সত্যানন্দ চৌধুরী : সম্মানিত পাঠক, লেখালেখি বা রাজনীতি আমার নেশা নয় এবং পেশাও নয়। তবে একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হলে দেশ শাসনের জন্য একজন যোগ্য নেতা বেছে নিতেই হবে। আমরা জানি ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সাংবিধানিক দায়িত্ব প্রতিপালনের জন্য কোন না কোন একটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করা ছাড়া
সত্যানন্দ চৌধুরী : সম্মানিত পাঠক, লেখালেখি বা রাজনীতি আমার নেশা নয় এবং পেশাও নয়। তবে একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হলে দেশ শাসনের জন্য একজন যোগ্য নেতা বেছে নিতেই হবে। আমরা জানি ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সাংবিধানিক দায়িত্ব প্রতিপালনের জন্য কোন না কোন একটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করা ছাড়া একজন সচেতন নাগরিকের আর কোন বিকল্প নাই। সেই বিবেচনায় স্বাধীনতার ঘোষক বীর মুক্তিযুদ্ধা শহীদ জিয়ার জাতীয়তাবাদী আদর্শ লালন করা আমি একজন অতি সাধারণ বাংলাদেশী নাগরিক।
১৯৯১ এবং সর্বশেষ ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশী অভূতপূর্ব এক ভূমিধ্বস বিজয় নিয়ে দেশ পরিচালনা করে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপির কেন আজ এই লেজে-গোবরে অবস্থা হবে? এর কারন, গদিতে বসে অদূরদর্শী ও পরামর্শক নির্ভর নেত্রী ম্যাডাম জিয়া দলের উদার পন্থী বলে খ্যাত তথা ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা ভারতীয় গুপ্তচর নেতা-আমলাদের পরামর্শে বিএনপির চেতনাকে বিসর্জন দিয়ে (অর্থাৎ চীনের সহিত বন্ধুত্ব ছিঁড়ে ফেলে ভারত মূখী হয়ে দেশ পরিচালনা করে) বিশাল জনপ্রিয় দলকে আজ এই কঙ্কালসার অবস্থায় দাঁড় করিয়েছেন। দলের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা ধারন করা অসংখ্য নেতা-কর্মী-লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী থাকার পরও পদ-পদবী হারানোর ভয়ে কাউকেই সত্য কথা বলতে দেখা যায় নাই। ফলে দেশ ও দল পরিচালনায় নেত্রী ক্রমাগত সব ভূল করেই গেছেন যার পরিণাম আমরা আজ ভোগ করছি বা প্রত্যক্ষ করছি মাত্র।
তবে আমি যেহেতু সক্রিয় রাজনীতির সাথে কখনো যুক্ত ছিলাম না কিংবা আগামীতেও দলের কোন পদ-পদবী দখল করার অভিলাষ বা যোগ্যতা কোনটাই নাই, এমতাবস্থায় বিএনপির এই করুণ পরিণামের জন্য একমাত্র বেগম জিয়ার রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তই যে দায়ী তা তুলে ধরতে আমার তো কোন প্রকার ভয় পাবার কথা নয়!! তবে সমস্যা হল, আমি যে লিখতে জানি না আবার রাজনীতিও ভাল বুঝি না!
[তবে সামান্য যতটুকু রাজনীতি বুঝি, তা আমার মাতা ম্যাডাম জিয়া আর ভ্রাতা ফখরুল সাহেব রাজনীতিতে ক্রমাগত যে সকল মারাত্মক ভুল করে দলের এই পরিণতি ডেকে এনেছেন, আমি অন্তত তা করতাম না, তাতে কোন সন্দেহ নাই]
অতএব আমার এই লিখায় ভোট-চোর প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনার নৃর্শংস নির্যাতন-নিপীড়ন-গুম-খুন আর পুকুরচুরি-সমুদ্রচুরির কাহিনী বলার চেয়ে খালেদা জিয়ার সুউচ্চ পাহাড় আর পর্বত সমান ব্যর্থতার কাহিনীই বেশী আলোকপাত করা হয়েছে যেন বিএনপির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী যারা হবেন তাঁরা শিক্ষা নিয়ে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটিয়ে দলকে পুনর্জীবিত করে নিতে পারেন সেই প্রত্যাশায়! কেননা আমরা জানি -‘আত্মসমালোচনাই আত্মশুদ্ধির সর্বোৎকৃষ্ট উপায়’।
-দুই-বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে তুলনা করা যায় এক সময়কার সুবিশাল ও বিলাসবহুল জাহাজ টাইটানিকের সাথে। সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ কাজের সফল ও অপূর্ব কীর্তি টাইটানিক জাহাজের নির্মাণ-শৈলী এতই নিখুঁত এবং মজবুত ছিল যে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে অতীব গর্বের সাথে বলা হয়েছিল “The Titanic is considerd unsinkable” অথচ সবকিছু মিথ্যা প্রমানিত করে এত নিখুঁত ও সুবিশাল আকৃতির জাহাজখানা তাঁর প্রথম সমুদ্র যাত্রায়ই দেড় হাজারের অধিক যাত্রী নিয়ে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায়। তবে হ্যাঁ, জাহাজ নির্মাণ-শৈলীর কোন ক্রুটি নয় বরং জাহাজের ক্যাপ্টেন মিঃ এডওয়ার্ড স্মিথ সাহেব ভুল করে বিশাল এক বরফের পাহাড়ে ধাক্কা লাগিয়ে দেয়ার জন্যই টাইটানিক ডুবে যাওয়ার একমাত্র কারণ ছিল।
একইভাবে বলতে কোন দ্বিধা নাই, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ১৯৯১-এ একক-সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশের ও বেশী আসনে ভূমিধ্বস বিজয়ে জেতা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বৃহত্তম দল বিএনপি যেখানে কোটি কোটি মানুষের মন জয় করে সাফল্যের সহিত একাধারে আরও কম করে হলেও ৩০ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা অথচ সেখানে একমাত্র নেত্রী বেগম জিয়ার নেতৃত্বের ধারাবাহিক ও পাহাড় সমতুল্য ভুলের জন্যই কেবল এক মেয়াদ পার হতে না হতেই ক্ষমতা হাতছাড়া করে বিএনপি আজ যেন টাইটানিকের মতো সমুদ্রের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে!!!
-তিন-প্রিয় পাঠক, ধরুন একটা নূতন যাত্রীবাহী বাস প্রায় শতাধিক যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার পথে মেঘনা সেতুর রেলিং ভেঙ্গে নদীতে পড়ে সকল যাত্রীর সলিল সমাধি হল। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য কে দায়ী? নতুন বাসে যান্ত্রিক কোন গোলযোগ মেনে নেয়া যায় না। তবে কি বাসের হেলপার? নাকি যাত্রীরা দায়ী? না, এদের কেউই না। কেবলমাত্র স্টিয়ারিং ধরা ঐ বাসের ড্রাইভার এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনার জন্য একক ভাবে দায়ী। কাজেই একই ভাবে বলা যায় না কি? বিএনপির এই পরিনামের জন্যও অন্য কোন নেতা, মন্ত্রী বা কর্মীরা নয়, দলের স্টিয়ারিং ধরে থাকা নেত্রী ম্যাডাম জিয়া একমাত্র দায়ী?
কিংবা যদি ধরি, ক্রিকেট খেলায় একজন ব্যাটস-ম্যান প্রতি বলে ছক্কা মেরে এক ওভারে ৪২ রান করে বসল! এর মানে ব্যাটস-ম্যান খুব ভাল খেলেছে? মোটেও তা বলা যাবে না, বরং বোলার বাজে ভাবে কেবল লুজ বল করেই ক্ষান্ত থাকে নাই, উপরন্ত ওভারে কয়েকটি নো-বল মেরে অতিরিক্ত কয়েকটি রানও দিয়েছেন। কাজেই হাসিনা-খালেদার মধ্যকার রাজনৈতিক ক্রিকেট খেলায় হাসিনা ভাল ব্যাট করেছে না বলে বরং খালেদা বাজে বল করেছেন বলেই ব্যাটস-ওম্যান হাসিনা পিটিয়ে ব্যাট করে বলে-বলে ছক্কা হাকিয়ে যাচ্ছেন তা মানতে বাধা কোথায়?
প্রাসাদ তুল্য গণভবনের অফিসে বসে সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করে কেরানীদের মতো বস্তায়-বস্তায় ফাইল সই করা রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষ আসনে বসা প্রধানমন্ত্রীর কাজ নয়। প্রধানমন্ত্রীর কাজ-
(১) সঠিক পদে দলের আদর্শ লালন করা চৌকশ মন্ত্রী-আমলা নিয়োগ দেয়া।
(২) সঠিক সময়ে সঠিক দিক-নির্দেশনা দেয়া। [যেমন নৌকার কাণ্ডারী কেবল শক্ত হাতে হাল ধরে নৌকার দিক ঠিক করে দেয়। অথচ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নৌকা বেয়ে নিয়ে যায় অন্যান্য মাঝি-মাল্লারা]
(৩) দল এবং সরকার পরিচালনায় বিএনপির চেতনা পরিপন্থী (অর্থাৎ ভারতপন্থী) নেতাদের নিষ্ক্রিয় করে কিংবা প্রভাব কমিয়ে এনে ধীরে ধীরে তাঁদের বিতাড়িত করে দেয়া।
(৪) ভারতের সহিত নতজানু নয় বরং সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব বজায় রাখা। [মনে রাখতে হবে ভারত হল বিএনপি তথা সমগ্র মুসলিম উম্মার অন্যতম প্রধান শত্রু] তাই ভারতের অশুভ প্রভাবকে প্রতিহত করার জন্য পররাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় সকল গোয়েন্দা সংস্থাকে চীন-পাকিস্তানের প্রশিক্ষনে প্রশিক্ষিত করে পরিচালিত করা।
-চার- একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, যে ভারতীয় রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক ভাবেই একটা পারিবারিক ধাঁচের সম্পর্ক বিদ্যমান। ইহার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর ভারত সরকারের বিশেষ আনুকূল্যে বা আতিথেযতায় শেখ হাসিনা সপরিবারে (স্বেচ্ছা নির্বাসনে) ভারতে থেকে যাওয়ার সুবাদে। আর এই সুযোগে র-এর কর্তাব্যাক্তিরা এবং বিশেষ ভাবে বাংলা ভাষাভাষী কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জির ব্যাক্তিগত আগ্রহ ও তাঁর সুদূরপ্রসারী চাণক্য পরিকল্পনায় বাংলাদেশে পারস্পারিক সৌহার্দের রাজনীতির পরিবর্তে বিবেধ ও প্রতিহিংসার রাজনীতির পাশাপাশি সর্বত্র ভারত-বন্দনার রাজনীতির বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে শেখ হাসিনার মগজ ধোলাইয়ের কাজটুকুও সেরে ফেলা হয়েছিল ভাল ভাবেই।
ভারতের প্রয়াত কংগ্রেস-নেত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পর সদ্য অক্কা পাওয়া কংগ্রেস নেতা (জল্লাদ) প্রনব মুখার্জি ছিলেন ২য় ব্যাক্তি যিনি শেখ হাসিনার অভিবাবক, রাজনৈতিক গুরু ও অতি আস্থাভাজন এক ব্যক্তিত্ব। দুই মেয়াদে এই প্রণব মুখার্জি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সুবাদে ১৯৯৬ এবং ২০০৯ সালে শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়ার জন্য এই কাকা বাবুর অবদান যে ভুলে যায় নাই তাহা আরও স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে শেখ হাসিনার নিন্মোক্ত কার্যকলাপ থেকে-
*ভারতের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসাবে (৩১ আগস্ট ২০২০ সালে) প্রণব মুখার্জি মারা যাবার পর কোন রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের তোয়াক্কা না করে সরকারী ব্যয়ে বিশেষ বিমানে বাংলাদেশের শেখ হাসিনাই একমাত্র সরকার প্রধান যিনি প্রণব মুখার্জির অন্তোষ্টিক্রিয়ায় যোগদান করতে দিল্লি গিয়েছিলেন। সার্ক ভুক্ত অন্য কোন দেশ ত দুরের কথা ভারতের একটি আশ্রিত রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত ভোটানের সরকার প্রধান এমন কি পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও প্রণব বাবুর অন্তোষ্টিক্রিয়ায় যোগদান করতে দিল্লি যায় নাই। কেননা মৃত্যুকালে প্রণব মুখার্জি তো ভারতের চলমান (Sitting President) রাষ্ট্রপতি ছিলেন না এমন কি তাঁর দল কংগ্রেসও ক্ষমতায় ছিল না।
শুধুই কি তাই? ভারত ব্যতীত বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকও পালন করেছিল।
* তাছাড়া এর কয়েক বছর আগে (২০১৫ সালে) এই প্রণব বাবুর স্ত্রী সুভ্রা মুখার্জি যখন মারা গিয়েছিলেন তখনো শেখ হাসিনা তাঁর ব্যাক্তিগত এক সফরে রাষ্ট্রীয় খরচে বিশেষ বিমানে দিল্লি গিয়ে প্রণব বাবুকে সমবেদনা জানিয়েছিলেন!! অপর দেশের রাষ্ট্রপতির প্রয়াত স্ত্রী-র অন্তোষ্টিক্রিয়ায় কোন দেশের সরকার প্রধান যোগ দেয়ার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর আছে বলে কেউ দেখাতে পারবে না।
*আরও শুনুন, প্রণব বাবুর ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি জুন ২০১৬ সালে কেবল লোকসভার একজন সদস্য হিসাবে ব্যক্তিগত সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ভারত সরকারের কোন মন্ত্রী বা পাতি-মন্ত্রীও নয় কেবল একজন সংসদ সদস্য ছিলেন মাত্র। অথচ অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় অতিথি না হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় খরচে তাঁর সম্মানে গণভবনে প্রায় সহস্রাধিক আওয়ামী নেতা-কর্মী আর প্রণব বাবুর পাছা চাটা সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীদের সাথে নিয়ে নৈশ-ভোজের আয়োজন করেছিলেন সে আপ্যায়ন তালিকায় কেবল বগুড়ার দৈ ব্যাতিত (জিয়ার এলাকা বিধায়) ৭৭ রকম আইটেমের খাবার দাবার ম্যারাথন সাইজের টেবিলে সাজিয়ে পরিবেশনের যে রেকর্ড করেছিলেন তা গিনিস বুকে স্থান করে নিয়েছে বৈকি।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *