আয়াজ আহমদ বাঙালি : একজন মানুষ অপরাধ করেছে কিনা—তার বিচার হওয়া উচিত সেই অপরাধের ভিত্তিতে, তার রাজনৈতিক পরিচয়, সামাজিক মর্যাদা কিংবা পদমর্যাদার ভিত্তিতে নয়। শেখ হাসিনা হোন বা অন্য যে কেউ, যদি মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার নির্ভরযোগ্য প্রমাণ থাকে, তবে আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে, নিরপেক্ষভাবে ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচার হওয়া উচিত। এতে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব, প্রতিহিংসা বা পক্ষপাত যেন প্রবেশ করতে না পারে।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে আসা নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। তবে এই বিচার যতটা না একজন নেতার, তার চেয়ে বেশি একটি রাষ্ট্রযন্ত্র, একটি সময়কাল, একটি শাসনব্যবস্থা এবং একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। কাজেই এই বিচার যেন ব্যক্তি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পরিচয়কে সামনে রেখে না হয়; বরং তাঁকে একজন নাগরিক হিসেবে তাঁর কার্যকলাপের ভিত্তিতে বিচার করতে হবে।
আমরা অতীতে বহুবার দেখেছি—বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হয়েছে। আবার অনেক সময় পরিচয় ও অবস্থানের কারণে প্রকৃত অপরাধীরাও পার পেয়ে গেছে। এ ধরনের বিচারের সংস্কৃতি সমাজে বিচারহীনতার বাতাবরণ তৈরি করে, যার ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়। তাই এই বিচার যদি সত্যিকারের ন্যায়বিচার হতে হয়, তাহলে অবশ্যই তা হতে হবে নিরপেক্ষ, প্রমাণনির্ভর এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী।
আমরা চাই না একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শুধু তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক, আবার এটাও চাই না যে ওই পরিচয় তাঁকে অপরাধ থেকে রেহাই দিক। মানুষ হিসেবেই তাঁর বিচার হোক—তাঁর দায়িত্ব, সিদ্ধান্ত ও কাজের ভিত্তিতে।
সর্বোপরি, আমরা চাই—বিচার হোক অপরাধের, পরিচয়ের নয়। এই নীতিতেই গড়ে উঠুক এক নতুন ন্যায়ভিত্তিক বিশ্ব।