728 x 90

নামাজ বা সালাত

সামসুল ইসলাম টুকু .বাংলাদেশ থেকে: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। ইসলাম যে পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত তার দ্বিতীয়টি নামাজ বা সালাত। ইসলামের এই স্তম্ভটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, কোরআনে এজন্য ৮২ বার তাগিদ দেয়া হয়েছে বিভিন্নভাবে। এর মধ্যে ৩৬ বার বলা হয়েছে আনুষ্ঠানিক নামাজ পড়ার জন্য এবং ৪৬ বার বলা হয়েছে নামাজ কায়েমের জন্য। অত্যন্ত নিবিষ্ট চিত্তে মহাশক্তিমান

সামসুল ইসলাম টুকু .বাংলাদেশ থেকে: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। ইসলাম যে পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত তার দ্বিতীয়টি নামাজ বা সালাত। ইসলামের এই স্তম্ভটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, কোরআনে এজন্য ৮২ বার তাগিদ দেয়া হয়েছে বিভিন্নভাবে। এর মধ্যে ৩৬ বার বলা হয়েছে আনুষ্ঠানিক নামাজ পড়ার জন্য এবং ৪৬ বার বলা হয়েছে নামাজ কায়েমের জন্য।

অত্যন্ত নিবিষ্ট চিত্তে মহাশক্তিমান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করাই হচ্ছে নামাজ পড়া। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে অবনত না হওয়া। নামাজ পড়া মানে দৃঢ়চিত্ত হওয়া। কোন প্রভাবশালী, দুর্দান্ত, অপশক্তি ও মিথ্যার কাছে অবনত না হওয়া। দিনে রাতে ৫ বার নামাজ পড়ার নির্দেশ এ কাণেই যে, সমাজের বিভিন্ন লোভ, লালসা, দুর্নীতি, মিথ্যা যদি কোন সময় দূর্বল করে তাহলে পরবর্তী ওয়াক্তের নামাজে আবার যেন নিজেকে সংযত করে নেয়া যায়। তাহলে মূলত নামাজ হচ্ছে সকল অন্যায় ও পাপ থেকে সংযমী হবার একটি মাহাত্ম্যপূর্ণ অনুষ্ঠান বা প্রক্রিয়া। সংযমী হওয়ার জন্য নামাজ একটি প্রক্রিয়া মাত্র। কিন্তু সেই আত্মার সংযম করতে না পারলে নামাজ হয়ে পড়বে অর্থহীন। নামাজের এই মহান শিক্ষা মানুষকে নৈতিক বলে বলীয়ান করে। আত্মশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। সৎচিন্তা জাগ্রত করে। এসব ভাল ও সৎ চিন্তাগুলো সক্রিয় হতে পারে, যদি সত্যি সত্যিই নামাজ পড়া হয় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে। আর যদি এমনটা হয় যে, নামাজ পড়তে হয় তাই পড়ি তাহলে নৈতিকতা কখনই গড়ে উঠবেনা। সর্বোপরি নৈতিকতা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে মনের ব্যাপার এবং নামাজ হচ্ছে আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। যার নৈতিকতা বা বিবেকের জোর নেই নামাজ তার জন্য অর্থহীন।

নামাজের যে সকল আনুষ্ঠানিকতা আছে সেগুলোর ফযিলত কী এবার সে বিষয়ে বলবো।

ওজুঃ নামাজ পড়ার জন্য প্রথমেই ওজু করতে হয়। মানুষের শরীরের বহিরাবরণ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বা পাকসাফ রাখাই হচ্ছে ওজুর মূল উদ্দেশ্য। শরীরের পরিচ্ছন্নতা মনের পরিচ্ছন্নতা আনতে সাহায্য করে। শারিরীক ও মানষিকভাবে পরিচ্ছন্ন মানুষই শুধু একাগ্রচিত্তে আল্লাহকে স্মরণ করতে পারে। ওজু শুধু ইবাদতের জন্য প্রয়োজন তা নয়। দিনে ৫ বার ওজুর মাধ্যমে শরীরের বহিরাংশ জীবানুমুক্ত রাখা যায়, সুস্থ থাকা যায়। সৃষ্টিকর্তার দেয়া নাক, কান, মুখ, চোখ ও ত্বকের মত গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয়গুলো ওজুর মাধ্যমে পরিস্কার করা সম্ভব হয়। শুধু তাই নয়, এই ইন্দ্রিয়গুলো পরিস্কার ও সচল থাকলেই আল্লাহর সকল নেয়ামতের রং, স্বাদ, গন্ধ অনুভব করতে পারি। সুতরাং এই ইন্দ্রিয়গুলোকে ওজুর মাধ্যমে পরিস্কার রাখার উপযোগীতা সম্পর্কে সন্দেহ থাকার কথা নয়। একজন কর্মক্লান্ত মানুষ হাত, পা ও চোখ, মুখ পানি দিয়ে ধুলে তার সকল ক্লান্তি দূর হয়, প্রাশান্তি লাভ করে। তাই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার এই ইসলামি বিধান তথা নামাজের পূর্বে ওজু করা যে কত বড় মাহাত্ম্যপূর্ণ ও বিজ্ঞান সম্মত তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। যা শুধু ব্যক্তিকে নয় একটি সমাজকেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

কাতারে দাঁড়ানোঃ ওজুর পরেই নামাজে অংশগ্রহণের জন্য কাতারে দাঁড়াতে হয়। বেশ কিছু নামাজি মসজিদে নির্দিষ্ট কাতারের নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়াতে বা বসতে আগ্রহী। কেউ ইমামের পিছনে দাঁড়াতে চান, কেউ প্রথম কাতারে দাঁড়াতে চান, কেউবা শেষ কাতারে, অথবা যে কোন কাতারের শেষপ্রান্তে দাঁড়াতে চান। কিন্তু প্রার্থিত স্থানে দাড়ানো বা বসার সুযোগ না পেলে যে কোন স্থানে দাঁড়াতে বাধ্য হন। সেখানে যদি গরীব, ছোট জাত, মজুর, ক্রীতদাস, কুশ্রী, পঙ্গু অথবা মিসকীনও থাকে তবুও সেক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তি, জমিদার, ডিসি, এসপি, সাংসদ, মন্ত্রী যেই হোননা কেন কোন উপায় থাকেনা, ওজর, আপত্তি কৈফিয়ত চাওয়ার সুযোগ নেই সেখানে। মিসকীন বা মজুরের ময়লা শত ছিন্ন লেবাসের পাশেই বসতে হয়। এই বাস্তবতা কী নির্দেশ করে? নিগ্রো, মালিক, গোলামে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। আর এ নির্দেশ শুধু নামাজ পড়া পর্যন্ত তথা মসজিদ পর্যন্ত সীমাদ্ধ রাখার জন্য নয়। সমাজে কায়েমের জন্য, ছড়িয়ে দেবার জন্য। ভেদাভেদ নামক হীনমন্যতাকে মুছে দেবার জন্য। সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা কজন আছি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি যে, নামাজের মহামূল্যবান নির্দেশ সমাজে কায়েমের জন্য চেষ্টা করেছি। গরীবের বিপদে পাশে দাঁড়িয়ে তার সমপর্যায়ের হবার চেষ্টা করেছি? সমবেদনা জানিয়েছি? অথচ নামাজের এই শিক্ষা নামাজ পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে নামাজি হবার গর্ব অনুভব করি। নামাজের এই শিক্ষাকে যদি আমরা সমাজে কায়েম করি তাহলে সমাজে দারিদ্র থাকবেনা, দ্বন্দ্ব, ফাসাদ, জালিয়াতি, দূর্নীতি, লোভ থাকবেনা। একটা সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে। এমন একটি সাম্য সমাজ গঠনের জন্য কোরআনে নামাজ পড়ার চেয়ে নামাজ কায়েমের কথা অধিকবার বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা ঐ গন্ডি অতিক্রম করতে চাইনা। যেমনটা এনজিওগুলো করে। তারা দারিদ্র দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন, সুশাসন কায়েম, দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ সমাজ, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ সহ হাজারো কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। সেমিনার সেম্পোজিয়াম, কর্মশালায় সয়লাব করে দিয়েছে। কথাবার্তায় মনে হবে দরিদ্র দূরীকরণ ও সাম্যবাদী সমাজ বেশী দূরে নয়। এই হলো বলে। কিন্তু তাদের কর্মসূচী কথা পর্যন্ত। প্রয়োগে কখনোই যাবেনা। কষ্মিনকালেও না। তাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে দারিদ্র দূরীকরণের কথা শুনতে শুনতে অভাবী মানুষগুলো আরও অভাবী হোক, দুর্বল হোক, মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাক যেন দারিদ্র দূরীকরণ শব্দটা তাদের কাছে অসহ্য বিষবৎ হয়ে যায়। দারিদ্র দূরীকরণের বিষয় নিয়ে যদি কেউ বা কারা সত্যিই এগিয়ে আসে তখন সে বা তারা যেন এসকল সাধারণ মানুষের কাছে উপহাসের পাত্র হয়ে দাঁড়ায়। সাম্রাজ্যবাদের এ অসাধারণ কৌশল বিপ্লব ঠেকানোর। তেমনিভাবে নামাজ যেন মানুষের কাছে অন্তসারশূন্য না হয়ে যায় এটাই আমার আশংকা।

নামাজে শরীর সঞ্চালনঃ  নামজ আদায় করার জন্য দিনে রাতে ৫ বার শরীরের বহিরাংশ ধৌত ছাড়াও শরীর সঞ্চালন করতে হয়। প্রতি রাকাত নামাজে একবার রুকু ও দুবার সিজদাসহ সোজা হয়ে দাঁড়ানো, হাটু ভাঁজ করে বসা, ডানবামে ঘাড় ঘুরিয়ে সালাম ফিরতে হয়। আর এসকল শারিরীক সঞ্চালন করতে হয় অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে, শৃঙ্খলার সাথে ঋজু সোজা করে। মানুষ একঘেঁয়ে কাজ করার পর নামাজে এসে শরীর সঞ্চালনের এই বৈচিত্রপূর্ণ পদ্ধতি শরীরের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে স্বাভাবিক ও সতেজ করার সুযোগ পায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ৪৬ রাকাতে উঠা বসা শরীরের স্বাভাবিক গতি রাখতে সাহায্য করে।

নেতৃত্ব সৃষ্টি ও আনুগত্যঃ নামাজ পড়া হচ্ছে শৃঙ্খলা মেনে চলা। ঈমামের আল্লাহু-আকবর ধ্বনীর সাথে সাথে বিনা বাক্য ব্যয়ে নামাজীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রুকু, সিজদা ও সালাম ফিরতে হয়। নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইমাম নামাজের যে সকল ক্রিয়া করেন নামাজীদের সেটা পালন করতে হয়। নামাজের এই অংশটুকু নির্দেশ করে থাকে, তোমরা ঈমাম নির্বাচিত করেছো তাকে মেনে চলো। অর্থাৎ নেতৃত্ব মেনে নাও। তাতে সমাজের শৃঙ্খলা থাকবে। বিভাজন হবেনা। বরং শক্তিশালী হবে যা যেকোন অপশক্তি মোকাবেলায় সক্ষম হবে। নেতৃত্ব মেনে চলার নামাজের এই শিক্ষা মেনে না চলার কারণে আজ আমরা বিশৃঙ্খল, অর্ন্তকলহে ব্যস্ত, পরস্পরের শত্রু ও অন্য জাতির কাছে পদানত। সবচেয়ে দুর্নীতি পরায়ণ জাতি হিসেবে আজ বিশ্বে চিহ্নিত। সমাজের উপর মহলের মানুষগুলো দুর্নীতির হোতা। আর সাধারণ মানুষগুলো দূর্নীতির যাতাকলে পিষ্ট। অর্থাৎ দূর্নীতি পরায়ণ নেতৃত্বেও গোটা জাতিই দূর্নীতি পরায়ণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। এর চেয়ে বেদনাদায়ক আর কী হতে পারে। আশি ভাগ সাধারণ মানুষ আমরা কত দূর্ভাগা। তাই নামাজের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সঠিক নেতৃত্ব বা ঈমাম নির্বাচনে তৎপর হতে হবে পাশাপাশি  অম্লান বদনে সে নেতৃত্বকে মেনে নিতে হবে। রাজনীতির ভাষায় বিপরীত অর্থের দুটি শব্দকে একত্রিত করে তা মেনে চলার কথা বলা হয়। শব্দ দুটি হচ্ছে গণতন্ত্র ও কেন্দ্রীকতা। একসাথে হচ্ছে গণতান্ত্রিককেন্দ্রীকতা। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যেমন গণতান্ত্রিক হতে হবে তেমনি নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্দেশ মেনে নিতে হবে। আর এ ধারার ব্যতিক্রম হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা আসতে বাধ্য। তাই ঈমাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের যত্নশীল হতে হবে তেমনি ঈমামের নেতৃত্বের প্রতি হতে হবে অনুগত।

মামদের অবস্থানঃ একজন ইমাম একটি মহল্লার বা গোষ্ঠীর অথবা সমাজের মানুষদের নামাজে নেতৃত্ব দেন। সুতরাং তার অবস্থানটি সমাজে শক্ত হওয়াই উচিত। কিন্তু বাস্তবে তার বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঈমামগণ গরীব ঘরের সন্তান, তারা অত্যন্ত অল্প বেতনে মসজিদে ঈমামতির দায়িত্ব পালন করেন। মসজিদগুলো স্ব স্ব এলাকার প্রভাবশালী ধনাঢ্য ব্যক্তিদের অর্থে নির্মিত ও পরিচালিত হয়। ফলে মসজিদ কমিটিগুলো এমন ঈমামদের নিয়োগ দেন যেন কমিটির কাছে অনুগত থাকে। ফলে ঈমামদের নিজস্ব সত্ত্বা থাকেনা। সঠিক কথা বলার পরেও সত্য থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন। নায্য কথা মুখের উপর বলতে পারেন না চাকুরী হারাবার ভয়ে। এটাই হচ্ছে ঈমামদের সামাজিক অবস্থান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একজন ঈমামের ভূমিকা ও মর্যাদা হওয়ার কথা একজন বিচারকের মত। তিনি হবেন সব দিক থেকে যোগ্য, আত্মনির্ভরশীল, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এবং মানুষের বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম। যিনি নির্ভিকভাবে সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তির দোষ ত্রুটি সম্পর্কেও বলতে পারবেন। বিচারের জন্য মতামত দিতে পারবেন। কিন্তু ঈমামদের অবস্থান, তাদের যোগ্যতা এবং সর্বোপরি সমাজের কর্তাব্যক্তিদের ঈমাম সম্পর্কে যে নেতিবাচক মূল্যায়ন রয়েছে তাতে ঈমামদের নিকট বেশীকিছু আশা করা বাতুলতা। সমাজের উপরতলার মানুষদের ঈমামদের প্রতি কোন আনুগত্য না থাকলেও সাধারণ মানুষরা আজও ঈমামদের শ্রদ্ধা ভক্তি করে। বিভিন্ন কাজে কামে ঈমামদের স্মরণাপন্ন হয়, পরামর্শ গ্রহণ করে। ঈমামের নির্দেশ পালনে বিশ্বস্ত। কিন্তু আশি ভাগ সাধারণ মানুষ নিয়ামক ভূমিকা পালন করেনা। কুড়ি ভাগ উপর তলার মানুষরাই নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। এদিকে সমাজের অবক্ষয় যে স্তরে পৌঁছেছে সেখানে ঈমামগণও অসহায় হয়ে পড়েছে। এই অসহায়ত্ব থেকে মুক্ত হবার জন্য সর্বশেষ ঈমামদেরই ভূমিকা নিতে হবে এবং তাদের সে যোগ্যতা অর্জনে ইতিবাচক কাজ করতে হবে।

নামাজ ব্যক্তির জন্য না সমাজের জন্যঃ আমরা একশ্রেণীর মানুষ বন্ধু বান্ধব আত্মীয়স্বজন ও চেনা মানুষদের নামাজ পড়ার উপদেশ দেই। তাবলীগের সদস্যরাতো রাস্তাঘাটে বাড়িতে মসজিদে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে উপদেশ দেন নামাজ পড়ার। তারা বলেন নামাজ ইহকাল পরকালের চাবিকাঠি। মরার পর পরকালে নামাজই পুঁজি হয়ে থাকবে। নামাজই স্বাক্ষী দেবে তুমি আল্লাহর ইবাদত করেছো। মরার সময় ধন সম্পদ কিছু নিয়ে যেতে পারবেনা এমনকি প্রিয়জন, ছেলে মেয়ে, স্ত্রীকেও নয়। নামাজ পড়লে    আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবে, বেহেস্তে যেতে পারবে। কথাগুলোতে ব্যক্তির লাভ লোকসানের বিষয়ই প্রাধান্য পায়। সামাজিক বা গোষ্ঠীগত লাভ লোকসানের বিষয়টি অনুপস্থিত। নামাজ পড়লে পারলৌকিক যে লাভ আছে সেটা ব্যক্তিগত। এক ব্যক্তি নিজেকে কতটা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করলো, কতটা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করলো তার উপর নির্ভর করবে তার পারলৌকিক লাভ লোকসান বা প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি। কিন্তু নামাজ কায়েমের বিষয়টি হচ্ছে সামাজিক। শুধু সামাজিক নয়, এর বিকাশ ও ব্যপ্তি হচ্ছে বিশ্বব্যাপী তথা সমগ্র মানব সমাজের কল্যাণের জন্য। আমরা শুধুমাত্র নামাজ পড়ার উপদেশ দিয়ে কর্তব্য শেষ করে আসলে নামাজকে কি ব্যক্তিকেন্দ্রীক করে দিচ্ছিনা? কিভাবে সামাজিক লাভ, অগ্রগতি, উন্নতি সম্ভব সে ব্যাপারে আন্দোলন করছি? অথবা সে পথে একটু অগ্রসর হয়েছি?

দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ার যে আনুষ্ঠানিকতা তার উদ্দেশ্যই হচ্ছে নামাজকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা বা কায়েম করা। আর সেটা যদি না হয় তবে নামাজের সামগ্রিক উদ্দেশ্য অর্থহীন হবে। নামাজ হয়ে পড়বে ব্যক্তিকেন্দ্রীক। যা ইসলাম তথা সাম্য শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। কুরআনে বলা হয়েছে- মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষেরই কল্যাণের জন্য। কুরআনের এই মহান বাণী হবে নিরর্থক যদি আমরা সমগ্র মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ না করি বা নামাজ কায়েমের বার বার তাগিদকে কোন কাজে না লাগাই। ইসলাম শুধু ব্যক্তির জন্য নয় বা পারলৌকিক জীবনের জন্য নয়। একই সাথে সমাজের ও ইহলৌকিক জীবনের জন্যই এবং শেষোক্ত বিষয়টিই প্রধান ও মুখ্য। মানুষের ও সমাজের কল্যাণ হলে ব্যক্তির কল্যাণ হবে। পূর্বেই বলেছি আমাদের ধর্মীয় পরামর্শই হচ্ছে ব্যক্তির লাভের জন্য। সার্বজনীন বিষয় থাকে অনুপস্থিত। এভাবে একটি মহান ধর্ম ও দর্শনকে ক্রমশ সংকীর্ণ করে তুলেছি। এর বিশালত্বকে প্রচার ক্ষেত্রেও আমরা কৃপণ হয়ে উঠেছি।

তাইতো আজ স্পষ্ট দেখি মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ গড়ে উঠেছে। জুম্মার নামাজে মসজিদে দাঁড়ানোর ঠাঁই থাকেনা। আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ক্ষেত্রে লোক পাওয়া যায়না। নামাজ শেষ হয়ে যায়- পারস্পারিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ নামাজ পড়া নিয়ে যেন কেউ প্রশ্ন না তোলে, যে আমি নামাজ পড়িনা। আর নামাজ কায়েম করার ব্যাপারতো আমার একার নয় সকলের। সবাই করলে আমিও করবো। নামাজ পড়লে অন্ততপক্ষে আমিতো বেহেস্তে যেতে পারবো। সমাজের ভালমন্দ উন্নতি অবনতিতে আমার কী আসে যায়? এব্যাপারে আমার নাক গলানোর কী দরকার। যারা অন্যায় করবে, দূর্নীতি করবে, সন্ত্রাস করবে তাদের বিচার আল্লাহ করবে। এভাবেই চলছে আমাদের নামাজ পড়া বা নামাজের মূল্যায়ন। নামাজের বিশাল ফজিলত এখন শুধু ‘পড়ার’ মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাইতো বিশ্বব্যাপী মুসলমান নামধারীরা পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে অসহায়ভাবে প্রতিকারহীনভাবে।

লৌকিক নামাজীদের জন্য কুরআনে বলা হয়েছে, ‘‘হে মুমিনগণ শোন, তোমরা যারা লোক দেখানো নামাজ পড় তারা মনে রেখো যারা নিরবে নিভৃতে আল্লাহর কাছে কাঁদে তারা তোমাদের চেয়ে উত্তম’’। অর্থাৎ জামাতে নামাজ পড়ার মধ্যে অন্যান্য ভাল উদ্দেশ্যর সাথে লৌকিকতার বিষয়টি থাকতে পারে। কিন্তু যারা চার দেয়ালের মধ্যে একা নিরবে নিভৃতে এবাদত করে আল্লাহর কাছে তাদের নিবেদন ও মূল্যায়ন ভিন্ন।

 

শুনেছি একটি মসজিদের ধ্বনী যতদূর পর্যন্ত পৌঁছাবে ততদুর পর্যন্ত আর কোন আজানের প্রয়োজন হয়না। কিন্তু লৌকিকতা আমাদের এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পাড়ায় পাড়ায় মসজিদে একই সাথে আজান দেয়া হয়। সেটাও আবার মাইকযোগে। তারপর মসজিদে গিয়ে নামাজীর সংখ্যা দেখলে মনে হয় আজানের আহবানের সাথে আমরা উপহাস করছি। কবির ভাষায় ‘‘কে শোনালো মোরে ঐ আজানের ধ্বনী, মরমে মরমে সেই সুর বাজিল কি সুমধুর, আকুল হইল প্রাণ নাচিল ধমনী’’। বেশ কিছু আজানের ধ্বনী শুনতে সুমধুর হলেও এখন ধমনীতে নৈতিক নাচনতো দূরের কথা স্পন্দনও আসেনা। কারণ আমাদের মধ্যে নেই নৈতিকতা, নেই ইসলামিক দর্শনের সামগ্রিক চিন্তা। আমরা সবাই হয়ে গেছি একক, বিচ্ছিন্ন। তাই নামাজ কায়েমের জন্য যে দৃষ্টি ভঙ্গির প্রয়োজন তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সামাজিকভাবে তা প্রয়োগ করতে হবে। একাজ মুখে বলা বা লেখা যত সহজ প্রয়োগ খুবই কঠিন। আর প্রয়োগের বিষয়টিই হচ্ছে সামগ্রিক ও বল প্রয়োগের। তাই নামাজকে পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার মানষিকতা আমাদের মাঝে তীব্র। আর নামাজ কায়েমের ব্যাপারে নিরব। ঐ প্রসঙ্গেই যেতে চাইনা। কিন্তু আজ সমগ্র সমাজ যেভাবে অন্যায় শক্তির দ্বারা বেষ্টিত, পাপ ও মিথ্যা যেখানে নৈমত্তিক কর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, ন্যায় অন্যায় বিচার করার মাপকাঠি আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে ঠিক সেই মূহুর্তে যদি আমরা সুসংগঠিত সংঘবদ্ধ না হই নামাজের নামে মেকি আনুষ্ঠানিকতা পরিহার না করি, নামাজ কায়েমের দিকে অগ্রসর না হই তবে আমাদের পরিত্রাণ নেই। কুরআনের কথা অনুযায়ী নৈতিকতা বর্জিত জাতির মত আমরাও ধ্বংস হয়ে যাবো।

আমি কোন আলেম মওলানা নই অথবা কুরআন শরীফের উপর বিশেষ কোন দখলও নেই। বিভিন্ন আলেম, মওলানা, জ্ঞানী ও বিদ্বান মানুষের সাথে আলাপ করেছি, মানুষ হবার জন্য কী কী করা প্রয়োজন, নামাজের সাথে মানুষ হবার কী সম্পর্ক সেগুলো নিয়ে নিজের মনে গভীর আলোচনা করেছি, গবেষণা করেছি এবং সেখানে থেকে যা অর্জন করেছি সেটাই এই লেখায় তুলে ধরেছি। তা যদি পাঠকের হৃদয়ে সামান্য হলেও স্পর্শ করতে পারে তাহলে সার্থক হবো।

মোবা—০১৭৪০৫৬৪০২৬

বিশেষ দ্রষ্টব্য

নামাজ ও নামাজী সম্পর্কে আমার কিছু প্রশ্ন আছে ।সেগুলো অনেকের কাছেই রেখেছি । কিন্তু যথার্থ উত্তর পায়নি। সেই প্রশ্ন গুলো আমি আলেম, ওলামা , মোফাসসিরদের উদ্দেশ্যে রাখলাম । নিচে সেই প্রশ্ন গুলি দেয়া হলো ।দয়া করে এ জানার আকাঙ্খা থেকে বঞ্চিত করবেননা

*নামাজের অর্থ কি ?

*নামাজের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক লাভ কি ?

*নামাজ পড়া ও নামাজ কায়েমের মধ্যে পার্থক্য কি?

*নামাজ না পড়ে কায়েমের কাজ করা যায় কিনা ?

*প্রকৃত নামাজীর সংখ্যা ও লোক দেখানো নামাজীর সংখ্যা কত ?

* যারা নামাজ পড়ে তারা কি আল্লাহর ভয়ে, দোজখের ভয়ে অথবা বেহাস্তের লোভে নামাজ পড়ে ?

*যারা নামাজ পড়ে তারা কি আল্লাহর খাস বান্দা এবং মোমিন ?

*যারা নামাজ পড়েনা তারা কি আজাজিল শয়তান ও খারাপ মানুষ ?

*নামাজ পড়লেই হবে না তার আগে কোনো  কিছু করতে হবে ?

*নামাজ ছাড়া কি সৎ মানুষ ভালো মানুষ হওয়া যায়না ?

* যারা অমুসলমান তাদের জন্য রোজ হাসরে কি পরিনতি ?

* নামাজ না পড়লে মোল্লারা সামাজিক ঝড় তোলে কেন?

*যারা অন্যায় দুর্নীতি করে তাদের বিরুদ্ধে ঝড় তোলেনা কেন ?

* বংশ পরম্পরায় মুসলমান হওয়া যায় কি?

* আসল মুসলমাম হওয়ার জন্য কি প্রয়োজন

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising