জলপাইয়ের পাতা চুইয়ে পড়া রোদ্দুরের হাসি উপেক্ষা করে
নবীন কবিও সেইদিন নেমে এসেছিল রাজপথে।
রাতজেগে লেখা চিঠিটা বুক পকেটে রেখেই
ভীরু প্রেমিকটাও বীরদর্পে ভেঙ্গেছিল রাজপথ,
বটতলার তুখোড় ছাত্রনেতাও বুক চিতিয়ে হেঁটেছিল পিচঢালা পথ
জিন্নাহ ও ইয়াহিয়ার মুখে লাথি মারতে মারতে
রাজপথে নেমে এসেছিল দুরন্ত এক কিশোর; মতিউর।
হবু বউয়ের জন্য লাল ফিতা, রেশমি চুড়ি, আলতার শিশি
বিয়ের সদাইপাতি দোকানে রেখেই সেইদিন
মিছিলে এসে শামিল হয়েছিল রফিক।
সেইদিন কালো বর্ণের প্রেসে তালা ঝুলিয়ে
ছাপাখানার কর্মীও এসেছিল রাজপথে।
ছাত্র-যুবা, মা হারা সন্তান, বাবার অবাধ্য ছেলে,
বাউন্ডুলে সেই যুবক, মহল্লার পাতি মস্তান
মসজিদের ঈমাম, মন্দিরের পুরোহিত, গির্জার পাদ্রি
একে একে সবাই ঘর ছেড়ে এসেছিল রাজপথে
ফাল্গুনের আগুনরঙা রাজপথে; বর্ণমালার মিছিলে।
ঈশ্বরের বর্ণপরিচয় হতে দীপ্ত পায়ে বর্ণগুলো নেমে এসেছিল মিছিলে
প্লেকার্ডে প্লেকার্ডে, শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছিল গণপরিষদ; পাকিস্তান।
সেইদিন মিছিলের সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছিল বিষপোকার দল
বন্দুকের ট্রিগার চেপে ধরেছিল উর্দুর বেবাট পুলিশবাহিনী
আর সহাস্যে সটান শিড়দাড়ায় হাঁটছিল প্রিয়তম বর্ণমালা
কোলের শিশু মায়ের মলিন মুখ দেখে ‘মাগো’ বলে কেঁদেছিল
সেইদিনের শিশুও বর্ণমালার জন্য উন্মাদ হয়েছিল শাব্দিক প্রতিবাদে।
সেইদিন থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ঠুসঠাস শব্দকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল
বাঙালির ‘মা-মাগো’ ডাকের চিৎকার।
সেইদিন বুলেটবিদ্ধ বুক থেকে একফোঁটা রক্তও ঝরেনি
তবে রক্ত ঝরেছিল পলাশ শিমুলের বৃন্ত থেকে অথবা কৃষ্ণচূড়ার ডাল থেকে।
সেইদিন বর্ণমালার চিৎকারে ফুটেছিল বর্ণের ফুল,
সেই বর্ণমালা আজ ফুলে ফুলে সুবাসিত করছে পুরো বিশ্বকে,
সেই চেনা সুর বিশ্ব নিজের কন্ঠে তুলছে; আ-মরি বাংলা ভাষা