এম,এ ইউসুফ শামীম : ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের অভিজাত রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজানে ভয়াবহ হত্যাকান্ড ঘটে। এই ঘটনায় মোট ২২ জন নিহত হন এবং দেশব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই রিপোর্টে খতিয়ে দেখা হয়েছে, তৎকালীন সরকারের উপর ওঠা কিছু প্রশ্ন এবং জড়িত থাকার ইঙ্গিতগুলো শতভাগ যুক্তিযুক্ত। যদিও তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার তা সন্ত্রাসী হামলা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছে -বাস্তবে হচ্ছে আই ওয়াশ।
কেন এবং কারা এমন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটালো?
বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প শুধু দেশের চাহিদা পূরণ করছে না, ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে একচেটিয়া বাজার দখল করে নিচ্ছে। এমনকি ভারতের গার্মেন্টস পণ্য বাংলাদেশের একজন সাধারণ রিকশাচালকও ব্যবহার করেন না। প্রবাসেও বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য এখন ছোট-বড় শপিং মলগুলোতে জায়গা করে নিচ্ছে, যা ভারতের জন্য ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের গোয়েন্দারা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মতোই একটি পরিকল্পনা সাজায়। বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারীদের গুলশানের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় ব্যবসায়িক আলোচনার নামে ডেকে আনা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয় — আগত বিনিয়োগকারীদের কেটে ফেলা হয় এবং নারীদের গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
ঘটনার আগে থেকেই বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে ছাত্রদের সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। হত্যার আগে সে সকলের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ছবি তোলে, তারপর একে একে সমস্ত নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্রদের হত্যা করে। তাদেরকে পয়েন্ট-জিরো রেঞ্জে গুলি করে হত্যা করা হয়, এবং তাদের পাঞ্জাবি, পায়জামা, পাগড়ি বা স্কার্ফ পরিয়ে রাখা হয় যেন সবাই ভাবেন, তারা মাদ্রাসার ছাত্র এবং তাই “জঙ্গি”। লাশগুলো এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে রেখে পরে ট্যাংক নিয়ে ‘অভিনয়’ শুরু হয়। সরকারের সহযোগীরা ঘটনাটিকে “জঙ্গি হামলা” হিসেবে ঘোষণা করে। এই ঘটনার সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেয় ভারত — যারা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল।
রানা প্লাজার ধসের মতো, এটি ছিল বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের আরেকটি ষড়যন্ত্র। ভারতীয়দের পরিকল্পনায় বেশ কিছু গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিসংযোগও ঘটানো হয়। হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতি ভয় ও অনাস্থা তৈরি হয়, বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বন্ধ করে এবং ভারত তাদের দিক টেনে নেয়।
তবুও, এত কিছু সত্ত্বেও বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে, আলহামদুলিল্লাহ। এ ধরনের ষড়যন্ত্র দেশের বিরুদ্ধে পরিচালিত ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কেবল একটি উদাহরণ।
অনেকগুলো খোঁড়া যুক্তি এসে দাঁড়ালো ,যেমন-
১. গোয়েন্দা ব্যর্থতা না কি ইচ্ছাকৃত অবহেলা?
যুক্তি: হামলার আগে জঙ্গি কার্যক্রমের সংখ্যা বেড়েছিল, বিশেষ করে ব্লগার হত্যা, বিদেশি নাগরিক হত্যা ইত্যাদি। কিন্তু এসবের যথাযথ তদন্ত হয়নি। এ সুজুগে ঘোলা পানিতে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা মাছ শিকারে নেমে যায়।
হলি আর্টিজানের মতো অভিজাত এলাকায় এত বড় হামলা গোয়েন্দা সংস্থার চোখ এড়িয়ে ঘটেছে—এটি কাকতালীয় নয় বলে সকলের বিশ্বাস।
সম্ভাব্য ইঙ্গিত:
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য ছিল, এমন দাবি পরবর্তীতে বিভিন্ন মিডিয়াতে আসে, যা প্রশ্ন তোলে: যদি তথ্য থাকে, তাহলে প্রতিরোধ কেন হলো না? যেহেতু ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সরাসরি যোগ সাজসে ঘটেছে ওই নৃশংস হত্যাকান্ড, সেজন্য দেশীয় নপুংশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অকেজো করে রেখেছিলো। মদ , বেশ্যা দিয়ে দেশীয় প্রশাসনের মুখে কুলুপ লাগিয়ে দিয়েছিলো।
২. হামলার সময়ের প্রতিক্রিয়া ও সেনা অভিযান
যুক্তি: পুলিশ প্রথমে অভিযানের নাম নাটক চালায়, কিন্তু পরবর্তীতে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়। এই সময় ব্যবধান ১০ ঘণ্টার বেশি। ভারতীয় গোমূত্র সেবনকারিদের একান্ত স্বজন পুলিশ ও হাসিনার পোষ্য কিছু সেনাবাহিনীর দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসীর ছত্রছায়ায় কৌশলে পুরো ঘটনা চাপা দেয়।
এ সময় মিডিয়া ব্ল্যাকআউট ছিল, যা তথ্য গোপন করার এক ধরনের কৌশল বলে জানা যায়। কোনো মিডিয়াকে স্পটে যেতে দেয়া হয়নি। অর্থাৎ পুরো হত্যাকাণ্ডের সকল আলামত মুছে ফেলা হয়। তারপর জঙ্গি নাটকের মঞ্চ তৈরী করে সকলকে জানানো হয়।
৩. রাজনৈতিক সুবিধা লাভের সম্ভাবনা
যুক্তি: হামলার পর সরকার “জিরো টলারেন্স” নীতির কথা বলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করে। এর ফলে বিরোধী দল, বিশেষত ইসলামপন্থী দলগুলোর উপর ব্যাপক ধরপাকড় চালানো হয়। এক ঢিলে দুই পাখি। আন্তর্জাতিক মহলের সহানুভূতি অর্জনেরও একটি সুযোগ তৈরি হয়।
সম্ভাব্য ইঙ্গিত:
সরকারের জন্য এটি “a political opportunity out of a tragedy” রূপে কাজ করেছে ।
৪. তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতি ও অস্পষ্টতা
যুক্তি: অনেক অভিযুক্ত তথাকথিত জঙ্গি বিচার শুরু হওয়ার আগেই ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন, যা প্রকৃত পরিকল্পনাকারীদের শনাক্তকরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। পাতানো বিচার প্রক্রিয়ায় যেসব তথ্য প্রকাশ হয়, তা আংশিক ও সীমিত ছিল।
সম্ভাব্য ইঙ্গিত:
প্রকৃত হোতারা আড়ালেই থেকে যায় , এবং সরকার এটি সচেতনভাবেই হতে দিয়েছে বা ঘটিয়েছে—ভারতীয় গোয়েন্দাদেরকে আড়াল করার জন্য তৎকালীন নপুংশ প্রশাসন অক্লান্ত পরিশ্রম করে।
৫. আন্তর্জাতিক সংযোগ উপেক্ষা
যুক্তি: আইএস দায় স্বীকার করে ভিডিও প্রকাশ করে, কিন্তু সরকার বরাবরই “দেশীয় জঙ্গি” বলে চালিয়ে যায়। আসলে ভারতীয় গোয়েন্দারা উক্ত ঘটনাকে আইএস বলে চালাতে চেয়েছে আর আমাদের দেশীয় প্রশাসন দেশীয় জঙ্গি বলে সুবিধা নিতে চেয়েছে। আইএস দায় স্বীকার করে একটি ভুয়া এডিট করা ভিডিও প্রকাশ করে মানুষকে বোকা বানাতে চেয়েছিলো। আমাদের দেশীরা খুব কম সময়ে ধরে ফেলেছে ফেইক ভিডিওর বার্তা।
উপসংহার :
বিষয়টি আরো গভীর তদন্ত ও নিরপেক্ষ গবেষণার দাবি রাখে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করাই হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পথ। ভারত নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে এবং ব্যবসায়িক সুবিধা নিতে বাংলাদেশের ভিতর যতগুলো অপকর্ম করেছে, এটা হচ্ছে তার ভিতর অন্যতম একটি। তৎকালীন তদন্ত রিপোর্ট যারা তৈরী করেছেন, তাদেরকে রিমান্ডে নিলেই আসল ভয়াবহ চিত্র বের হয়ে যাবে।