ডা. ইমাম হোসাইন : ‘মুনাফিক’ শব্দটির অর্থ কপট, ভন্ড, দ্বিমুখী নীতি বিশিষ্ট, শঠ, প্রবঞ্চক, সত্য গোপনকারী ইত্যাদি এবং মুনাফিকী অর্থ প্রতারণা, শঠতা, কপটাচার, ভন্ডামি ইত্যাদি। ইসলামি শরিআতের পরিভাষায় অন্তরে কুফর ও অবাধ্যতা গোপন করে মুখে ইসলামকে স্বীকার করার নাম হলো নিফাক। যে এরূপ কাজ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক। মুনাফিকের সংজ্ঞায় সাইয়েদ মুফতি আমিনুল ইহসান
ডা. ইমাম হোসাইন : ‘মুনাফিক’ শব্দটির অর্থ কপট, ভন্ড, দ্বিমুখী নীতি বিশিষ্ট, শঠ, প্রবঞ্চক, সত্য গোপনকারী ইত্যাদি এবং মুনাফিকী অর্থ প্রতারণা, শঠতা, কপটাচার, ভন্ডামি ইত্যাদি। ইসলামি শরিআতের পরিভাষায় অন্তরে কুফর ও অবাধ্যতা গোপন করে মুখে ইসলামকে স্বীকার করার নাম হলো নিফাক। যে এরূপ কাজ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক।
মুনাফিকের সংজ্ঞায় সাইয়েদ মুফতি আমিনুল ইহসান বলেছেন, মুনাফিক হলো এমন ব্যক্তি যে ইসলামকে মুখে প্রকাশ করে এবং অন্তরে কুফরিকে লালন করা।
মুনাফিকীর প্রকারভেদ :
মুনাফিকী বড় ও ছোট এই দু’ভাগে বিভক্ত। ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেছেন, ‘কুফরের মতই মুনাফিকীর স্তর ভেদ আছে। এজন্য অনেক সময় বলা হয়, এমন কুফর যা ইসলাম থেকে বের করে দেয় এবং এমন কুফর যা ইসলাম থেকে বের করে না। অনুরূপ বড় মুনাফিকী ও ছোট মুনাফিকী ।[3]
১. বিশ্বাসগত মুনাফিকী (বড় মুনাফিকী) : যে মুনাফিক বাইরে নিজের ঈমান ও ইসলাম যাহির করে কিন্তু নিজের মনের মাঝে কুফরী লালন করে, সে আক্বীদাগত মুনাফিক। এ ধরনের মুনাফিক রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে ছিল। এদেরই নিন্দায় কুরআন নাযিল হয়েছে এবং এদেরকে কুরআন কাফির বলেও ঘোষণা দিয়েছে। কুরআনের বার্তা অনুযায়ী এরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে বসবাস করবে। ইবনু রজব বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর ফেরেশতা মন্ডলী, তাঁর গ্রন্থাবলী, তাঁর রাসূলগণ ও পরকালের প্রতি ঈমানের কথা যে মুখে প্রকাশ করে কিন্তু এর সবগুলো কিংবা অংশবিশেষকে অন্তরে অবিশ্বাস করে সে বড় মুনাফিক।[ইবনু রজব, জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম ১/৪৩১]ফকীহ বা মুসলিম আইনজ্ঞরা কখনো কখনো মুনাফিক এর স্থলে ‘যিনদীক’ শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন, ‘এক শ্রেণীর যিনদীক আছে যারা বাহ্যিকভাবে ইসলাম ও রাসূলগণের অনুসরণের কথা প্রকাশ করে এবং মনের মাঝে কুফর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে শত্রুতা লুকিয়ে রাখে। এরাই মূলতঃ মুনাফিক এবং এদেরই আবাসস্থল হবে জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে’।[ইবনুল কাইয়িম, তরীকুল হিজরাতায়ন, পৃঃ ৫৯৫]
২. আমল বা কর্মগত মুনাফিকী (ছোট মুনাফিকী) :
ধর্মীয় কাজগুলো লোকচক্ষুর অন্তরালে নিয়মমাফিক পালন না করা, তবে জনসমক্ষে সেগুলো যথাযথ পালন করার নাম আমল বা কর্মগত মুনাফিকী। এক্ষেত্রে কিন্তু আল্লাহর প্রতি ঈমান ও অন্যান্য আক্বীদা-বিশ্বাসে কোন ঘাটতি থাকবে না। ইবনু রজব বলেছেন, ছোট মুনাফিকী হ’ল আমলে মুনাফিকী। যখন মানুষ প্রকাশ্যে নেক আমল করে কিন্তু অপ্রকাশ্যে তার উল্টো কাজ করে তখন তা ছোট মুনাফিকী বলে গণ্য হয়।[জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম ১/৪৩১]
আমলকেন্দ্রিক এই ছোট মুনাফিকী মূল ঈমান বিদ্যমান থাকা অবস্থায়ও মুসলিমের মনে বাসা বাধতে পারে। যদিও সেটা কবীরা বা বড় গুনাহ। কিন্তু বড় মুনাফিকী সর্বতোভাবে ঈমানের পরিপন্থী। তা কোনভাবেই একজন মানুষের অন্তরে আল্লাহর প্রতি ঈমানের সাথে যুক্ত হ’তে পারে না। তবে ছোট মুনাফিকী যখন অন্তরে শিকড় গেড়ে বসে এবং পূর্ণতা লাভ করে, তখন সময় বিশেষে তা ঐ মুনাফিককে বড় মুনাফিকীর দিকে ধাবিত করে এবং দ্বীন থেকে একেবারে খারিজ করে দেয়।আমলগত মুনাফিক জাহান্নামের চিরস্থায়ী অধিবাসী হবে না। সে বরং অন্য সকল কবীরা গুনাহগারদের কাতারভুক্ত। আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করে তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন, আর চাইলে তার পাপের কারণে শাস্তি দিয়ে পরিশেষে জান্নাতের অধিবাসী করবেন।
ইসলামই আল্লাহ তায়ালার একমাত্র মনোনীত ধর্ম। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান ১৯) সব পয়গম্বরের দ্বীন ছিল এক ও অভিন্ন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নুহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইবরাহিম, মুসা, ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না (সূরা আশ-শুরা : ১৩)। কিন্তু এ শ্রেষ্ঠ দ্বীনের ক্ষতি সাধনে সদা তৎপর বাতিল সব ধর্মের বিশ্বাসীগণ। আবার এ ধর্মে বিশ্বাসী কিছু ব্যক্তি নিজ ধর্মের বিরুদ্ধে কথা ও কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। তাদের কথা ও কাজের মধ্যে মিল নেই। বাহ্যিকভাবে ইসলামের কথা বললেও অন্তরে রয়েছে কপটতা। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি। যথা : ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ২. যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে ও ৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে (বুখারি- ২৬৮২, মুসলিম- ১/২৫)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে মুনাফিকের আলামত চারটি। চতুর্থটি হলো- ঝগড়া করলে গালাগালি করে। মুনাফিকী একটি মারাত্মক ব্যাধি। এ ব্যাধি মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে ঠেলে দেয়। এর ক্ষতিকর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। মানুষের মনকে কলুষিত করার যত রকম ব্যাধি আছে তন্মধ্যে মুনাফিকী অন্যতম বড় ব্যাধি।
কুরআন মাজিদের বিভিন্ন স্থানে মুনাফিকের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য,এবং তাদের ভয়াবহ পরিনতি বা শাস্তির বর্ণনা করা হয়েছে। একটি সূরার নামও রয়েছে সূরা আল-মুনাফিকুন। নিম্নে কুরআন মাজীদে বর্ণিত মুনাফিকের পরিচয় ও পরিনতি তুলে ধরা হলো:-
আল্লাহ তাআলা বলেন,
এবং তাদেরকে যাতে সনাক্ত করা যায় যারা মুনাফিক ছিল। আর তাদেরকে বলা হল এসো, আল্লাহর রাহে লড়াই কর কিংবা শত্রুদিগকে প্রতিহত কর। তারা বলেছিল, আমরা যদি জানতাম যে, লড়াই হবে, তাহলে অবশ্যই তোমাদের সাথে থাকতাম। সে দিন তারা ঈমানের তুলনায় কুফরীর কাছাকাছি ছিল। যা তাদের অন্তরে নেই তারা নিজের মুখে সে কথাই বলে বস্তুতঃআল্লাহ ভালভাবে জানেন তারা যা কিছু গোপন করে থাকে। (আলে ইমরান-১৬৭)
তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে আস, তখন মুনাফিকদেরকে তুমি তোমার নিকট হতে মুখ একেবারে ফিরিয়ে নিতে দেখবে। (সূরা আননিসা -৬১)
তোমাদের কী হল যে, তোমরা মুনাফিকদের সম্বন্ধে দুই দল হয়ে গেলে, যখন আল্লাহ্ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্যে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন! আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তোমরা কি তাকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাও ? এবং আল্লাহ্ কাউকেও পথভ্রষ্ট করলে তুমি তার জন্যে কখনও কোন পথ পাবে না। (সূরা আননিসা -৮৮)
মুনাফিকদেরকে শুভ সংবাদ দাও যে, তাদের জন্যে মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে। (আন নিসা-১৩৮)
আর কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারি করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহ তা’ আলার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রুপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন। (আন নিসা-১৪০)
নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহ্ র সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে ; বস্তুত তিনি তাদেরকে এর শাস্তি দেন, আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সঙ্গে দাঁড়ায়-কেবল লোক দেখানোর জন্যে এবং আল্লাহ্কে তারা অল্পই স্মরণ করে। (আন নিসা-১৪২)
মুনাফিকরা তো জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে আর তাদের জন্যে তুমি কখনও কোন সহায় পাবে না। (আন নিসা-১৪৫)
(স্মরণ কর), মুনাফিক ও যাদের অন্তরে ব্যাধি ছিল, তারা যখন বলছিল, তাদের (অর্থাৎ মুসলিমদের) দীন তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে। অথচ কেউ আল্লাহর উপর ভরসা করলে, আল্লাহ তো পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল-৪৯)
মুনাফিকেরা ভয় করে, তাদের সম্পর্কে এমন এক সূরা না অবতীর্ণ হয়, যা তাদের অন্তরের কথা ব্যক্ত করে দিবে ! বল, ‘বিদ্রুপ করতে থাক ; তোমরা যা ভয় কর আল্লাহ্ তা প্রকাশ করে দিবেন।’ (সূরা আত তাওবাহ্-৬৪)
মুনাফিক নর ও মুনাফিক নারী একে অপরের অনুরূপ, তারা অসৎকর্মের নির্দেশ দেয় এবং সৎকর্ম নিষেধ করে, এরা হাতবদ্ধ করে রাখে, তারা আল্লাহ্কে বিস্মৃত হয়েছে, ফলে তিনিও তাদেরকে বিস্মৃত হয়েছেন; মুনাফিকেরা তো পাপাচারী। (সূরা আত তাওবাহ্-৬৭)
মুনাফিক নর, মুনাফিক নারী ও কাফিরদেরকে আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাহান্নামের অগ্নির, যেখানে তারা স্থায়ী হবে, এটাই তাদের জন্যে যথেষ্ট এবং আল্লাহ্ তাদেরকে লা’নত করেছেন আর তাদের জন্যে রয়েছে স্থায়ী শাস্তি। (সূরা আত তাওবাহ্-৬৮)
হে নবী ! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর ও এদের প্রতি কঠোর হও ; এদের আবাসস্থল জাহান্নাম, উহা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল! (সূরা আত তাওবাহ্-৭৩)
মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক ও মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ, এরা কপটতায় সিদ্ধ। তুমি এদেরকে জান না; আমি এদেরকে জানি। আমি তাদেরকে দুইবার শাস্তি দিব ও পরে তারা প্রত্যাবর্তিত হবে মহাশাস্তির দিকে। (আত তাওবাহ্-১০১)
আল্লাহ্ অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কাহারা ঈমান এনেছে এবং অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কাহারা মুনাফিক। (সূরা আনকাবুত-১১)
হে নবী ! আল্লাহ্কে ভয় কর এবং কাফিরদের ও মুনাফিকদের আনুগত্য কর না। আল্লাহ্ তো সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা আহযাব -০১)
আর স্মরণ কর, মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরে ছিল ব্যাধি, তারা বলছিল, ‘আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা প্রতারণা ব্যতীত কিছুই নয়।’ (সূরা আহযাব -১২)
কারণ আল্লাহ্ সত্যবাদীদেরকে পুরস্কৃত করেন তাদের সত্যবাদিতার জন্যে এবং তাঁর ইচ্ছা হলে মুনাফিকদেরকে শাস্তি দেন বা এদেরকে ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব-২৪)
আর তুমি কাফির ও মুনাফিকদের কথা শুনিও না, এদের নির্যাতন উপেক্ষা কর এবং নির্ভর কর আল্লাহ্ র ওপর; কর্মবিধায়করূপে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। (সূরা আহযাব-৪৮)
মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এবং যারা নগরে গুজব রটনা করে তারা বিরত না হলে আমি নিশ্চয়ই তাদের বিরুদ্ধে তোমাকে প্রবল করব ; এটার পর এই নগরীতে তোমার প্রতিবেশীরূপে এরা স্বল্প সময়ই থাকবে। (সূরা আহযাব-৬০)
পরিণামে আল্লাহ্ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীকে শাস্তি দিবেন এবং মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব-৭৩)
আর তিনি মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী, মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারী যারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে মন্দ ধারণা পোষণ করে তাদেরকে শাস্তি দিবেন। অমঙ্গল চক্র এদের জন্যে, আল্লাহ্ এদের প্রতি রুষ্ট হয়েছেন এবং এদেরকে লা’নত করেছেন এবং এদের জন্যে জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন, তা কত নিকৃষ্ট আবাস! (সূরা ফাতহ-০৬)
যেদিন কপট বিশ্বাসী পুরুষ ও কপট বিশ্বাসিনী নারীরা মুমিনদেরকে বলবেঃ তোমরা আমাদের জন্যে অপেক্ষা কর, আমরাও কিছু আলো নিব তোমাদের জ্যোতি থেকে। বলা হবেঃ তোমরা পিছনে ফিরে যাও ও আলোর খোঁজ কর। অতঃপর উভয় দলের মাঝখানে খাড়া করা হবে একটি প্রাচীর, যার একটি দরজা হবে। তার অভ্যন্তরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে আযাব।
মুনাফিকরা মু’মিনদেরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না ?’ তারা বলবে, ‘হাঁ, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। তোমরা প্রতীক্ষা করেছিলে, সন্দেহ পোষণ করেছিলে এবং অলীক আকাংক্ষা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছিল, অবশেষে আল্লাহ্ র হুকুম এলো। আর মহাপ্রতারক তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল আল্লাহ্ সম্পর্কে।’ (সূরা হাদীদ-১৩,১৪)
তুমি কি মুনাফিকদেরকে দেখ নাই ? এরা কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে এদের সেই সব সঙ্গীকে বলে, ‘তোমরা যদি বহিষ্কৃত হও, আমরা অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে দেশত্যাগী হব এবং আমরা তোমাদের ব্যাপারে কখনও কারও কথা মানব না এবং যদি তোমরা আক্রান্ত হও আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে সাহায্য করব।’ কিন্তু আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, এরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। বস্তুত এরা বহিষ্কৃত হলে মুনাফিকগণ তাদের সঙ্গে দেশত্যাগ করবে না এবং এরা আক্রান্ত হলে এরা এদেরকে সাহায্য করবে না এবং এরা সাহায্য করতে আসলেও অবশ্যই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে; এরপর তারা কোন সাহায্যই পাবে না। (সূরা হাশর-১১,১২)
যখন মুনাফিকরা তোমার নিকট আসে তারা বলে, ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহ্ র রাসূল।’ আল্লাহ্ জানেন যে, তুমি নিশ্চয়ই তাঁর সল এবং আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (সূরা মুনাফিকুন-০১)
এরাই বলে, ‘তোমরা আল্লাহ্ র রাসূলের সহচরদের জন্যে ব্যয় কর না, যাতে এরা সরে পড়ে।’ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ধনভাণ্ডার তো আল্লাহ্ র ই; কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না। এরা বলে, ‘আমরা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলে সেখান হতে অবশ্যই প্রবল দুর্বলকে বহিষ্কার করবে।’ কিন্তু শক্তি তো আল্লাহ্ র ই, আর তাঁর রাসূল ও মু’মিনদের। তবে মুনাফিকরা এটা জানে না। (সরা মুনাফিকুন-০৭,০৮)
হে নবী! কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান। (সূরা তাহরীম-০৯)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে প্রকৃত মুসলমান হওয়ার তাওফিক দান করুন।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *