সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট: দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন নানা টানাপড়েন চলছে, তখন বিদেশে বসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আয়োজন নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই আলোচিত লন্ডন বৈঠক, যেখানে দেশের বিরোধী পক্ষের বিভিন্ন স্তরের নেতারা মিলিত হয়েছেন, তা রাজনৈতিক কৌশল, ঐক্য এবং আগামী দিনের আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণে বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই বৈঠকের মূল প্রেরণাদাত্রী হিসেবে যাঁর নামটি বারবার উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যদিও স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি বর্তমানে সক্রিয় রাজনীতিতে সরাসরি অংশ নিতে পারছেন না, তবুও তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি এবং দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অনেকেই মনে করেন—লন্ডন বৈঠকের মূলে রয়েছে খালেদা জিয়ারই কৌশলগত ছায়া।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার নীরব কিন্তু দৃঢ় প্রভাবের কারণেই অনেক বছর পর বিভক্ত বিরোধী রাজনীতিতে একটি সংলগ্নতা দেখা যাচ্ছে। তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার, নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা এবং জাতীয় ইস্যুতে দৃঢ় অবস্থানের কারণেই বহু নেতা ও কর্মী আবারও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন।
একজন জ্যেষ্ঠ বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বেগম জিয়ার দিকনির্দেশনা ছাড়া এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সফল হতো না। তিনি দলের সকল স্তরে আস্থার প্রতীক।”
এছাড়া দলের তরুণ নেতারাও মনে করছেন, খালেদা জিয়ার নীতিগত অবস্থান এবং জাতীয় স্বার্থে আপসহীন ভূমিকাই তাঁদেরকে আবারও একটি লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করেছে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য,বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতির এক উজ্জ্বল ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নাম। তিনি শুধু একজন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নন, বরং একজন আপোষহীন সংগ্রামী নেত্রী, যিনি দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করতে দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করে আসছেন।
বেগম খালেদা জিয়া—এই নামটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক সাহসী, আপোষহীন এবং দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের প্রতীক। তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেত্রী নন, বরং বহুদলীয় গণতন্ত্রের রক্ষাকর্ত্রী, মানুষের ভোটাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রামে একজন অবিচল সৈনিক।
বেগম জিয়া বিশ্বাস করেন জনগণের শক্তিতে, বিশ্বাস করেন ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনে। স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান নিয়ে তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন—গণতন্ত্রই তার রাজনীতির মূল দর্শন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়, যা আজও দেশের রাজনৈতিক জীবনে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক।
বিশ্বনেতৃত্বের অঙ্গনে বেগম খালেদা জিয়া পরিচিত হয়েছেন একজন প্রজ্ঞাবান ও সম্মানিত নেত্রী হিসেবে। তাঁর দেশপ্রেম, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বগুণ তাঁকে বিশ্ব বরেণ্য নেত্রীর মর্যাদায় আসীন করেছে।
বেগম খালেদা জিয়া মানেই সাহসিকতার এক নাম, মানেই গণতন্ত্রের পক্ষের নির্ভীক কণ্ঠস্বর। তিনি শুধু একজন নেত্রী নন, তিনি একজন ইতিহাস—যিনি আজও কোটি মানুষের হৃদয়ে আশার প্রতীক হয়ে আছেন।
১৯৮১ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর, তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসেন এবং তখন থেকেই নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পরিচালনা করে আসছেন। তাঁর নেতৃত্বেই বিএনপি তিন দফা দেশের শাসন ক্ষমতায় আসে। একমাত্র নারী হিসেবে তিনি তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, যা তাকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল নারী নেত্রীর আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বেগম খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক জীবনে বারবার বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন, গৃহবন্দিত্ব সহ্য করেছেন, কিন্তু কখনও আপোষ করেননি গণতন্ত্রের প্রশ্নে। জনগণের ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার জন্য তার সংগ্রাম অব্যাহত থেকেছে সবসময়।
আজও, বেগম খালেদা জিয়া আমাদের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম—এক মহিয়সী নারী, যিনি আপোষহীনভাবে বিশ্বাস করেন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রে। তার সাহস, আত্মত্যাগ এবং দৃঢ়তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
লন্ডন বৈঠকের তাৎপর্য
লন্ডন বৈঠকে মূলত বিএনপির প্রবাসী শাখাসহ দেশের বাইরে অবস্থানরত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করা।
শেষ কথা
লন্ডন বৈঠক বিএনপি ও দেশের বিরোধী রাজনীতিতে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। কিন্তু এই সমন্বয়ের পেছনের মস্তিষ্ক যদি খুঁজতে হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে সেই নামটি বেগম খালেদা জিয়া। তিনি হয়তো সরাসরি মঞ্চে নেই, কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক ছায়া এখনো বিরোধী আন্দোলনের শক্তি হয়ে কাজ করছে।