728 x 90

ট্রেন্স থেকে ফিরে এসে: -রউফ আরিফ

পূর্ব প্রকাশের পর- -আই সি। -পারবে না? -আশা করি পারবো। অনন্যা আরমানের পাশ থেকে উঠে গেলো। নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো। টেলিফোনে কাউকে ডাকলো। একটু পরেই নেকটাই পরা মাঝবয়সি এক ভদ্রলোক এলো। অনন্যাকে সালাম করে দাঁড়ালে অনন্যা বলল, ম্যানেজার সাহেব বসুন। ভদ্রলোক বিনাবাক্য ব্যয়ে বসে পড়লে অনন্যা বলল, ইনি হলেন, মিঃ আলি আরমান। আজ থেকে আমার

পূর্ব প্রকাশের পর-

-আই সি।

-পারবে না?

-আশা করি পারবো।

অনন্যা আরমানের পাশ থেকে উঠে গেলো। নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো। টেলিফোনে কাউকে ডাকলো। একটু পরেই নেকটাই পরা মাঝবয়সি এক ভদ্রলোক এলো। অনন্যাকে সালাম করে দাঁড়ালে অনন্যা বলল, ম্যানেজার সাহেব বসুন।

ভদ্রলোক বিনাবাক্য ব্যয়ে বসে পড়লে অনন্যা বলল, ইনি হলেন, মিঃ আলি আরমান। আজ থেকে আমার চেয়ারে বসবেন। আরমান সাহেব নতুন মানুষ। তাকে সবকিছু শিখিয়ে নিতে হবে।

-জ্বি ম্যাডাম।

-আরমান সাহেব এখানেই থাকবেন। আমি যেসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করতাম, উনিও তাই করবেন। আপনি তার সব ব্যাবস্থা করবেন।

-জ্বি ম্যাডাম।

১৯.

আজ স্কুলে আসতে রোজির একটু দেরি হয়ে গেলো। বর্ষা থামার সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লেও রাস্তায় বর্ষার পানি জমে থাকায় ঠিক মতো গাড়ি চলতে না পারায় তার দেরি হয়ে গেলো।

রোজি লাইব্রেরিতে ঢুকলে জবা আপা জিজ্ঞাসা করল, আসতে পেরেছ তাহলে। আমি তো ভাবছিলাম বাচ্চা রেখে আজ তুমি আর আসবে না। এসে যখন পড়েছ তড়িঘড়ি ক্লাসে চলে যাও। সাব্বির একা দুই ক্লাস সামলাচ্ছে।

রোজি আর এক মুহূর্ত দেরি করলো না। কাঁধের ব্যাগটা তার চেয়ারের পিঠে বাধিয়ে রেখে ক্লাসে চলে গেলো।

আজ ছাত্র ছাত্রির উপস্তিতি ছিল খুবই কম। ক্লাস ঠিক মতো হলো না। দুই পৃয়ড পরেই স্কুল ছুটি হয়ে গেলো। টিচাররা সবাই লাইব্রেরিতে বসে গল্প করছিল।

এক ফাঁকে সাব্বির রোজিকে বলল, আজ তোমাকে খুব আনমোনা দেখাচ্ছে। ব্যাপার কি বলো তো?

রোজি ঘাড় বাঁকিয়ে তেরছা চোখে সাব্বিরের দিকে তাকালো। খাটো গলায় বলল, তুমি তো সারা জীবন আমার দুখি দুখি চেহারাটাই দেখ। আর কিছুই তো তোমার নজরে পড়ে না।

সাব্বির থতমত খেয়ে উত্তর দিতে গিয়েও থেমে যায়। জড়তা কাটিয়ে পূনরায় শুরু করার আগেই ওপাশ থেকে জবা আপা বলে, রোজি তোমার জন্য একটা সুখবর অছে।

রোজি চকিতে জবা আপার দিকে চোখ ফেরায়। জবা আপা বলে, আরমানের কেসের চার্জসিট দিয়ে দিয়েছে পুলিশ, তা কি তুমি জান?

-না।

-পুলিশ যেভাবে চার্জসিট দিয়েছে তাতে সে রিলিজ পেয়ে যাবে। কারণ, ওর বিরুদ্ধে কোনো তথ্য প্রমান পুলিশ হাজির করতে পারেনি।

-আপনি কোত্থেকে জানলেন?

-আমার সোর্স আছে না। এই শহরে আমি কি হাওয়ায় ভেসে বেড়াই নাকি। তাছাড়া যেহেতু আরমানের কেসটা ড্রিল করছি, সেহেতু সব ধরনের খবর তো আমাকে রাখইে হয়। ইনেসপেক্টর ছোকরা তো তোমাকেও চেনে দেখলাম।

-কার কথা বলছেন। ইনেসপেক্টর জামিল?

-চেন নাকি ওকে?

-চিনবো না কেন, গাজি ভাই তো মেজো ভাইদের সাথে পড়তো। আমাদের বাসায়ও তার যাওয়া আসা ছিল। তাছাড়া গাজি ভাই তো আরমানের সহযোদ্ধা। দুজনে একসাথে মুক্তিযুদ্ধ করেছে।

জবা আপার চোখ ছোট হয়ে যায়। বলো কি, এতকিছু?

রোজি হাসে। জবা আপা তার চোখের তারা ঘুরিয়ে বিশেষ ভঙ্গিমায় বলে, তাইতে ছোকরা ইনেসপেক্টর তোমাদের কথা শুনলেই কেমন যেন ম্যাদামারা হয়ে যায়। এখন তো বুঝতে পারছি, ‘পরোটামে কুছ মিঠাই রহা।’

রোজি হো হো করে হেসে ওঠে। প্রাণ খোলা হাসি। যা তার মাঝে অনেকদিন কেউ দেখেনি। হাসি থামিয়ে বলে, জবা আপা, বয়সে আমি আপনার চেয়ে যেমন ছোট তেমনি রসকেলিতেও একেবারে শিশু।

-মানছ তাহলে?

-না মেনে কি উপায় আছে।

-জেনে খুশি হলাম।

-খুশির খবর আরও একটা আছে।

-কি সেটা?

-আমার কর্তা কাল ফোন করেছিল। ও ভালো আছে।

-তাই নাকি! সত্যিই খুশির খবর। তা এতদিন ফোন করেনি কেন?

-ভয়ে।

-কোথায় আছে?

-তা জানায়নি। সিকরেট।

-থাকগে। বলতে হবে না। কতদিন পর তোমার হাসিমুখ দেখলাম। তাতেই আমার ভালো লাগছে।

হাতের কাজ শেষ করে জবা আপা বেরোবার আগে বলল, তোমরা এখনি বেরোবে, না একটু দেরি করবে? আমার এখন আবার প্রেসক্লাবে যেতে হবে। একটা মিটিং আছে। তোমরা গোছগাছ করে বেরিও। আমি গেলাম।

-আচ্ছা।

জবা আপা বেরিয়ে গেলো। জবা আপা চলে যাওয়ার পরে সাব্বির বলল, এতদিনে বুঝলাম, যারে আমি আপন ভাবি সে তো আমার আপন নয়।

-ভাবনায় যদি ভুল থেকে যায় তাহলে জীবনের জটিল সমীকরণ মিলবে না। বিধায় বেশি বুঝতে যেও না।

সাব্বির আর কথা বলে না। চুপচাপ বসে থাকে। তবে মনের মাঝে জমে ওঠা অভিমানের মেঘ সহসা উড়ে যায় না। রোজি হাতের কাজ শেষ করে বলে, চলো। অভিমানী বালকের মতো আর গোমড়া মুখ করে বসে থাকতে হবে না।

সাব্বির ফোস করে ওঠে। আমি কি সব সময় খামোখা অভিমান করি? তার কোনো ভিত্তি থাকে না? আসলে তুমি তো আমাকে অনেক দূরের মানুষ ভাবো- তুমি বুঝবে কি করে আমার টেনশন-

-আমার বেশি বুঝে কাজ নেই। চলো।

রোজি উঠে দাঁড়ালো। কাঁধে ব্যাগ ফেলে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে এলো। রাস্তায় নামতেই একটা খালি রিকসা পেয়ে গেলো। একলাফে রিকসায় উঠে সাব্বিরের জন্য অপেক্ষা করলো। বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষার পরেও যখন সাব্বির বেরিয়ে এলো না তখন রিকসা চালককে বলল, এই যাও। কলাবাগান।

রিকসা চলতে শুরু করলে রোজি তার ব্যাগ হাতড়ে ইনেসপেক্টর জামিলের কলাবাগানের ঠিকানাটা বের করলো। ১২/৪ কলাবাগান। চোখ বুলিয়ে নিয়ে কাগজের টুকরোটা আবার ব্যাগে রেখে দিলো। বাড়িটা খুঁজে পেতে রোজির বেগ পেতে হলো না।

বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে রোজি একটু ভাবলো। এখন মধ্য-দুপুর। এই দুপুর বেলা না আসলেও পারতো। এই অসময়ে কারো বাসায় ঢোকাটা কি ঠিক হবে? এখন মানুষের খাওয়া দাওয়া করার সময়।

বাসায় ঢুকবে কি ঢুকবে না এই দ্বন্দ্বে যখন সে গেটের বাইরে অযথা কালক্ষেপ করছিল, ঠিক তখনই একটা মটর সাইকেল পেছন থেকে এসে তার পাশে থামলো। রোজি চমকে উঠে পেছনে চেয়ে ফিক করে হেসে ফেলল। গাজি ভাই, আমি আপনার খোঁজেই যাচ্ছিলাম।

-আরে ভাবী! আপনি কষ্ট করে এলেন কেন, ফোন করলে তো আমিই যেতাম।

-আপনি তো আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আপনাকে আর কত জ্বালাতন করবো। তাই নিজেই চলে এলাম।

-আসুন। বাসায় কিন্তু আমার মা ছাড়া আর কেউ নেই।

রোজি হাসে। জামিলের পেছন পেছন বাড়ির ভেতরে ঢোকে। ছোট্ট বাড়ি। পাচিল দিয়ে ঘেরা। তিন কামরার একটা টিন সেড। ভেতরে ঢুকেই রোজি যে মহিলাকে দেখে তার বয়স পয়তাল্লিশের ওপরে হবে না। খুবই সুন্দর চেহারা। তার পোশাক দেখে রোজির সন্ধেহ হলো মহিলা সম্ভবত বিধবা। মহিলাকে কেমন চেনা চেনা লাগলো।

মহিলা রোজির দিকে অপলক চেয়ে ছিল। গাজি পরিচয় করিয়ে দিলো। মা, এ হলো আরমানের বউ।

মহিলার বিস্ময় কেটে গিয়ে স্মিত হাসি ফুটে উঠলো। তাই নাকি! বাহ, বেশ সুন্দর বউ হয়েছে আরমানের। এসো মা।

রোজির বেশ ভালো লাগে এই ভেবে যে, তার স্বামী এবাড়িতে অপাংতেয় নয়। গাজি ভাইয়ের মায়ের মুখ দেখে অন্তত তাই মনে হচ্ছে। রোজি মহিলার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। বলল, আমি কিন্তু জানতাম না যে এবাড়িতে আপনার মতো একটা মা আছে, যে আরমানকে চেনে।

-তাই নাকি! আরমান আমাদের কথা বলেনি তোমাকে?

-আসলে যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ও খুব নাজেহাল অবস্থায় আছে।

-শুনলাম কি সব ঝামেলায় জড়িয়েছে।

-আর বলবেন না। ওর এই হটকারিতার জন্য আমিও খুব কষ্টে আছি।

কথা বলতে বলতে গাজির মা ভাত বাড়ে। এসো মা, আমাদের সাথে দুটো ভাত খাও।

-না খালাম্মা, আপনারা খান। আমাকে এখুনি বাসায় ফিরতে হবে।

-কেন, এত তাড়া কিসের?

-সেই সকাল বেলা ছেলেটাকে পাশের বাসার বৌদির কাছে রেখে এসেছি।

-কেন! এতক্ষণ কোথায় ছিলে?

-আমি একটা স্কুলের টিচার। আজ তো বৃষ্টির কারনে আগেভাগে ছুটি হয়ে গেলো। তাই একটু তাড়াতাড়ি বেরুতে পেরেছি।

-ও মা, তাই নাকি! তুমি তো বেশ লক্ষ্মী মেয়ে গো।

কথায় কথায় সময় পেরিয়ে যায়। ওদের সাথে বসে দুটো ভাতও খেতে হয়। গাজির মা না খাইয়ে ছাড়ে না। মহিলাকে ভীষণ ভালো লাগে রোজির। বেরিয়ে আসার সময় তিনি বারবার বলেন, আবার এসো মা। যখনই সময় পাবে চলে আসবে। একা একা থাকি। মোটেও ভালো লাগে না। গাজি যে চাকরি করে তার তো কোনো ঠিক ঠিকনা নেই। এই আছে তো, এই বেরিয়ে গেলো। ভারি পাজি চাকরি।

রোজি আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করে, আপনি একা কেন? খালুজান?

-ওমা, তুমি দেখছি কিছুই জানো না। তোমার খালুজান যুদ্ধের সময়ে পাক সেনাদের হাতে শহীদ হয়েছেন। কথাটা বলতে গিয়ে ওনার কণ্ঠ ভারি হয়ে এলো।

রোজি থতমত খেয়ে বলল, স্যরি খালাম্মা। আমি জানতাম না।

-স্যরি বলার কি আছে। যুদ্ধ আমাদের কত কিছু কেড়ে নিয়েছে।

-হাঁ। রোজি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আমার শ্বশুর শ্বাশুড়িও তো যুদ্ধের সময়- কথা শেষ করতে পারে না রোজি।

-জানি তো। সবই আমাদের দুর্ভাগ্য মা। খালাম্মা সান্ত্বনা দেয়।

গাজিদের বাসা থেকে ফিরে আসার সময় রোজির বারবার সাব্বিরের কথা মনে পড়ে। বড্ড ইমোশনাল ছেলে। অত অভীমানী হলে কি চলে? আসলে সাব্বির তার কাছে যে কি চায় রোজি ঠিক বুঝে উঠতে পারে না।

রিকসা বাসার সামনে এসে থামে। রোজি রিকসা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে গেটের দিকে তাকাতেই দেখে সাব্বির জয়কে কোলে নিয়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সাব্বিরকে এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রোজির মনটা হঠাৎ খুব ভালো হয়ে যায়। তার গুমট মনের অলিন্দে আনন্দের শীতল বাতাস হুটোপুটি খায়।

রোজি সাব্বিরের সামনে এলে জয় সাব্বিরের কোল থেকে রোজির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাব্বির জিজ্ঞাসা করে, স্কুল থেকে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলি?

-ইনেসপেক্টর জামিলের বাসায়।

-গাজির ওখানে যাবি তা আমাকে তো কিছু বললি না।

-তোমাকে সাথে নিয়েই তো যেতে চেয়েছিলাম। তুমি তো বের হলেই না। রিকসায় তোমার জন্য কতক্ষণ বসে রইলাম।

-তাই নাকি! আমি তো বুঝতেই পারিনি।

-চলো, ভেতরে চলো। আকাশে আবার মেঘ জমেছে। বৃষ্টি নামতে পারে।

-ঠিক বলেছিস। বৃষ্টি নামলে সহজে থামবে বলেও মনে হচ্ছে না। তুই যা। আমি আর ভেতরে যাবো না। আমি বরং বাসায় চলে যাই।

-বাসায় যাবার জন্য যদি এতই তাড়া তাহলে এসেছিলে কেন?

-এমনিই এসেছিলাম। কোনো কারণ ছিল না। ছুটির পর কিছু না বলে চলে এলি। আমিও স্কুল থেকে বেরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যেই হাঁটতে শুরু করেছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে জয়ের কথা মনে পড়লো। অনেকদিন ওকে দেখিনি। ওর মায়াভরা মুখখানা চোখের সামনে ভাসতেই, আমার পথ পরিবর্তিত হয়ে গেলো। বাসায় এসে দেখলাম তুই আসিসনি।

-ভালো করেছ। চলো। ভেতরে চলো।

-আর যেতে ইচ্ছা করছে না।

রোজি লাফিয়ে লাফিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে গ্রীবা বাঁকিয়ে বলল, বড্ড ছেলেমানুষি করিস কিন্তু। কথা কয়টা ছুড়ে দিয়ে রোজি নিজের গতিতে উঠে যায়। সাব্বির ঠায় দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে। উপরে যাবে না ফিরে যাবে।

সাব্বির মাঝে মাঝে নিজেই নিজের মনের গতি প্রকৃতি বুঝতে পারে না। কেন যে তার এমন হয়! রোজি তো তার কাজিন। কাজিন হিসাবে রোজি কখনোই তাকে অযত্ন বা হেলাফেলা করে না। বরং অন্যান্য বোনদের চেয়ে রোজি তাকে বেশি আদর করে। তারপরও রোজির ওপরে কেন তার এত অভিমান? রোজির কথা মনে এলেই কেন যে বুকের ভেতরে অমন হু হু করে জ্বলে।

কি চায় সে রোজির কাছে?

রোজি বিবাহিত। তার স্বামী আছে, সন্তান আছে, সংসার আছে। তার নিজস্ব একটা জগৎ আছে। সেই জগতে সাব্বিরকে নিয়ে তোলাফেলা করার মতো অঢেল জয়গা তো রোজির নেই। তাহলে-

এসব ভাবতে ভাবতেই সাব্বির ওপরে উঠে আসে। রোজি ততক্ষণে কাপড় বদলে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নিয়েছে। ওর পরনের আটপৌরে শাড়ীটা এমন মানিয়েছে যে সাব্বির চোখ ফেরাতে পারে না। রান্নাঘরের দরোজায় উকি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ায় রোজি বলে, ঝুল বারান্দায় চলে যাও। ওখনে চেয়ার দেয়া আছে। আমি চা নিয়ে আসছি।

সাব্বির কোনো জবাব না দিয়ে রোজির নির্দেশমতো ঝুল বারান্দায় গিয়ে বসে। আকাশে আবার মেঘ গাঢ় হতে শুরু করেছে। যে কোনো মুহূর্তে ঝমঝম করে ঝরে পড়বে। সব্বির যেখানে এসে বসেছে, সেখানেই তার পায়ের কাছে রাখা টবে চমৎকার দুটো গোলাপ ফুটেছে। লাল গোলাপ। গাঢ় লাল। সাব্বির মুগ্ধ চোখে গোলাপ দুটোর পানে চেয়ে থাকে।

রোজি ট্রেতে পাউরুটি ডিম টোস্ট, পেয়াজি, আর চায়ের পট সাজিয়ে নিয়ে আসে। টি-টেবিলের ওপরে ট্রেটা নামিয়ে রাখতে রাখতে বলে, আমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছ তো, তাই এই বোনাস। নাও। শুরু কর।

সাব্বির কথার পিঠে কথার যোগান দিতে পারে না। শুধু মিটমিট করে হাসে। রোজি প্লেট এগিয়ে দিতে দিতে বলে, হাসছ কেন?

-কিছু বুঝতে পারছি না।

-কি বুঝতে পারছ না?

-নিজেকে।

-দুষ্টুমি কোরো না। সিরিয়াসলি দুটো কথা শোনো।

সাব্বির গরম পেয়াজি মুখে পুরে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। রোজি তার কথার জের ধরে বলে, একটা বিয়ে করে ফেলো।

-করবো। মেয়ে খুজে পাচ্ছি না।

-যদি বলো, তাহলে মেয়ের খোজ আমি করতে পারি।

-করো।

এরপর সাব্বির আর কথা বলে না। নিরবে চা খায়। আকাশে মেঘ গাঢ় হতে হতে চারিদিক অন্ধকার করে আনে। দুজনই চুপ। সব কথা যেন ফুরিয়ে গেছে। অথচ রোজির বাসায় আসবার আগে সাব্বির মনে মনে কত কথা সাজিয়ে এনেছিল। সাব্বির বরাবরই খেয়াল করেছে রোজির সামনে এলে সে কেমন গুটিয়ে যায়। গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। তার বুকের মাঝে যত কথা হয়, তার অতি সমান্যই সে মুখে প্রকাশ করতে পারে।

রোজি নিরবতা ভঙ্গ করে। পাশাপাশি বসে ছিল দু’জনে। এত কাছে যে সামান্য নড়াচড়াতেই একে অন্যের শরীরে ছোয়া লাগতে পারে। অথচ বর্তমানে এই দূরত্বটুকুই তাদের কাছে হাজার মাইলের ব্যবধান।

আসলে ব্যবধান তো গজ ফুটের পরিমাপে নয়, ব্যবধান তাদের মনে। যা কোনো স্কেলে মাপা যায় না। বিবেকের শাসন থেকে দু’জনের কেউই নিস্কৃতি পায় না। রোজি শুদ্ধচারি নারী। স্বামী ছাড়া তার জীবনে কোনো পুরুষ নেই। কোনো পুরুষের কথা সে ভাবতেও পারে না।

চলবে….

 

 

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising