প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: আমরা সকলের জানা আছে যে রমজানের শেষ দশকেই রয়েছে শবে কদর। এই শবে কদরের এক রাত আমল করলে এক হাজার মাস বা ৮৩ বছর ৪ মাসেরও বেশী ইবাদত করার ছওয়াব পাওয়া যাবে। কারণ, এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, কদরের রাত্রি হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম (সূরা কদর)।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: আমরা সকলের জানা আছে যে রমজানের শেষ দশকেই রয়েছে শবে কদর। এই শবে কদরের এক রাত আমল করলে এক হাজার মাস বা ৮৩ বছর ৪ মাসেরও বেশী ইবাদত করার ছওয়াব পাওয়া যাবে। কারণ, এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, কদরের রাত্রি হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম (সূরা কদর)। অনেক সময় খুব ছোট আমল করলেও অগণিত ছওয়াব পাওয়া যায়। নিম্নে কিছু কৌশল বা টিপস দেয়া হলো যার মাধ্যমে আমরা সীমাহীন ছওয়াব হাসিল করতে পারবো। তাহলে আমরা শবে কদরকে বিরল পুঁজি মনে করে কয়েকটি আমল করতে পারি। যেমন:
এক. হাজার মাস নামাজের ছওয়াব:
রমজানের শেষ ১০ দিনের প্রতি রাতে যদি আমরা, উদাহরণস্বরূপ, ২ রাকাত করে শবে কদরের তালাশে নফল নামাজ পড়ি তাহলে আমরা একটানা ন্যূনতম ৮৩ বছর ৪ মাস প্রতিদিন ২ রাকাত করে নফল নামাজ পড়লে যে ছওয়াব পাওয়া যেতো সেই সম পরিমাণ ছওয়াব কামায় করতে পারবো। কারণ যে কোন এক দিনের নামাজ শবে কদরের রাতের মধ্যেই থাকবে।
দুই. হাজার মাস দানের ছওয়াব:
রমজানের শেষ ১০ দিনের প্রতি রাতে যদি আমরা, উদাহরণস্বরূপ, ১ ডলার করে দান করি তাহলে আমরা ন্যূনতম ৮৩ বছর ৪ মাস একটানা প্রতিদিন ১ ডলার করে দান করার ছওয়াব পাবো। কারণ এই দানের একটি দিন অবশ্যই শবে কদরে পড়বে।
তিন. সহস্র কুরআন খতমের ছওয়াব:
রমজানের শেষ ১০ দিনের প্রতি রাতে যদি আমরা ৩ বার সূরা এখলাস বা কূলহু.. সূরা পড়ি, তাহলে আমরা ইনশাআল্লাহ ৮৩ বছর ৪ মাসেরও বেশী একটানা প্রতিদিন কুরআন খতমের ছওয়াব পাবো। কারণ শেষ ১০ দিনের যেকোন একদিন শবে কদর অবশ্যই হবে। হাদিসে এসেছে, সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য (বুখারি)। অর্থাৎ এই সূরা পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়ার সমান নেকী অর্জিত হয়। তাহলে আমরা যদি ৩ বার সূরা এখলাস পড়ি তাহলে এক খতম কুরআনের ছওয়াব মিলবে। এই আমলটি আমরা সহজেই করতে পারি। প্রতি রাতে ৩ বার সূরা এখলাস পড়তে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগবে।
চার. হাজার মাস পূর্ণরাতের ইবাদতের নেকী:
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে তার জন্য সারা রাত (নফল) নামাজ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে (তিরমিজি)। তাহলে রমজানের শেষ ১০ দিন আমরা ইশা ও ফজরের নামাজ জামাতে পড়লে একটানা ৮৩ বছর ৪ মাস রাত জেগে ইবাদতের ছওয়াব পাবো। কারণ রমজানের শেষ ১০ দিনের একটি দিন শবে কদরে পড়বে।
পাঁচ. হাজার মাস জিহাদের ছওয়াব:
হাদিসে বর্ণিত আছে, বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান ও দিনে সিয়াম পালনকারীর মতো (বুখারি)। তাহলে আমরা যদি রমজানের শেষ ১০ দিন প্রতি রাতে কোন বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্যক্রয় বাবদ কিছু অর্থ প্রদান করি তাহলে একটানা ন্যূনতম ৮৩ বছর ৪ মাস আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো অথবা রোজা পালনকারীর মতো ছওয়াব পাবো।
ছয়. অজস্র কবুল হজের ছওয়াব:
রমজানের শেষ ১০ দিনের প্রতি রাতে মায়ের দিকে একবার নেক নজরে তাকালে আমরা একটানা ন্যূনতম ৮৩ বছর ৪ মাস প্রতিদিন কবুল হজের ছওয়াব পাবো। কারণ একবার মায়ের দিকে নেক নজরে তাকালে একটি কবুল হজের ছওয়াব পাওয়া যাবে বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। শুধু তাই নয়, আমরা যতবার তাকাবো ততোটি কবুল হজের ছওয়াব পাবো ইনশাআল্লাহ। এর সঙ্গে গুণ করুন আরও ৮৩ বছর ৪ মাস। সুবহানাল্লাহ ! এই ছওয়াব কেউ কি হিসাব করতে পারবো?
পরিশেষে বলতে হয়, যে কোন আমলের নেকী কোটি কোটি গুণ বাড়ানো সম্ভব, যদি সময়মত তা আমল করা যায়। মহান আল্লাহর ভান্ডারে কোন কিছুর ঘাটতি নেই।
(লেখক: মৎস্য-বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়; পোস্ট ডক্টরাল ভিজিটিং ফেলো, সিডনি)
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *