আয়শা একজন ষাট বছরের বিধবা নারী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে তার। দুই ছেলেই চাকরির জন্য ঢাকায় থাকে। মেয়ে দুটোর বিয়ে হয়েছে বগুড়ায়। যেখানে আয়শার বাড়ি। যদিও মেয়েরা ঢাকায় থাকে এখন। স্বামীর মৃত্যুর পর আয়শা কোথায় থাকবে তা নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে সন্তানদের মধ্যে। সবাই বাড়িতে এসেছে বাবার মৃত্যু বার্ষিকীর জন্য। আয়শা সবার মনোভাব বুঝতে
আয়শা একজন ষাট বছরের বিধবা নারী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে তার। দুই ছেলেই চাকরির জন্য ঢাকায় থাকে। মেয়ে দুটোর বিয়ে হয়েছে বগুড়ায়। যেখানে আয়শার বাড়ি। যদিও মেয়েরা ঢাকায় থাকে এখন। স্বামীর মৃত্যুর পর আয়শা কোথায় থাকবে তা নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে সন্তানদের মধ্যে। সবাই বাড়িতে এসেছে বাবার মৃত্যু বার্ষিকীর জন্য। আয়শা সবার মনোভাব বুঝতে পারছেন। মাঝে মাঝে কিছু কথা কানেও যাচ্ছে। কিন্তু কাউকে কিছুই বুঝতে দিচ্ছেন না।
শুধু সন্তানেরা না, অনেক আত্মীয় স্বজনরা অনেক কথা বলে যাচ্ছেন। সন্তানেরা এখন মা’কে কোথায় রাখবে? এখানেই রেখে যাবে হয়তো। মা এখন ঝামেলা সবার কাছে। আয়শা এসব কথায় কষ্ট পেলেও কোন উত্তর দেননি। কারণ সে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে।
আয়শার বাড়িতে ছয় বছর ধরে কাজ করে রহিমা। স্বামী ছেড়ে চলে গেছে। একটা মেয়ে ও একটা ছেলে নিয়ে অনেক কষ্টের জীবন। মেয়ে নাদিয়াকে এসএসসি পর্যন্ত পড়িয়ে এখন বিয়ে দিতে চায়। ছাত্রী খারাপ না। আর্টস থেকে এ প্লাস পেয়েছে। কোনো প্রাইভেট পড়েনি। উল্টো টিউশনি করে নিজের খরচ জোগায়।
অনেক চিন্তা ভাবনা করার পর আয়শা নাদিয়াকে তার কাছে রেখে পড়ালেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সিদ্ধান্ত নেয় নাদিয়াকে নিজের কাছে রেখে পড়ালেখা করাবেই। নিজের একাকীত্বও দূর হবে।
স্বামীর মিলাদ শেষে ছেলেমেয়েরা এক সাথে রাতে বসলো আয়শা কোথায় থাকবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। খালিদা বলল, আমি এখানেই থাকবো। মাঝে মাঝে তোমাদের কাছে বেড়াতে যাবো। আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি আমার ব্যবস্থা করে নিতে পারবো।
বড় ছেলে বলল, মা এভাবে তোমাকে রেখে গেলে মানুষ খারাপ বলবে আমাদেরকে। নানান কথা উঠবে। এটা হতে পারে না মা। তুমি আমাদের সাথে থাকলে আমরা চিন্তামুক্ত থাকতে পারি।
ছোট ছেলে বলল, মা তুমি আমাদের সাথে থাকলে তোমার মনও ভালো থাকবে। এখানে কে দেখবে তোমাকে? তাছাড়া তুমি আমার সাথে থাকলে রোহান, নিতুকে স্কুলে আনা নেওয়া করলেও তোমার সময় কাটবে। মানুষের সাথে মিশলে, বাহিরে গেলে তোমারও ভালো লাগবে।
আয়শা বলল, আমি তোমাদের জন্য অনেক করেছি। এই বয়সে আর দৌড়াতে পারবো না। আমার দায়িত্ব আমি পালন করে দিয়েছি। তোমাদের মানুষ করেছি। এখন তোমাদের সন্তানের দায়িত্ব তোমাদের। তাছাড়া আমি কম শিক্ষিত মানুষ। তোমরা অন্য চিন্তা ধারার। আমি তোমাদের থেকে দূরে থেকেই ভালো থাকতে চাই। তোমাদের বাবা আমার জন্য যা রেখে গেছে তাতে তোমাদের দারস্থ হতে হবে না কোনদিন ইনশাআল্লাহ। শুধু দোয়া কর আমার জন্য।
আয়শা আরও বলল, আমি আর একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তোমাদেরকে জানাতে চাই। আমি নাদিয়াকে আমার কাছে রাখব। তার সব দায়িত্ব আমার। আমি ওকে আমার কাছে রেখে পড়ালেখা করাবো। ও অনেক ভালো ছাত্রী। ও আমার সাথে থাকলে আমারও একজন সাথী হবে। আর বাজার করার জন্য একটা ছেলেকে রাখবো। কিছু টাকা দিলে বাজার করে দিবে প্রতি দিন। কাজেই কোনো চিন্তা নেই। আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাবো না। তোমরা মন চাইলে এসে দেখে যেও।
বড় ছেলে একটু রেগে বলল, মা তুমি অন্যের সন্তানের দায়িত্ব নিতে পারবে। কিন্তু নিজের নাতি-নাতনীদের সাথে থাকতে চাও না। এটা কেমন সিদ্ধান্ত তোমার?
আয়শা এবার স্পষ্ট উত্তর দেয়। বলে, তোমাদের সাথে কিছুদিন থেকে দেখেছি তোমার আমাকে কতটা ভালোবাসো বা সম্মান কর। আমি তোমাদের অনেক কিছু মানতে পারি না। তোমরাও আমার অনেক কিছু মানতে পারো না। আমি যাবো তোমাদের কাছে। খুব বেশি দিন তোমাদেরকে না দেখে থাকতে পারবো না।
মেয়েরা বলল, মা নাদিয়ার দায়িত্ব নেওয়ার কী দরকার ছিল? এই বয়সে এই উটকো ঝামেলা কেন মাথায় নিলে? এসব নিয়ে মানুষ কথা বলবে।
-আমি উত্তর দিব। তোমরা নিশ্চিন্তে চলে যাও। কোনো সমস্যা হলে তোমাদেরকে জানবো। আয়শা তার কথায় অনড়ভাবে থাকলো।
নাদিয়া খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করছে। আয়েশার সাথে সব কাজেই সাহায্য করে। আয়শা তার একাকী জীবনে একজন খুব ভালো মানুষ পেল।
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *