728 x 90

শক্তিশালী ন্যারেটিভ ছাড়া ফ্যাসিবাদের পতন সম্ভব নয়

ড.ফারুক আমিন: গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সাউথ এশিয়ান পলিসি ইনিশিয়েটিভ ও গ্লোবাল ভয়েস ফর হিউম্যানিটি’র যৌথ উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রবিবার সন্ধ্যায় সিডনি’র ক্যাম্পবেলটাউন সিভিক হলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আমার দেশ সম্পাদক, প্রাক্তন জ্বালানী উপদেষ্টা,

ড.ফারুক আমিন: গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সাউথ এশিয়ান পলিসি ইনিশিয়েটিভ ও গ্লোবাল ভয়েস ফর হিউম্যানিটি’র যৌথ উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।

গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রবিবার সন্ধ্যায় সিডনি’র ক্যাম্পবেলটাউন সিভিক হলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আমার দেশ সম্পাদক, প্রাক্তন জ্বালানী উপদেষ্টা, বিনিয়োগ বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং সাউথ এশিয়ান পলিসি ইনিশিয়েটিভ – সাপি’র (SAPI) চেয়ারম্যান ড. মাহমুদুর রহমান, সাবেক অস্ট্রেলিয়ান সিনেটর লী রিয়ানন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাসিত একটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য্য, গুমের শিকার বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা, জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর পুত্র ও গুমের শিকার ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাশেম আরমানের বোন তাহেরা তাসনীম, অস্ট্রেলিয়ান বিজনেস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাংক আলাফাসি, রিফিউজি একশন কোয়ালিশনের প্রতিনিধি ইয়ান রিনটোল সহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ সন্ধ্যার এ অনুষ্ঠানে অন্যতম আকর্ষণ ছিলো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গায়ক, “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি” গানের সুরকার আপেল মাহমুদ, জনতার কবিয়াল নামে খ্যাত রাহাত শান্তনু, মাসুদ মিথুন, সোহেল খান, সৈকত পাল, আসিফ ইকবাল, আবদুল্লাহ ইউসুফ, এএনএম মাসুম, বাচ্চু  প্রমুখ শিল্পীদের পরিবেশিত গান, কবিতা ও নাটিকা।

গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে ও প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের আহবান জানিয়ে পরিবেশিত সঙ্গীত, কবিতা আবৃত্তি ও গুমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত নাটিকা দেশে প্রবাসীদের পাশাপাশি অন্যান্য কমিউনিটির দর্শকরাও আলোড়িত হয়েছেন।

আয়োজক সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ ফারুক আমিনের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া আলোচনা সভার শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন আদিবাসী কমিউনিটির প্রতিনিধি আংকেল ডেভ বেল ও আঙ্কেল ডেজ স্মিথ। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের গুমের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সাপি’র এক্সিকিউটভ ডাইরেক্টর শিবলী সোহায়েলের চমৎকার পরিচালিনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে হলে ঐতিহাসিক সত্যের উপর ভিত্তি করে শক্তিশালী ন্যারেটিভ বা রাজনৈতিক বয়ান গঠন করতে হবে। মানবাধিকারের বিরুদ্ধে গুমের মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটন করে যাওয়া বর্তমান জঘন্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে দেশের সাধারণ মানুষ কেবলমাত্র তখনই রাস্তায় নেমে আসবে যখন তারা উপযুক্ত তাত্ত্বিক ভিত্তির কাছে দেশের প্রয়োজনে নিজেদের প্রাণও উৎসর্গ করে দেয়ার প্রেরণা পাবে। মাহমুদুর রহমান আরো বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে যদি ফ্যাসিবাদ টিকে যায় তাহলে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব এশিয়া সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়বে, সুতরাং বৈশ্বিক গণতন্ত্রের স্বার্থেই পৃথিবীর অন্যান্য দেশের এখন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত।

সাবেক অস্ট্রেলিয়ান সিনেটর ও গ্রিনস পার্টির নেত্রী লী রিয়ানন তাঁর বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়কাল ধরে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ মানবাধিকার লংঘন এবং বিশেষ করে মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধ গুমের চর্চা হয়ে আসছে, তার প্রতিরোধে অস্ট্রেলিয়ান রাজনৈতিক দলগুলোকে এবং সরকারকে অধিকতর সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

 

পিনাকী ভট্টাচার্য্য বলেন, ইতিহাসের শিক্ষা হলো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয়। সীমাহীন ত্যাগ ও রক্তক্ষয় ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ নির্মূল হয়েছে এমন উদাহরণ নেই। এই সংগ্রামের পথচলায় যারা গুমের শিকার হয়েছেন তারা বাংলাদেশের মানুষের প্রেরণার উৎস। ইতিহাসের শিক্ষা হলো এই মানুষদের সাথে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা কোন না কোন একদিন উন্মোচিত হবেই।

গুমের শিকার বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী তাঁর পরিবারের অমানবিক নানা অভিজ্ঞতা ও সন্তানদের কষ্টের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বলেন, বিভিন্ন মানুষের পরামর্শে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে পর্যন্ত দেখা করে স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি এই সরকারের কাছে আর কোন প্রতিকার চান না, বরং মনে করেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই হয়তো তিনি তার স্বামীকে ফিরে পেতে পারেন। গুমের শিকার ব্যারিস্টার আরমানের বোন তাহেরা তাসনিম তাঁর ভাইকে কিভাবে সাদা পোষাকধারী একদল মানুষ জোর করে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো সেই লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা করে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে প্রতিকারের অনুরোধ জানান।

আলোচনা সভায় অন্যান্য বক্তারাও বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের নিন্দা জানিয়ে এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। এই আলোচনা সভা ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত অন্যান্য বিশিষ্ট সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের মাঝে ছিলেন টার্কিশ মিডিয়ার লিমিটেড এর প্রেসিডেন্ট ইউকসেল সিফসি,  ইমাম আবু হোরায়রা,  বিশিষ্ট আইনজীবি নাইজেল রাসেল, ক্যাম্ববেলটাউন কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র ইব্রাহিম খলিল মাসুদ, রাশেদ খান, বিএনপি অস্ট্রেলিয়ার নেতা মনিরুল হক জর্জ, ফারুখ আহমেদ খান ,লিয়াকত আলী স্বপন,কুদরত উল্লাহ লিটন,মোসলেহ উদ্দীন আরিফ, মুন্নী চৌধুরী, জাকির আলম লেনিন, ফারুক খান, কেয়ার বাংলাদেশের নেতা ফারুক হোসাইন, সোহেল মাহমুদ ইকবাল,ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. রাশেদুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, বেলায়েত রবিন, নামিদ ফারহান, ডাঃ ওহাব বকুল,রাসেল আহমেদ,এএন এম মাসুম, খাইরুল কবির পিন্টু,কামরুল ইসলাম শামীম,জাকির হেসেন রাজু, শেখ সাইফ,আবুল হাসান,আব্দুল মতিন ঊজ্বল,হাবিব রহমান,নাসির আহমেদ,মোঃ বাচ্চু,মাহাবুবুল হক দুলাল ও মনজুরুল আলম বুলু প্রমুখ।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বর্তমান পরিস্থিতি অবলম্বনে ছোট্ট নাটিকা রচনা ও পরিচালনা করেন এককালের বিশিষ্ট নাট্যকার স্ক্রিপ্ট রাইটার ও নাট্য পরিচালক এম,এ ইউসুফ শামীম। এতে অভিনয় করেন এ যেন এম মাসুম, খাইরুল কবির পিন্টু বাচ্চু বাচ্চু। নাটিকা চলাকালীন পিনপতনের শব্দ ছিলোনা। মুহুমুহু করতালির মাধ্যমে সমাপ্ত হয় অসমাপ্ত গুমের নাটিকা। গুম,খুন নির্যাতনের শিকার যারা হয়েছেন, তাদের জন্য এবং তাদের পরিবারের জন্যে উৎসর্গ করা হয় ক্ষুদ্র নাটিকাটি বা দেশের বর্তমান অবস্থার চিত্রাংশ।

অনুষ্ঠানে আগত অতিথি ও দর্শকদের মাঝে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান মাকসুদা’স কিচেন এর সৌজন্যে খাবার পরিবেশন করা হয়। অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত একমাত্র বাংলাভাষী কমিউনিটি পত্রিকা সুপ্রভাত সিডনির প্রধান সম্পাদক ও সাপি-অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সংগঠক আবদুল্লাহ ইউসুফ শামীম তাঁর সমাপনী বক্তব্যে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। মিডিয়া পার্টনার ছিলো অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত একমাত্র বাংলাভাষী কমিউনিটি পত্রিকা সুপ্রভাত সিডনি।

 

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising