন? কাপুরুষের মতো বারবার মৃত্যু, অনুশোচনা ও আক্ষেপে নিভৃতে বিড় বিড় করা, অন্যের সমালোচনা আর নিজের স্বার্থে সকল কিছু জায়েজ মনে করা, কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।
এখনও লড়াই করার মতো মানুষ আছে, আছে আদর্শের দল ও সংগঠন। তাদের না বুঝে গালি না দিয়ে, বরং দরকার, সকল দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব ভুলে সেই কাফেলায় শরীক হওয়া। এটাই তো ইসলামের শিক্ষা
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *