ডা. ইমাম হোসেন ইকবাল: ইব্নু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মু’আয (ইব্নু জাবাল) (রাঃ)-কে শাসনকর্তা হিসেবে ইয়ামান দেশে পাঠান, তখন বলেছিলেনঃ তুমি আহলে কিতাব লোকদের নিকট যাচ্ছো। সেহেতু প্রথমে তাদের আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিবে। যখন তারা আল্লাহর পরিচয় লাভ করবে, তখন তাদের তুমি বলবে যে, আল্লাহ দিন-রাতে তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিয়েছেন। যখন তারা তা আদায় করতে থাকবে, তখন তাদের জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের ধন-সম্পদ হতে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হবে। যখন তারা এর অনুসরণ করবে তখন তাদের হতে তা গ্রহণ করবে এবং লোকের উত্তম মাল গ্রহণ করা হতে বিরত থাকবে। (সহীহ বুখারী:১৪৫৮)
এই হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি আল্লাহর পরিচয় জানা প্রয়োজন এবং এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ আল্লাহর পরিচয় লাভের পরেই নামাযসহ অন্যান্য ইবাদতের প্রতি আহবান করা হয়েছে। তাই পবিত্র কুরআন মাজীদ থেকেই আল্লাহর পরিচয় লাভের জন্য চেষ্টা করবো। এতেই অফুরন্ত কল্যাণ ও হিদায়াত নিহিত।
অথবা (এদের উদাহরণ হচ্ছে), আসমান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির মতো, এর মাঝে রয়েছে (আবার) অন্ধকার, মেঘের গর্জন ও বিদ্যুতের চমক, বিদ্যুত গর্জন ও মৃত্যুর ভয়ে এরা নিজেদের কানে নিজেদের আংগুল ঢুকিয়ে রাখে, (এরা জানে না) আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের (সকল দিক থেকেই) ঘিরে রেখেছেন।(সূরা বাকারা,আয়াত :১৯)
আল্লাহ্ মশা কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র কোন বস্তুর উপমা দিতে সংকোচ বোধ করেন না। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে তারা জানে যে, নিশ্চয়ই এটা সত্য-যা তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এসেছে। কিন্তু যারা কাফির তারা বলে, আল্লাহ্ কী অভিপ্রায়ে এ উপমা পেশ করেছেন ? এটা দিয়ে অনেককেই তিনি বিভ্রান্ত করেন, আবার বহু লোককে সৎপথে পরিচালিত করেন। বস্তুত তিনি পথ-পরিত্যাগকারীগণ ব্যতীত আর কাউকেও বিভ্রান্ত করেন না- যারা আল্লাহ্ র সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ্ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে আর দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
তোমরা কিরূপে আল্লাহ্কে অস্বীকার কর ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে জীবন্ত করেছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনরায় জীবন্ত করবেন, পরিণামে তাঁর দিকেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।
তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন, তৎপর তিনি আকাশের দিকে মনোসংযোগ করেন এবং একে সপ্তাকাশে বিন্যস্ত করেন; তিনি সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহিত।(সূরা বাকারা,আয়াত :২৬-২৭-২৮-২৯)
যখন তোমরা বলেছিলে, ‘হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করব না’, তখন তোমরা বজ্রাহত হয়েছিলে আর তোমরা নিজেরাই দেখছিলে।(আল বাকারা:৫৫)
যখন তোমরা বলেছিলে, ‘হে মূসা! আমরা একইরকম খাদ্যে কখনও ধৈর্য ধারণ করব না; সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্যে প্রার্থনা কর-তিনি যেন ভ‚মিজাত দ্রব্য শাক-সব্জি, কাঁকুড়, গম, মসুর ও পেঁয়াজ আমাদের জন্যে উৎপাদন করেন।’ মূসা বলল, ‘তোমরা কি উৎকৃষ্টতর বস্তুকে নিকৃষ্টতর বস্তুর সঙ্গে বদল করতে চাও ? তবে কোন নগরে অবতরণ কর। তোমরা যা চাও নিশ্চয়ই তা সেখানে আছে।’ তারা লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যগ্রস্ত হল আর তারা আল্লাহ্ র ক্রোধের পাত্র হল। এটা এইজন্যে যে, তারা আল্লাহ্ র আয়াতকে অস্বীকার করত আর নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। অবাধ্যতা ও সীমালংঘন করার জন্যেই তাদের এই পরিণতি হয়েছিল। (আল বাকারা-৬১)
(হে ঈমানদার লোকেরা, এরপরও) তোমরা কি এই আশা পোষণ করো যে, এরা তোমাদের (সাথে তোমাদের দ্বীনের) জন্যে ঈমান আনবে? এদের একাংশ তো (যুগ যুগ ধরে) আল্লাহর কেতাব শুনে আসছে, অতপর তারা তাকে বিকৃত করছে, অথচ এরা ভালো করেই তা জানে ।(আল বাকারা-৭৫)
তারা কি জানে না যে, যা তারা গোপন রাখে কিংবা ঘোষণা করে নিশ্চিতভাবে আল্লাহ্ তা জানেন ? (আল বাকারা-৭৭)
তাদের নিকট সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও, কিতাবীদের মধ্যে অনেকেই তোমাদের ঈমান আনবার পর ঈর্ষামূলক মনোভাববশত আবার তোমাদেরকে কাফিররূপে ফিরে পাওয়ার আকাক্সক্ষা করে। অতএব তোমরা ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর, যতক্ষণ না আল্লাহ্ কোন নির্দেশ দেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (আল বাকারা-১০৯)
এবং সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আমি কা‘বাগৃহকে মানব জাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল করেছিলাম আর বলেছিলাম, ‘তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর।’ আর ইব্রাহীম ও ইস্মাঈলকে তাওয়াফকারী, ই‘তিকাফকারী, রুক‚‘ ও সিজ্দাকারীদের জন্যে আমার গৃহকে পবিত্র রাখতে আদেশ দিয়েছিলাম। (আল বাকারা-১২৫)
নির্বোধ লোকেরা অচিরেই বলবে যে, তারা এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করে আসছিল তা হতে কিসে তাদেরকে ফিরিয়ে দিল? বল, ‘পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহ্ র ই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।’
এইভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি, যাতে তোমরা মানব জাতির জন্যে সাক্ষীস্বরূপ আর রাসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষীস্বরূপ হবে। তুমি এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করছিলে একে আমি এ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যাতে জানতে পারি কে রাসূলের অনুসরণ করে আর কে ফিরে যায়। আল্লাহ্ যাদের সৎপথে পরিচালিত করেছেন তারা ব্যতীত অপরের নিকট তা নিশ্চয়ই কঠিন। আল্লাহ্ এইরূপ নন যে, তোমাদের ঈমানকে ব্যর্থ করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু। (আল বাকারা-১৪২-৪৩)
নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনে, যা মানুষের হিত সাধন করে তাসহ সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহে, আল্লাহ্ আকাশ হতে যে বারিবর্ষণ এর মাধ্যমে ধরিত্রীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে আর তার মধ্যে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তারণে, বায়ুর দিক পরিবর্তনে, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানবান জাতির জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা আল বাকারা-১৬৪)
এ (হতাশাগ্রস্ত) অনুসারীরা সেদিন বলবে, আবার যদি একবার আমাদের জন্যে (পৃথিবীতে) ফিরে যাবার (সুযোগ) থাকতো, তাহলে আজ যেমনি করে (তারা) আমাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে, আমরা (সেখানে গিয়ে) তাদের সাথে (যাবতীয়) সম্পর্কচ্ছেদ করে আসতাম, এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তাদের সমগ্র জীবনের কর্মকান্ডগুলো তাদের সামনে একরাশ (লজ্জা ও) আক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরবেন; তাদের জন্যে যে জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে আছে, এরা (কখনো সেই) জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। (আল-বাক্বারা:১৬৭)
তাদের যখন বলা হয়, আল্লাহ্ তায়ালা যা কিছু নাযিল করেছেন তোমরা তা মেনে চলো, তারা বলে, আমরা তো শুধু সে পথেরই অনুসরণ করবো যে পথের ওপর আমরা আমাদের বাপ দাদাদের পেয়েছি; তাদের বাপ-দাদারা যদি (এ ব্যাপারে) কোনো জ্ঞান বুদ্ধির পরিচয় নাও দিয়ে থাকে, কিংবা তারা যদি হেদায়াত নাও পেয়ে থাকে (তবুও কি তারা তাদের অনুসরণ করবে)? (আল-বাক্বারা:১৭০)
যে ব্যক্তি সে ওসিয়ত শোনার পর তাতে কোনও রদ-বদল করবে, তার গুনাহ তাদের উপরই বর্তাবে যারা তাতে রদ-বদল করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ (সবকিছু) শোনেন ও জানেন।(আল-বাক্বারা:১৮১)
রামাযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। এবং কেউ পীড়িত থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে যা সহজ তা চান আর যা তোমাদের জন্যে কষ্টকর তা চান না এজন্যে যে, তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে আর তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করানোর কারণে তোমরা আল্লাহ্ র মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। (আল-বাক্বারা:১৮৫)
রোযার (মাসের) রাতের. বেলায় তোমাদের স্ত্রীদের কাছে যৌন মিলনের জন্যে যাওয়া তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে; (কারণ, তোমাদের) নারীরা যেমনি তোমাদের জন্যে পোশাক (স্বরূপ, ঠিক) তোমরাও তাদের জন্যে পোশাক (সমতুল্য); আল্লাহ তায়ালা এটা জানেন, (রোযার মাসে রাতের বেলায় স্ত্রী সহবাসের ব্যাপারে) তোমরা (নানা ধরনের) আত্মপ্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছিলে, তাই তিনি (তোমাদের ওপর থেকে কড়াকড়ি শিথিল করে) তোমাদের ওপর দয়া করলেন এবং তোমাদের মাফ করে দিলেন, এখন তোমরা চাইলে তাদের সাথে সহবাস করতে পারো এবং (এ ব্যাপারে) আল্লাহ পাক তোমাদের জন্যে যা (বিধি বিধান কিংবা সন্তান সন্তুতি) লিখে রেখেছেন তা সন্ধান করো। (রোযার সময় পানাহারের ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে), তোমরা পানাহার অব্যাহত রাখতে পারো যতোক্ষণ পর্যন্ত রাতের অন্ধকার রেখার ভেতর থেকে ভোরের শুভ্র আলোক রেখা তোমাদের জন্যে পরিষ্কার প্রতিভাত না হয়, অতপর তোমরা রাতের আগমন পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করে নাও, (তবে) মাসজিদে যখন তোমরা এতেকাফ অবস্থায় থাকবে তখন নারী সম্ভোগ থেকে বিরত থেকো; এই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত সীমারেখা, অতএব তোমরা কখনো এর কাছেও যেয়ো না; এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তার যাবতীয় নিদর্শন মানুষদের জন্যে বলে দিয়েছেন, যাতে করে তারা (এ আলোকে) আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করতে পারে। (আল-বাক্বারা:১৮৭)
আল্লাহ তায়ালার (সন্তুষ্টির) জন্যে হজ্জ ও ওমরা সম্পন্ন করো; (পথে) যদি তোমাদের কোথাও আটকে দেয়া হয় তাহলে সে স্থানেই কোরবানীর জন্যে যা কিছু সহজভাবে (হাতের কাছে) পাওয়া যায় তা দিয়েই কোরবানী আদায় করে নাও, (তবে) কোরবানীর পশু তার নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে পৌঁছার আগ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের মাথা মুন্ডন করো না; যদি তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে, অথবা যদি তার মাথায় কোনো রোগ থাকে (যে কারণে আগেই তার মাথা মুন্ডন করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে), তাহলে সে যেন এর বিনিময় (ফিদিয়া আদায় করে, এবং তা) হচ্ছে কিছু রোযা (রাখা) অথবা অর্থ দান করা, কিংবা কোরবানী আদায় করা, অতপর তোমরা যখন নিরাপদ হয়ে যাবে তখন তোমাদের কেউ যদি এক সাথে হজ্জ ও ওমরা আদায় করতে চায়, তার উচিত (তার জন্যে) যা সহজলভ্য তা দিয়ে কোরবানী আদায় করা, যদি কোরবানী করার মতো কোনো পশু সে না পায় (তাহলে) সে যেন হজ্জের সময়কালে তিনটি এবং তোমরা যখন বাড়ি ফিরে আসবে তখন সাতটি- (সর্বমোট) পূর্ণ দশটি রোযা রাখবে, এই (সুবিধা)-টুকু শুধু তাদের জন্যে, যাদের পরিবার পরিজন আল্লাহর ঘরের আশেপাশে বর্তমান নেই; তোমরা আল্লাহকেই ভয় করো, জেনে রাখো, আল্লাহ্ তায়ালা কঠোর আযাব প্রদানকারী বটে।
হজ্জের মাসসমূহ (একান্ত) সুপরিচিত, সে সময়গুলোর মধ্যে যে ব্যক্তি হজ্জ (আদায়) করার মনস্থ করবে (সে যেন জেনে রাখে), হজ্জের ভেতর (কোনো) যৌনসম্ভোগ নেই, নেই কোনো অশ্লীল গালিগালাজ ও ঝগড়াঝাটি, আর যতো ভালো কাজ তোমরা আদায় করো আল্লাহ তায়ালা (অবশ্যই) তা জানেন; (হজ্জের নিয়ত করলে) এর জন্যে তোমরা পাথেয় যোগাড় করে নেবে, যদিও আল্লাহর ভয়টাই হচ্ছে (মানুষের) সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয়, অতএব হে. বুদ্ধিমান মানুষরা, তোমরা আমাকেই ভয় করো ৷ (আল-বাক্বারা:১৯৬-১৯৭)
সুস্পষ্ট নিদর্শন তোমাদের নিকট আসার পর যদি তোমাদের পদস্খলন ঘটে তবে জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। (আল-বাক্বারা:২০৯)
বনী ইস্রাঈলকে জিজ্ঞাসা কর, আমি তাদেরকে কত স্পষ্ট নিদর্শন প্রদান করেছি! আল্লাহ্ র অনুগ্রহ আসার পর কেউ এটার পরিবর্তন করলে আল্লাহ্ তো শাস্তিদানে কঠোর।
যারা কুফরী করে তাদের নিকট পার্থিব জীবন সুশোভিত করা হয়েছে, তারা মু’মিনদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে থাকে। আর যারা তাক্ওয়া অবলম্বন করে কিয়ামতের দিন তারা তাদের ঊর্ধ্বে থাকবে। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিযিক দান করেন।
সমস্ত মানুষ ছিল একই উম্মত। এরপর আল্লাহ্ নবীগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেন। মানুষেরা যে বিষয়ে মতভেদ করত তাদের মধ্যে সে বিষয়ে মীমাংসার জন্যে তিনি তাদের সঙ্গে সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেন এবং যাদেরকে তা দেওয়া হয়েছিল, স্পষ্ট নিদর্শন তাদের নিকট আসার পরে, তারা শুধু পরস্পর বিদ্বেষবশত সেই বিষয়ে বিরোধিতা করত। যারা বিশ্বাস করে, তারা যে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করত, আল্লাহ্ তাদেরকে সে বিষয়ে নিজ অনুগ্রহে সত্যপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। (আল-বাক্বারা:২১১-২১২-২১৩)
তোমাদের মধ্যে যাদের মৃত্যু আসন্ন এবং স্ত্রী রেখে যায় তারা যেন তাদের স্ত্রীদেরকে গৃহ হতে বের না করে তাদের এক বৎসরের ভরণ-পোষণের ওসিয়াত করে। কিন্তু যদি তারা বের হয়ে যায় তবে বিধিমত নিজেদের জন্যে তারা যা করবে তাতে তোমাদের কোন গুনাহ নেই। আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (আল-বাক্বারা:২৪০)
তুমি কি তাদেরকে দেখ নাই যারা মৃত্যুভয়ে হাজারে হাজারে স্বীয় আবাসভূমি পরিত্যাগ করেছিল ? এরপর আল্লাহ্ তাদেরকে বলেছিলেন, ‘তোমাদের মৃত্যু হোক।’ তারপর আল্লাহ্ তাদের জীবিত করেছিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (আল-বাক্বারা:২৪৩)
আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্ত তাঁরই। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত। যা তিনি ইচ্ছা করেন তা ব্যাতীত তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর ‘কুরসী’ আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত; এদের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না; আর তিনি মহান, শ্রেষ্ঠ। (আল-বাক্বারা:২৫৫)
তুমি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখ নাই, যে ইব্রাহীমের সঙ্গে তার প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল, যেহেতু আল্লাহ্ তাকে কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন। যখন ইব্রাহীম বলল, ‘তিনি আমার প্রতিপালক যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান’, সে বলল, ‘আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই।’ ইব্রাহীম বলল, ‘আল্লাহ্ সূর্যকে পূর্ব দিক হতে উদিত করান, তুমি একে পশ্চিম দিক হতে উদিত করাও তো।’ এরপর যে কুফরী করেছিল সে হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আল্লাহ্ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
বা তুমি কি সেই ব্যক্তিকে দেখ নাই, যে এমন এক নগরে উপনীত হয়েছিল যা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। সে বলল, ‘মৃত্যুর পর কিরূপে আল্লাহ্ একে জীবিত করবেন ?’ তারপর আল্লাহ্ তাকে একশত বৎসর মৃত রাখলেন। পরে তাকে পুনর্জীবিত করলেন। আল্লাহ্ বললেন, ‘তুমি কত কাল অবস্থান করলে ?’ সে বলল, ‘এক দিন বা এক দিনেরও কিছু কম অবস্থান করেছি।’ তিনি বললেন, ‘না, বরং তুমি একশত বৎসর অবস্থান করেছ। তোমার খাদ্যসামগ্রী ও পানীয় বস্তুর প্রতি লক্ষ্য কর, এটা অবিকৃত রয়েছে এবং তোমার গর্দভটির প্রতি লক্ষ্য কর, কারণ তোমাকে মানবজাতির জন্যে নিদর্শনস্বরূপ করব। আর অস্থিগুলির প্রতি লক্ষ্য কর; কিভাবে সেগুলিকে সংযোজিত করি এবং গোশত দিয়ে ঢেকে দেই।’ যখন এটা তার নিকট স্পষ্ট হল তখন সে বলে উঠল, ‘আমি জানি যে, আল্লাহ্ নিশ্চয়ই সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’
যখন ইব্রাহীম বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে তুমি মৃতকে জীবিত কর আমাকে দেখাও।’ তিনি বললেন, ‘তবে কি তুমি বিশ্বাস কর না ?’ সে বলল, ‘কেন করব না, তবে এটা কেবল আমার চিত্ত প্রশান্তির জন্যে।’ তিনি বললেন, ‘তবে চারটি পাখি নাও এবং এদেরকে তোমার বশীভূত করে নাও। তারপর তাদের এক এক অংশ এক এক পাহাড়ে স্থাপন কর। এরপর এদেরকে ডাক দাও, এরা দ্রুতগতিতে তোমার নিকট আসবে। জেনে রাখ, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (আল-বাক্বারা:২৫৮-২৫৯-২৬০)
হে ঈমানদাররা, তোমরা (উপকারের) খোঁটা দিয়ে এবং (অনুগৃহীত ব্যক্তিকে) কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান সদকা বরবাদ করে দিয়ো না- ঠিক সেই (হতভাগ্য) ব্যক্তির মতো, যে শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশেই দান করে, সে আল্লাহ তায়ালা ও পরকালের ওপর বিশ্বাস করে না; তার (দানের) উদাহরণ হচ্ছে, যেন একটি মসৃণ শিলাখন্ডের ওপর কিছু মাটি(-র আস্তরণ), সেখানে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হলো, অতপর পাথর শক্ত হয়েই পড়ে থাকলো । (দান খয়রাত করেও) তারা (মূলত) এই অর্জনের ওপর থেকে কিছুই, করতে পারলো না, আর যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না, আল্লাহ্ তায়ালা তাদের কখনো সঠিক পথ দেখান না।
(অপরদিকে) যারা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যে এবং নিজেদের মানসিক অবস্থা (আল্লাহর পথে) সুদৃঢ় রাখার জন্যে নিজেদের ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ হচ্ছে, যেন তা কোনো উঁচু পাহাড়ের উপত্যকায় একটি (সুসজ্জিত) ফসলের বাগান, যদি সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় তাহলে ফসলের পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়, আর প্রবল বৃষ্টিপাত না হলেও শিশির বিন্দুগুলোই (ফসলের জন্য) যথেষ্ট হয়, আল্লাহ তায়ালা ভালো করেই পর্যবেক্ষণ করেন তোমরা কে কি কাজ করো। তোমাদের কেউ কি চায় যে, তার খেজুর ও আঙুরের একটি বাগান থাকে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং যাতে সর্বপ্রকার ফলমূল আছে, যখন সে ব্যক্তি বার্ধক্যে উপনীত হয় এবং তার সন্তান-সন্ততি দুর্বল, এরপর তার ওপর এক অগ্নিক্ষরা ঘূর্ণিঝড় আপতিত হয় ও এটা জ্বলিয়া যায় ? এইভাবে আল্লাহ্ তাঁর নিদর্শন তোমাদের জন্যে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার। (আল-বাক্বারা:২৬৪-২৬৫-২৬৬)
তাদের সৎপথ গ্রহণের দায়িত্ব তোমার নয় ; বরং আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর তা তোমাদের নিজেদের জন্যে আর তোমরা তো শুধু আল্লাহ্ র সন্তুষ্টি লাভার্থেই ব্যয় করে থাক। যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর তার পুরস্কার তোমাদেরকে পুরাপুরিভাবে প্রদান করা হবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না।(আল-বাক্বারা:২৭২)
দান সদকা তো (তোমাদের মাঝে এমন) কিছু গরীর মানুষের জন্যে, যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত, তারা (নিজেদের জন্যে) যমীনের বুকে চেষ্টা সাধনা করতে পারে না, আত্মসম্মানবোধের কারণে কিছু চায় না বলে অজ্ঞ (মুর্খ) লোকেরা এদের মনে করে এরা (বুঝি আসলেই) সচ্ছল, কিন্তু তুমি এদের (বাহ্যিক) চেহারা দেখেই এদের (সঠিক অবস্থা) বুঝে নিতে পারো, এরা মানুষদের কাছ থেকে কাকুতি মিনতি করে ভিক্ষা করতে পারে না; তোমরা যা কিছুই খরচ করবে আল্লাহ তায়ালা তার (যথার্থ) বিনিময় দেবেন, কারণ তিনি সব কিছুই দেখেন ।(আল-বাক্বারা:২৭৩)
হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সুদের বকেয়া যা আছে তা ছেড়ে দাও যদি তোমরা মু’মিন হও।
যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। এতে তোমরা অত্যাচার করবে না এবং অত্যাচারিতও হবে না। (আল-বাক্বারা:২৭৭-২৭৯)
তোমরা সেই দিনকে ভয় কর যে দিন তোমরা আল্লাহ্ র দিকে ফিরে আসবে। এরপর প্রত্যেককে তার কর্মের ফল পুরাপুরি প্রদান করা হবে, আর তাদের প্রতি কোনরূপ অন্যায় করা হবে না।
(আল-বাক্বারা:২৭৩)