আতিকুর রহমান (প্রকৌশলী): যুবসমাজ একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে একটি জাতি শক্তিশালী, সুশৃঙ্খল ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ, যেখানে তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এ বিপুল সংখ্যক তরুণ যদি সঠিক প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা পায়, তবে তারা দেশকে আরও উন্নত ও নিরাপদ করে তুলতে পারবে। এ কারণেই সামরিক ও নার্সিং প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা উচিত। এটি শুধু ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
সামরিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
১. জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ
প্রতিটি স্বাধীন দেশের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হয়। বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশ হলেও, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সীমান্ত সমস্যা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করার জন্য যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণ থাকা দরকার। যদি প্রতিটি তরুণ ন্যূনতম সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, তবে সংকটময় মুহূর্তে তারা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী হিসেবে কাজ করতে পারবে।
২. দেশপ্রেম ও শৃঙ্খলা গড়ে তোলা
সামরিক প্রশিক্ষণ ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করে। তরুণরা যখন সামরিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও নেতৃত্বগুণ শেখে, তখন তারা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল হতে পারে। এতে সামাজিক অবক্ষয় যেমন দুর্নীতি, মাদকাসক্তি ও বখাটেপনার প্রবণতা কমে যায়।
৩. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি
বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায়শই ঘটে। সামরিক প্রশিক্ষণ থাকলে তরুণরা দুর্যোগকালীন সময়ে উদ্ধারকাজ, ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে দক্ষভাবে অংশ নিতে পারবে। ফলে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
৪. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও আত্মনির্ভরশীলতা
সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি শুধু সেনাবাহিনী বা নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগ দিতে পারবে না, বরং সিভিল ডিফেন্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রাইভেট সিকিউরিটি সেক্টর ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজের সুযোগ পাবে। ফলে দেশে বেকারত্ব কমবে এবং তরুণরা স্বনির্ভর হয়ে উঠবে।
নার্সিং প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
১. দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসক ও নার্সের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। বিশেষ করে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। যদি যুবকদের নার্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাহলে তারা সমাজের অসুস্থ ও দুস্থ ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারবে এবং জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
২. জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় অবদান
যেকোনো দুর্ঘটনা, রোগব্যাধি বা মহামারির সময় নার্সিং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-১৯ মহামারির সময় দক্ষ নার্সের প্রয়োজনীয়তা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। যদি তরুণদের নার্সিং ও প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়, তবে ভবিষ্যতে তারা যেকোনো মহামারি বা জরুরি পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে।
৩. মানবসেবায় উৎসাহ সৃষ্টি
নার্সিং প্রশিক্ষণ শুধু চাকরির সুযোগ বাড়ায় না, বরং এটি মানবসেবার একটি মহৎ পথ উন্মুক্ত করে। এটি মানুষের মধ্যে সহানুভূতি, সহযোগিতা ও মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে। ফলে তরুণরা মাদক, অপরাধ ও সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকবে এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করবে।
৪. আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন
বিশ্বব্যাপী নার্সদের চাহিদা ব্যাপক। বিশেষ করে, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে দক্ষ নার্সের অভাব রয়েছে। বাংলাদেশের তরুণরা যদি নার্সিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, তবে তারা দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সামরিক ও নার্সিং প্রশিক্ষণের সমন্বিত সুবিধা
যদি বাংলাদেশের যুবকদের জন্য সামরিক ও নার্সিং প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়, তবে এটি বহুমুখী সুবিধা বয়ে আনবে:
✅ দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ গড়ে তুলবে
✅ জাতীয় নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে
✅ স্বাস্থ্যসেবায় উন্নয়ন ঘটাবে ও দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী তৈরি করবে
✅ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটাবে
✅ সমাজ থেকে মাদকাসক্তি, অপরাধ ও অস্থিরতা কমাবে
উপসংহার
বাংলাদেশের যুবসমাজকে দক্ষ, মানবিক ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সামরিক ও নার্সিং প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা উচিত। এটি তাদের শুধু ব্যক্তিগত উন্নতির সুযোগ দেবে না, বরং জাতীয় নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। সরকার যদি এ বিষয়ে কার্যকর নীতি গ্রহণ করে, তবে এটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং বাংলাদেশকে আরও আত্মনির্ভরশীল ও শক্তিশালী জাতি হিসেবে গড়ে তুলবে।