জুলাই আগস্ট আন্দোলন,ছাত্রদের ভূমিকা রাজনৈতিক সমন্বয়হীনতা, পরিণতি

 

সামসুল ইসলাম টুকু: জুলাই আগস্ট আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি  মাইল ফলক। দীর্ঘ ১৬ বছর জোর করে ক্ষমতা দখলকারী ফ্যাসিস্ট সরকারের  পতনের রক্তাক্ত ইতিহাস। সুতরাং এই আন্দোলনের তাৎপর্যকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এই আন্দোলনের নামকরণ নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। তবে সর্বশেষ বিশ্লেষণে এই আন্দোলনকে ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থান বলাই শ্রেয়। ছাত্রদের নিজেদের ও ভবিষ্যৎ  প্রজন্মের চাকরির ভাবনা নিয়ে সরকারের প্রচলিত  কোটা প্রথার বিরুদ্ধেই ছিল মূল  আন্দোলন। এই আন্দোলন চলাকালীন সময়েই ছাত্ররা এটাকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নামকরণ করে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। প্রথমে তাদের সমন্বয়ক কমিটি ছিল ৬৫ জনের। এরমধ্যে ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহ সমন্বয়ক। পরে আন্দোলনের বিস্তৃতি ঘটায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রদের নিয়ে ১৫৮ জনের সমন্বয়ক কমিটি গঠন করে। এরমধ্যে ৪৯ জন সমন্বয়ক ও ১০৯ জন সহ সমন্বয়ক। এই সমন্বয়ক কমিটির যোগাযোগ ছিল বেশ দৃঢ়। দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনকে একদফা আন্দোলনে পরিণত করতে পারে। ছাত্রদের ত্যাগ ও উদাত্ত আহবানে সাধারণ মানুষ দলে দলে অংশ গ্রহণ করে এবং জীবন দিতে প্রস্তুত হয়ে মাঠে নামে। অভাবিতভাবে অংশ গ্রহন করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা। ফলে ঢাকার আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। বেপরোয়া হয়ে ওঠে ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ লড়াই। ছাত্রলীগ,পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচারকে প্রতিহত করে উত্তাল জনতা এগিয়ে যায়। নির্ভয় আন্দোলনে রূপ নেয় বিদ্যুৎ গতিতে। পরিস্থিতি বিচার করে সেনাবাহিনী ঝুঁকি নিতে চায়নি।রণে ভঙ্গ দেয়। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সহযোগিতা করে হাসিনার আত্মীয় ও সেনা প্রধান। জনরোষ থেকে বাঁচাতে মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী সাংসদগণ ও আওয়ামী চামচারা আড়ালে চলে যায়। শেষ হয় ভারতীয় আধিপত্যবাদী আগ্রাসন।  অল্প কথায় এই আন্দোলনের গতি প্রকৃতি বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তবে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হবে তা ছাত্র নেতৃত্ব ভাবতে পারেনি বা অগ্রিম কোনো পরিকল্পনাও ছিলনা। তারা ভাবতে পারেনি যে তাদের আহ্বানে  উত্তাল জনতার জোয়ার নামবে। এটাও ভাবতে পারেনি যে সেনাবাহিনী গুলি চালাতে অস্বীকার করবে। তারপরেও ফ্যাসিস্ট হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে প্রায় ১৪০০ মানুষ ও  শিশু  নিহত হয়েছে। যার বিনিময়ে ছাত্র আন্দোলন সফল হয়েছে। আর এই সফলতার পেছনে দীর্ঘ ১৬ বছরের  নিপীড়িত, নিষ্পেষিত ও উত্তপ্ত জনতার সরাসরি অংশ গ্রহণ ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ( সাধারণ মানুষ কেন উত্তপ্ত ছিল )

সাধারণ মানুষের উত্তপ্ত হওয়ার পেছনে যে কারণ ও লোমহর্ষক ঘটনা ছিল তার অংশ বিশেষ  নিচে দেওয়া হলো।  পরিকল্পিতভাবে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন দেশ প্রেমিক সেনা অফিসারকে হত্যা। একইসাথে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অভিযোগে বিডিআরদের পাইকারী হারে মামলা ও কারাদণ্ড দিয়ে সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ডকে ভেঙ্গে চুরমার করা। মেজর সিনহাকে পরিকল্পিত হত্যা।তার হত্যাকারী ওসি প্রদীপের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত না করা। ৭১ এর মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্যাঙারু কোর্টে তথা বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালে অপরাধীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বিতর্কিত সাক্ষ্য আইনের সৃষ্টি করে প্রহসন মুলক বিচারে ফাঁসি প্রদান। বিশ্বজিৎ নামে জনৈক দর্জীকে আন্দোলনকারী ভেবে আওয়ামী লীগ ক্যাডারেরা প্রকাশ্য দিবালোকে ঢাকার  রাজপথে পৈশাচিক কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করে। আজও তাদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত হয়নি।

দায়মুক্তি আইন করে হাসিনা  বিদ্যুৎ সেক্টরে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটের ব্যবস্থা করে। ভারতের আদানি কোম্পানিকে বিদ্যুৎ সরবরাহের সুযোগ দিয়ে মোদিকে উপহার দেয়। তাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার জন্য। আর দেশবাসীকে বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য দিয়ে খেসারত দিতে বাধ্য করা হয়েছে  এবং  এখনও দিতে হচ্ছে। জঙ্গি দমনের নামে বিরোধী দলের ও মতের শত শত মানুষকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে হত্যা করে বন্দুক যুদ্ধে নিহতের মিথ্যা বয়ান দেওয়া। একই অভিযোগে কিছু নিরপরাধ মানুষকে ধরে একত্রিত করে সেই স্থান ঘেরাও করে গুলি করে আগুন জ্বালিয়ে হত্যা করে তাদের পরিচয় পর্যন্ত মুছে দেওয়া। বিরোধী দলের শত শত নেতা কর্মীদের বাড়িতে অকস্মাৎ  অভিযান চালিয়ে তাদের গুম করা, নির্যাতন করা, ও হত্যা করা। অভিযোগ, প্রমানহীন  মিথ্যা দেশদ্রোহিতার।

সরকারের বিভিন্ন অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামীর শান্তিপূর্ণ  জমায়েতে পরকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাতের আঁধারে নির্বিচারে গুলি করে পাঁচ শতাধিক মাদ্রাসা ছাত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করে তার প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করা। বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে ডজন ডজন মিথ্যা মামলা দিয়ে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে হয়রান করা। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কর্মীদের ছাত্রদের বিনা উসকানিতে ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের  দিয়ে বেধড়ক পেটানো। কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের অন্যায়ভাবে পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের দিয়ে পেটানো। বিরোধী দল বিশেষত বিএনপি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার জন্য স্থান নির্বাচন করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিশ্চিত করার পরেও আওয়ামী লীগ একই স্থানে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে  বিএনপির কর্মসূচি বন্ধ করে  দেওয়া। প্রয়োজনে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ ও গুন্ডা বাহিনীকে দিয়ে বেপরোয়া লাঠি পেটা করে  সভা পণ্ড করে দেওয়া।

সর্বোপরি সীমাহীন দুর্নীতি করে ও দুর্নীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, শিক্ষা খাত, ব্যাংক খাতকে ধ্বংস করে দেওয়া। শুধু তাইনয় দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে ভেঙ্গে দেওয়া। যদি গণনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বছরের প্রতিদিন কোনো না কোনো অন্যায় সংঘটিত করে  ১৬ বছরে জনসাধারণকে উত্তপ্ত করেছিল। এই উত্তপ্ত জনসাধারণ যোগ্য নেতৃত্বের অপেক্ষায় ছিল। যা ছাত্রদের নেতৃত্বে পেয়েছিল এবং অংশ গ্রহণ করে বিজয় ছিনিয়ে আনে। এই উত্তপ্ত জনগণের সম্পৃক্ততা না পেলে ছাত্রদের পক্ষে এ বিজয় অর্জন সম্ভব হতোনা। বিএনপির আন্দোলন গুলোর পরিণতি লাভ করতো। সুতরাং ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনে একক কৃতিত্ব শুধুমাত্র ছাত্ররা দাবি করলে তা হবে পূর্বের ১৬ বছরের আন্দোলন গুলোর ত্যাগকে অস্বীকার করা। কিন্তু বাস্তবে তাই হয়েছে। ( ছাত্র নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়হীনতা )

ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন পরস্পরের পরিপূরক এই সত্যটা স্বীকার করতে চায়না কোনো পক্ষই। সমস্যা এখানেই। তারা বাইরে এক ভেতরে আর এক। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের অব্যাহতি পরে ছাত্র নেতৃত্ব ও বিএনপি নেতৃত্বের পারস্পরিক দর্শনটা মধুর হয়নি। ফলে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র নেতৃত্ব বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেছে তাদের একক কর্তৃত্ব। একটি ১৬ বছরের পোড় খাওয়া দলের সাথে সমন্বয় করতে ব্যর্থ হয়েছে বরং তাদের আন্দোলনের  বার বার  ব্যর্থতাকে উপহাস করা হয়েছে। তাদের কোনো কৃতিত্ব পর্যন্ত দিতে স্বীকার না করার ফলে ছাত্র নেতৃত্ব সম্পূর্ণ পৃথক অস্তিত্ব নিয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত হয়। সদ্য ফ্যাসিষ্টরাজ মুক্ত জনগণও তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। অন্যদিকে বিএনপিও অভিভাবকের মত ছাত্রদের  বুকে টেনে নিতে পারেনি,তাদের বিজয়কে  বরণ করতে পারেনি। বরং ছাত্র নেতৃত্বকে প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিপক্ষ বিবেচনা করেই চলতে থাকে। ফলে তাদের মধ্যে কোনো সম্মিলন হয়নি। অথচ এত বড় বিজয়ের পর দেশপ্রেমের টানে আওয়ামী লীগ ছাড়া সব দল ও মতের  সম্মিলিত হতে পারতো। যা আজও হয়নি। আর এখানেই আমাদের দেশের রাজনীতির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। সেইকাল থেকেই এমনটাই হয়ে আসছে। এর বড় প্রমাণ হচ্ছে এই  অন্তর্বর্তী সরকারে শত চেষ্টার পরেও ঐক্যমতে আসতে  পারছেনা । দেশে অসংখ্য আন্দোলন হয়েছে কিন্তু আন্দোলন শেষে  জনসাধারণ কোনোদিন প্রত্যাশিত ফল পায়নি। বঞ্চিত হয়েছে। ইতিহাস তাই বলে। অভ্যুত্থান বিজয়ী ছাত্র নেতৃত্ব তড়িঘড়ি করে যেমন কোনো গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি তেমনি কোনো রাজনৈতিক দল তাদের গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেনি। এই শূন্যতা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। ( ছাত্রদের ভুলগুলো )

প্রথমদিকেই বলেছি,আন্দোলনকারী ছাত্র নেতৃবৃন্দ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের কথা ভাবতেই পারেনি। যে কারণে পতন পরবর্তী কাজগুলো কীভাবে, কোন সময়ে, কোনটা করতে হবে তা পরিকল্পনায় আনতে পারেনি। ফলে একটি বিপ্লবী সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়। ব্যর্থ হয় পতিত সরকারের নিযুক্ত রাষ্ট্রপতি, সেনা প্রধান, আমলা, পুলিশ, বিচারকসহ সুবিধাভোগীদের অপসারণ করতে। ব্যর্থ হয় জুলাই সনদ তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে। এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যর্থ হওয়ার  ফলে সচেতন মহল আশঙ্কা করেছিলেন প্রতিবিপ্লব সংঘটিত হওয়ার। প্রতিবিপ্লব হয়তো হয়নি কিন্তু তেমন পরিস্থিতিই বিরাজ করছে বর্তমানে।এটা হচ্ছে ছাত্র নেতৃত্বের প্রথম ভুল। দ্বিতীয় ভুল হচ্ছে,যারা এই আন্দোলনের স্টেক হোল্ডার নয় এমনকি এই আন্দোলনের পক্ষে দুএকজন ছাড়া  কোনো ভূমিকা রাখেনি তাদের উপদেষ্টা পদে বসানোকে প্রকারান্তরে মেনে নেওয়া। নিজেদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ভাগ বসানো বা উপদেষ্টা পদ গ্রহণ করা। এতে ছাত্র নেতৃত্বে ফাটল ধরে। তাদের আত্মিক ঐক্য বিনষ্ট হয়। এটা তারা মুখে স্বীকার করুক বা না করুক। ক্ষমতার একটা স্বাদ বা মোহ আছে। সে সময় সচেতন মানুষেরা বারবারই বলেছেন ছাত্রদের উপদেষ্টা পদে বহাল করা যেমন ঠিক হয়নি তেমনি তাদের গ্রহণ করাও ঠিক হয়নি। কারণ তাদের পরিপক্ক বয়স হয়নি। ছাত্র নেতা হিসেবে তুখোড় হলেও রাজনৈতিক কূটকৌশলের সাথে পরিচিত নয়। সুতরাং রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনীতির কূটকৌশল মোকাবেলা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়া ক্ষমতায় যেতে পারেনি তারা  বিভিন্নভাবে আন্দোলনের শক্তিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছে। যা আন্দোলনের চেতনাকে দুর্বল করেছে। শুধু তাই নয়, আন্দোলনে তাদের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল তা নষ্ট হয়েছে। তৃতীয় ভুল হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যৌক্তিক অযৌক্তিক দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মানতে বাধ্য করা যে আচরণে সাধারণ মানুষও বিব্রত হয়েছে। এই আচরণ সমাজে সঙ্ক্রমিত হয়েছে। তারই জের ধরে আনসার, শ্রমিক, বিভিন্ন সংগঠন, প্রশাসন, বিজিবি, এনবিআর সরকারকে বিব্রত করেছে  এবং এখনও করছে। এতে ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব হারিয়েছে। চতুর্থ ভুল হচ্ছে এনসিপি গঠন করে নিজেদের বিভক্ত করা। তারা বিভক্ত না হয়ে  ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে যদি প্রথম দিকেই এনসিপি গঠন করতো তাহলে তাদের নিরপেক্ষতার কারণেই আন্দোলন অংশ গ্রহণকারী জনতার সিংহ ভাগ মানুষ এনসিপিতে যোগদান করতো। কিন্তু পূর্বে বর্ণিত ভুলগুলোর জন্য তারা সেই সমর্থন হারিয়েছে। বর্তমানেতো সেই সমন্বয়ক কমিটিতেই বিভক্তি। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের সফল আন্দোলন এবং ১৪০০ মানুষের জীবনদানের বিনিময়ে গণ অভ্যুত্থান সত্যই বেহাত হয়ে যাচ্ছে। ( বর্তমান পরিস্থিতি ও পরিণতি )

আমাদের দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নেতিবাচক দিক আছে। তা হলো,অতীতে যত লড়াই স্ংগ্রাম হয়েছে, জীবন দিয়েছে তাতে মূল ভূমিকা ছিল ছাত্রদের। কিন্তু তারা কিংবা তাদের বাবা মারা  কোনো দিনই এর ফল ভোগ করতে পারেনি। তাদের সংগ্রামের ফসল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে রাজনৈতিক নেতারা। এটাই বাঙ্লাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস। সাম্প্রতিককালের ঘটনাগুলো তার জ্বলন্ত প্রমাণ। আজ ছাত্ররা বিভিন্ন কারণে সমালোচিত আর ক্ষমতার স্বাদ  ভোগ করছে সুশীল সমাজের চাঁইরা। গণঅভ্যুত্থান করলো ছাত্র জনতা, তাদেরই দিবস পালনের কথা। কিন্তু তার আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির ছড়াছড়ি। কেউ ৩৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে,কেউ নতুন বাংলাদেশ দিবস কখন কিভাবে পালন করবে তাই নিয়ে ভাবছে, কেউ আবার ৫ আগস্ট, ৮ আগস্ট, ১৬ জুলাইকে’ ক’ ও ‘খ’ শ্রেণি করা নিয়ে ভাবছে, কেউ আবার পদযাত্রা দিবস নিয়ে ভাবছে,কেউ শহিদদের মূরাল করা নিয়ে মশগুল। কিন্তু যারা এসব দিবসের জন্মদাতা তাদেরকেই মেনে নিতে পারছে না। অর্থাৎ যত গৌণ কাজ যেন তাদের মাথায় চেপে বসেছে অথবা নেপথ্যে থেকে কেউ এসব করতে উৎসাহিত করছে। কিন্তু দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, এর অর্থনৈতিক অবস্থা,সামাজিক অবস্থা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক ঐক্য, বিদেশী আগ্রাসন প্রভৃতি মৌলিক  বিষয় নিয়ে কোনো গঠনমূলক আলোচনা, পদক্ষেপ কিছুই হচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের সদিচ্ছা দেখা যায়না। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সব বৈজ্ঞানিক মতামত উপস্থাপন, অস্বাভাবিক আচরণ, অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা, সহ্য করতে না পারা এমন হাজারো নেতিবাচক কাজকর্মে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিতে সাহায্য করছে।

ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ছাত্রদের কোন ভাবেই ক্ষমতায় যাওয়া ঠিক হয়নি। তাদের  নিরপেক্ষ থেকে, আন্দোলনের ভাবমূর্তিকে সামনে রেখে  সরকারকে চাবুক মারার অবস্থানে বসে  কাজ করতে হতো। সেভাবেই জুলাই সনদ তৈরি করে নিতে হতো। অন্যদিকে সমন্বয়ক কমিটিকে সারা  দেশে সম্প্রসারিত করে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করতে পারতো  এবং রাজনৈতিক লক্ষ্যকে সামনে এগিয়ে নিতে পারতো। তখনই ছিল এ কাজের  মোক্ষম সময়। তাহলে গত একবছরে একটি বড়  গণতান্ত্রিক শক্তির অভ্যুদয় হতো। কিন্তু তা না হয়ে আজ তারা নিজেরাই হতাশ। তাদের তৈরি করা সরকারকে বলছে সরকার ব্যর্থ তাই পদযাত্রা দিবস পালন করবে এনসিপি, বলছে বিপ্লব বেহাত দিবস পালন করতে, অনেক সমন্বয়ক কমিটি থেকে বিদায় নিয়েছে, নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে, কেউ বলছে আবার একটা অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। কিন্তু তা কী এত সহজ ? দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এক অজানা গন্তব্যে। এর পরিণতি কেমন হবে বলা সত্যই মুশকিল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *