ফারুক আমিন : গত ২৭ অক্টোবর ২০২৩ শুক্রবার বিকেলে অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেইন এফেয়ার্স এন্ড ট্রেড বা পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন, মানবাধিকার পরিস্থিতি, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা এবং দুই দেশের মাঝে সহযোগিতামূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কমিউনিটি প্রতিনিধিদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে বিএনপি অস্ট্রেলিয়া, সাউথ এশিয়ান পলিসি ইনিশিয়েটিভ প্রতিনিধিরা সহ আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত মানবাধিকার সংগঠন ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকের শুরুতে বাংলাদেশ ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দুই দেশের মাঝে দীর্ঘদিনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক, শিক্ষা ও কৃষিসহ নানা খাতে বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বিপুল পরিমাণ আর্থিক ও মানবিক সহায়তা এবং অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়া সরকার পূর্ণ সচেতন রয়েছে এবং আসন্ন নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও একটি অবাধ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় দেশটির সরকার সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। অস্ট্রেলিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম সিনিয়র কর্মকর্তা বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রতিনিধিদলকে এ বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আসন্ন নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সরকার অবগত এবং এ বৈঠকের মাত্র দুইদিন আগেই অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশী হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে পক্ষে তাদের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছে।
সাউথ এশিয়ান পলিসি ইনিশিয়েটিভের প্রতিনিধি শিবলী সোহায়েল বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া পশ্চিমা দেশগুলোর মাঝে প্রথমদিকেই ছিলো অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান। বর্তমান সময়েও বাংলাদেশী কমিউনিটি প্রত্যাশা করে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ান সরকার দৃঢ় ভুমিকা গ্রহণ করবে।
বিএনপি অস্ট্রেলিয়ার আহ্ববায়ক মোঃ মোসলেহ উদ্দিন হাওলাদার আরিফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে বলেন, খালেদা জিয়া এবং তার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন, যার জন্য তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত প্রশংসিত। বিশেষ করে, অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম ফ্রেজার এবং বিরোধীদলীয় নেতা বিল হেডেন ২ জুন ১৯৮১ সালে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রশংসা করে বক্তব্য রাখেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদের কাছে তিনি খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে আরও জোরালো ভূমিকা রাখার আবেদন জানান।
ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্টের প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয় যার সাম্প্রতিক নমুনা হলো মানবাধিকার বিষয়ক এনজিও অধিকার নেতা আদিল এবং এলানকে বিচার বিভাগের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, গ্রেফতার ও নির্যাতনের মতো ঘটনায় জর্জরিত শোচনীয় মানবাধিকার পরিস্থিতির বর্ণনা করে বলেন, এ ধরণের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকার স্যাংশন আরোপ করে কঠিন অব্স্থান প্রদর্শন করেছে। তিনি অস্ট্রেলিয়ান সরকারকেও অনুরুপ পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে অবদান রাখার আহবান জানান। আলোচনায় ড. ইউনুসকে হেনস্থা ও হয়রানি করার বিষয়টিও উঠে আসে। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিরা জানান এই বিষয়গুলোর উপর তারা কড়া নজর রাখছেন।
এ বৈঠকে বিগত দুইটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রহসন এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা, বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দী রেখে উপযুক্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছাত্রের ফেইসবুক পোস্টের জের ধরে বাংলাদেশে মাতাকে গ্রেফতার, বিভিন্ন পত্রিকা নিষিদ্ধ এবং নিরপেক্ষ সাংবাদিকদেরকে নির্বাসনে যেতে বাধ্য করার মতো ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন সুপ্রভাত সিডনির প্রধান সম্পাদক আবদুল্লাহ ইউসুফ শামীম, সাউথ এশিয়ান পলিসি ইনিশিয়েটিভের ডাইরেক্টর ড. ফারুক আমিন, বিএনপি অস্ট্রেলিয়ার নেতা এএনএম মাসুম।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি অস্ট্রেলিয়ার সাবেক যুগ্ম আহ্ববায়ক কুদরত উল্লাহ লিটন ।