সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট : ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একদল বীর সেনানী জাতিকে দিয়েছিলো এক ‘ডিভাইন জাস্টিস’। জাতিকে মুক্ত করেছিলো এক রাহুগ্রাস থেকে। ইনডিমিনিটি ফরমান জারী করেছিলেন খন্দকার মুশতাক কিন্ত সেটা ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সংসদের মাধ্যমে দুই তৃতীয়াংশ ভোটে আইনে পরিনত করেন। (অবশ্য এই মোস্তাক সরকারকে শপত বাক্য পাঠ করিয়েছিলো হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা এইস
সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট : ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একদল বীর সেনানী জাতিকে দিয়েছিলো এক ‘ডিভাইন জাস্টিস’। জাতিকে মুক্ত করেছিলো এক রাহুগ্রাস থেকে। ইনডিমিনিটি ফরমান জারী করেছিলেন খন্দকার মুশতাক কিন্ত সেটা ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সংসদের মাধ্যমে দুই তৃতীয়াংশ ভোটে আইনে পরিনত করেন। (অবশ্য এই মোস্তাক সরকারকে শপত বাক্য পাঠ করিয়েছিলো হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা এইস টি ইমাম)। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল করে ঐ হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করে।
দীর্ঘ ১৫ বছর এর বিচারকার্য চলে। মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ বিশ জন শেখ মুজিব হত্যার আসামি করা হয়েছিলো। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কে এম ওবায়দুর রহমান, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর, তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও মেজর (অব.) খায়রুজ্জামানসহ পাঁচজনকে খালাস দেন আদালত। শেষঅব্দি ১৫ জনকে ফাঁসির আদেশ দিলেও রিভিওতে তিন জনের ফাঁসির আদেশ বাতিল করে। বাকি বার জন হচ্ছেন মেজর (অব.) বজলুল হুদা, মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান ও লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী আব্দুল মাজেদ, আব্দুল আজিজ পাশা।
শেষের ছয় জন বিদেশে আছেন। তাদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের পরোয়ানা রয়েছে। দণ্ডিত অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আব্দুল আজিজ পাশা। উল্লেখ্য,এই মামলা চলাকালে ৮ জন বিচারক বিব্রতবোধ করে বিচার কার্যক্রম থেকে সরে এসেছিলো।
১৯৯৬তে মেজর (অব.) বজলুল হুদাকে গ্রেফতারের পর বাড়ী ক্রোক করে পুলিশ সমস্ত মালামাল স্থানীয় থানায় নিয়ে গিয়েছিলো,আমাদের এবং আত্মীয় স্বজনকে জেল জুলুম নিপিড়ন করেছিলো। সেই থেকে বৃদ্ধ মহিলা অসুস্থ হয়ে যায়। ২০০০ সালের ১৫ই মার্চ বজলুল হুদার বৃদ্ধ মা ইহজগৎ ছেড়ে চলে যান। তখন মায়ের জানাজায় অংশ নিতে বজলুল হুদার প্যারোলে মুক্তির আবেদন জানায় তার পরিবার। কিন্তু মায়ের জানাজায় অংশ নিতে অনুমতি পায়নি। অতপত তার মায়ের লাশ জেল গেটে দেখার আবেদন করে। জেল গেটে ৭ ঘণ্টা তার মায়ের লাশ রেখে অনেক তালবাহানা ও নাটক করে বজলুল হুদাকে ১ মিনিটের জন্য তার মায়ের লাশ দেখতে দেয়।
২৮শে জানুয়ারি ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আরেকটা লোমহর্ষ কথা, ২৭ জানুয়ারি লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদের কারাবন্দি দুই ছেলে নাজমুল হাসান সোহেল ও মাহাবুবুল হাসান ইমু কে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা জেলে আনা হয় যারা আওয়ামী সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস হত্যাচেষ্টা সাজানো মামলায় আটক ছিলো। তাদেরকে যে প্রিজন ভ্যানে আনা হচ্ছিলো সেই একই ভ্যানেই ছিলো এক হিন্দু জল্লাদ যে কিনা তাদের বাবাকে পরেরদিন ফাঁসিতে ঝুলাবে। বিলিভ ইট অর নট ! এই জল্লাদের কথা পরে বলছি। সে আওয়ামী লীগেরই সমর্থক যার স্বল্প মেয়াদি সাজা হয়েছিলো। বুঝলাম তাদের বাবা ফাঁসির আসামি। তাই বলে একই ভ্যানে তার বাবার জল্লাদকেও রাখতে হবে। একবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখুন তো ঐ দুই ছেলের কি মানসিক অবস্থা ছিলো?
২৮শে জানুয়ারি ২০১০: রাত ১১টায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশরাফুল ইসলাম খান, ঢাকার জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অমিতাভ সরকার, ডিএমপি কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক, ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. মুশফিকুর রহমানসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ১১টা ২০ মিনিটে পাঁচটি কফিন বক্স কারাগারের ভেতরে ঢোকানো হয়।
রাত ১১:৪০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আশেপাশের ও কারাগারের অভ্যন্তরের সব বিদ্যুৎ একসাথে চলে যায় (কয়েকটা পত্রিকায় এটা এসেছিলো তখন)। ঠিক তখন দুইটা কালো টিন্টেড গ্লাসের পাজেরো জিপ ঢূকে কারা অভ্যন্তরে। এর একটা পাজেরোতে ছিলো শেখ হাসিনা স্বয়ং। হাসিনা নিজে সেদিন ফাঁসির মঞ্চের সামনে উপস্থিত ছিলো ৪ জনের ফাঁসি নিজ চোখে দেখার জন্য। অনেক পত্রিকায় আসছিলো যে দুইটা ফাঁসির মঞ্চে দু’জন করে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিলো। এবং এও এসেছিলো যে মেজর বজলুল হুদাকে প্রথম ফাঁসি দেওয়া হয়েছিলো !
আসলে মেজর বজলুল হুদাকে ফাঁসির মঞ্চেই নেওয়া হয়নি। মেজর হুদাকে প্রশাসনিক ভবনের একটি রুমে রাখা হয়েছিলো। দু’জন করে চার জনের ফাঁসির কাজ সমাপ্তির পর হাসিনা যায় মেজর বজলুল হুদার সেই রুমে। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলো সেই কাশিমপুর থেকে আনা হিন্দু জল্লাদ। যেভাবে কোরবানির গরু জবাই করা হয় ঠিক একই ভাবে চারজন মেজর হুদার শরীর চেপে ধরেছিলো আর হাসিনা মেজর হুদার বুকের উপর এক পা দিয়ে চেপে রেখেছিলো আর সেই হিন্দু জল্লাদ জবাই করেছিলো। প্রত্যক্ষ দর্শীর বর্ণনা থেকে জানতে পারা যায়, জবাইয়ের সময় কিছু রক্ত ফিনকি দিয়ে হাসিনার শাড়ির বেশকিছু অংশ ভিজে যায়।
হুদার লাশ পরেরদিন ১০টায় আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া গ্রামে তার নিজ বাড়িতে নেওয়ার আগে কয়েক হাজার পুলিশ, বিডিআর ও র্যাব অবস্থান নিয়েছিলো। লাশ নেওয়ার সাথে সাথে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ৫ মিনিটের মধ্যে লাশ দাফনের জন্য চাপ দিতে থাকে তার পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা ও কয়েক লক্ষ উপস্থিত মানুষের চাপের মুখে র্যাব কর্তারা পিছু হটে। কফিন খোলার পর দেখা যায় লাশ অর্ধেক ডুবে আছে রক্তের মধ্যে। আবার গোসল করানোর জন্য লাশ নামানোর পর দেখা যায় মেজর হুদার গলা কাটা যা জাল বোনার মোটা সুতা দিয়ে সেলাই করা।
অনুসন্ধানকালে মেজর হুদার লাশ গোসল করেছিলো এমন একজনকে বারবার প্রশ্ন করেছিলা, “হুদা স্যারের হাতের রগ, পায়ের রগ বা ঘাড়ের পিছনের রগ কাটা ছিলো কিনা, চোয়ালের নিচে কালো দাগ ছিলো কিনা?” তাকে বার বার এই প্রশ্ন করা হয়েছিল, কারণ ফাঁসির মঞ্চ থেকে নামানোর পর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য অনেক সময় হাত, পা বা ঘাড়ের রগ কেটে দেয় উপস্থিত সার্জন। না, উনি দেখেছেন স্রেফ জবাই করা আর হাতের উপর একটু চামড়া ছিড়া। সম্ভবত হ্যান্ডকাফ পরানো অবস্থায় জবাই করার সময় হাতের সামান্য চামড়া ছিলে যায়। মেজর হুদার পরিবারের কেঁউ আজ পর্যন্ত এই জবাই করার বিষয় নিয়ে মুখ খুলেনি তাদের জীবনের নিরাপত্তার কারণে।
হাসিনা এতেও তৃপ্ত হয়নি। পাঁচ জনের লাশ কিভাবে দাফন করা হচ্ছে, কত লোকজন জানাজায় আসছে ও সেখানকার মানুষের পত্রিক্রিয়া সরাসরি লাইভ টেলিকাস্টে দেখেছে তার ড্রয়িং রুমে বসে !
সেই হিন্দু জল্লাদকে আর কাশেমপুর কারাগারে ফেরত নেওয়া হয়নি। অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, তাকে কাগজে কলমে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার খোঁজ কেঁউ জানে না।
মেজর হুদাকে আইন্সঙ্গতভাবে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে এমন বীভৎস হত্যাকাণ্ডের ডাইনি আজ পলাতক। প্রসঙ্গত,আমাদের দেশের সরকার প্রধান ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে শপথ বাক্য পাঠ করেন যেখানে একটা লাইন থাকে, “আমি…… নিজের হিংসা বিদ্যেষ বা আবেগের বশবর্তী হয়ে কোন কাজ করবো না…………” বা এর কাছাকাছি ভাষায় তা লেখা থাকে।
২০১০ সালের এ ঘটনার পর এক যুগের বেশি সময় মেজর বজলুল হুদার স্বজনরা তাদের জীবনের নিরাপত্তার কারণে হাসিনার পৈশাচিকতা নিয়ে মুখ খোলেননি।
তবে ২৪ সালের ৫ আগস্ট শত শত ছাত্র হত্যাকারী হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে মেজর (অব.) বজলুল হুদার ভাই মুখ খুলেছেন,ভিডিও দেখুন
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *