মিজানুর রহমান সুমন: স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছিলো৷ দেশে তারপরে আর কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি৷ অবস্থা এমন হয়েছে যে, মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে গণতন্ত্র কি জিনিস৷ বাংলাদেশে যার বয়স এখন ৩৫ বছর, এমন তরুনেরা জীবনে একবারও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দেয়ার
মিজানুর রহমান সুমন: স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছিলো৷ দেশে তারপরে আর কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি৷ অবস্থা এমন হয়েছে যে, মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে গণতন্ত্র কি জিনিস৷ বাংলাদেশে যার বয়স এখন ৩৫ বছর, এমন তরুনেরা জীবনে একবারও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি৷
বাংলাদেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া জরুরী৷ একটি নির্বাচিত সরকারের দ্বারাই সম্ভব সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা৷ বিএনপি সেই ২০১৪ সাল নির্বাচনের দাবি করে আসছে৷ এখনো সেই দাবি রয়ে গেছে৷ শেখ হাসিনা পরবর্তী সময়েও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে,আদৌ কি অন্তবর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে হাঁটছে?
অভিযোগ অনেক৷ বিগত সরকারের অনেক রথি-মহারথিরা পালিয়ে গেলেন৷ আওয়ামী লীগের প্রপাগান্ডা মেশিন হাছান মাহমুদকে গ্রেফতার করেও ছেড়ে দেয়া হলো৷ তাকে সহযোগিতা করে সসম্মানে দেশত্যাগের সুযোগ করে দেয়া হলো৷ এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও দেড়মাস দেশেই ছিলেন ওবায়দুল কাদের ও মোহাম্মাদ এ আরাফাত৷ শুধু তারাই নন, এমন বহু নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারলেন৷ এসব ঘটনার দায় বর্তমান প্রশাসন এড়াতে পারেনা৷ এগুলো প্রমান করে যে, কোথাওনা কোথাও ফ্যাসিবাদের চর্চা রয়েই গেছে৷ এই অবস্থায় নিরপেক্ষ নির্বাচনের দায়িত্ব এরা কতটুকু পালন করতে পারবে, সেই আশঙ্কা করাই স্বাভাবিক৷
এরমধ্যে যুক্ত হয়েছে আন্দোলনের পরাশক্তিগুলোর বিরোধ৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বিএনপি ও জামায়াতের নির্বাচনসংক্রান্ত ভাবনা পুরোপুরি এক না৷ এমনকি যেসব উপদেষ্টা ক্ষমতায় আছেন,তারাও খুব দ্রুত নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নন৷ গত ৫ মাসে দেশের দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আমরা দেখতে পাইনি৷ সংস্কারের জন্য কিছু কমিটির করা হয়েছিলো৷ তাদের কয়েকটি রিপোর্ট জমা হয়েছে৷ আমরা জানিনা সেসবের বাস্তবায়ন কিভাবে হবে৷ কে সংস্কার করবে,কিভাবে করবে সেসব নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি৷ রয়েছে সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতাও৷ এই সরকার নির্বাচিত নয়৷ তারা সংবিধানে পরিবর্তন আনতে সক্ষম নয়৷ সেক্ষেত্রে বড় ধরনের সংস্কার করা ওনাদের পক্ষে আইনগত কাঠামোর মধ্যে সম্ভব না৷
দেশের বৃহৎ দল বিএনপির অবস্থান পরিস্কার৷ তারা চাইছেনা কোনো অনির্বাচিত সরকার তাদের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে কিছু করুক৷ রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দিলে সমস্যা তৈরি হতে পারতো বলেই মনে করে বিএনপি৷ জামায়াতে ইসলামী এই বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিস্কার করেনি৷ ন্যুনতম সংস্কার নিয়ে দুটি দল একমত হয়েছে৷ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ন্যুনতম সংস্কার বলতে কে কি বোঝাচ্ছে৷ মানুষ মনে করে, ন্যুনতম সংস্কার হচ্ছে নির্বাচনসংক্রান্ত জরুরী সংস্কার৷ একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় দলগুলোর একমত হওয়া৷ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা৷ নতুন ভোটার লিস্ট তৈরি করা, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা, নির্বাচন কমিশনের স্বতন্ত্র ট্রাইবুনাল গঠন, জাতীয় নির্বাচনের তিনশো আসনের সীমানা নির্ধারণ৷
এসবের মধ্যেই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সাথে বিএনপির দ্বন্দ প্রকাশ্যে এসেছে৷ একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য ও পালটা বক্তব্য চালাচালি হচ্ছে৷ একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে এগুলো অন্তরায় হবে ৷ আওয়ামী লীগ দিল্লিতে বসে নানান ফন্দি ফিকির করা শুরু করেছে৷ আন্দোলনের শক্তিগুলোর এক থাকা জরুরী৷ পারস্পরিক যোগাযোগ ও একে অন্যের দাবিগুলোর প্রতি সম্মান দেখালে ঐক্য ধরে রাখা সম্ভব৷
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন উপহার দেওয়ার ব্যাপারে কমিশন বদ্ধপরিকর। এবারের ভোটগ্রহণ হবে ব্যালট পদ্ধতিতে।তিনি আরও বলেন, দেশজুড়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। এ কাজে ৩৫ হাজার তথ্য সংগ্রহকারী নিযুক্ত রয়েছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে ভুল তথ্য যোগ হওয়ার কারণে মানুষ সেবা পেতে সমস্যায় পড়ছেন। তাই তথ্য সংগ্রহকারীদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে এবং সঠিক তথ্য নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তাঁর সরকার একটি বাধাহীন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া তৈরিতে জোর দিয়েছে। এজন্য নানা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কত দ্রুত হবে তা নির্ভর করছে সংস্কারের ওপরে। মানুষ কম সংস্কার চাইলে নির্বাচন দ্রুত হবে, বেশি সংস্কার চাইলে কিছুটা বিলম্ব হবে।
দেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করুক এটাই কাম্য৷ বিভিন্ন শব্দের বেড়াজালে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে সেটি হবে আরেকটা পরাজয়৷ বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে সেই পরাজয় মেনে নিতে প্রস্তুত নয়৷
লেখক -অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট৷
Leave a Comment
Your email address will not be published. Required fields are marked with *