সামসুল ইসলাম টুকু (বাংলাদেশ থেকে): বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম—-হযরত মুহাম্মদ(দঃ) ৪০ বছর বয়সে নবুয়াত পেয়েছিলেন এবং ওহিপ্রাপ্ত হয়ে ইসলাম প্রচার শুরু করেন । ৪০ বছর বয়সটি একজন মানুষের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন । এই সময়ে মানুষ যে চরিত্র বা নৈতিকতা নিয়ে গড়ে উঠে পরবর্তী সময়ে সে চরিত্রের বিশেষ কোনো হেরফের হয়না । কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে ৪০
সামসুল ইসলাম টুকু (বাংলাদেশ থেকে): বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম—-হযরত মুহাম্মদ(দঃ) ৪০ বছর বয়সে নবুয়াত পেয়েছিলেন এবং ওহিপ্রাপ্ত হয়ে ইসলাম প্রচার শুরু করেন । ৪০ বছর বয়সটি একজন মানুষের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন । এই সময়ে মানুষ যে চরিত্র বা নৈতিকতা নিয়ে গড়ে উঠে পরবর্তী সময়ে সে চরিত্রের বিশেষ কোনো হেরফের হয়না । কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে ৪০ বছর বয়সটি এমন একটা সময় যখন মানুষের মধ্যে ভারত্ব আসে ,মনে স্থিতিশীলতা আসে , প্রতিটি জিনিষকে ধারন করার ক্ষমতা সম্পন্ন হয় ধৈর্যের সীমা বৃদ্ধি হয় যা মানুষের জীবনের পরিপক্ক সময় । এসময় মানুষের চিন্তা জগতে যে প্রভাব পড়ে তা নিয়েই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলতে পারে । ৪০ বছর পরে নবীজীর নবুয়াত প্রাপ্তিটাও ওই বয়সের সাথে সম্পর্কিত । ইতোমধ্যে নবীজী তার চরিত্রের দৃঢ়তার কারনে মক্কাবাসীর সকল গোত্রের কাছে আল-আমিন বা বিশ্বাসী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। নবীজী এই ৪০ বছরে নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন । সাধারন মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করেছিলেন বলেই আল্লাহ তাকে নবুয়াতের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিলেন । এ সময়ে তিনি শুধু নিজেকেই গড়েননি , পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনকে মানুষ হবার সবক দিয়েছেন যেন তারাও মানুষ হয়ে গড়ে উঠে । তাহলেই সত্য প্রচার সম্ভব । যারা সত্যকে ধারন করতে পারবে তারাইতো হবে ধার্মিক ও নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ । আর সেটাই হচ্ছে ঈমানের প্রধান ও গুরুত্বপুর্ন অংশ । শুধু তাই নয় বিবেকবোধ এবং কর্তব্যবোধ দিয়েই নৈতিকতা বাস্তবায়ন সম্ভব । এগুলি শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত বিষয় নয় একইসাথে সামাজিক বিষয়ও বটে । সেহেতু একজন ঈমানদারকে এই সত্যটি হৃদয়ে ধারন করতে হবে ।অন্যথায় ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয় । একজন ঈমানদারকে যেমন আল্লাহ তথা সত্যকে গভীরভাবে বিশ্বাস করতে হবে ,হৃদয়ে ধারন করতে হবে তেমনি আল্লাহ প্রেরিত নবীজীর প্রদর্শিত পথ ধরে চলতে হবে । এর ব্যত্যয় ঘটলে ঈমানদার থাকা যাবেনা ।
ইসলাম ধর্মের এই প্রথম সোপান পার হতে না পারলে বাকী সবকিছু হবে মেকি ও মুখোশ । তেমনটাই হয়েছে আজকের ধর্ম চর্চা । সুরা বাকারার (৮-৯)আয়াতে বলা হয়েছে ,ওরা বলে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী । মুলত তারা বিশ্বাসী নয় । তারা ধোকা দেয় আল্লাহ ও বিশ্বাসীদের । তারা আসলে নিজেরাই বোঝেনা তারা নিজেদেরকেই ধোকা দিচ্ছে । মসজিদ , মাদ্রাসা , মন্দির্,গীর্জা ,প্যাগাডো সর্বত্রই মুখোশ পরা কিছু মানুষ দেখা যায় । এ জন্যই কবি বলেছেন ‘মুখ দেখে কি মানুষ চেনা যায়’। এই মুখোশধারীরা কতটুকু নৈতিকতা সম্পন্ন তা বিচার না কোরেই দাড়ি, টুপি , জামা ,পাগড়ী , মেসওয়াক , ঢিলার আকার আকৃতি, দৈর্ঘ প্রস্থ রাসুলের মত হচ্ছে কিনা , কতটুকু সঠিক বেঠিক হলো তা মসজিদের ইমামের বা মাওলানাদের নিকট থেকে নিশ্চিত হওয়ার ব্যাপারে উৎকন্ঠিত হয়ে বোঝাতে চায় তারা কত ভালো মানুষ । কিন্তু সাধারন মানুষ পুরোপুরি না বুঝলেও কিছুতো বোঝেই । তাতে মানুষকে ফাঁকি দেওয়া যায় কিন্তু অন্তর্যামী আল্লাহকে ধোকা দেওয়া সম্ভব নয় । আর বিবেক নামক অদৃশ্য শক্তিকে মোটেও না । আজকাল বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় কিছু বকধার্মিক মুসলমান নামাজ পড়ে হাদিস নিয়ে চর্চা করে , সবেবরাতের দিন পাকা মুসল্লি হয়ে যায় ,শুক্রবার জুম্মার নামাজে যে কোনো ভাবে প্রথম কাতারে থাকে ,ইজতেমায় তার জিকির দেখলে শয়তানও বিশ্বাস করবেনা যে কিছুক্ষন আগে আল্লাহর নাফরমানিতে আকন্ঠ ডুবে ছিল । এরাই লোক দেখিয়ে ধর্ম পালন করতে ভালোবাসে , ধর্মগ্রন্থ পাঠ শেষে গ্রন্থে খুব তামিজের সাথে চুমু দেয় কিন্তু মানুষকে ভালোবেসে বুকে টানতে পারেনা । এদের সম্পর্কেই কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ও’কারা কোরআন বেদ চুম্বিছে মরি মরি ,
ও’মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ জোর করে নাও কাড়ি
যাহারা আনিল গ্রন্থ কেতাব সেই মানুষেরে মেরে
পুজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল ! মুর্খরা সব শোনো
মানুষ এনেছে গ্রন্থ ,গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো ।
এমন সব কবিতা লিখে কবি বৃটিশ আমলে মোল্লা পুরুতদের ভীষন সমালোচনার শিকার হন , কাফের বলে আখ্যায়িত হন । আর আজ তার কবিতা উদ্ধৃত করে ধর্মের বাখ্যা করে পত্রিকায় লিখছেন বড় বড় মোফাসসিরে কোরআন । অন্যদিকে কিছু মুখোশধারী ভন্ডের দল ঈমানদার ও মুমিনের সংজ্ঞা নিজেদের মত করে বাখ্যা করছেন আর ‘ইসলামকে’মসজিদ মাদ্রাসার অংশ হিসেবে রেখে দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলাদা করে দিয়েছেন । কোরআনকে রাষ্ট্রের আইন হিসেবে গ্রহন না করে শুধু পাঠের জন্য বরাদ্দ করে দিয়েছেন । ফলে সমাজ ও প্রাত্যাহিক জীবনে ইসলাম ধর্মের প্রয়োজনিয়তাকে গুরত্বহীন ও মুল্যহীন করা হচ্ছে । ঈমান মানে বিশ্বাস । ইসলামের প্রথম স্তম্ভ । বিশ্বাস কি ? তাহচ্ছে মহা পরাক্রমশালী অদৃশ্য আল্লাহ , তার ফেরেস্তা , কেয়ামত ও রসুলের (দঃ) প্রতি শর্তহীন বিশ্বাস । কথাগুলো যত সহজ মনে হচ্ছে , তা পালন করা মোটেই সহজ নয়। উপোরক্ত ৪টি বিষয়ের মধ্যে মুহম্মদ রসুল (দঃ) বাস্তবে সত্য , দৃশ্যমান এবং ইতিহাসের গুরুত্বপুর্ন অংশ । তাই জাত, ধর্ম, গোত্র , ও বর্নের কাছে নবীজী আজও অত্যান্ত বিশ্বাসযোগ্য । এই নবীজী সম্পর্কে কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন ,
যত নবী ছিল মেষের রাখাল , তারাও ধরিল হাল
তারাই আনিল অমরবাণী , যা আছে , রবে চিরকাল ।
বাকি ৩টি বিষয় সম্পুর্ন অদৃশ্য । এগুলো না দেখেই বিশ্বাস করতে হয় । কারন এগুলোর প্রভাব পড়ে বিশ্ব প্রকৃতিতে ও আমাদের অবচেতন মনে ।সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মান্ড একটি নির্দিষ্টগতিতে ,নির্দিষ্ট দিকে, নির্দিষ্ট নিয়মে আবর্তিত হচ্ছে । যা নিশ্চিতভাবে কোনো একক পরিচালক দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে । দ্বিতীয় কোনো শক্তি থাকতে পারেনা । কারন দ্বিতীয় শক্তি বা পরিচালক থাকলেই দ্বন্দ্ব অনিবার্য ছিল ।কিন্তু তা হয়নি , আগামিতেও হবেনা । চোখ বন্ধ করলেই এই বিশ্বাস আসতে বাধ্য ।এই যুক্তির প্রেক্ষিতেই কবি নজরুল লিখেছেন ,
স্রষ্টারে খোজো ,আপনারে তুমি আপনি ফিরিছ খুঁজি
ইচ্ছা-অন্ধ ! আঁখি খোলো দেখ দর্পনে নিজ কায়া
দেখিবে তোমার সব অবয়বে পড়েছে তাহার ছায়া ।
এই অদৃশ্য পরিচালকের তার নির্দেশ পালনের জন্য আজ্ঞাবহ বা ফেরেস্তা থাকা খুবই স্বাভাবিক । এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় । এছাড়া আমরা জানি যার সৃষ্টি আছে তার ধবংশ আছে । সুতরাং ধবংশ বা কেয়ামত অবশ্যম্ভাবী । এ বিশ্বাসগুলো তর্ক করে স্থাপন করা যায়না । তাইতো কবি বলে গেছেন “ বিশ্বাসে মেলায় বস্তু , তর্কে বহুদূর”। বিজ্ঞানীদের যাকিছু আবিষ্কার তা বিশ্বাস বা ধারনা বা কল্পনা বা assumption দিয়েই শুরু হয় । তেমনই ঈমান নামক ইসলামের প্রথম স্তম্ভটি শুধু বিশ্বাস দিয়েই শেষ করা হয়নি । ইসলামের প্রদর্শিত পথে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে ঈমান সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে । তাই মনে মনে বিশ্বাস বা কল্পনা করলেই ঈমানদার হওয়া যায়না । যিনি এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেন , অন্য কারো কাছে কোনো কারনে অবনত হননা , সত্যের প্রতি যার অবিচল আস্থা , মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেননা , অন্যায়ের প্রতিবাদে অকুতোভয় , মানুষের দুখে সুখে একাত্ম হতে পারেন এবং এগুলো বিষয়ে নিবেদিত , নিয়মিত অনুশীলন করেন তিনিই প্রকৃত ঈমানদার। নবীজীর কাছে একজন সাহাবি প্রশ্ন করেছিলেন কোন আমলটি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে উত্তম । নবীজী বলেছিলেন , “আল্লাহর উপর ঈমান আনা এবং তার প্রদর্শিত পথে জিহাদ করা । মানুষের মধ্যে অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে তা থেকে মুক্ত হওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট পথ হচ্ছে আত্মশুদ্ধি । সুরা ফাতিহার ১৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে , “ কেউ যখন আত্মশুদ্ধি করে সেতো নিজের জন্যই করে” ।সুরা আস-সামসের এর ৯ ও ১০ আয়াতে ইমানদারদের সম্পর্কে একই ধরনের কথা বলা হয়েছে । তা হলো , “সেই সফলকাম হবে যে নিজেকে পবিত্র রাখবে এবং সেই ব্যার্থ হবে যে নিজেকে কলুসাচ্ছন্ন করবে”। ইমানদার হবে একজন শুদ্ধাচারী মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো ,ভোগবিলাসে জীবন কাটাবো , প্রতিবেশীর হক আদায় করবোনা, মিথ্যা বলতে কুন্ঠিত হবনা্ , অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভয় পাবো তাহলে আমি কখোনই ঈমানদার দাবী করতে পারবোনা । বেহেস্তের অনন্ত সুখ লাভের জন্য মসজিদ মাদ্রাসার জন্য দান করবো কিন্তু মানুষের ও সমাজের কল্যানের কথা ভাববোনা , তাহলে আমি ঈমানদার হতে পারিনা । পরলৌকিক সুবিধা পাওয়ার আগে ইহলৌকিক ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে । রোজার সময় রোজা রাখি , রোজা যেন না ভাঙ্গে সেজন্য সতর্ক থাকি , ঠিকমত নামাজ পড়ি কিন্তু ঘুষ ও দুর্নীতি করার সময় রোজা রাখার কথা মনেই হয়না । তারা ঈমানদার হতেই পারেনা ।রোজা রাখতে হবে , না খেয়ে কষ্ট করতে হবে তা অন্যের না খেয়ে থাকার কষ্ট অনুভব করার জন্য । আর এর চর্চা শুধু রোজার মাসেই করলে চলবেনা , জীবনব্যাপী করতে হবে । তাদেরই মৃত্যুর পর ডাকা হবে” ইয়া আইয়াতু হান্নাফসুল মুতমাইয়ান্না”। অর্থাৎ বিশ্বাস বা ঈমানের সাথে কর্মের সম্পর্ক স্থাপনকারী । ঈমানদার অর্থ এই নয় যে তারা শুধু মুসলমানদের কথা ভাববে আর অমুসলমানদের মানুষ জ্ঞান করবেনা , তাদের অসুস্থতা , অনাহার অনাচার থেকে রক্ষা করবেনা , অমুসলমানদের দোযখে নিক্ষেপ করা হবে এমনটা ভাবা ঈমানদারের কাজ নয় । ঈমানদার হবার প্রধান শর্ত ভালো মানুষ হওয়া , মানবাধিকারে বিশ্বাসী হওয়া । মোল্লার মত সবকিছু একা ভোগ করতে চাইলে হবেনা । মসজিদ হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান।একদিন এই মসজিদ থেকেই রাষ্ট্র পরিছলনা করা হয়েছে । কিন্তু পরে এই পবিত্র স্থানে কি হতো সে সম্পর্কে কবি নজরুল বলেছেন ,৭দিনের এক অভুক্ত পথিক মসজিদের তবারক বিলি হবার কথা শুনে সেখানে গিয়ে একটু তবারক ভিক্ষা করলে মসজিদের দায়িত্বে থাকা মোল্লা বললেন , ভ্যালা হলো লেঠা , ভুখা আছো মরগে ভাগাড়ে গিয়ে
নামাজ পড়িস ব্যাটা ? ভিখারী কহিল না বাবা
মোল্লা হাকিল তাহলে শালা সোজা পথ দেখ
গোস্ত রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা
ভিখারী ফিরিয়া চলে , চলিতে চলিতে বলে
আশি বছর কেটে গেল , আমি ডাকিনি তোমায় কভু
তব মসজিদে মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী
মোল্লা পুরুত লাগাইয়াছে আজ সকল দুয়ারে তালা ।
এ ধরনের ঘটনা সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটছে ।বড় বড় শহরের বড় বড় হোটেলে কয়েক হাজার মানুষের খাবার উচ্ছিষ্ট করে ফেলে দেয় । অথচ আমরা নিজেদের মুসলমান দাবী করি । ঈমানদারের কাজ হবে সমগ্র মানব জাতির কল্যানে ।
ঈমান হচ্ছে ইসলামের প্রথম স্তম্ভ এবং নামাজ দ্বিতীয় স্তম্ভ । অর্থাৎ মুসলমানদের প্রথম আমল ঈমান এবং তার পরের আমল নামাজ । কিন্তু প্রথম আমলটা আমরা বেমালুম ভুলে গেছি ।কেউ হয়তো গোঁস্বা হতে পারেন । তবে সত্যই বলবো নামাজ সম্পর্কে মাওলানাদের যে অভাবিত এবং এর পক্ষে তারা যেভাবে প্রচার করেন তাতে সাধারন মানুষ কি ভীষন জ্ঞানী গুনি পন্ডিত মানুষেরাও বার বার নামাজের কথা বলেন । কিন্তু তার আগে যে আমলটি অর্থাৎ ঈমান নামক গুরুত্বপুর্ন কাজ সম্পর্কে কিছুই বলেননা । ঈমান না থাকলে নামাজ যে অর্থহীন তা বলেননা । তাদের প্রচারের ধরনটাও উল্লেখ করছি । মৌলভী সাহেবরা বলেন , কোরআনে নির্দেশ আছে মুসলমান হলেই তাকে নামাজ পড়তে হবে , নামাজ পড়লে মানুষ সৎ পথে ফিরে আসে , নামাজীরা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে , নামাজ হচ্ছে আখেরাতের পুঁজি , নামাজ না পড়লে তাকে মুসলমান বলা যাবেনা , নামাজ হচ্ছে বেহেস্তের চাবিকাঠি, যাই করনা কেন নামাজ পড় , মিথ্যা বল , জুয়া খেল ,মাদক সেবন কর , প্রতারনা কর , খুন কর কিন্তু নামাজ পড় । শুধু তাইনয় এর প্রেক্ষিতে কোরআন হাদিসের যত বাখ্যা আছে সব উপস্থাপন করেন । কিছু মানুষ আছেন তারা তো বাড়ী বাড়ী গিয়ে নামাজ পড়ার কথা বলেন । সেইসাথে ভীতিকর কথাও বলেন । যেমন মৃত্যুর পর আখেরাতে যখন প্রশ্ন করা হবে দুনিয়াতে কি করেছো কি নিয়ে এসেছো তখন নামাজ আপনার পক্ষে কথা বলবে । কিন্তু তারা একবারও বলেননা এর আগে ঈমান শক্ত কর। শুধু তাইনয় কোরআনে ৩৬ বার নামাজ পড়ার এবং ৪৬ বার নামাজ কায়েমের কথা বলা হয়েছে । কিন্তু নামাজ কায়েমের কথা ভুলেও বলেননা আর ঈমানের প্রসংগে নিরব থাকেন ।এভাবেই ঈমানের গুরত্ব কমে গেছে মানুষের কাছে ।নামাজকে মুখ্য স্থানে অধিষ্ঠিত করে এবং ঈমানকে গৌন করে দেওয়া হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে খোলাখুলি কয়েকটি কথা বলতে চাই । তাহলো ,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া যত সহজ তার চেয়ে অনেক কঠিন কাজ হচ্ছে সত্য কথা বলা , মিথ্যা না বলা , অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ,সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা ,অন্যের হক নষ্ট নাকরা , প্রতিশ্রুতি ভংগ না করা , এগুলো সবই ঈমানের অঙ্গ । যারা দ্বিমত পোষন করেন তাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ কাজগুলো করে দেখুনতো । কোরআনে বর্নিত আছে ,”হে মোমিন মুসলমানগন তোমাদের বিভিন্নভাবে বহু কাজের নির্দেশ দেওয়া হয় । কিন্তু যারা সবচেয়ে সহজ কাজটি বেছে নাও, মনে রেখো তারা দুর্বল ঈমানের একজন পন্ডিত মানুষ বলেন, যেদিন থেকে মুসলমানেরা হৃদয়ে ঈমান এবং হাতে তালোয়ার ত্যাগ করে মাথায় টুপি আর হাতে তসবিহ ধরেছে সেদিন থেকে ইসলামের সুর্যাস্ত হয়েছে । একদিন এই ঈমানের তাকত দিয়েই বিশ্বে ইসলামের ঝান্ডা উড়াতে পেরেছিল । আজ ঈমান হারিয়ে মুসলমানেরা অমুসলিমদের কাছে পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে গোটা বিশ্বে । ইরাক ও লিবিয়াকে ধ্বংশ করেছে আর বর্তমানে ফিলিস্তিনকে ধ্বংশ করতে উদ্যত ।কোনো ইসলামিক দেশ আজ ইসলামের পথে নেই এর চেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় আর কি হতে পারে । আর এর মুল সত্যটি হচ্ছে ঈমানদারের সংখ্যা পৃথিবীতে কমে গেছে আর নামাজীর সংখ্যা বেড়ে গেছে । এ ব্যাপারে মুসলিম জাহানকে ভাবতে হবে এখনই ।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *