-সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট: বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও টেকঅ্যাওয়েতে হালাল নামের ভুয়া মুরগির মাংস সরবরাহের একটি জালিয়াতির মামলায় দুইজন দক্ষিণ এশীয় পুরুষকে দণ্ডিত করা হয়েছে।
৪৬ বছর বয়সী হেলিম মিয়া, যিনি ইউনিভার্সাল ফুড হোলসেল লিমিটেডের মালিক, তাকে মার্থার টিডভিল ক্রাউন কোর্টে দুই সপ্তাহের বিচার শেষে জালিয়াতি মূলক ব্যবসা পরিচালনা এবং দেউলিয়াত্ব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে চার বছর আট মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার সহযোগী, একই বয়সী নোয়াফ রহমান, বিচার শুরুর আগেই দোষ স্বীকার করায় তাকে দুই বছরের স্থগিত সাজা এবং ১৫০ ঘণ্টা বিনা বেতনের কমিউনিটি কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে কার্ডিফ ও ভেল শেয়ার্ড রেগুলেটরি সার্ভিসের যৌথ তদন্তে এই প্রতারণার চক্র উন্মোচিত হয়। তদন্তকারীরা কার্ডিফের গ্রাংটাউনের একটি গুদাম থেকে ২,৮৪০ কেজি হিমায়িত মাংস জব্দ করে। এরপরই প্রকাশ পায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াতি ও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের চিত্র।
সরকারি কৌঁসুলি অ্যালেক্স গ্রিনউড আদালতে বলেন, অভিযুক্ত দুইজনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে জনসাধারণ না জেনেই হালাল নয় এমন মাংস খেয়েছেন। তিনি বলেন, “ভোক্তাদের ভুল বোঝানো হয়েছে যে তারা ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক প্রস্তুতকৃত খাদ্য খাচ্ছেন, অথচ বাস্তবে তা হালাল মানদণ্ড পূরণ করছিল না।”
তদন্তে দেখা যায়, ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহকৃত মাংসের উৎসের কোনো প্রমাণ ছিল না, মেয়াদ শেষের তারিখ পাল্টে দেওয়া হতো, এবং মুরগির মাংস অপরিষ্কার, রেফ্রিজারেশনবিহীন ভ্যানে দক্ষিণ ও পশ্চিম ওয়েলস জুড়ে পরিবহন করা হতো। প্রমাণ পাওয়া যায় কিছু মাংস বারবার ডিফ্রস্ট করে পুনরায় জমিয়ে রাখা হতো, যার কিছু দুই বছরেরও বেশি পুরনো। পোকামাকড়, নিম্নমানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং তাপমাত্রা রেকর্ডের ঘাটতির তথ্যও নথিভুক্ত করা হয়েছে।
যদিও কিছু মাংস হালাল হিসেবে কেনা হয়েছিল, কিন্তু যেহেতু ওই গুদামে একই স্থানে হালাল ও নন-হালাল প্রোডাক্ট প্রক্রিয়াকরণ চলত, তাই সেটি ইসলামী বিধি অনুযায়ী হালাল ছিল না। আদালতে বলা হয়, মিয়া ও রহমানের ব্যবহৃত কোম্পানিগুলো একটি “জটিল কর্পোরেট আবরণ” তৈরি করেছিল যাতে প্রকৃত কার্যক্রম গোপন থাকে।
বিচারক ভেনেসা ফ্রান্সিস অভিযুক্তদের আচরণে “অবহেলাপূর্ণ” বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন উভয়েই সমান দায়ী। তিনি বলেন, “এটি ছিল একটি অনিবার্য বিপর্যয়। এর ক্ষতির মাত্রা বিশাল, এবং সমাজে এর প্রভাব নিরূপণ করা কঠিন।”
তিনি আরও বলেন, গ্রাহকরা যদি জানতেন তারা যে মাংস খেয়েছেন তা হালাল নয় বা নিরাপদ নয়, তাহলে তারা “ভীত ও ক্ষুব্ধ” হতেন। তিনি জানান, “জব্দকৃত মাংস এতটাই অনিরাপদ ছিল যে সেটি পোষা প্রাণীর খাদ্যে রূপান্তর করা হয়েছে।”
কার্ডিফ কাউন্সিলের শেয়ার্ড রেগুলেটরি সার্ভিসের ক্যাবিনেট সদস্য কাউন্সিলর নর্মা ম্যাকি এই জালিয়াতির নিন্দা জানিয়ে বলেন,
“এই ঘটনা আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য গভীরভাবে উদ্বেগজনক। হালাল খাদ্য গ্রহণ ধর্মীয় দায়িত্ব, আর এই বিশ্বাসকে কাজে লাগানো পুরোপুরি অমার্জনীয়। তদন্তে দেখা গেছে এমন মারাত্মক স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন যা মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারত।”
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা গুলোর নাম মামলার সংবেদনশীলতার কারণে প্রকাশ করা হয়নি, তবে আদালত হালাল খাদ্য সরবরাহ চেইনে আরও কঠোর তদারকির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
এই রায় দীর্ঘমেয়াদী তদন্তের একটি পরিসমাপ্তি হলেও হালাল খাদ্যের স্বচ্ছতা ও গ্রাহক আস্থার বিষয়ে চলমান চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে এসেছে। তাই, আমাদেরকে আরো সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। হালাল সার্টিফিফেট চেক করে তাদের বিস্তারিত সব খবর নিয়ে তারপর রেস্তরাঁয় বিক্রি করা যেতে পারে। যদি আপনি যাচাই-বাছাই বা সঠিকভাবে খোঁজ না নিয়ে কাউকে হালাল মাংস হিসেবে কিছু পরিবেশন করেন, এবং পরে তা হালাল না প্রমাণিত হয় তবে আপনার এই গাফলতির দায়ভার থেকে আপনি রেহাই পাবেন না। এক্ষেত্রে আপনি দুনিয়ার আইনের পাশাপাশি আখিরাতেও জবাবদিহির মুখোমুখি হতে পারেন।