সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট: ইসলামে দাওয়াত, ওয়াজ ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার করা নবী-রাসূলগণের ঐতিহ্য। তাঁরা কখনো এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক দাবি করেননি।
১. কোরআনের সতর্কবাণী
আল্লাহ বলেন:“আমার আয়াতসমূহ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করো না।” (সূরা বাকারা: ২:৪১)
“যারা আল্লাহর কিতাব গোপন করে এবং বিনিময়ে সামান্য মূল্য নেয়, তারা পেটে আগুন ভরে।” (সূরা বাকারা: ১৭৪)
অর্থাৎ, আল্লাহর বাণীকে বিকৃত করে বা পার্থিব স্বার্থে ব্যবহার করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
“ওরা আমার আয়াতগুলোকে সামান্য মূল্যে বিক্রি করুক নিও না”— যেমন ঐ-রকম সতর্ক নির্দেশ রয়েছে: (সূরা আল-বাকারা)
এ আয়াতের সাধারণ তাফসীর অনুযায়ী ইঙ্গিত হলো: ধর্মীয় সত্যকে সামান্য পার্থিব লাভের বিনিময়ে অবমাননা বা বিকৃত করা যাবে না — অর্থাৎ ধর্মকে ‘কম্প্রোমাইজ’ করা দেওয়া নিষিদ্ধ।
পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ রসুলাল্লাহকে (সা.) সত্য প্রচারের বিনিময়ে কোনো মজুরি, সম্পদ, বিনিময় গ্রহণ না করার জন্য অন্তত ছয়টি আয়াতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ বলেছেন, *তুমি তাদের নিকট কোনো মজুরি দাবি কোরো না। এই বাণী তো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ মাত্র (সুরা ইউসুফ ১০৪)।
* বল! আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো পারিশ্রমিক চাই না। এবং যারা মিথ্যা দাবি করে আমি তাদের দলভুক্ত নই (সুরা সা’দ ৮৬)।
* বল! আমি এর (দীনের) বিনিময়ে তোমাদের কাছ থেকে প্রেম-ভালোবাসা ও আত্মীয়তাজনিত সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার ব্যতীত অন্য কোনো মজুরি চাই না (সুরা শুরা – ২৩)।
* তবে কি তুমি তাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাচ্ছ যা ওরা একটি দুর্বহ বোঝা মনে করে (সুরা তুর: ৪০)
* তাদেরকেই (নবীদেরকেই) আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর; বল! এর জন্য আমি তোমাদের কাছে কোনো মজুরি চাই না। এটা তো বিশ্ব জগতের জন্য উপদেশ (সুরা আনআম – ৯০)।
* (হে মোহাম্মদ!) তুমি কি তাদের নিকট কোনো মজুরি চাও? তোমার প্রতিপালকের প্রতিদানই তো শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রেযেকদাতা (সুরা মুমিনুন: ৭২)।
প্রত্যেক নবী-রসুল তাদের জাতির উদ্দেশ্যে একটি সাধারণ ঘোষণা দিয়েছেন যে, আমি তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাই না, আমার বিনিময় রয়েছে আল্লাহর কাছে। এ বিষয়ে নবী রসুলদের (আ.) বেশ কয়েকজনের ঘোষণা আল্লাহ দৃষ্টান্তস্বরূপ পবিত্র কোর’আনেও সন্নিবেশিত করেছেন।
* নূহ (আ.) এর ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! এর পরিবর্তে আমি তোমাদের নিকট ধন সম্পদ চাই না। আমার পারিশ্রমিক আল্লাহর নিকট (সুরা হুদ-২৯)।
* হুদ (আ.) এর ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর পরিবর্তে তোমাদের নিকট কোনো মজুরি চাই না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি তবুও বুদ্ধি (আক্ল) খাটাবে না (সুরা হুদ-৫১)?
* নূহ (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো কেবল বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে (সুরা শু’আরা ১০৯)।
* সালেহ (আ.) এর ঘোষণা: আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোনো পারিশ্রমিক চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে (সুরা শু’আরা-১৪৫)।
*লুত (আ.) এর ঘোষণা: এর জন্য আমি কোনো মজুরি চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে (সুরা শু’আরা-১৬৪)।
* নূহ (আ.) এর ঘোষণা: যদি তোমরা আমার কথা না শোনো তাহলে জেনে রাখ, আমি তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাই নি। আমার প্রতিদান কেবল আল্লাহর নিকট এবং আমাকে মুসলিম (সত্যের প্রতি সমর্পিত) হওয়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে (সুরা ইউনুস ৭২)।
* হুদ (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট কোনো মজুরি চাচ্ছি না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট যিনি এই বিশ্বজাহানের ¯্রষ্টা (সুরা শু’আরা ১২৭)।
* শোয়েব (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো মূল্য চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে (সুরা শু’আরা-১৮০)।
২. হাদিসের নির্দেশনা
রাসূল ﷺ সতর্ক করেছেন—“মানুষ কোরআন পড়বে দুনিয়ার বিনিময়ের জন্য।” (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)
সাহাবি উবাদা ইবন সামিত (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, কোরআন শেখানোর বিনিময়ে হাদিয়া নিতে চাইলে নবী ﷺ তাকে সতর্ক করেন: “তুমি চাইলে তা তোমার গলায় জাহান্নামের বেড়ি হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ: ৩৩৮১)
এগুলো স্পষ্ট ইঙ্গিত করে যে, ওয়াজকে ব্যবসা বানানো হারাম।
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর এক হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে যে কেয়ামতের আগে এমন সময় আসবে যখন লোকেরা তাদের ধর্ম ‘দুনিয়ার লাভ’ বিনিময়ে বিক্রি করবে — ফলে যে ব্যক্তি সকালে মুমিন ছিল বিকেলের মধ্যে কুফরী অবস্থায় চলে যাবে
- তেমনি অপর হাদিসে এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি জনৈক পাঠকারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন- যে কোরআন পড়ছিলো। অতঃপর সে (মানুষের নিকট) চাইলো। তখন তিনি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়লেন। অতঃপর তাকে বললেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে, তার উচিত আল্লাহর কাছে তার বিনিময় চাওয়া। বস্তুত এমন কিছু দল আসবে যারা কোরআন পড়বে; যার বিনিময় মানুষের নিকট চাবে (তাদের একাজ অবাঞ্ছিত)। ’–জামে তিরমিজি: ২৯১৭, মুসনাদে আহমাদ: ১৯৯৫৮
- অপর হাদিসে এরূপ লোকদেরকে কিছু না দিতে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘অচিরেই মানুষের ওপর এমন কাল আসবে; যে সময় কোরআন শোনানোর বিনিময় চাওয়া হবে। সুতরাং যখন তোমাদের কাছে তারা চাইবে, তখন তোমরা তাদেরকে দেবে না। ’–আত তাওজিহ লি-শরহিল জামিইস সহিহ: ১৭৪ পৃ.
- অনেকে ওয়াজকে মাদরাসার শিক্ষকতা কিংবা মসজিদের ফরজ নামাজের ইমামতির সঙ্গে তুলনা করে ওয়াজের জন্য চুক্তি করে টাকা নেওয়াকে জায়েজ করতে চান। কিন্তু এটা ঠিক নয়।
- মাদরাসার শিক্ষক অথবা মসজিদের ইমামের ওপর বক্তাকে কিয়াস (কোরআন, হাদিস বা ইজমার কোনো দলিল দ্বারা প্রমাণিত কোনো বিষয়ের ওপর অনুমান করে এই তিন উৎসে নেই এমন কোনো বিষয়ে মাসয়ালা নির্ণয় করাকে কিয়াস বলে) করা যাবে না।
- বস্তুত মানুষকে ওয়াজ-নসিহত করা মানুষকে হেদায়েত বাণী শোনানোর অন্তর্ভুক্ত। এটা মানুষকে হেদায়েতের আকর কোরআনে কারিম তেলাওয়াত শোনানোর ন্যায়; যা মানুষের হেদায়েতের ওসিলা হবে। আর হাদিস শরিফে মানুষের থেকে বিনিময় লাভের উদ্দেশ্যে তাদেরকে কোরআন শোনানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
- এ সম্পর্কে হাদিসে শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কোরআন পড়ো এবং তার ওপর আমল করো। আর তাতে সীমালংঘন করো না, তার ব্যাপারে শৈথিল্য করো না, তার বিনিময় খেয়ো না এবং তাকে নিয়ে রিয়া করো না। ’ -মুসনাদে আহমাদ: ১৫৫৬৮, সুনানে বায়হাকি: ২৬২৪, মুজামে তাবরানি আওসাত: ২৫৭৪
- তবে ওয়াজ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হচ্ছে কি না, তা প্রমাণে একটি পরীক্ষা রয়েছে। পরীক্ষাটি হলো, খেয়াল করা হবে যে ওই লোকটা ওয়াজ করার জন্য কোন ধরনের এলাকাকে প্রাধান্য দেন। তিনি কি সেসব এলাকাকে প্রাধান্য দেন, যেখানে হাদিয়া তুলনামূলক বেশি মেলে, নাকি সেসব স্থানকে প্রাধান্য দেন, যেখানে দ্বিন প্রচারের প্রচণ্ড প্রয়োজন? প্রথমোক্ত অবস্থায় মোটেও টাকার বিনিময়ে ওয়াজ করা জায়েজ হবে না, আর দ্বিতীয় অবস্থায় জায়েজ হবে।
৩. সমসাময়িক আলেমদের ফতোয়া
শায়খ ইবন বাজ বলেন, কোরআন শিক্ষা, হিফজ বা পূর্ণকালীন দাওয়াতকার্যের জন্য বেতন নেওয়া জায়েজ; কারণ এতে সময় ও শ্রম ব্যয় হয়।
IslamQA, IslamWeb, আরব ফতোয়া-বোর্ড: শিক্ষা ও দাওয়াতে বেতন গ্রহণ বৈধ, তবে বক্তৃতা পরিবর্তন, সত্য গোপন বা অর্থলোভী মনোভাব হারাম।
শায়খ আবদুর রহমান আল-বারাক: বক্তার নিয়ত, অর্থের উৎস ও বক্তব্যের অখণ্ডতা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থলোভে ওয়াজ করা নিন্দনীয়।
৪. বাংলা ভাষার আলোচনায় বাংলাদেশি আলেম ও মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতেও মূলত একই ব্যাখ্যা পাওয়া যায়:
ইমামতি বা শিক্ষকতা পেশা হলে বেতন বৈধ। ওয়াজের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কে দামাদামি করা অনুচিত।
৫. নৈতিক ও ফিকহি নির্দেশনা
কখন জায়েজ?
পূর্ণকালীন চাকরি, মাদরাসা-ইমামতি বা শিক্ষকতার বিনিময়ে বেতন নেওয়া। দাওয়াত শেষে ইচ্ছাকৃত হাদিয়া বা অনুদান গ্রহণ।
কখন নাজায়েজ/নিন্দনীয়?
ওয়াজের আগে দাম নির্ধারণ করে “চুক্তিভিত্তিক” বক্তৃতা। টাকার লোভে সত্য গোপন করা বা বক্তব্য পরিবর্তন করা। ধনী এলাকায় বেশি হাদিয়ার আশায় যাওয়া, অথচ দরিদ্র এলাকায় উপেক্ষা করা।
সতর্কতা
অর্থ অবশ্যই হালাল উৎস হতে হবে। পারিশ্রমিককে উদ্দেশ্য নয়, বরং সহায়ক হিসেবে গণ্য করতে হবে।
৬. উপসংহার
ইসলামে ওয়াজ – নসিহত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যহতে হবে । নবী-রাসূলরা কখনো এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেননি। তবে উম্মতের বাস্তব প্রয়োজনে শিক্ষকতা ও পূর্ণকালীন দাওয়াতকার্যের সঙ্গে যুক্ত আলেমরা বেতন নিতে পারেন।
মূলনীতি হলো:
শিক্ষা ও পূর্ণকালীন কাজ — পারিশ্রমিক বৈধ।
ওয়াজ-নসিহতকে ব্যবসায় পরিণত করা — নাজায়েজ। উপহার/হাদিয়া — নিয়তের বিশুদ্ধতা থাকলে গ্রহণযোগ্য।
- তবে যাঁরা শিক্ষাদান ও তাবলিগের কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে অন্য কোনোভাবে উপার্জন করার সুযোগ পান না তাঁরা বেতন-ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন। সেটা জায়েজ। তা ছাড়া ‘চাকরিভিত্তিক’ ওয়াজ করে ‘মাসভিত্তিক’ বেতন নেওয়াও জায়েজ। (আত-তাবলিগ : খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ১১, খাইরুল ইরশাদ : পৃষ্ঠা ১৪)
আল্লাহ বলেন:
“তাদের অনুসরণ করো যারা তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক দাবি করে না এবং যারা সৎপথে রয়েছে।” (সূরা ইয়াসিন: ২১)
সুতরাং , যে মাওলানা অর্থের বিনিময়ে ওয়াজ বা ইসলামী বক্তব্য প্রদান করেন, তার কথায় প্রকৃত কোনো আসর হয় না। হয়তো মুহূর্তের জন্য আবেগ সৃষ্টি হয়, উহ-আহ ওঠে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সেই প্রভাব টেকে না। ভাড়া করা মাওলানার কাছ থেকে ইসলাম শোনার মানেই হলো ইলমের ঘাটতি।
যাদের প্রকৃত ইসলামী জ্ঞান নেই, সেই অজ্ঞতাকেই কাজে লাগায় এ ধরনের ভাড়া মাওলানারা। অথচ ইসলাম স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে, “ইলম অর্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরজ।” সমস্যার মূল এখানেই। যখন জ্ঞানহীন মানুষ ইসলামের নাম করে ভাড়া মাওলানাদের কথায় প্রভাবিত হয়, তখন সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে পারে না।
আসলে একজন হাক্কানি আলেমের সান্নিধ্যে বসলেই স্পষ্ট হয়ে যায়, কোনটা সঠিক আর কোনটা ভ্রান্ত। ইসলামের আলো কেবল জ্ঞানী, খোদাভীরু আলেমদের কাছ থেকেই গ্রহণযোগ্যভাবে প্রতিফলিত হয়।
যে সকল মাওলানা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেন, তারা আল্লাহ পাকের হুকুমকে উপেক্ষা করে নবী (সা.)-এর সুন্নতকে অবহেলা করেন। যে মাওলানা সুন্নতের ব্যাপারে উদাসীন, তিনি গাফেল মাওলানা। আর এই গাফেল মাওলানারা শয়তানের সত্তর হাজার ফাঁদের মধ্যে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
এ ধরনের নামধারী মাওলানারা দুনিয়া অর্জনের জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবন সৃষ্টি করেন এবং বিদআতকে আমল মনে করে প্রচার করতে থাকেন। অর্থের বিনিময়ে পবিত্র কোরআন শিক্ষা দেওয়া কিংবা চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় ওয়াজ করা—এসবের মাধ্যমে তারা আল্লাহর দ্বীনের চরম অবমাননা করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, অধিকাংশ মানুষ সঠিক ইলমের অভাবে তা বুঝতে সক্ষম হন না।
এইসব মাওলানারা চমৎকারভাবে গুছিয়ে কথা বলে মানুষের মন জয় করেন, সময়োপযোগী নানা ভ্রান্ত ফতওয়া প্রদান করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তারা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যান। এলাকায়, জেলায়-জেলায় এমনকি দেশের বাইরেও তাদের দেখা যায় বেশ সাড়াজাগানোভাবে। অনেকে তাদেরকে ‘ইউটিউব হুজুর’ বলেও ডাকেন।
অন্যদিকে, আমাদের দেশে কিছু অল্পসংখ্যক হক্কানি আলেমেদ্বীন আছেন, যারা এদের একেবারে বিপরীত। তারা কখনো ইউটিউবে জনপ্রিয়তা কিংবা অর্থ উপার্জনের জন্য সময় ব্যয় করেন না। হক্কানি মাওলানা বা আলেম-উলামা দুনিয়ার পেছনে সময় দেন না, মানুষের মন রক্ষার জন্য ভ্রান্ত ফতওয়া প্রদান করেন না। তারাই আসল ‘ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া’—অর্থাৎ আম্বিয়াদের উত্তরসূরি।
দুঃখের বিষয়, বেশিরভাগ মানুষ এসব হক্কানি আলেমদের চিনতেই পারেন না। আল্লাহ পাক আমাদেরকে প্রকৃত হক্কানি আলেমদের চিনতে ও তাদের খেদমতের তাওফিক দান করুন। আমিন।