728 x 90

১৪ বছর পর মাতৃভূমিতে, অভিজ্ঞতা- ১

এম,এ ইউসুফ শামীম: ফ্যাসিস্ট হাসিনার পালানোর পর ৬ নভেম্বর ২০২৪ চায়না এয়ারওয়েজে রাত আনুমানিক ৯ টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করি । অনেক বুক ভরা আশা, স্বপ্ন, প্ল্যান নিয়ে। ইমিগ্রেশনে যাবার পর একজন কম বয়সী অফিসার জিজ্ঞেস করেন -স্যারের বাংলাদেশী পাসপোর্ট কোথায় ? আমি বলি -আমি ১৪ বছর পর দেশে এসেছি , বাংলাশের পাসপোর্টের সর্বোচ্চ

এম,এ ইউসুফ শামীম: ফ্যাসিস্ট হাসিনার পালানোর পর ৬ নভেম্বর ২০২৪ চায়না এয়ারওয়েজে রাত আনুমানিক ৯ টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করি । অনেক বুক ভরা আশা, স্বপ্ন, প্ল্যান নিয়ে। ইমিগ্রেশনে যাবার পর একজন কম বয়সী অফিসার জিজ্ঞেস করেন -স্যারের বাংলাদেশী পাসপোর্ট কোথায় ? আমি বলি -আমি ১৪ বছর পর দেশে এসেছি , বাংলাশের পাসপোর্টের সর্বোচ্চ সময়সীমা কতদিন ? তিনি বললেন-১০ বছর স্যার। আমি বললাম -এ জন্য ওটা অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্টের সাথে নিয়ে আসিনি, আর ২টি পাসপোর্ট একসাথে বহন করা কি বৈধ? তিনি বললেন- না স্যার। তারপর আবার প্রশ্ন -স্যারের নামে কোনো মামলা আছে ? আমি বললাম -না , কিসের মামলা ? কারণ তখনও আমি জানিনা, আমার জন্য বিরাট চমক অপেক্ষা করছে। তিনি বললেন-আমার কম্পিউটারে কি যেনো একটি কোড দেখাচ্ছে -দূরের আরেকটি ডেস্কের দিকে আঙুল তুলে দেখালেন  -ওই বড় কম্পিউটারে চলেন স্যার, ওখানে গেলেই বুঝা যাবে। আমি বললাম -বড় কম্পিউটার মানে কি ? আমি কোথাও যাবোনা, যা করার এখানেই করেন। আমি এখানে দাঁড়ালাম -আপনি চেক করে আমাকে জানান। অফিসার আমার পাসপোর্ট নিয়ে তার সুপারভাইজারের টেবিলে আমার পাসপোর্ট দিয়ে কি যেন একটি সাংকেতিক কোড বললেন। তখন ওই কাউন্টার থেকে আমাকে ডেকে বললেন -আপনার নামে ডিজিটাল এক্ট এ মামলা আছে। আমি বললাম-আমি মামলা সম্পর্কে অবহিত নই। মামলার অভিযোগ বা চার্জশিট কোথায় ? তিনি বললেন-আপনি আমার সাথে আমাদের বসের কক্ষে আসুন, সেখান থেকে বিস্তারিত জানা যাবে। উপরে তাদের আরেকটি বিশেষ অফিসে নিয়ে গেলেন। সেখানে কামাল নামে এক ইঁচড়ে পাকা হাঁটুর বয়সী অফিসারের কাছে আমার পাসপোর্ট দিয়ে বলা হয় -উনি আপনাকে বিস্তারিত জানাবেন। কামাল আসলে কিছুই করেনি, সে বসে বসে ব্যস্ততার ভান করে বিভিন্ন জায়গায় ফোন চালাচালি করছিলো। ফিসফিস করে আমার কথাও কাকে যেন বলছিলো। আমি অনেকবার তাকে বলছিলাম -আমার ব্যাপারটি আর কত দেরি, আমাকে কি করতে হবে ? সে আমাকে তেমন কোনো জবাব না দিয়ে শুধু বলেন- আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। অনেকবার জিজ্ঞেস করেও একই উত্তর পেয়ে এবার জিজ্ঞেস করলাম -আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছেন ভুয়া -মিথ্যা -হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে। মামলার কোনো কাগজ দেখাতে পারবেন ?

 

আওয়ামীমুখী কামাল বলেন-আপনি আরো অপেক্ষা করতে হবে। আমি বললাম-কতক্ষণ ? সে কোনো জবাব দেন না। এক পর্যায়ে মনে হলো -আমার মেজাজ খারাপ হলে চলবেনা ,ঠান্ডা মাথায় অভিশপ্ত আওয়ামী শয়তানগুলোকে হ্যান্ডেল করতে হবে। রেগে গেলাম তো হেরে গেলাম -নেতার এ বিশেষ উক্তি মনে পরে গেল। কত দেরি হবে জিজ্ঞেস করায় সে আমাকে এয়ারপোর্ট পাসপোর্ট সুপারিন্টেন্ডের অফিসে নিয়ে গেল। তিনিই হলেন ওই শিফটের প্রধান। কমবয়সী কাঁচা কালো সুন্দর দাঁড়ি টুপি পরিহিত অফিসারের হাতে আমাকে হ্যান্ডওভার করা হলো। তিনি সব শুনে আবারো আওয়ামীমুখী কামালকে ডেকে বললেন -আমার দিকে ইশারা দিয়ে বললেন- যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব উনাকে বাসায় যাবার ব্যবস্থা করেন। আমাকে একটি সোফায় বসার ইঙ্গিত দিয়ে চা নাকি পানি পান করবো -জিজ্ঞেস করলেন। আমি ভদ্রভাবে প্রত্যাখ্যান করলাম। অনেকক্ষণ পর তাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম-সিআইডিতে আমার নামে মামলা আছে। সিআইডির ক্লিয়ারেন্স ছাড়া তারা আমাকে ছাড়তে পারবেন না। তারা সিআইডিতে ফোন করেছেন যে কোন একজন অফিসার এসে জানাবেন , তারপর আমার বিষয় নাকি সিদ্ধান্ত হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম -আপনারা এ ধরনের হয়রানিমূলক ভূয়া মামলায় আমাকে কেন বসিয়ে রেখেছেন ? উনি বলেন- আমরা কিছুই করতে পারবোনা, যতক্ষণ সিআইডি থেকে কেউ না আসবে -আমরা আপনাকে যেতে দিতে পারবোনা।

 

অনেক ধরনের বহির্গমনের যাত্রীদেরকে ধরে ধরে ওই অফিসারের কাছে নিয়ে গেল। বিভিন্ন রকম যাত্রীকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে যাচাই বাছাই করে কাউকে যাবার অনুমতি দিচ্ছেন , কাউকে অনুমতি না দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আমি বললাম -এভাবে আপনাকে প্রতিরাতেই মেলা বসাতে হয় ? অফিসার মুচকি হেসে বললেন -জি স্যার।

 

অনেক অপেক্ষা করে বিমানবন্দরের মসজিদে এশার নামাজ আদায় করলাম। নামাজ থেকে ফিরে আবার জিজ্ঞেস করলাম -আর কতক্ষণ ? ওদিকে বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষারত আমার আত্মীয়-স্বজন সীমাহীন চিন্তায় আমাকে বারবার ফোন দিয়ে আমার পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করছিলো। এক পর্যায়ে রাত আনুমানিক ১ টার দিকে সিআইডির এক লোক আসেন। বিশালদেহী লোকটির মুখে মাস্ক -এসেই বলে : অস্ট্রেলিয়ার আসামি কোথায় ? তাকে নিতে এসেছি। তখন সুপারিন্টেন্ড বলেন – দেখুন, তিনি কোনো আসামি নয়, তিনি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী একজন সাংবাদিক। সিআইডির ওই সিপাহী বললেন-আমাদের খাতায় তিনি আসামি। তখন আমি সোফা থেকে উঠে ওই সিআইডির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম। আপনি আসামি বলতে কি বুঝাচ্ছেন ? কাকে আসামি বলছেন, কেন বলছেন ? আসামির অর্থ কি বুঝেন ? ব্যাস, ওই সিআইডির মাথা গরম হয়ে যায়।  তিনি বললেন-এতো পাকনাকি কইরেন না। মাহমুদুর রহমানকেও আমরা আটকিয়েছিলাম। আমাদের এখতিয়ার ছাড়া আপনি বিমানবন্দর থেকে বের হতে পারবেন না। সকালে আমাদের স্যারেরা এসে আপনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন-আপনাকে কি আমাদের হেড কোয়ার্টারে, নাকি আদালতে অথবা কারাগারে নেয়া হবে। তখন আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করলাম-আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেখান। মামলার নথি কোথায় ? তিনি কোনো উত্তর দেননি। আমাকে বলেন-গরম দেখাইয়া কোনো লাভ হবে না। সকাল পর্যন্ত বসে থাকেন। এতক্ষণে ঘটনা কিছুটা পরিষ্কার হলো। তখন আমার কেস নাম্বার -১৫ এবং রামপুরা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান। তখন বুঝতে পারলাম, সিডনিতে স্বৈরাচারী হাসিনার বিরুদ্ধে বিশাল আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং বিগত ১৬ বছর সুপ্রভাত সিডনিতে অনবরত আওয়ামী লীগের হত্যা, দুর্নীতি, গুম খুনের বিরুদ্ধে একমাত্র সোচ্চার কণ্ঠস্বর ছিলাম  -যার ফসল আজকের এ মামলা।

 

অতঃপর, একটি কমন মেসেজ লিখে গোটা বিশ্বের পরিচিত নেতা, বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয় স্বজনদেরকে অবহিত করলাম আমার অবস্থা। ইউকে থেকে জনাব তারেক রহমান সাহেবের বিশেষ প্রতিনিধি আমার সাথে যোগাযোগ করেন। ইতোমধ্যে আমার মোবাইলের ব্যাটারি প্রায় শেষ। পুরো বিমানবন্দর ঘুরেও ইউএসবি চার্জার কোথাও পেলাম না। কোনো দোকানেও বিক্রি করে না। কেউ এর গুরুত্বই বোঝেনা, যার ফলশ্রুতিতে কেউ দোকানে রাখেনা। প্রবাসী লাউঞ্জে গেলাম, সেখানেও নজরে আসলো না। নিজের উপর ধিক্কার আসলো কেন চার্জার নিজের সাথে রাখিনি। যাইহোক এক যুবককে অনেক অনেক অনুরোধ করে পাওয়ার বেঙ্কে চার্জ দিলাম, মাত্র ২০% দিয়ে আবার যোগাযোগ শুরু করলাম। ডক্টর কনক সারওয়ারের সাথে যখন লাইভে যাই তখন মাত্র ১২% ব্যাটারী চার্জ থাকে। তার সাথে কথা বলার মাঝেই লাইন কেটে যায় আমার ব্যাটারীর স্বল্পতার কারণে। হঠাৎ করে দেয়া সেই সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তার মেসেজ মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। আমার মোবাইল ইমিগ্রেশন অফিসারের কক্ষে চার্জ দিয়ে চলে যাই ফজর নামাজ পড়তে বহির্গমন যাত্রীদের জন্য মসজিদে। ফজর শেষে ফোন খুলে দেখি গোটা বিশ্ব থেকে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, আত্মীয়, বন্ধু বান্ধবদের মেসেজ , মিস কল। আমার সে বিপদে প্রকৃত বন্ধু আমি দেখেছি।

 

সিডনি থেকে আমার এলাকার মেয়র আমার অবস্থা জানার জন্য মেসেজ দিয়েছে । তিনি অতি গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন এবং ইমিগ্রেশন মিনিষ্টারকে অবহিত করেন। ইমিগ্রেশন মিনিষ্টার সরাসরি প্রফেসর ড. ইউনুসকে আমার ব্যাপারে জানান। যেহেতু প্রফেসর ইউনুস সাহেব আমাকে ব্যক্তিগতভাবে জানেন, তাই তিনি আশ্বাস দেন, দ্রুত আমাকে বাসায় ফেরার ব্যবস্থা তিনি করছেন। তাঁর পিএস যোগাযোগ করেন  পুলিশের আইজি ও ৪জন  ডিআইজির সাথে। তারা নিশ্চিত করেন কিছুক্ষণের ভিতর আমাকে বাসায় পৌঁছে  দেবেন।

 

ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন জনাব তারেক রহমান আমার ব্যাপারে খোঁজ নেন। তারেক সাহেবের বিশেষ প্রতিনিধি আমাকে বললেন -আমি এতক্ষণ তারেক সাহেবের সাথেই ছিলাম, আপনাকে অনেক চেষ্টা করেছি, পাইনি। আমি আবারো ব্যাটারী শেষ বলে দুঃখ প্রকাশ করলাম। উনি বললেন-আপনি একটি বিশেষ অপরচুনিটি মিস করেছেন ভাইয়া। যাহোক, আমার বিষয়টি দেখ ভালের জন্য তারেক সাহেব তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রতি আধ ঘণ্টা অন্তর তিনি খোঁজ নিচ্ছিলেন -আমার সাথে কেউ বেয়াদবি করেছে কিনা, তাহলে তার নাম বা ছবি পাঠাতে বললেন। আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা ইত্যাদি। তিনিও পুলিশের আইজিকে ফোন করেছেন। প্রফেসর ইউনুস সাহেবের পিএসকে ফোন করেছেন। আমাকে বার বার অনুরোধ করেছেন -কর্তব্বরত হাই অফিসিয়ালকে ফোন দিতে -তিনি কথা বলবেন। বিমানবন্দরে কেউ দুর্ব্যবহার করেছে কিনা, কোনো কষ্ট হচ্ছে কিনা ইত্যাদি।

সকাল বেলা শিফট পরিবর্তন, নতুন সুপারিন্টেন্ডেন্ট আসলেন, তিনিও কম বয়সী ক্লিন সেভড। অনেক অনেক  খোশ মেজাজে আমাকে বরন করে নিলেন। চা কফি পানি অফার করলেন। ডক্টর কনক সারওয়ারের চ্যানেলে আমার সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তা দেখে তার উপর মহলকে ফোন দিয়ে ফিস ফিস করে জানাচ্ছেন -স্যার, সর্বনাশ হয়ে গেছে। উনার এটা বিশ্ব মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ ডক্টর কনক সারোয়ারের মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। তাৎক্ষণিক মুখমণ্ডলে পরিবর্তন হতে দেখা গেল।

 

এনএসআই এর ডেপুটি ডাইরেক্টর ঢুকলেন সকাল প্রায় ৭ টার  দিকে। তাকে দেখেই চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে সালাম দিলেন। এনএসআই চৌকস অফিসার আমাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-উনার সমস্যা কি?  তাকে আটকিয়ে রেখেছেন কেন ? তখন সুপারিন্টেন্ডেন্ট জানান – আমাকে আঙুল দিয়ে ইশারা দিয়ে বলেন-তার নামে  সিআইডিতে মামলা আছে। তখন এনএস আইর অফিসার ধমকের সুরে  বললেন- ” রাখেন আপনার সিআইডির মামলা। কোথায় সিআইডি ? ওই সমস্ত হয়রানিমূলক মামলায় আপনারা একজন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিককে সারারাত আটকিয়ে রাখতে পারেননা। সিআইডির কে আছে, আমার সামনে নিয়ে আসেন।” তখন এসবির ওই শিফটের প্রধান সুপারিন্টেন্ডেন্ট তার উপরের বসকে বলছেন, স্যার এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকের জন্য তিনজন ডিআইজি ফোন করেছেন আর এনএসআইর ডেপুটি ডাইরেক্টর (ডিডি) আমার সামনে আছেন, তিনি নাকি শামীম সাহেবকে নিতে এসেছেন। একপর্যায়ে এনএসআইর ডিডি আমাকে বললেন -আপনি তৈরি হন, আপনাকে বাসায় পৌছিয়ে দেবো। আমি তার পরিচয় জিজ্ঞেস করে জেনে নিলাম। ইতোমধ্যে, ইমিগ্রেশনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট আমাকে নাস্তা না খাইয়ে কোনোভাবে ছাড়বেন না বলে জানালেন। নিজের পকেট থেকে টাকা বের করে দিলেন জুনিয়র অফিসারকে নাস্তা নিয়ে আসার জন্য। নাস্তার পর চা না পান করে যেতে দিবেন না। চা নাস্তা সব শেষ করে এবার বাসায় ফেরার পালা।

অতঃপর ইমিগ্রেশনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও এনএসআইর ডিডি আমাকে নিয়ে নিচে নামলেন। নিচে যাবার সাথে সাথে সমগ্র ইমিগ্রেশন অফিসার একযোগে দাঁড়িয়ে তাদের উপরস্থ বসকে সম্মান দেখালেন। আমার ব্ল্যাকলিস্টেড নাম কম্পিউটার থেকে সরানো যাচ্ছিলোনা, কারণ ওটা সিআইডির হেড অফিস থেকে লক করা আছে। তখন এসবি সুপারিন্টেন্ডেন্ট রেডিওতে আইটিতে কর্মরত অফিসারদেরকে ডাকলেন। বহুক্ষণ কম্পিউটার অপারেটিং করে জানালেন -স্যার ক্ষণিকের জন্য ওই বার উঠবে কিন্ত ২৪ ঘণ্টায় আবার ওটা ফেরত আসবে। তখন বাংলাদেশের নৌপথ, বিমান, স্থলপথ  বা কোন বর্ডার দিয়ে তিনি বের হতে পারবেন না। ক্ষণিকের জন্য ওই বার উঠাতে পারি -পরে সিআইডির হেড অফিসে যেয়ে ওটা  উঠাতে হবে।

আমাকে বিদায় দিতে যেয়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চের সিনিয়র ওই অফিসার অনেক বিনয়ের সাথে ক্ষমা চাইলেন, সারারাত বসিয়ে রাখার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। তার ক্ষমা আমি সাথে সাথে গ্রহণ করে পালটা বিনয়ের সাথে অস্ট্রেলিয়া ঘুরে যাবার আমন্ত্রণ জানালাম। উল্লেখ্য, পথভ্রষ্ট স্বৈরাচার হাসিনা সিডনি সফর কালে দু’বারই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলাম, যার ফল আমাকে ভোগ করতে হয়েছে ঢাকা বিমানবন্দরে ১৪ ঘণ্টার মতো আটক থেকে। তবে মাঝে নামাজ পড়েছি বিমানবন্দর মুসল্লায় , চা -নাস্তা খেতে গিয়েছি, কোনো বাধা দেয়নি, ফোনটি সারাক্ষণ আমার সাথে ছিল।

বিএনপির মহাসচিব : বিএনপির মহাসচিব সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য গেলে সেখানে আমার নামে  মামলা থাকার সম্ভবনা জানানো হয় জনৈক বিএনপির নেতার মারফত। মহাসচিব আশ্বাস দেন, দেশে যেয়ে বিষয়টি দেখবেন। আসলে মনে হচ্ছে, ওটা ছিল কথার কথা। তিনি যদি তার কথা ঠিক রাখতেন তবে আমাকে হয়তোবা বিমান বন্দরে হয়রানির শিকার হতে হতো না। যাইহোক বয়স্ক মানুষ হয়তোবা ভুলে গেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় এ ধরনের ছোট ছোট ভুল হয়তোবা মহাবিপদ ডেকে আনতে পারে। যদিও তাকে অনেকে ভারতের দালাল এবং একরোখা বলেন এ আমি মানতে রাজি নই। অবকাশ যাপনের জন্য অনেকবার তিনি অস্ট্রেলিয়া আসেন, কিন্তু একবারও নেতাকর্মীদের সাথে স্বেচ্ছায় দেখা করতে রাজি হয়নি। প্রতিবার অস্ট্রেলিয়া এসে গোপনে কার সাথে দেখা করেন, কার সাথে দেখা করেননা, কেউ অফিসিয়ালি জানেননা। লোক মুখে শোনা যায়, তার নাকি মেয়ে ও মেয়ের জামাই থাকেন। যাদের বিগত জীবনে কোথাও কোনো আন্দোলনে শরিক হতে দেখা যায়নি। অর্থাৎ মেয়ে বা মেয়ের জামাইয়ের অবদান হচ্ছে জিরো। কেউ বলেন -নিজেদেরকে লুকিয়ে চলা আত্মীয়র বাসায় মহাসচিব আসতেন গোপনে। বিএনপির কাউকে জানানো নিষেধ ছিল। কারো সাথে তারা দেখা দিতে রাজি ছিলেন না। বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগের শেষ নেই-দলের মহাসচিব বা তাঁর মেয়েকে বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে দাওয়াত করার ব্যর্থ চেষ্টায় সকলেই ভীষণ মর্মাহত। স্বৈরাচারী আন্দোলনে প্রবাসীদের ভূমিকা সম্পর্কে বিন্দু মাত্র ধারনাহীন ব্যক্তি একমাত্র এহেন মনোভাব দেখাতে  পারেন বলে অনেকে মত প্রকাশ করেন।

তার সাথে সকলেই একরকম ডেকোরাম ছাড়া জোর করেই দেখা করেন অস্ট্রেলিয়ায়। এ যদি নেতার আদর্শ হয়, তবে বিএনপির কর্ণধার তারেক রহমান সাহেবকে আরেকবার চিন্তা করতে হবে।

 

বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন ফারুক : আমার বাসা যেহেতু উত্তরায়। ১৪ বছর পর দেশে ফেরার পর আমার উত্তরার বন্ধুরা একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেন। প্রধান অতিথি জয়নাল আবেদীন ফারুকসহ অনেক গণ্য মান্য অতিথি নিমন্ত্রণ করা হয়। আমি তার সাথে কথা বলেই অনুষ্ঠানের তারিখ ও রূপরেখা ঠিক করি-তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মতি প্রদান করেন। কথার মাঝেই হঠাৎ মাথা গরম করে উলটা সিদা বকেন। মনে হয় কোথাও কোনো সমস্যা আছে। যাইহোক, তার সম্মতি নিয়ে বিএনপি ঘরনার অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে নিমন্ত্রণ করেন অনুষ্ঠানের আয়োজক সেলিম সাহেব। অনুষ্ঠানের আগের দিন তাকে ফোন দেয়া হয়। বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন ফারুক আমাকে বলেন -কিসের অনুষ্ঠান, কার অনুষ্ঠান, কোথায় অনুষ্ঠান ? আমি মাত্র ইংল্যান্ড থেকে ফিরেছি, মন ভালো নেই, শরীরও চলছেনা ইত্যাদি। কোনভাবেই তাকে রাজি করাতে পারলামনা -অথচ উনি ছিলেন প্রধান অতিথি। তিনি নাকি জানেনই না। আমিও তার ব্যবহারে হতবাক। তার কর্মকাণ্ডে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ফারুক সাহেবকে অনুষ্ঠানের কথা আবারো স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে তিনি বলেন-আমি কি আপনার চাকর যে আমাকে সব কিছু মনে রাখতে হবে? তার কথা শুনে নিজের দলের উপর ভীষণ রাগ হলো। বিএনপি ছাগল দিয়ে হাল চাষ করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে , তার মতো অথর্ব, বিয়াকুব নেতা বিএনপিতে থাকলে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভোগান্তি ছাড়া কিছু থাকবেনা বলে অনেকে মত প্রকাশ করেন। তার কথা অসম্ভব রুক্ষ, মেজাজ সর্বদা তিরীক্ষা থাকে। এ মেজাজ নিয়ে আর যাই হোক রাজনীতি শোভা পায়না। বাসের হেলপার বা কন্ট্রাক্টরদের আচরণ যেমন অনেক সময় অনেকে মেনে নিতে পারেনা, ঠিক তেমনি তাদের আচরণ দেখে অনেকে ক্ষুদ্ধ। পথভ্রষ্ট এ ধরনের নেতা (?)দেরকে বর্জন করা সময়ের দাবি বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। নেতা হবার ন্যূনতম যোগ্যতা তার নেই -এ আজ সকলের কাছে অতি পরিষ্কার। তবে শেষ মুহূর্তে জয়নুল আবেদীন ফারুক অপারগতা প্রকাশ করায়  অনেকে তাকে বেইমান এবং গুড ফর নাথিং বলেছেন।

শহীদ রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান সাহেবের দলে অনেক বাটপাড়, দেশদ্রোহী ভারতের দালাল স্থান করে নিয়েছে, যার কারণে বিগত ১৬ বছর বিএনপি কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুযায়ী এগোতে পারেনি। অনেকেরই অভিযোগ, ফকরুল ইসলাম সাহেব ও আবেদীন ফারুক সাহেব অভিশপ্ত আওয়ামী লীগের কাছে চওড়া দামে বিক্রি হয়ে গেছেন -যদিও কোনো প্রমাণ নেই।

ভিআইপিদের সাথে সাক্ষাৎ

দেশে যাবার আগে ৩ দিন চায়নায় গুয়ানজো ছিলাম সাহাবাদের জিয়ারতে। দেশে যেয়ে ২ সপ্তাহ ওমরায় ছিলাম। প্রায় ২ সপ্তাহ কেটে যায় মামলা উঠাতে।

বাংলাদেশের ১৭ তম অ্যাটর্নি জেনারেল হলেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তার সাথে দেখা করতে সুপ্রিম কোর্টে গেলাম। অত্যন্ত শান্ত, ভদ্র, মার্জিত মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। সকাল বেলা কফি দিয়ে আপ্যায়ন করে  জানতে চাইলেন সিডনির হাল হকিকত। বিমানবন্দরে ১৪ ঘন্টা আটকিয়ে রাখার কারণে সিডনি থেকে আমার শুভাকাঙ্কীরা তাকে ফোন দিয়ে অবগত করেন। তিনি বলেন-আমি তাৎক্ষণিক পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আপনার মুক্তির জন্য অনুরোধ করি। অস্ট্রেলিয়া আসার আমন্ত্রণ ও অনেক ধন্যবাদ-কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় নিলাম।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সৈয়দ এজাজ একজন হাস্যোজ্জ্বল বন্ধুপ্রতিম সাদা মনের মানুষ। মাগরিবের সময় তার বাসায় যাবার সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কি জামাতে নামাজ আদায় করে নিতে পারি ? যা আমাকে মুগ্ধ করেছে। নামাজ আদায়ের পর বেশ আপ্যায়ন করলেন নিজের হাতে। অনেকক্ষণ বিভিন্ন বিষয়ে গল্প হলো, পরবর্তীতে তিনি আসলে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে নিয়ে গেলেন।

 

 

মাসুদ আহমেদ তালুকদার সিনিয়র অ্যাডভোকেট, সাবেক সভাপতি (২০১৫-২০১৬) ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশন এবং তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা নিমন্ত্রণ করেন হোটেল সোনারগাঁয়ে। লন্ডন থেকে আগত প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক ড.আবদুল আজিজ ও আমার সম্মানে ডিনারের দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করি। আলোচনা ও গল্পের ফাঁকে ফাঁকে বিশাল বাফেটের রকমারি খাবার তুলে নিচ্ছিলাম। মাসুদ আহমেদ তালুকদার ছিলেন ওই ফাইভ স্টারের অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ। বেশিরভাগ স্টাফ উনাকে সালাম দিচ্ছিলেন, তিনি কুশলাদি জিজ্ঞেস করছিলেন।

 

 

মতিউর রহমান, এডিশনাল আইজিপি পুলিশ। আমার মামলার ব্যাপারে যিনি সরাসরি সহযোগিতা করেন। এতবড় পদের অধিকারী অথচ বিন্দু মাত্র অহংকার নেই।  অতি মাত্রায় ভদ্র এবং মার্জিত যা পুলিশ ডিপার্মেন্টের জন্য গর্বের বিষয়। অনেক ব্যস্ততার ভিতর তিনি আমাকে শেষ বেলায় তার সু-পরিপাটি অফিসে সময় দিয়েছেন, আপ্যায়ন করেছেন এবং গল্প করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন -আমি সিডনি ল্যাকেম্বার বাসিন্দা। তিনি তখন উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে বলে উঠেন-আমি ৩ বার গিয়েছি এবং আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে ল্যাকেম্বা। ল্যাকেম্বা নিয়ে তার গল্প শুনে আমি নিজেই বিমোহিত। এতবড় মাপের একজন পুলিশ অফিসারের কাছে দেখা করতে যেয়ে নিজ এলাকা ল্যাকেম্বার গল্প শুনবো, যা ছিল ধারণার বাইরে। শুধু তাই নয়, অফিস থেকে বের  হবার সময় একটি ভিআইপি গিফট প্যাক হাতে ধরিয়ে দিলেন -যা ছিল আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং সম্মানের। তার অফিস থেকে বের হবার সময় এবং ঢোকার সময়  বিশাল সিকিউরিটি, পুলিশের ধাপ পার হতে হয়। নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের সকলের নজর ছিল আমার হাতের গিফট প্যাকের দিকে। মতিউর রহমান সাহেব শুধু একজন পুলিশ অফিসারই নন, তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত ধর্মপ্রাণ সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ থেকে গেলাম।

ডা. শফিকুর রহমান একজন রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমীর। অফিসে পোঁছেই আপ্যায়িত হলাম এবং উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলাম তার সহকারী নজরুল ইসলাম থেকে। একসাথে পার্টি অফিসের নিচের মসজিদ থেকে এশার নামাজ আদায় করলাম। অনেক দর্শনার্থীদের ভিতর আমাকে তিনি ঠিকই চিনে নিলেন এবং মোয়ানাকা করলেন। সাদাসিদা চমৎকার ভাবে গুছানো অফিস দেখেই মন ভরে যায়। মনে হলো আমার সম্পর্কে উনি পুরো ধারণা নিয়েই বসে আছেন। যাই হোক, প্রফেসর শিবলী আব্দুল্লাহ, ডক্টর ফারুক আমিন ও তার ছোট বোন ডক্টর ফারজানার কথা জিজ্ঞেস করাতে ঘাবড়িয়ে গেলাম। খুব  সুন্দর ও সাবলীলভাবে বাক্য ছুড়ে দেন যা সত্যি চমৎকার। আমির সাহেব আমাদের সম্পর্কে বিভিন্ন  কিছু জানতে চান যা আমাকে আনন্দিত করেছে। অভিযোগের সুরে তাকে জানালাম, বাংলাদেশে প্রতিবছর হজ্জের ফ্লাইটে বিশাল অনিয়মের চিত্র  তুলে ধরলাম -বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের আমলে একই দুরাবস্থা হয় হাজ্জীদের, কিন্ত কেন? প্রতিবার খুঁজে খুঁজে ইসলাম সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞানহীনদেরকে এ মন্ত্রণালয়ে দেয় বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। যাদের কাছে হজ্জ্ব বা হাজ্জীদের  তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে বেখেয়াল ও  অযোগ্য লোকদেরকে এ মন্ত্রণালয়ে যাতে না দেয়া হয় সেদিকে লক্ষ রাখার  জন্য  বিনীত অনুরোধ করি। আরো অভিযোগ করি, প্রায় প্রতি বছর হাজ্জীদের জন্য বিমান থাকেনা। অর্থাৎ বছরের শুধু মাত্র ওই সময়ে হজ্জ যাত্রীদেরকে বিশাল বিড়ম্বনায় পড়তে হয় যা নাকি কখনো কাম্য নয়। শুধু তাই নয়, হজ্জ ফ্লাইট না থাকায় ইউরোপ থেকে বিশেষ উড়োজাহাজ ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয়। মিনি স্কার্ট পরিহিত বিমানবালারা হাজ্জীদেরকে আপ্যায়ন করে যা নাকি আইয়েমে জাহিলিয়াতের সময়ের মতো। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী পুরো বিমান চাটার্ড করে বিশাল বহর নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অজুহাতে ঘুরে বেড়ায়, সে দেশে হাজ্জীদের জন্য পর্যাপ্ত উড়োজাহাজের ব্যবস্থা থাকেনা- এটা কেমন গোমরাহী !  ক্ষমতায় গেলে হাজ্জীদের বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষ রাখা এবং সিডনিতে বেড়িয়ে যাবার নিমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নিলাম।

সিআইডির ডিআইজি জসিম সাহেবের অফিসে প্রচুর ভিড়। সকালে আমাকে কফি দিয়ে আপ্যায়ন করলেন এবং অনেক ভিড়ের ভিতরও গল্প জুড়ে দিলেন। অভিশপ্ত আওয়ামী অফিসাররা সবাই বিদায় হয়েছেন এবং প্রায় সকল ডিপার্টমেন্টে এখন নতুন অফিসার নিয়োগ বলে জানালেন। কার নামে কোথায় মামলা আছে, এখনো তারা বুঝে উঠতে সময় লাগছে বলে জানালেন। সিডনিতে বেড়াতে যাবার নিমন্ত্রণ জানিয়ে চলে গেলাম।

 

আবুল আসাদ সাহেব একজন প্রবীণ সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। তিনি দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক। কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিকে রাজশাহী সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেছেন। ১৯৭০ সালে ১৭ই জানুয়ারি দৈনিক সংগ্রামে সহকারী সম্পাদক হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি সার্বক্ষণিক সাংবাদিক জীবনের শুরু করেন। ১৯৮১ সালে তিনি দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ পর্যন্ত প্রকাশিত তার গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ইতিহাস গ্রন্থ ‘কাল পঁচিশের আগে ও পরে’ এবং ‘একশ’ বছরের রাজনীতি’, ঐতিহাসিক ঘটনার চিত্রধর্মী গল্প ‘আমরা সেই সে জাতি’ (তিন খণ্ড) এবং প্রবন্ধ সংকলন ‘একুশ শতকের অ্যাজেন্ডা’। তার সবচেয়ে সাড়া জাগানো সাহিত্যকর্ম হলো সাইমুম সিরিজ। এ পর্যন্ত এই সিরিজের ৬৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। অভিশপ্ত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার হয়রানি করেছেন এ সাংবাদিক নেতাকে। কারাগারের ভয়াবহ অনেক ঘটনা তিনি আমার সাথে তুলে  ধরলেন। অদূর ভবিষ্যতে হয়তোবা ওগুলো নিয়ে লিখবেন। তিনি একজন প্রকৃত মুজাহিদ। সম্প্রতি অকুতোভয় এ লেখক উনার জীবন সঙ্গিনীকে হারিয়েছেন। তাকে সান্ত্বনা দেবার কোনো ভাষা আমার ছিল না। নিজের ছেলের মতো অনেক গল্প করেছেন মন খুলে। ছোট লাউঞ্জ রুমটি বই দিয়ে ঠাসাঠাসি। ঘরোয়া পাঠাগার মনে হচ্ছিলো। দীর্ঘক্ষণ গল্পের ফাঁকে তার দেশপ্রেম, উম্মত নিয়ে ফিকির, বিশ্বের মুসলমানদেরকে নিয়ে ভাবনা উঠে এসেছে, যা আমাকে আবেগে আপ্লুত করেছে। অনেক আপ্যায়ন করেছেন। তার বয়স ৮০ + হলেও উনার মিষ্টির প্রতি ভালবাসা দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই। যাই হোক, প্রথিযশা এ সাংবাদিকগুরু উনার লেখা বিখ্যাত ৩টি মূল্যবান বই আমাকে উপহার দেন।  উনার লেখা একশ’ বছরের রাজনীতি, হিন্দু মুসলিম মানস  ও কালো পঁচিশের আগে ও পরে। তিনটি বই এক নিঃশ্বাসে পড়ার মতো অসাধারণ। যেমন প্রচ্ছদ, তেমন নামকরণ ও বিষয়বস্তু। রেফারেন্সের জন্য তিনটি বই এর কোনো বিকল্প নেই। উনাকেও সিডনি ঘুরে যাবার বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নিয়ে ফিরে যাই গন্তব্যে।

নাহিদ ইসলাম কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে স্বৈরাচারী হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন ও সফল হন। নাহিদ ইসলাম ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এর উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ৯ আগস্ট ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০২৪ সালের ১৬ আগস্ট তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান।

নাহিদ সাহেবের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিন আমাকে ফোন দিয়ে খবরাখবর নেন, বিমানবন্দরে উক্ত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সচিবালয়ে চায়ের দাওয়াত দেন। অত্যান্ত ভদ্র, স্বল্পভাষী এ তরুণ নেতা দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে জাগিয়ে তুলেছেন। আগামীতে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমন করার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নেই।

 

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked with *

সর্বশেষ পোস্ট

Advertising