728 x 90

সময় এবং জীবন

মানব জীবন এবং সময় একে অপরের প্রতিচ্ছবি। সময়ের সমষ্টিই জীবন। মানুষের জীবনকাল সুনির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ। এর অপচয়ে পূনরায় তা ইহজাগতিক জীবনে ফিরে পাওয়া শতভাগ অসম্ভব। কি নির্মোহ সত্য। অথচ এই সময়ই আমি আপনি অপচয়ের মহোৎসবে সদাই মেতে থাকি জ্ঞাত বা অজ্ঞাত পরিসরে। জীবন থেকে একটি বছরের সমাপ্তি হওয়া মানে সুনির্দিষ্ট জীবনের একটি বড়ো অংশ কমে যাওয়া

মানব জীবন এবং সময় একে অপরের প্রতিচ্ছবি। সময়ের সমষ্টিই জীবন।

মানুষের জীবনকাল সুনির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ। এর অপচয়ে পূনরায় তা ইহজাগতিক জীবনে ফিরে পাওয়া শতভাগ অসম্ভব। কি নির্মোহ সত্য। অথচ এই সময়ই আমি আপনি অপচয়ের মহোৎসবে সদাই মেতে থাকি জ্ঞাত বা অজ্ঞাত পরিসরে। জীবন থেকে একটি বছরের সমাপ্তি হওয়া মানে সুনির্দিষ্ট জীবনের একটি বড়ো অংশ কমে যাওয়া এবং মৃত্যু তথা কবরের পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু জীবনের মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যে উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন তার প্রতি আমরা একান্তই উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছি। মহান আল্লাহ তাআলা “সময়” শব্দ প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে উল্লেখ করে কুরআনুল কারিমে বহু জায়গায় (২৫৫ টি আয়াত) আমাদেরকে পৃথিবীর সফলতা ও আখিরাত বা পরকালীন মুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা কুরআন মাজীদ থেকে ইনশা আল্লাহ সময় সংক্রান্ত কিছু বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্যে। তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা যাদেরকে সাতিশয় কষ্ট

দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদইয়া- একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফুর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্যে অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানতে। (সূরা বাকারা,আয়াত-১৮৪)

রামাযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। এবং কেউ পীড়িত থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে যা সহজ তা চান আর যা তোমাদের জন্যে কষ্টকর তা চান না এজন্যে যে, তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে আর তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করানোর কারণে আল্লাহ্ র মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। (সূরা বাকারা,আয়াত-১৮৫)

লোকে তোমাকে নূতন চাঁদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। বল, ‘এটা মানুষ এবং হজ্জের জন্যে সময়-নির্দেশক।’ পেছন দিক দিয়ে তোমাদের গৃহে প্রবেশ করাতে কোন পুণ্য নেই; কিন্তু পুণ্য আছে কেউ তাকওয়া অবলম্বন করলে। সুতরাং তোমরা দ্বার দিয়ে গৃহে প্রবেশ কর, তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার । (সূরা বাকারা,আয়াত-১৮৯)

তোমরা আল্লাহ্ র উদ্দেশ্যে হজ্জ ও উমরা পূর্ণ কর, কিন্তু তোমরা যদি বাধাপ্রাপ্ত হও তবে সহজলভ্য কুরবানী কর। যে পর্যন্ত কুরবানীর পশু এর স্থানে না পৌঁছে তোমরা মস্তক মুণ্ডন কর না। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ পীড়িত হয় কিংবা মাথায় ক্লেশ থাকে তবে সিয়াম কিংবা সাদাকা বা কুরবানীর মাধ্যমে এর ফিদইয়া দিবে। যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি হজ্জের প্রাক্কালে উমরা দিয়ে লাভবান হতে চায় সে সহজলভ্য কুরবানী করবে। কিন্তু যদি কেউ তা না পায় তবে তাকে হজ্জের সময় তিনদিন এবং বাড়ী ফেরার পর সাতদিন-এই পূর্ণ দশদিন সিয়াম পালন কসূরারতে হবে। এটা তাদের জন্যে, যাদের পরিজনবর্গ মসজিদুল হারামের বাসিন্দা নয়। আল্লাহ্কে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শাস্তি দানে কঠোর। (সূরা বাকারা,আয়াত-১৯৬)

হজ্জ হয় সুনির্দিষ্ট মাসসমূহে। এরপর যে কেউ এ মাসগুলিতে হজ্জ করা স্থির করে তার জন্যে হজ্জের সময়ে স্ত্রী-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়। তোমরা উত্তম কাজের যা কিছু কর আল্লাহ্ তা জানেন এবং তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা কর, আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর। ( বাকারা,আয়াত-১৯৬)

তুমি কি সে লোককে দেখনি যে এমন এক জনপদ দিয়ে যাচ্ছিল যার বাড়ীঘরগুলো ভেঙ্গে ছাদের উপর পড়ে ছিল? বলল, কেমন করে আল্লাহ মরনের পর একে জীবিত করবেন? অতঃপর আল্লাহ তাকে মৃত অবস্থায় রাখলেন একশ বছর। তারপর তাকে উঠালেন। বললেন, কত কাল এভাবে ছিলে? বলল আমি ছিলাম, একদিন কিংবা একদিনের কিছু কম সময়৷ বললেন, তা নয়; বরং তুমি তো একশ বছর ছিলে। এবার চেয়ে দেখ নিজের খাবার ও পানীয়ের দিকে-সেগুলো পচে যায় নি এবং দেখ নিজের গাধাটির দিকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বানাতে চেয়েছি। আর হাড়গুলোর দিকে চেয়ে দেখ যে, আমি এগুলোকে কেমন করে জুড়ে দেই এবং সেগুলোর উপর মাংসের আবরণ পরিয়ে দেই। অতঃপর যখন তার অবস্থা প্রকাশিত হল, তখন বলে উঠল-আমি জানি, নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।

( বাকারা,আয়াত-২৫৯)

হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ঋনের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দেবে; লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া। এবং ঋন গ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দেয় এবং সে যেন স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও বেশ কম না করে। অতঃপর ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ হয় কিংবা দূর্বল হয় অথবা নিজে লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে অক্ষম হয়, তবে তার অভিভাবক ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখাবে। দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্যে থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা। ঐ সাক্ষীদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যখন ডাকা হয়, তখন সাক্ষীদের অস্বীকার করা উচিত নয়। তোমরা এটা লিখতে অলসতা করোনা, তা ছোট হোক কিংবা বড়, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এ লিপিবদ্ধ করণ আল্লাহর কাছে সুবিচারকে অধিক কায়েম রাখে, সাক্ষ্যকে অধিক সুসংহত রাখে এবং তোমাদের সন্দেহে পতিত না হওয়ার পক্ষে অধিক উপযুক্ত। কিন্তু যদি কারবার নগদ হয়, পরস্পর হাতে হাতে আদান-প্রদান কর, তবে তা নালিখলে তোমাদের প্রতি কোন অভিযোগ নেই। তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সাক্ষী রাখ। কোন লেখক ও সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না। যদি তোমরা এরূপ কর, তবে তা তোমাদের পক্ষে পাপের বিষয়। আল্লাহকে ভয় কর তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আল্লাহ সব কিছু জানেন। ( বাকারা,আয়াত-২৮২)

আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত

রয়েছে। বস্তুতঃ যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দান করব। পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি তাকে তাই দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান দেবো। ( আল ইমরাম-১৪৫)

সম্পতি (মিরাছ) বন্টনের সময় যখন (ওয়ারিশ নয় এমন) আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীন (অভাবগ্রস্ত) লোক উপস্থিত হয়, তখন তা থেকে তাদের কিছু দিবে এবং তাদের সাথে সদালাপ করবে। (আন নিসা-৮)

যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে, যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন যথাযথ সালাত কায়েম করবে ; নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মু’মিনদের জন্যে অবশ্যকর্তব্য। (আন নিসা-১০৩)

হে মু’মিনগণ! তোমরা সেই সব বিষয়ে প্রশ্ন কর না যা তোমাদের নিকট প্রকাশ হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দিবে। কুরআন নাযিলের সময় তোমরা যদি সেই সব বিষয়ে প্রশ্ন কর তবে তা তোমাদের নিকট প্রকাশ করা হবে। আল্লাহ্ সেই সব

করেছেন এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, সহনশীল। ( মায়িদাহ -১০১)

হে মু’মিনগণ! তোমাদের কারও যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন ওসিয়াত করার সময় তোমাদের মধ্য হতে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে; তোমরা সফরে থাকলে এবং তোমাদের মৃত্যুর বিপদ উপস্থিত হলে তোমাদের ছাড়া অন্য

লোকদের মধ্য হতে দু’জন সাক্ষী মনোনীত করবে। তোমাদের সন্দেহ হলে সালাতের পর তাদেরকে অপেক্ষমাণ রাখবে। এরপর তারা আল্লাহ্ র নামে শপথ করে বলবে,‘আমরা এর বিনিময়ে কোন মূল্য গ্রহণ করব না-যদি সে আত্মীয়ও হয় এবং আমরা আল্লাহ্ র সাক্ষ্য গোপন করব না; করলে অবশ্যই পাপীদের অন্তর্ভুক্ত হব।( মায়িদাহ -১০১)

প্রত্যেক ঘটনার একটা নির্ধারিত সময় আছে এবং শীঘ্রই তোমরা (সব) জানতে পারবে। (আল আনআম-৬৭)

যেদিন তিনি (আল্লাহ) তাদের সকলকে একত্র করবেন আর বলবেন, ‘হে জিন সম্প্রদায়! তোমরা তো অনেক লোককে তোমাদের অনুগামী করেছিলে’ এবং মানব সমাজের মধ্যে তাদের বন্ধুগণ বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের মধ্যে কতক অপরকে দিয়ে লাভবান হয়েছে আর তুমি আমাদের জন্যে যে সময় নির্ধারণ করেছিলে এখন আমরা তাতে উপনীত হয়েছি।’ সেদিন আল্লাহ্ বলবেন, ‘জাহান্নামই তোমাদের বাসস্থান, তোমরা সেখানে স্থায়ী হবে,’ যদি না আল্লাহ্ অন্য রকম ইচ্ছা করেন। তোমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত। (আল আনআম-৬৭)

তারা তাদের ধারণা অনুসারে বলে, ‘এসব গবাদিপশু ও শস্যক্ষেত্র নিষিদ্ধ ; আমরা যাকে ইচ্ছা করি সে ব্যতীত কেউ এইসব আহার করতে পারবে না’, এবং কতক গবাদিপশুর পৃষ্ঠে আরোহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং কতক পশু যবেহ্ করার সময় তারা আল্লাহ্ র নাম নেয় না। এ সমস্তই তারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনার বলে ; তাদের এ মিথ্যা রচনার প্রতিফল তিনি অবশ্যই তাদেরকে দিবেন।

(আল আনআম-১৩৮)

হে বনী আদম ! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করবে,

আহার করবে ও পান করবে কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।(আল আ’রাফ-৩১)

প্রত্যেক জাতির এক নির্দিষ্ট সময় আছে। যখন তাদের সময় আসবে তখন তারা

মৃত্যুকাল বিলম্ব করতে পারবে না আর ত্বরাও করতে পারবে না। (আল আ’রাফ-৩৪)

স্মরণ কর, মূসার জন্যে আমি ত্রিশ রাত্রি নির্ধারণ করি ও আরও দশ দিয়ে তা পূর্ণ করি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাত্রিতে পূর্ণ হয়। এবং মূসা তার ভাই হারূনকে বলল, ‘আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সংশোধন করবে আর বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবে না।'(আল আ’রাফ-১৪২)

মুসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে এসে পৌঁছল এবং তার প্রতিপালক তাঁর সাথে কথা বললেন, তখন সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখা দিন, আমি

আপনাকে দেখব। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কিছুতেই দেখতে পাবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি দৃষ্টিপাত কর। তা যদি আপন স্থানে স্থির থাকে, তবে তুমি আমাকে দেখতে পারবে। অতঃপর যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে তাজাল্লী ফেললেন (জ্যোতি প্রকাশ করলেন), তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেল। পরে যখন তার সংজ্ঞা ফিরে আসল, তখন সে বলল, আপনার সত্তা পবিত্র। আমি আপনার দরবারে তাওবা করছি এবং (দুনিয়ায় কেউ আপনাকে দেখতে সক্ষম নয় এ বিষয়ের প্রতি) আমি সবার আগে ঈমান আনছি। (আল আ’রাফ-১৪৩)

তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে কিয়ামত কখন ঘটবে। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার প্রতিপালকেরই আছে। শুধু তিনিই যথাসময়ে এটা প্রকাশ করবেন ; এটা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা হবে। আকস্মিকভাবেই এটা তোমাদের ওপর আসবে।’ তুমি এ বিষয়ে সবিশেষ অবহিত মনে করে তারা তোমাকে প্রশ্ন করে। বল, ‘এই বিষয়ের জ্ঞান শুধু আল্লাহ্ র ই আছে, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।’ (আল আ’রাফ-১৮৭) তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং এর মন্যিল নির্দিষ্ট করেছেন যাতে তোমরা বৎসর গণনা ও সময়ের হিসেব জানতে পার। আল্লাহ্

এটা নিরর্থক সৃষ্টি করেন নাই। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্যে তিনি এ সমস্ত নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন। (ইউনুস-৫) বল, ‘আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমার নিজের ভালমন্দের ওপর আমার

কোন অধিকার নেই।’ প্রত্যেক জাতির এক নির্দিষ্ট সময় আছে; যখন তাদের সময় আসবে তখন তারা মুহূর্তকালও বিলম্ব বা ত্বরা করতে পারবে না। (ইউনুস-৪৯)

তারা (ফিরিশতাগন) বলল, ‘হে লূত! নিশ্চয়ই আমরা তোমার প্রতিপালক-প্রেরিত ফিরিশতা। এরা কখনই তোমার নিকট পৌঁছতে পারবে না। সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময়ে তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড় এবং তোমাদের মধ্যে কেউ পিছন দিকে তাকাবে না, তোমার স্ত্রী ব্যতীত। এদের যা ঘটবে তারও তাই ঘটবে। নিশ্চয়ই প্রভাত এদের জন্যে নির্ধারিত কাল। প্রভাত কি নিকটবর্তী নয় ? (হুদ-৮১)

যখন সময় আসবে তখন অবশ্যই তোমার প্রতিপালক এদের প্রত্যেককে তার কর্মফল পুরাপুরি দিবেন। এরা যা করে তিনি তো সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত;(হুদ-১১১)

মাপিয়া দিবার সময় পূর্ণ মাপে দিবে এবং ওজন করবে সঠিক দাঁড়িপালায়, এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্ট। ( বনী ইসরাঈ-৩৫)

সূর্য হেলে পড়বার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে এবং কায়েম করবে ফজরের সালাত। নিশ্চয়ই ফজরের সালাত উপস্থিতির সময়৷( বনী ইসরাঈ-৭৮) হায়, যদি কাফিররা সে সময়ের কথা জানত যখন এরা এদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ হতে অগ্নি প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং এদেরকে সাহায্য করাও হবে না! (আল আম্বিয়া-৩৯)

হে মু’মিনগণ! তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসিগণ এবং তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত হয় নাই তারা যেন তোমাদের কক্ষে প্রবেশ করতে তিন সময়ের অনুমতি

গ্রহণ করে, ফজরের সালাতের পূর্বে, দ্বিপ্রহরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখ তখন এবং ‘ইশার সালাতের পর; এই তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তার সময়৷ এই তিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে তোমাদের জন্যে এবং তাদের জন্যে কোন দোষ নেই। তোমাদের এক-কে অপরের নিকট তো যাতায়াত করতেই হয়। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাদের নিকট তাঁর নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (আন নূর-৫৮)

আল্লাহ্ই প্রাণ হরণ করেন জীবসমূহের তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসে নাই তাদের প্রাণও নিদ্রার সময়। এরপর তিনি যার জন্যে মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অপরগুলি ফিরিয়ে দেন, এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে। (আয্-যুমার-৪২)

যারা ঈমান আনে তাদের হৃদয় ভক্তি-বিগলিত হওয়ার সময় কি আসে নাই, আল্লাহ্ র স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ? এবং পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের মত যেন এরা না হয়-বহু কাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে যাদের অন্তকরণ কঠিন হয়ে পড়েছিল। এদের অধিকাংশই সত্যত্যাগী। (আল হাদীদ-১৬)

আর আমি এদেরকে সময় দিয়ে থাকি, নিশ্চয়ই আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।(আল কলম-১৮)

কালপ্রবাহে মানুষের উপর তো এমন এক সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। (দাহর/ইনসান–০১) এবং রাত্রির কিছু অংশে তাঁর (আল্লাহর) প্রতি সিজদায় অবনত হও আর রাত্রির দীর্ঘ সময় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। (দাহর-২৬) দিনকে করেছি জীবিকা আহরনের সময়। (নাবা–১১)তোমার জন্যে পরবর্তী সময় তো পূর্ববর্তী সময় অপেক্ষা শ্রেয়। (দোহা-০৪)

সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে (নিমজ্জিত আছে), সে লোকগুলো বাদে, যারা (আল্লাহ তা’য়ালার) উপর ঈমান এনেছে, নেক কাজ করেছে, একে অপরকে সেই (নেক কাজের) তাগিদ দিয়েছে, এবং একে অপরকে ধৈর্য্য ধারণ করার উপদেশ দিয়েছে। (সূরা আসর)

সময় ও জীবন আল্লাহর দান। সময়ের ইতিবাচক ব্যবহারই জীবনের সফলতা। সময়ের অপচয় ও অপব্যবহার জীবনের ব্যর্থতা। সময়ের যথাযথ ব্যবহার না করা বা অপব্যবহার করার জন্য জবাবদিহি করতে হবে আল্লাহর দরবারে।

একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, সৌভাগ্যবান কারা? তিনি বললেন, সৌভাগ্যবান তারা, যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং তা নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, দুর্ভাগা কারা? তিনি বললেন, দুর্ভাগা তারা যারা দীর্ঘায়ু পেয়েছে এবং তা বদ আমলে কাটিয়েছে বা আমলবিহীন অতিবাহিত করেছে। (তিরমিজি: ২৩২৯, মুসনাদে আহমাদ: ১৭৭৩৪, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৬:১১১, মিশকাত: ২২১০, সহিহ্ আলবানি)।

পরকালে মানুষকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে। হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘রোজ হাশরে শেষ বিচারের দিনে প্রতিটি মানুষ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া এক কদমও নড়তে পারবে না। তার জীবনকাল কী লক্ষ্যে কাটিয়েছে? যৌবনকাল কী কাজে ব্যয় করেছে? কোন পথে আয় করেছে? কী কাজে ব্যয় করেছে? জ্ঞান অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করেছে কি না?’ (তিরমিজি ৪:৬১২/২৪১৬, মিশকাত: ৫১৯৭, ইবনে হিব্বান, সহিহ্ আলবানি)। কিন্তু মানুষ মোহের ঘোরে আচ্ছন্ন।

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে তার বিপরীত পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন করো ও তার সদ্ব্যবহার করো। তোমার যৌবনকে বার্ধক্যের পূর্বে, সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের পূর্বে, অবসরকে ব্যস্ততার পূর্বে, জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে।’ (বায়হাকি, শোআবুল ইমান: ১০২৪৮, মুসনাদে হাকিম: ৭৮৪৬, আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, ৪:২০৩, সহিহ্ আলবানি)।

পরকালে মানুষ যে বিষয়ে সবচেয়ে অনুতপ্ত হবে তা হলো, অবসর সময়ের সদ্ব্যবহার না করা। সময়ে নেক আমল করলে বান্দার অবস্থার উন্নয়ন হবে, বদ আমল করলে তার অবনতি হবে। আমল ছাড়া সময় পার করলে তা–ও তার জন্য প্রকারান্তরে ক্ষতি হিসেবেই গণ্য হবে। কারণ, মানুষের আয়ুষ্কাল প্রবহমান সময়। তা যদি সৎ কর্মে ব্যয়িত হয়, তবে নেক আমল হিসেবে গণ্য হবে; আর যদি নেক আমলবিহীন চলে যায়, তা বদ আমল হিসেবেই পরিগণিত হবে।

আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাই কে সময়ের সঠিকভাবে সদ্ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন।

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising