কায়সার আহমেদ: স্বাধীনতা যে কোন জাতির সর্বোচ্চ অহংকার, গর্ব। এর মূল্য যে কোন কিছুর উর্দ্ধে। আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিলো আর তা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছিলো। আর মুক্তিযুদ্ধও যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছিলো তা অস্বীকার করার সাধ্য কারো নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চাননি, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। তিনি একজন
কায়সার আহমেদ: স্বাধীনতা যে কোন জাতির সর্বোচ্চ অহংকার, গর্ব। এর মূল্য যে কোন কিছুর উর্দ্ধে। আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিলো আর তা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছিলো। আর মুক্তিযুদ্ধও যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছিলো তা অস্বীকার করার সাধ্য কারো নেই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চাননি, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। তিনি একজন পাকিস্তানপন্থী নেতা এ ধরনের আপত্তিকর কথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীরা নিয়মিত বলে বেড়ান। আরেক দিকে আওয়ামী পন্থীরা বলে থাকেন যে জিয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি তো ছিলেন ‘পাকিস্তানী এজেন্ট’। অথচ তারা একবারও ভেবে দেখেননি যে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ তৎকালিন আওয়ামী সরকারই মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ জিয়াকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করেছিলো। এমনকি শেখ মুজিব নেতৃত্বাধীন সরকারই তাকে সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। জিয়া একজন পাকিস্তানী এজেন্ট বা অমুক্তিযোদ্ধা হলে দয়া করে নিশ্চয়ই এসব দেয়া হত না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং অন্যজন স্বাধীনতা পরবর্তী একজন জনপ্রিয় নেতা জিয়াউর রহমান। দুজনকেই দুই দল থেকে যতভাবে সম্ভব ছোট শুধু নয়, অবজ্ঞা করার বিন্দুমাত্র ত্রুটি করছে না। অথচ জিয়ার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ নিয়ে কোন বিতর্কই ছিলো না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামে তৎকালিন মেজর জিয়া বেতারে ‘স্বাধীনতার ঘোষনা’ দিয়েছেন-এটাই ছিলো সবার নিকট গ্রহনযোগ্য। যদিও স্বল্প শক্তিসম্পন্ন বেতার ট্রান্সমিটার থেকে দেয়া ওই ঘোষণার জন্যে স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ থেমে থাকেনি। রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাষণ জনগনের মনে গভীর স্বাধীনতার স্পৃহা সৃষ্টি হয়েছিলো এবং তাতেই সমগ্র দেশের জনগন শুরু করে দিয়েছিলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ।
রাজনৈতিক নেতাদের বাইরেও নানা দিক থেকে দুই দল থেকেই দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তিই শুধু নয়, সবধরনের মিথ্যা ও অসত্য কথা বলা ও লেখা হতে থাকে। এমনভাবে কথাগুলো বলা হচ্ছিলো যেন রেডিওর মাধ্যমে জিয়া বা অন্য কিছু একটা ঘোষনা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ বা বাংলাদেশের স্বাধীনতা হতো না। দেশের প্রতিটি অংশের মানুষ যখন প্রতিরোধ আন্দোলন ও স্বাধীনতার জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন কোনো ঘোষণার জন্যে কেহ অপেক্ষা করেনি। সত্যি কথা হলো যে, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা হলো কি না, কে স্বাধীনতা ঘোষণা করল – বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু তার জন্যে অপেক্ষা করেনি। ২৫শে মার্চ রাতে আক্রমনের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়ে গিয়েছিলো।
কোনো দেশের স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার একটি পদ্ধতি আছে। রেডিওর মাধ্যমে ঘোষনা দেওয়া স্বাভাবিক পদ্ধতি নয়। যত বড় অথবা যত জনপ্রিয় নেতাই হোন, এককভাবে স্বাধীনতা ঘোষণার অধিকার কারও নেই। তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন এবং অর্জনের লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম করছিলেন, অর্থাৎ তিনি জনমত গঠন করছিলেন, কিন্তু আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। ১০ই এপ্রিল ১৯৭১ এর আগে আওয়ামী লীগও স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়নি। দলীয়ভাবে ঘোষণা দিতে গেলে দলের পূর্ণ কাউন্সিলে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আওয়ামী লীগ তা নেয়নি। যেখানে বিপুল সংখ্যক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগই তা করেনি, সেখানে এক আঞ্চলিক বেতারকেন্দ্রে কয়েকজন প্রকৌশলী ট্রান্সমিটার চালু করে অতি নিচের পর্যায়ের কর্মচারী এবং বাইরের কোন অজ্ঞাত ও উৎসাহী ব্যাক্তি ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ দিতে পারেন না। সে অধিকার তাদের কেহ দেয়নি। তবে একটি অরাজক পরিস্থিতিতে এ ধরনের অনধিকার চর্চা হয়ে থাকতে পারে। তাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া অর্থহীন। এ ধরনের ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে কোন রাজনৈতিক গ্রহনযোগ্যতা হতে পারে না।
স্বাধীনতার ঘোষণা আওয়ামী লীগ থেকে আসে ১০ই এপ্রিল ১৯৭১ সালে, রাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদের দেওয়া বেতার ভাষণের মাধ্যমে। তিনি ওই দিন স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠণের কথাও জানান। উপ-রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিলো সৈয়দ নজরুল ইসলামকে। সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন স্বয়ং তাজউদ্দিন আহমদ। এরপর ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে এক অবিস্মরণীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যগণ প্রকাশ্যে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। ১০ই এপ্রিলের আগে প্রদত্ত ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’ যিনি যখন যেখানেই এবং যে মাধ্যমেই দিয়ে থাকুক না কেনো, যার নামেই দিয়ে থাকুক না কেনো, তার কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো মূল্য নেই। যার যেটুকু মূল্য তা হলো, সেই ঘোষণায় স্বাধীনতাকামী মানুষ — যে অল্পসংখ্যক মানুষ ঘোষণা শুনেছিলো – অনুপ্রাণিত হয়েছিলো।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একজন অকুতোভয় অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক বা অবিস্মরণীয় অবদান ২৭ মার্চ কালুরঘাট ট্রান্সমিশন থেকে ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’ নয়; তখন তিনি যে অনেকের মতো দুর্জয় প্রতিরোধ আন্দোলনে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন দখলদার বাহিনীর বর্বতার বিরুদ্ধে, সেটাই ছিলো তার সব থেকে বড় অবদান। নৈতিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অধিকারেরতো প্রশ্নই ওঠে না, মেজর জিয়ার সামরিক অধিকারও ছিলো না এ জন্যে যে, গোটা বাঙালি সেনাবাহিনী তার নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছিলো না। সেনাবাহিনীর অন্য বাঙালি অফিসাররা কে কোথায় কিভাবে লড়াই করছেন বা আদৌ করছেন কিনা, তাও তাঁর জানা ছিলো না।
২৬শে মার্চ ১৯৭৪ সালের সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ‘একটি জাতির জন্ম’ নামে একটি লেখা লিখেছিলেন বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান, যখন বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতারাও জীবিত। জিয়ার একাত্তরের সহকর্মীরাও প্রায় সবাই বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত ছিলেন। ওই সময় কোন রকম অসত্য বা অতিরঞ্জন সম্ভব ছিলো না। এই লেখায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’র কথাটি তিনি একবারও এই লেখায় বলেননি এবং তিনি তার জীবদ্যশায় তা বলেননি। জনগন স্বাধীনতা চাইছে, সে জন্য তাদের ওপর নীপিড়ন ও পাশবিক আঘাত এসেছে, তা প্রতিরোধ করাই তখন প্রধান কর্তব্য। অন্য কিছু নয়। তিনি তার লেখায় লিখেছিলেন “তিনি মেজর শওকত ডেকে বলেছিলেন বি ৎবাড়ষঃ ” এবং মেজর শওকত তা মেনে হাত মিলিয়েছিলেন। সেদিন জিয়ার বা অন্য কারও স্বাধীনতা ঘোষণার চেয়ে তাঁর বি ৎবাড়ষঃ কথাটির মূল্য ছিলো অনেক বেশী। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু করা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিষয়টির চেয়ে একসময় স্বল্প শক্তিসম্পন্ন বেতার থেকে কখন কী প্রচার করা হলো, সেটাই বড় হয়ে উঠেছে এবং চলছে বিতর্কের ঝড়।
১৯৭০ এর সাধারন নির্বাচনের পর বাংলাদেশের প্রশ্নে নেতা হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার অর্জন করেন শেখ মুজিবুর রহমান এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ। গণতন্ত্রে সকলের মতামতের ভিত্তিতে কাজ করাই বাঞ্জনীয়, কিন্তু ওই নির্বাচনের পর বাংলাদেশে অন্যান্য দল ও নেতারা গৌণ হয়ে যান। জাতীয় নেতা হিসেবে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী তখনো সক্রিয়, কিন্তু কোনো প্রশ্নে একা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং কোনো চূড়ান্ত ব্যাপারে একক সিদ্ধান্ত দেওয়া তাঁর পক্ষেও সম্ভব ছিলো না। তিনিও শেখ মুজিবের সঙ্গে পরামর্শ করেই জাতীয় সংকট মোচনের চেষ্ট করেছিলেন। একাত্তরের মার্চে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নির্মম অত্যাচারে যেহেতু জনগণ স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করে দিয়েছিলো, সুতরাং নতুন করে স্বাধীনতা ঘোষনার কোন প্রয়োজন ছিলো না। ‘৭১ এর ২৫শে মার্চ থেকে যা প্রয়োজন ছিলো তা হলো পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাষায় যার ‘যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত’ থাকা এবং ‘শত্রুর মোকাবেলা’ করা। মানুষ তাই করেছিলো।
আওয়ামী লীগের ছয় দফা ছিলো অনেকটা আধা-স্বাধীনতার দাবীর মতো, সাংবিধানিক রাজনীতির নিয়ম অনুযায়ী তাতে ছাড় দেয়ার পথ খোলা ছিলো, কঠোর ও নমনীয় হওয়ায়ও কোনো বাধা ছিলো না। বাংলাদেশের (তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান) জনগন সেই ছয় দফাকেই ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত ভোটের মাধ্যমে অনুমোদন করেছিলো। যদিও স্বাধীনতার জন্যে তখন জনগন ভোট দেয়নি। স্বায়ত্তশাসন এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য কমিয়ে আনাটাই ছিলো জনগনের মূল দাবী। ছয় দফা কোন স্বাধীনতার দাবীনামা ছিলো না। আমাদেরকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র বিজয় কোনো আকস্মিক ব্যাপার ছিলো না। কোনো তাৎক্ষণিক আবেগের বহি:প্রকাশও ছিলো না, তা ছিলো পূর্ব বাংলার মানুষের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির একটি যুক্তিসংগত পরিণতি। শেখ মুজিবকে ওই বিজয় অর্জনে পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছিলো পাকিস্তানি শাসকদের সীমাহীন ষড়যন্ত্রমূলক আচরণ।
আযৌবন জাতীয়তাবাদী, অসামান্য সাহসী, দেশপ্রেমে অবিচল শেখ মুজিব গোটা পাকিস্তানি শাসনকালেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক ও তাদের পূর্ব বাংলার তাঁবেদারদের হাতে নিপীড়িত-নিগৃহীত হয়েছেন, কখনো বা কারণে এবং অধিকাংশ সময় অকারণে, শুধু আক্রোশবশত। পূর্ব-বাংলার মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে তিনি মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমার শিকার হয়েছেন, বহুবার কারাবরণ করেছেন কিন্তু ১৯৬৬তে শেখ মুজিবের বিখ্যাত ‘ছয় দফা’ ঘোষণার পর থেকে তাঁর ওপর নেমে আসে অভিশাপ। সত্য মিথ্যা নানা অভিযোগে তাঁকে নিগৃহীত করার ষড়যন্ত্র করেছিলো আইয়ুব-মোনায়েম চক্র। শেষ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে দাড় করানো হয় এক ষড়যন্ত্রমূলক মামলা, যা কিনা ‘আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা’ বলে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। উক্ত মামলার ফলে দুটি বিষয় হয়: প্রথমত:, বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটে; এবং দ্বিতীয়ত: শেখ মুজিব বাঙালির মুখপাত্রে পরিণত হন, তিনি হয়ে ওঠেন পূর্ব বাংলার (তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান) সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। এমনকি যারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন বা পছন্দ করতো না, অন্য কোন দলের সমর্থক বা কর্মী ছিলো, তারাও তাঁকে নেতা হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়। শেখ মুজিব হন বাংলার মানষের অধিনায়ক।
একাত্তরের মার্চে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে যে অসহযোগ আন্দোলন হয়, তা বাঙালির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। সে সম্পর্কে এখন সকলেই অবগত। ২৫শে মার্চ রাত হতে পাকিস্তানি বাহিনী যখন চরম হিং¯্রতায় বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শুরু হয় গণহত্যা, ঠিক সেদিনই শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ রাতে একটি গণতান্ত্রিক দলের জননন্দিত নেতা হিসেবে স্বসম্মানে গ্রেফতার হওয়াটাই সমীচীন মনে করেছিলেন। তিনি আত্মগোপন করার কোনো চেষ্টাই করেননি। কারণ তিনি কোনো আন্ডারগ্রাউন্ড দলের গেরালি বাহিনীর নেতা ছিলেন না। ওই পরিস্থিতিতে শেখ সাহেব সঠিক কাজটিই করেছিলেন। জনগন উত্তপ্ত ছিলো, উত্তেজিত ছিলো কিন্তু নেতা হিসেবে তিনি ছিলেন শান্ত, ধীরস্থির । স্বাধীনতাকামি যে কেহ স্বাধীনতার ঘোষণা করতে পারেন, কিন্তু দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদীয় দলের নেতা, যিনি দেশের নব্বই শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন, তিনি তা পারেন না। তাঁর দায়িত্ব সর্বোচ্চ। সেই দায়িত্বের অপব্যবহার করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলো না। সেইদিনের অকল্পনীয়, অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার বরণ করে সম্ভবত তার জীবনের সবথেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। গণহত্যা ও শেখ মুজিবের গ্রেফতার বাংলা জনগন স্বাধীনতার জন্য আরও আপসহীন হয়ে ওঠে। তাদের কাছে তখন হয় মৃত্যু, নয় স্বাধীনতা।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *